Reading Time: 3 minutes

করোনাভাইরাস এবং কোভিড-১৯, শব্দ দুটি আমাদের চিরচেনা পৃথিবী এবং সমাজ ব্যবস্থাকে যেন চোখের পলকে দিয়েছে বদলে। অনেক নিত্যদিনের স্বাভাবিক জিনিসও এখন হয়ে উঠেছে চরম অস্বাভাবিক। হাত মেলানোর মত স্বাভাবিক বিষয়ও এখন প্রায় অসম্ভব। ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা বিশ্বমানের ছিল, এ দাবী অমূলক। তবে নগরজীবনের আর সবকিছুর মতই আমাদের গণপরিবহন ব্যবস্থাতেও পড়েছে এই মহামারীর প্রভাব। লোকালবাসে পুরাতন দিনের মত বাদুড়ঝোলা হবার দৃশ্য এখন বিলুপ্ত। মানুষও আস্তে আস্তে করতে শুরু করেছে বিভিন্ন বিকল্প চিন্তাভাবনা। সরকারের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ, বাসে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ, ট্রেনের টিকিট কাটার বিষয়টি সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক করে ফেলা তার কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। আমাদের আজকের লেখা বর্তমানে ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়েই।

বর্তমানে কীভাবে চলছে বিভিন্ন ঢাকার গণপরিবহন?

কসাইবাড়ি রেলগেট
ঢাকায় এমন যানজট অনেকটাই কম এখন

এবছরে ২৬শে মার্চ থেকে শুরু করে ৩১ মে পর্যন্ত বিশাল একটা সময় দেশে সব ধরণের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বন্ধ ছিল। এরপর থেকে বাস, ট্রেন, লঞ্চ চলতে শুরু করলেও তা শুরু হয় সীমিত আকারে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে। এ অবস্থা চলছে এখন পর্যন্ত। আগে যেখানে বাসে দাড়ানোর জায়গা পাওয়া যেত না এখন সেখানে বাসে পাশাপাশি সিটে কেউ বসছে না। এই যে মানুষের চিন্তার পরিবর্তন সামান্য কয়েকমাস আগেও তা ছিল অকল্পনীয়। ভিড়ের চাপে যেখানে বাসে উঠাটাই ছিল কষ্টসাপেক্ষ সেখানে এখন ঢাকার অনেক বাসই ফাঁকা যাচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিএনজি অটোরিক্সাগুলো ফাঁকা, যাত্রী থাকলেও একসাথে একাধিক যাত্রী চোখে পড়ছে না। মানুষ ভাবতে শুরু করেছে বিকল্প উপায়। 

পাঠাও, উবার, সহজের মত রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলোর অবস্থা

অটো রিকশা
এমন অলস পড়ে আছে অনেক রাইড শেয়ার  করা যানবাহন

গণপরিবহন চালু হবার পরেও বেশ কিছুদিন রাইড শেয়ারিং সার্ভিসগুলো বন্ধ ছিল। তবে সম্প্রতি প্রবল দাবীর মুখে কিছুকিছু রাইড শেয়ারিং চালু করার অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে শুরু করেছে উবার ও অন্যান্য রাইড শেয়ারিং সার্ভিস যেগুলো গাড়িতে করে রাইড শেয়ারিং সেবা প্রদান করে থাকে। মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং এর অনুমতি এখনো দেয়া হয় নি। তবে ভাড়া চুক্তিতে এখনো অহরহই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন মোটরসাইকেল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাবার জন্য। আবার বসুন্ধরা আবাসিকের মত রাজধানীর অনেক এলাকাতেই এখন রিক্সা চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে সেখানে মানুষ চলাচলের জন্য ভাড়া মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে যা একধরণের রাইড শেয়ারিংই বটে। 

বাইসাইকেল কিংবা স্কুটি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে চলাচলের চমৎকার উপায়

বাই সাইকেল
বাইসাইকেল হতে পারে কমিউটিং এর চমৎকার উপায়

মানুষ সবসময়ই পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়। এটি মানুষের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য যা অন্য যে কোন কিছু থেকে মানুষকে আলাদা করে তোলে। এজন্যই দেখা যাচ্ছে সামাজিক দূরত্বের এই যুগে মানুষ নানাভাবে নিজেকে অ্যাডজাস্ট করে নিচ্ছে। তারই একটি উদাহরণ হল সারা বিশ্বের মতই ঢাকা শহরেও দেখা যাচ্ছে অনেককে সাইকেল কমিউটিং এর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। সাইকেল কেনাবেচার দোকানগুলো এবং গ্রুপগুলো এখন সরগরম, অনেকেই বাইসাইকেল কিনছেন এবং এতে যাতায়াতে উৎসাহী হয়ে উঠছেন।

ঢাকা শহরে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষের বাসা হতে কর্মস্থলের দূরত্ব ৫ থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে। আর প্রতিদিন একটি বাইসাইকেলে এই দূরত্ব পারি দেয়া খুবই সম্ভব। আর রাস্তায় যানবাহন কম থাকায় রাস্তা এখন বেশ ফাঁকাও বটে। এছাড়া সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে স্বল্প  দূরত্বে চলাচলের জন্য সাইকেলের চেয়ে ভাল বাহন আর একট নেই। সব মিলিয়ে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চলাচল ও কমিউটিং এর জন্য সাইকেল হয়ে উঠেছে বেশ জনপ্রিয়।

আবার যারা তুলনামূলক বেশি দূরত্বে যাতায়াত করেন এবং সাইকেলে স্বাছন্দ্যবোধ করেন না তাদের জন্য রয়েছে মোটরবাইক ও স্কুটি। স্কুটিগুলো ওজনে কিছুটা কম, অনেকাংশে তেল খরচ কম এবং নিয়ন্ত্রণ সহজ হওয়ায় দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেকক্ষেত্রেই মেয়েদেরকে ঢাকা শহরে স্কুটিতে যাতায়াত করতে দেখা যায়। ফলে ঢাকার গণপরিবহন খাতে সাইকেল এবং স্কুটিতে যাতায়াত যে আরও বাড়বে তা নিশ্চিতভাবেই অনুমান করা যায়।

ভবিষ্যৎ ভাবনা

কোভিড-১৯ রোগটি চিরদিনের মত আমাদের চেনাজানা সমাজব্যবস্থাকে বদলে দিয়ে যাচ্ছে। অনেক সাধারণ জিনিসও হয়ত কোভিড পরবর্তীসময়ে দেখতে পাওয়া যাবে না। এজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে ভবিষ্যতের জন্য। আপনি সাইকেল বা স্কুটি চালাতে না পারলে হয়ত এখনই শিখে ফেলা উচিত। বাসে এবং অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর গণপরিবহনে বা বাহনে ভ্রমণ করতে না চাইলে সকল দ্বিধা ঝেড়ে ফেলার উৎকৃষ্ট সময় এখন। কারণ ঢাকার গণপরিবহন ভাবনার বিপুল পরিবর্তন আসছে, সাইকেল, স্কুটি, অনলাইন বিভিন্ন সার্ভিস হয়ে উঠবে জনপ্রিয়। এজন্য আমাদেরও দরকার ভাবনায় পরিবর্তন আনা।

ঢাকা শহরে গণপরিবহনের সাম্প্রতিক অবস্থা এবং কিছু বিকল্প ভাবনা নিয়ে আমাদের লেখাটি কেমন লাগলো? আপনি কীভাবে পরিবর্তিত সময়ে যাতায়াত করবেন? জানিয়ে দিন আমাদেরকে, কমেন্ট সেকশনে। আর রিয়েল এস্টেট সম্পর্কে জানতে এবং বিভিন্ন লাইফস্টাইল সংক্রান্ত আপডেট পেতে চোখ রাখুন বিপ্রপার্টির ব্লগে যেখানে আমরা প্রতিদিন নতুন একটি করে লেখা পাবলিশ করি।

Write A Comment