Reading Time: 3 minutes

ডিজনির কার্টুন আমরা কে দেখিনি? আলাদীন, সিনডেরেলাদের রাজ্যে হারিয়েছি আমরা সবাই। আমাদের সবারই পছন্দের ডিজনি কার্টুন এবং এর ক্যারেক্টারগুলি। যদিও ডিজনির সব কার্টুন অথবা চলচ্চিত্রই তৈরি কল্পনার আশ্রয় নিয়ে, মজার বিষয় হল ডিজনির রূপকথার দুর্গ সবগুলোই আসলে সত্যিকার লোকেশনের উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদের আজকের এই লেখায় তেমন কিছু বাস্তব লোকেশন এবং সেগুলোর সাথে ডিজনির সৃষ্টির ছবি মিলিয়ে দেখব। ডিজনির মুভি এবং থিম পার্ক, উভয় জায়গাতেই এই লোকেশনগুলো দেখা যায়।

ডিজনির এই ক্রিয়েটিভ সৃষ্টিগুলো আসলেই মনোমুগ্ধকর। এসবের পেছনের কারিগরেরা হয়ত সবগুলো থেকে সমান পরিমাণে আইডিয়া নেন নি তবে প্রতিটি সৃষ্টির পেছনেই কিছু না কিছু ইন্সপিরেশনের বিষয়টি স্পষ্ট। এমনকি কিছু কিছু অ্যানিমেটেড ডিজনি ছবি বিভিন্ন ট্র্যাডিশনাল রূপকথার উপর ভিত্তি করে বানানো। তাই বাস্তবের বিভিন্ন স্থাপনার সাথে এর মিল থাকাটাই বরং স্বাভাবিক।

নিউখওয়ান্সটেইন দূর্গ (NEUSCHWANSTEIN CASTLE), বাভারিয়া, জার্মানি

অনুকরণে – স্লিপিং বিউটি দুর্গ, ডিজনিল্যান্ড।

ওয়াল্ট ডিজনি তার স্ত্রী লিলিয়ানের সাথে ইউরোপ ভ্রমণে যান এবং এই দুর্গটি দেখে ইন্সপায়ার্ড হন। পরবর্তীতে এর অনুকরনেই গড়ে উঠে থিম পার্কের রয়্যাল ক্যাসলটি। মূল দুর্গটি উনিশ শতকের এবং তখনকার শাসক দ্বিতীয় লুডউইক এটি নির্মাণ করেন ১৮৯২ সালে। লুডউইক ছিলেন মিউজিক কম্পোজার রিচার্ড ওয়াগনরের বড় ভক্ত। তার প্রতি সম্মান জানাতেই এই দূর্গ তৈরি হয় যা পরবর্তীতে ডিজনিল্যান্ডের স্লিপিং বিউটি ক্যাসেলের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।     

গ্রার তাজমহল, ভারত

অনুকরণে – আলাদীন সুলতানের রাজপ্রাসাদ

খুঁজলে এমন কোন মেয়েকেই পাওয়া যাবে না যিনি আলাদীনের ভক্ত এবং ছোট থাকতে প্রিন্সেস জেসমিনের মতন রাজপ্রাসাদে বাস করতে চান নি। আর কেনই বা হবে না,  এই ডিজনির রূপকথার দুর্গ যে বিখ্যাত আগ্রার তাজমহলের অনুকরণে তৈরি। শ্বেত মার্বেল পাথরে তৈরি এই তাজমহল অনেকের জন্য স্বপ্নেরই নামান্তর। বিনা কারণেই তো আর এটি পৃথিবীর সপ্তার্শ্চয্যের একটি হয় নি! ১৬৩২ সালে তৎকালীন মোঘল বাদশাহ শাহজাহান তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী মমতাজের স্মৃতি ধরে রাখার উদ্দেশ্যে (তাজমহল প্রাঙ্গনেই রয়েছে মমতাজের কবর) এই কালজয়ী স্থাপনা নির্মান করেন। আর এর অনুকরণেই তৈরী হয়েছে আলাদীন সুলতানের রাজপ্রাসাদ।

আলকাজার অফ সেজোভিয়া, স্পেন

অনুকরণে – স্নো-হোয়াইট মুভিতে রাণীর দূর্গ

স্নো হোয়াইট মুভিতে দেখানো রানীর দুর্গটি অনুপ্রেরণা নিয়েছে মধ্য স্পেনের আলকাজার অফ সেজোভিয়া থেকে। শত শত বছর ধরে এটি ব্যবহৃত হয়েছে স্পেনের বিভিন্ন সম্রাটের অধীনে। ১৮৬২ সালে এটি আগুনে ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। একটি উপত্যকায়র এমন একটি স্থানে এর অবস্থান যেন দেখলে মনে হয় এটি কোন বড় জাহাজের মাস্তুল। আমেরিকার ম্যাজিক কিংডম এবং জাপানের টোকিওর ডিজনিল্যান্ড, দুইটিই অনুপ্রেরণা নিয়েছে এটি থেকে।

দ্যি আইস প্যালেস, কিউবেক, কানাডা

অনুকরণে – ফ্রোজেন মুভিতে এলসার আইস প্যালেস

ফ্রোজেন হল সাম্প্রতিক সময়ে ডিজনির সবচেয়ে জনপ্রিয় কয়েকটি মুভির একটি। ফ্রোজেন মুভিতে এলসার আইস প্যালেস বানানো হয় কানাডার কিউবেক প্রদেশের একটি বিখ্যাত স্থাপনার সাথে মিল রেখে। দ্যি আইস হোটেল, কিংবা ফ্রেঞ্চ ভাষায় “হোটেল দি গ্লেস” হল সে স্থাপনা। এই হোটেলটি এজন্যই বিখ্যাত যে এটি প্রতি বছর শীতের সময় দেখা যায়। প্রতি বছরে এর স্থাপত্যশৈলী বদল হয়, শুধু বদল হয় না এই আশ্চর্য তথ্যটি, এই স্থাপনা সমস্তটিই বরফ দিয়ে তৈরি!

নিষিদ্ধ নগরী (Forbidden City), চীন।

অনুকরণে – রাজপ্রাসাদ, মুলান।

ডিজনির বিখ্যাত সিনেমা মুলান-এ সম্রাটের প্রাসাদ বানানো হয়েছিল চীনের বেইজিং-এ অবস্থিত নিষিদ্ধ নগরীর অনুকরণে। মোগল বাদশাহদের যেমন ছিল হারেম ঠিক তেমনি এটি ছিল মিং এবং কুইং ডাইন্যাস্টির রাজাদের জন্য বানানো। সেকালে এতে শুধুমাত্র রাজপরিবারের অনুমতি ছিল এর ভেতরে প্রবেশের, সম্রাটের অনুমতি ছাড়া অন্যদের জন্য এতে প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। সেখান থেকেই হয়ত “নিষিদ্ধ নগরী” নামটির উদ্ভব। এখন এটি সকলের জন্য উন্মুক্ত এবং পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় একটি স্থান।

ডিজনির কার্টুন বা সিনেমার ভক্ত আমরা সবাই। আর সেই ডিজনির স্রষ্টারা ভক্ত ছিলেন এসব স্থাপনার। এসব স্থাপনার অধিকাংশই কালজয়ী। তাই সম্ভব হলে ঘুরে আসতে চেষ্টা করবেন। আরও অনেক স্থাপনাই আছে ডিজনির অনুপ্রেরণার লিস্টে। সেগুলো সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী হলে হয়ত এর দ্বিতীয় পর্ব আসবে ভবিষ্যতে কখনো। সে পর্যন্ত বিদায়! আর্টিকেলটি কেমন লাগলো আমাদের জানাতে ভুলবেন না!

Write A Comment