Reading Time: 3 minutes

প্রপার্টিতে বিনিয়োগের জন্য অনেকে জমি কেনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে থাকেন। অনেকেই আবার জমি কেনার কাজটি বেশ ঝামেলাপূর্ণ মনে করেন। জমি কেনার ক্ষেত্রে যেহেতু বিনিয়োগের সংখ্যাটাও হয় বড়, তাই কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। জমির মূল্য নির্ধারণ, জমির সকল দলিলপত্র যাচাই-বাছাই, বিভিন্ন ধাপে আইনি ঝামেলা থেকে শুরু করে হাজারো জটিলতার মধ্য দিয়ে যাওয়া ইত্যাদি বিষয় জমির কেনার সাথে যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর তাই প্রপার্টিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জমি কেনা এবং উক্ত জমিতে বাড়ি নির্মাণ বেশ কষ্টসাধ্য বিষয়ই বলা যায়। তবে জমির কেনার আগে বিবেচনায় রাখা জরুরি এমন বিষয় সমূহের মধ্যে জমির অবস্থান, এর আশেপাশের সুযোগ-সুবিধা সমূহ, জমির আয়তন, জমির দলিলপত্র ইত্যাদি বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে এবং পরিপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করে, তবেই জমি কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি। তবে চলুন জেনে নেয়া যাক জমি কেনার আগে বিবেচ্য বিষয় সমূহ সম্পর্কে।  

জমির অবস্থান

জমির অবস্থান
জমির অবস্থান এর উপর নির্ভর করবে উক্ত স্থানে কোন সাইজের প্রপার্টি নির্মাণ করা যাবে

শহরের যে প্রান্তেই আপনি বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা করেন না কেন, সেখানে বাড়ি বানানোর জন্য জায়গাটা কতটা উপযুক্ত, তা নির্ধারণ করতে জমির অবস্থান সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেয়া অত্যন্ত জরুরি। কেননা, জমির অবস্থানের উপর নির্ভর করবে উক্ত জমিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া কতটা যৌক্তিক। এছাড়া জমির অবস্থান বা লোকেশনের উপর নির্ভর করবে উক্ত স্থানে কোন সাইজের প্রপার্টি নির্মাণ করা যাবে, রেসিডেন্সিয়াল নাকি কমার্শিয়াল প্রপার্টির জন্য জায়গাটি হবে পারফেক্ট, জমির আশেপাশে কত ফিটের রাস্তা রয়েছে ইত্যাদি বিষয়সমূহ জমি কেনার আগে বিবেচনায় রাখা জরুরি।  

জমির আশেপাশে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম

সুপরিচিত এবং চাহিদাসম্পন্ন এলাকায় জমি কেনার ক্ষেত্রে জমির মূল্য যেমন অনেক বেশি পড়ে, তেমনি খালি জমির সহজলভ্যতা না থাকায় জমি কেনাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। এক্ষেত্রে চাহিদাসম্পন্ন এলাকা ছাড়াও শহরের কিংবা শহরের আশেপাশের জমিতে বিনিয়োগ করার ফলে বাড়ি নির্মাণের স্বপ্ন পূরণ যেমন সম্ভব হয়, তেমনি তুলনামূলক কম মূল্যে জমির মালিক হওয়া সম্ভবপর হয়। 

আর তাই জমি কেনার আগে বিবেচনায় রাখা জরুরি বিষয়ের মধ্যে অন্যতম একটি হল জমির আশেপাশে বর্তমান সময়ে কিংবা নিকট ভবিষ্যতে কী ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে এবং আরও কী কী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সে সম্পর্কে ধারণা থাকা। বিশেষ করে প্রশস্থ রাস্তা, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটার জন্য বাজার, শপিংমল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে কিনা এ সকল বিষয় জমি কেনার আগে বিবেচনায় রাখা জরুরি। 

অনেক ক্ষেত্রে জমি কেনার সময়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান থাকে না। তবে অন্তত উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলমান এমন জমিতেই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ।   

বাড়ি নির্মাণের জন্য জমির উপযোগিতা পরীক্ষা 

বাড়ির নির্মাণ কাজ পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট জায়গার জমির মাটি উপযুক্ত আছে কিনা, কিংবা সেখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় কিনা, অথবা জমির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আপনাকে বাড়তি টাকা খরচ করতে হবে কিনা এ সংক্রান্ত বিষয়সমূহ বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। এছাড়া জমির কোন অংশে কোন ধরনের সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসের লাইনের জন্য প্রয়োজনীয় চ্যানেল এর ব্যবস্থা করা যাবে কিনা, অথবা যদি কমার্শিয়াল স্পেস বানানোর পরিকল্পনা করা হয়, তবে এতে কোন সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা তা জেনে নেয়া জরুরি। 

জমির আইনি দলিলপত্রের সত্যতা যাচাই   

জমির দলিলপত্রের সত্যতা যাচাই
জমির আইনি দলিলপত্রের সত্যতা যাচাই আবশ্যক

জমি কেনার আগে বিবেচ্য বিষয় সমূহ এর মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জমি কেনার আগে জমির সকল দলিলপত্র যাচাই-বাছাই করে নেয়া ও এর সত্যতা অবশ্যই যাচাই করা নেয়া উচিৎ। কেননা, জমি একবার বিক্রি করা হয়ে গেলে, দলিলপত্রের জালিয়াতি যদি ধরাও পড়ে, সেক্ষেত্রে আপনার কিছুই করার থাকবে না। আর তাই ভবিষ্যতের যেকোনো বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেতে জমি কেনার আগেই জমির সকল দলিলপত্র আইনি প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত করা হয়েছে কিনা, মালিকানা দলিল ঠিক আছে কিনা, সেল পারমিশন এর প্রয়োজন হলে তা নেয়া আছে কিনা ইত্যাদি বিষয় সমূহ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিৎ। 

আর তাই যেকোনো ধরনের স্ক্যাম বা প্রতারণা থেকে মুক্তি পেতে জমি কেনার আগে বিবেচ্য বিষয় সমূহ এর মধ্যে জমির আইনি দলিলপত্রের সত্যতা যাচাই আবশ্যক। 

জমি ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা 

জমি কেনার আগে উক্ত জমি ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে ধারণা রাখা প্রয়োজন। বিশেষ করে যোগাযোগ এবং যাতায়াত ব্যবস্থার বিষয়টি এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, আপনি যে এলাকায় জমি কিনবেন সেখানের সাথে শহরের অন্যান্য প্রান্তে যাতায়াতের জন্য যদি যথাযথ ব্যবস্থা না থাকে, তবে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতে যাতায়াতে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই বাড়ি নির্মাণ শেষে ভবিষ্যতে যেন কোন ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়, এ কারণে আগেভাগেই এ সকল বিষয়ে ধারণা রাখা বাঞ্ছনীয়।  

এছাড়া নির্দিষ্ট এলাকায় ইউটিলিটি সার্ভিস যেমন- পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি পাওয়া যাবে কিনা, বা বর্তমানে ব্যবস্থা না থাকলেও কবে নাগাদ পাওয়া যাবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ধারণা রাখতে হবে।

জমি কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগের অংকটা যেহেতু অনেক বড় হয়, তাই দুশ্চিন্তা এবং অনিশ্চয়তার পাল্লা অনেক ক্ষেত্রেই ভারী হয়ে যায়। তবে জমি কেনার আগে বিবেচ্য বিষয় সমূহ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা রাখলে জমি কেনার পুরো প্রক্রিয়াটি জটিল না হয়ে বরং সহজ মনে হবে। তবে জমি কেনার ক্ষেত্রে আপনার যেকোনো ধরনের প্রশ্নের উত্তরে এবং সহায়তার জন্য বিপ্রপার্টি তো পাশে আছেই, তবে আর চিন্তা কিসের!  

1 Comment

Write A Comment

Author