যদি কেউ আপনার কাছে কন্ডোমনিয়াম এবং অ্যাপার্টমেন্ট এর মধ্যেকার পার্থক্য জানতে চায়। আমাদের অনেকের মত আপনার কাছেও সঠিক জবাব থাকবে না। কেননা, এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার মত যথেষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই। বাংলাদেশের অনেক মানুষের কাছে এখনও কন্ডোমনিয়ামের কনসেপ্টটা অপরিচিত। যদিও অনেকেই আমরা এই দুটি কে একইরকমই ভাবি। কিন্তু, গুরুত্বপূর্ণ কিছু পার্থক্য রয়েছে যা কন্ডোমনিয়ামকে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আলাদা করে। যদিও এ দুটিতেই আপনার চাহিদা এবং প্রয়োজনের সবকিছু পেতে পারেন কিন্তু, তা নির্ভর করবে আপনার পছন্দের ওপর।
মূল ফোকাস
কন্ডোমনিয়াম এবং অ্যাপার্টমেন্টের পার্থক্য শুরুই হয়, কন্ডোমনিয়াম বা অ্যাপার্টমেন্ট কি এবং আপনি কন্ডোমনিয়াম বা অ্যাপার্টমেন্ট থেকে কি কি সুযোগসুবিধা পেতে যাচ্ছেন। বাসা কেনার ক্ষেত্রে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে কন্ডোমনিয়ামের সুযোগ-সুবিধা বেশি হয়ে থাকে। আর এই কন্ডোমনিয়ামগুলো কোয়ার্টারের মত অথবা কমপাউন্ড আকারে তৈরি হয়ে থাকে। যদিও রেসিডেন্সিয়াল অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে আপনার প্রাথমিক পছন্দ এই সব কোয়ার্টারগুলোই হয়ে থাকে কিন্তু সুযোগসুবিধার দিক থেকে প্রাধান্য পায় কন্ডোমনিয়াম অ্যাপার্টমেন্টগুলো। সেক্ষেত্রে প্রপার্টির ফিচারগুলো অনেক বড় ভূমিকা পালন করলেও কন্ডোমনিয়ামের বেলায় ততোটা হয়তো না। এছাড়াও কন্ডোমনিয়াম থেকে রেসিডেন্সিয়াল অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য কিছুটা কম হয়ে থাকে। আপনি যদিও জিজ্ঞেস করতে পারেন, লোকেশন কি তাহলে কোন প্রভাব ফেলে না? অবশ্যই ফেলে! হোক তা কন্ডোমনিয়াম কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট।
সুযোগসুবিধা সমূহ
কন্ডোমনিয়াম এবং অ্যাপার্টমেন্টগুলোর সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে এটি আলাদা একেকটি সুযোগসুবিধা নিয়ে গড়ে উঠে। আমরা আগেই বলে এসেছি সুযোগসুবিধা সমূহ কন্ডোমনিয়ামের জন্য প্রধান আকর্ষণ হিসেবে কাজ করে থাকে। এই কন্ডোমনিয়ামগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতারা কিছু সুযোগসুবিধা খুঁজে থাকে। যেমন, রাইটওয়ে এয়ারপোর্ট প্লাজার মত কন্ডোমনিয়ামে রয়েছে জিম, কমিউনিটি হল, বাচ্চাদের খেলার জায়গা এবং সুপার শপসহ আরও অনেক কিছু। আর এ সবকিছু আপনি রেসিডেন্সিয়াল অ্যাপার্টমেন্টে হয়তো পাবেন না। তাই বলে, রেসিডেন্সিয়াল অ্যাপার্টমেন্টকে কোনভাবেই কম করে দেখা হচ্ছে না। এমন অনেক বিলাসবহুল রেসিডেন্সিয়াল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে যা খুব সহজেই কন্ডোমনিয়াম অ্যাপার্টমেন্টকে টেক্কা দিবে। যদিও কন্ডোমনিয়ামের মত তেমন সুবিধাময় হয়তো হবে না কিন্তু অত্যন্ত সুবিধাজনক জীবনের নিশ্চয়তা প্রদান করবে। এখানকার প্রায় সকল অ্যাপার্টমেন্টেই সম্পূর্ণ ব্যাকআপ জেনারেটর, লিফট এবং পার্কিং সুবিধাগুলো রয়েছে।
অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা
কন্ডোমনিয়াম কমপ্লেক্সের প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টের সাইজ এবং অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা চোখে পড়ার মত একটি পার্থক্য। আমরা আগেও বলেছি কন্ডোমনিয়াম কমপাউন্ড আকারে তৈরি হয়ে থাকে যেখানে একের অধিক এবং বহু তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং হয়ে থাকে। যদিও রেসিডেন্সিয়াল অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে এমনটা সব সময় হয়না, এগুলো চার থেকে পাঁচতলা খুব বেশি হলে দশ তলা পর্যন্তই হয়। কনডমিনিয়াম কমপ্লেক্সগুলোতে সাধারণত রেসিডেন্সিয়াল অ্যাপার্টমেন্টের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় অ্যাপার্টমেন্ট থেকে থাকে।
নিরাপত্তা
নিরাপত্তা এমন একটি উপাদান যা খুব সহজেই কন্ডোমনিয়াম এবং অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে পার্থক্য নিশ্চিত করে। ঢাকার মত শহরের বাসিন্দাদের জন্য নিরাপত্তা একটি প্রধান চিন্তার বিষয়। তাই কমপাউন্ডে যত মানুষ থাকবে নিরাপত্তা ততোটাই জোরদার হবে, এটাই স্বাভাবিক। আপনি যখনই কোন কন্ডোমনিয়ামের সামনে দিয়ে যাতায়াত করবেন দেখবেন, সব সময় গেটে দাড়িয়ে আছে সিকিউরিটি গার্ড, লাগানো আছে সিকুউরিটি ক্যামেরা এবং ব্যবহৃত হচ্ছে নিরাপত্তার আধুনিক জিনিসপত্র। কন্ডোমনিয়াম কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তা সম্পৃক্ত এই সকল জিনিসপত্রের যথেষ্ট স্টক রয়েছে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে এসবের যথাযথ ব্যবহারও তারা করে থাকে। এমনটা হয়তো অ্যাপার্টমেন্টের বেলায় নাও পেতে পারে। অনেক বিল্ডিং এন্ট্রেন্সে ২৪ ঘণ্টা সিকুউরিটি গার্ড নিয়োজিত থাকে এবং সম্পূর্ণ বিল্ডিং সিসিটিভি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকে সবসময়।
স্পেস
একটি কন্ডোমনিয়াম এবং অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যেকার অন্যতম একটি পার্থক্য হচ্ছে স্পেস। রেসিডেন্সিয়াল অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে যেমন সীমিত সুযোগসুবিধা তেমনি স্পেসও খুব কম থাকে। আলো বাতাস চলাচলের জন্য সচরাচর রেসিডেন্সিয়াল অ্যাপার্টমেন্টের চেয়ে অধিক স্পেস থাকে কন্ডোমনিয়ামে। আমরা অনেকেই খোলামেলা পরিবেশে থাকতে পছন্দ করি। তাই আমাদের পছন্দের তালিকায় কন্ডোমনিয়াম অ্যাপার্টমেন্টগুলো থাকে শীর্ষে।
এক্সক্লুসিভ
কন্ডোমনিয়ামগুলো এক্সক্লুসিভলি তৈরি করা হয়ে থাকে। খরচ, স্পেস এবং অসাধারণ ফিচারে তৈরি হওয়া এই কমপ্লেক্সগুলো মানের দিক থেকে অন্যান্য সাধারণ অ্যাপার্টমেন্টের চেয়ে আলাদা ও উন্নত হয়ে থাকে। সকল আধুনিক সুযোগসুবিধাসহ একটি জমি এখনকার সময়ে খুঁজে পাওয়া সত্যি অনেক কঠিন। তাই হয়তো হাতে গোনা খুব কম কন্ডোমনিয়াম কমপ্লেক্সই রয়েছে বাংলাদেশে। তাই অনেকেই কন্ডোমনিয়াম কমপ্লেক্সে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা জীবনের একটি সেরা সুযোগ মনে করেন। অন্যদিকে রেসিডেন্সিয়াল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে চাহিদামত।
নানা উপাদান নিয়ে তৈরি হওয়া এই কন্ডোমনিয়াম এবং অ্যাপার্টমেন্টগুলো বরাবরই প্রপার্টি ক্রেতাদের আকর্ষণ করে। আশা করা যায়, কন্ডোমনিয়াম এবং অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যেকার পার্থক্যগুলো অনেকেই জেনে গেছেন। ওপরে লেখা পার্থক্যের সাথে সহমত কিংবা দ্বিমত থেকে থাকলে অবশ্যই নীচের কমেন্ট সেকশনে জানাতে ভুলবেন না। এরকম আরও লেখা পড়তে ভিজিট করুন বিপ্রপার্টি ব্লগ।