Reading Time: 3 minutes

দেশের একটি বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর হল সিলেট। বিভাগীয় এ শহরটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত। অসংখ্য চা-বাগান, ওলি আউলিয়ার মাজার আর মন ভুলানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত এ শহরটি। এছাড়া এ অঞ্চলের বিশাল এক জনগোষ্ঠী যুক্তরাজ্যের লন্ডন প্রবাসী বলেও দেশে সিলেটের অনেক সুনাম আছে। তবে, সম্প্রতি আরও একটি কারণে সিলেট শহরের প্রতি সবাই আগ্রহী হয়ে উঠছেন, সিলেট গড়ে উঠছে একটি ডিজিটাল শহর হিসাবে। সিলেট সিটি করপোরেশন এবং অন্যান্য সরকারী সংস্থার তত্ত্বাবধানে এই শহরকে একটি ডিজিটাল শহর হিসাবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। চলুন দেখে নিই এই শহরকে ডিজিটালাইজেশনের জন্য কীভাবে প্রস্তুত করে নেয়া হচ্ছে। 

ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক তার

Sylhet City Skyline
সিলেট শহরের একটি ব্যস্ত এলাকা

সিলেটের তারবিহীন একটি সড়ক সম্প্রতি সবার নজরে এসেছে। শাহজালালের দরগার সংযোগ সড়কটিতে মাথার উপরে ঝুলে থাকা কোন তার নেই। পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড বা পিডিবি সিলেট শহরে মাথার উপর ঝুলে থাকা সব তারকে ভূগর্ভস্থ কেবল দিয়ে প্রতিস্থাপন করার কাজ হাতে নিয়েছে যা নিশ্চিতভাবে শহরটিকে একটি ডিজিটাল শহরে পরিণত করবে। এরই অংশ হিসাবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১ নং ওয়ার্ডে শাহজালাল (রঃ) এর দরগা সংলগ্ন রাস্তার সকল বৈদ্যুতিক তার মাটির নিচ দিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকি যে সব পিলার ছিল, তাও উপরে ফেলা হয়েছে। এই ডিজিটালাইজেশন সম্পূর্ণ এলাকার চেহারা পাল্টে দিয়েছে।
মাথার উপর ঝুলে থাকা তার যে শুধু দেখতে বাজে তাই না, এটি অনিরাপদও বটে। দেশে যদিও এটি খুবই প্রচলিত ব্যাপার তবে এ প্র্যাক্টিস বদলানো উচিত। ডিজিটাল শহর সিলেটে তা শুরু হয়ে গিয়েছে। আশা করা যায় অন্যান্য শহরও দ্রুত একই পথে হাঁটবে সিলেটের দেখাদেখি।  

বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই

Image of Wi-Fi signs on the street
সিলেটে ৬২টি পয়েন্টে মিলছে ফ্রি ওয়াইফাই ইন্টারনেট

পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডঃ একে আবদুল মোমেন গত বছর জানুয়ারিতে বলেছিলেন, সিলেট হবে দেশের প্রথম ডিজিটাল সিটি যেখানে নগরের বাসিন্দারা শহরের যে কোন জায়গায় বিনামূল্যে ওয়াইফাই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাবেন। তার কথানুযায়ী  আইসিটি ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল একটি পাবলিক ওয়াইফাই জোনের উদ্যোগ নেয়। গত ২৩শে জুন ২০১৯ তারিখে “ডিজিটাল সিলেট সিটি” প্রজেক্টের অংশ হিসাবে পাবলিক ওয়াইফাই ইন্টারনেটের এ প্রকল্প শুরু হয়। নগরীর ৬২টি আলাদা লোকেশনে ১২৬টি অ্যাক্সেস পয়েন্টকে এ সুবিধার আওতায় আনা হয়। এতে হাজার হাজার মানুষ শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ওয়াইফাই সুবিধা আবে যা যে কোন ডিজিটাল শহরের নমুনা।

উন্নত প্রযুক্তির নিরাপত্তা ক্যামেরা মনিটরিং

Image of Security Cameras on the Street
আই পি ক্যামেরা শহরকে করে তুলছে আরও নিরাপদ

“ডিজিটাল সিলেট সিটি” প্রজেক্টের কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল বিখ্যাত চীনা কমিউকেশন্স কোম্পানী হুয়াওয়ের সাথে যৌথ উদ্যোগে নগরীতে স্থাপন করেছে ফেস রিকগনিশন (চেহারা সনাক্তকারী) ক্যামেরা এবং যানবাহনে বসেছে ডিজিটাল নাম্বারপ্লেট যার জন্য আছে এ-এন-পি-আর বা আউটমেটিক নাম্বারপ্লেট রিকগনিশন। এসবের মূল উদ্দেশ্যই হল শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার এবং আধুনিক করা। এ প্রযুক্তি ইতোমধ্যেই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ব্যবহার করতে আরম্ভ করেছে এবং এর সুফলও শুরু হয়েছে। মোট ১১০টি আইপি ক্যামেরা বসানো হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং রাস্তায়। এসব অত্যাধুনিক ক্যামেরা পূণ্যভূমি সিলেটকে করে তুলছে আরও নিরাপদ ও আধুনিক। 

হাই-টেক পার্ক (সিলেট ইলেক্ট্রনিক্স সিটি)

Image of the Software Technology Park in Jessore
সিলেটে গড়ে উঠবে হাই-টেক পার্ক (ছবিতে যশোরের টেকনোলজি পার্ক)

সিলেট শহর থেকে ২৮ কিলো দূরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় তৈরী হচ্ছে হাই-টেক পার্ক যা সিলেট ইলেক্ট্রনিক্স সিটি নামেও পরিচিত। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের দ্বারা নির্মিতব্য এই বিশাল প্রজেক্টে শেষ হলে তা হবে সিলেট শহরের ডিজিটালাইজেশনের আরেকটি বড় ধাপ। ১৬২ একর এলাকা জুড়ে গড়ে উঠা বিশাল এ প্রজেক্টে থাকবে আইটি অফিস, ইলেক্ট্রনিক ফ্যাক্টরী, পার্ক, আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, পাঁচ তারা হোটেল, শপিং মল এমনকি গলফ কোর্স পর্যন্ত! এখানে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে যার মধ্যে অনেকেই থাকবেন আইটি প্রফেশনাল। তাই আইটি সেক্টরে সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকা হয়ে উঠবে আরও প্রসিদ্ধ।

সিলেট অনেকদিক থেকেই দেশের শীর্ষস্থানীয়। দেশের সিংহভাগ চা উৎপাদন হয় এই বিভাগে। দেশের সবচেয়ে বেশি এবং সর্ববৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র এখানে, দেশের একমাত্র তেলেরক্ষেত্রেরও খোঁজ পাওয়া গিয়েছে সিলেটে। এরসাথে যদি “ডিজিটাল সিলেট সিটি” প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়ে যায় তাহলে দেশের অন্যতম সেরা এলাকা হয়ে উঠবে এটি। আর এসব উন্নয়নের সাথে হাতে হাত ধরে আসবে সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকার রিয়েল এস্টেটের উন্নয়ন তা বলাই যায়। এজন্য সিলেট নিয়ে বিপ্রপার্টিও যথেষ্ট আশাবাদী। ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ইতোমধ্যেই বিপ্রপার্টির অপারেশন আছে যা শীঘ্রই হয়ত ছড়িয়ে পড়বে সিলেটেও। 

Write A Comment