সংস্কৃতিতে মুখর আমাদের এই ঢাকা মহানগর। জীবনের সবকয়টি উপাদান এই শহরে আছে। দেশ বিদেশের সকলের আকর্ষণের মূল কেন্দ্র এই ঢাকা। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর এই কথাটি এখন যারা বাঙালি নন তারাও জেনে গেছেন বেশ ভাল করেই। সেজন্যই উৎসব কিংবা প্রয়োজনে ঢাকা থেকে কেনাকাটায় তারা বরাবরই আগ্রহী। দেশের মানুষ তো বটেই, বিদেশ থেকে ঘুরতে আসা অতিথিরাও ঢাকার পুরনো কেনাকাটার জায়গা গুলোতে ভিড় জমিয়ে থাকেন। আর কেনই বা ভিড় হবে না। কি নেই এই জায়গাগুলোতে নানারকম দেশীয় ব্র্যান্ড, ডিজাইন এবং সুলভমূল্য। সবকিছুর এক চমৎকার মিশ্রণ এই ঢাকার পুরনো কেনাকাটার জায়গাগুলোতে। এতটা সময় ধরে এই কেনাকাটার জায়গাগুলো ঢাকায় আছে বলে সকলের কাছে এগুলো যেমন ভরসার একটা জায়গা করে নিয়েছে তেমনি তাদের হৃদয়ে বসিয়েছে ভালোবাসার ছাপ। একে একে জেনে নেই ঢাকার কিছু পুরনো কেনাকাটার জায়গা সম্বন্ধে।
ইস্টার্ন প্লাজা
শহরের প্রথম শপিং সেন্টার হবার খ্যাতি নিয়ে যুগযুগ ধরে হাতিরপুল বাজারের ঠিক পাশেই এই শপিং সেন্টারটি অবস্থিত। ৮০ দশকের সবচেয়ে প্রথম আধুনিক শপিং সেন্টার এটি। ইস্টার্ন প্লাজায় নামী দামী অনেক ব্র্যান্ডের শাড়ি, শার্ট এবং স্যুট এর দোকান রয়েছে। “নীল কমল” এর মত বিখ্যাত শাড়ির ব্র্যান্ড, ইতিমধ্যে যাদের কিনা শ খানেকের মত ব্রাঞ্চ হবে। তারাও তাদের প্রথম ব্রাঞ্চের যাত্রা শুরু করেছিলেন এই ইস্টার্ন প্লাজাতে। এত চমৎকার একটি শপিং সেন্টার ইস্টার্ন প্লাজা ঢাকার পুরনো কেনাকাটার জায়গা এর মধ্যে প্রথমে স্থান করে নিয়েছে।
ঢাকা নিউ মার্কেট
নিউ মার্কেট ঢাকার বেশ পুরনো এবং জনপ্রিয় একটি মার্কেট। ৬৬ বছর বয়সী এই মার্কেটটি নির্মিত হয়েছিল আমাদের দেশ স্বাধীন হবার কুড়ি বছর পূর্বে। এই মার্কেটটি নির্মাণ হয়েছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, লালবাগ ও আজিমপুরের বসবাসরত মানুষদের প্রয়োজনে। এটা নির্মাণ হয়েছিল ১৯৫৪ সালে। ৩২ একর জমিতে নির্মিত এই মার্কেটির কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৫২ সালে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ সবকয়টি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের সাক্ষী হয়ে আছে ঢাকার পুরনো কেনাকাটার জায়গা এই মার্কেটটি। এটি শুধু মার্কেট নয়, ঐতিহাসিক একটি জায়গাও বটে। বর্তমানে এই জায়গাটি ডিএনসিসি ঢাকা নিউ মার্কেট নামেও পরিচিত। এই মার্কেটটি অনেকের কাছেই একটি সুপ্রশস্ত জায়গা এবং নানারকম দোকান-পাটের জন্য পরিচিত।
চাঁদনী চক/গাউসিয়া মার্কেট এবং ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট
চাঁদনী চক, গাউসিয়া মার্কেট এগুলো আগে নিউ মার্কেটেরই অংশ হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু, সময়ের সাথে নিউ মার্কেটের অবকাঠামো পরিবর্তনের কারণে এগুলো এখন আলাদা দুটি মার্কেটে পরিণত হয়েছে। দুটি মার্কেটই বর্তমানে শত শত কাপড়ের দোকান এবং আরও আনুষঙ্গিক দিয়ে পরিপূর্ণ। হাল ফ্যাশন থেকে শুরু করে দেশি বিদেশি ট্রেন্ডের নানা রকম পোশাক এখানে পেয়ে যাবেন। শুধু দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে মানুষ কেনাকাটা করতে আসে এটা বললেও ভুল হবে বরং বিদেশ থেকে ঘুরতে আসা মানুষও হোক ছেলে হোক মেয়ে সকলেই এখানে অন্তত একবার ঢুঁ মারবেই। কেননা, এখানে আছে ফ্যাশনেবল সকল পোশাক যা কিনা আপনি পেয়ে যাচ্ছেন কম দামে। এমন চমৎকার কম্বিনেশন আর যেন কোথাও নেই।
গুলিস্তান এবং বঙ্গবাজার মার্কেট
গুলিস্থানের নানা মার্কেটের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মার্কেটটি ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৫৫ সালের মধ্যে সন্ধান পাওয়া যায়। এই মার্কেটটি ক্রিয়া সামগ্রী, ইলেকট্রনিক্স এবং আসবাবের জন্য বেশ বিখ্যাত। এখানে ৪০০ টির বেশি দোকান রয়েছে। এছাড়াও, বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম ও তার আশেপাশের রাস্তার দোকানগুলোও সমানভাবে বিখ্যাত। গুলিস্তানের আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেটটি বাংলাদেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ মার্কেট। যেটি ৮০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গুলিস্তানের আশেপাশের রাস্তার দোকানগুলোও বেশ জনপ্রিয়। এই দোকানগুলোও ৮০ থেকে ৯০ দশকের সময়ে নির্মিত হয় এবং সেই থেকে এখনও সকল পর্যায়ের মানুষরা এখানে কেনাকাটার জন্য আসে।
উত্তরা মাসকাট প্লাজা
৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিষ্ঠিত এই মাসকাট প্লাজাটি উত্তরাবাসীদের জন্য আধুনিক শপিং কমপ্লেক্স। উত্তরা এলাকাটি ঢাকার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত হওয়াতে, ঢাকার প্রানকেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরেই অবস্থিত। দৈনন্দিন জীবনের সকল চাহিদা পূরণ করতে অনেকেরই ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে তখন আসতে হত, হোক তা কাপড় কেনা কিংবা অন্যান্য কিছু। এমন দুর্ভোগ থেকে উত্তরাবাসীদের মুক্তি দিতেই তখন মাসকাট প্লাজার যাত্রা শুরু। এই শপিং কমপ্লেক্সটি ছিল উত্তরা বসবাসকারী মানুষদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এবং ঘুরাঘুরির একটি উল্লেখযোগ্য স্থান। বিমানবন্দর এখান থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত বলে সেখানে বসবাসরত মানুষরাও এই মাসকাটে কেনাকাটা ও সময় কাটাতে আসেন। এই শপিংমলে রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকান, চমৎকার সব ফুড কোর্ট যা কিনা অনেক গ্রাহকদের টেনে আনে সেই দূর-দুরান্ত থেকে।
কেনাকাটা হোক কিংবা একটু ঘুরে আসা ঢাকার পুরনো কেনাকাটার জায়গা গুলো আপনাকে কখনই নিরাশ করবে না। এতটুকু জোর দিয়ে বলাই যায়। হাল ফ্যাশনের কাপড় কিনতে যদি শপিংমলে ঘুরে আসতে চান তাহলে এই জায়গাগুলো আপনার জন্যই।