Reading Time: 4 minutes

সবচেয়ে ব্যয়বহুল না হলেও, বেশিরভাগ মানুষের জন্য প্রপার্টি এবং রিয়েল এস্টেট বেশ ব্যয়বহুল একটি খাত। বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রিয়েল এস্টেট বলতে আমরা বুঝি সম্পদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। আর এর শক্ত অবস্থানের কারণে অন্যান্য খাতের তুলনায় রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগেই তাই অনেকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন। এ কারণেই হয়তো রিয়েল এস্টেট খাতের চাহিদা নাটকীয়ভাবে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে কষ্ট করে উপার্জিত অর্থ রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগের আগে ঢাকার রিয়েল এস্টেট মার্কেট কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে সে সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। আর তাই ঢাকার রিয়েল এস্টেট মার্কেট পরিচালনা করার মূল বিষয়গুলোই মূলত থাকছে আমাদের আজকের ব্লগে।

ডেমোগ্রাফিক

Demographics
রিয়েল এস্টেট মার্কেটের চলমান ট্রেন্ডকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে ডেমোগ্রাফিকস

রিয়েল এস্টেট এর বাজারকে প্রভাবিত করার সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে ডেমোগ্রাফিক। যা মূলত একটি দেশের জনসংখ্যার বয়স, বর্ণ, লিঙ্গ, আয়, মাইগ্রেশন এর ধরন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমন্বয় করে তৈরি করা হয়। যদিও প্রায়শই এ ধরনের পরিসংখ্যানকে উপেক্ষা করেই বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে রিয়েল এস্টেট খাতের মূল্য নির্ধারণ এবং কোন কোন ধরনের প্রপার্টির চাহিদা মূলত সবচেয়ে বেশি তা বুঝতে এ ধরনের তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমনকি কোন জাতির ডেমোগ্রাফিকে যদি বড় কোন ধরনের পরিবর্তন ঘটে, তবে এর রেশ কয়েক দশক ধরেই রিয়েল এস্টেট খাতকে প্রভাবিত করতে পারে।

বিভিন্ন ভাবেই এই ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তনগুলো রিয়েল এস্টেট মার্কেটকে প্রভাবিত করতে পারে, তবে একজন বিনিয়োগকারী এমন কিছু প্রশ্ন করতে পারেন যে-

১।  আরও অধিক সংখ্যক মানুষ অবসর নিলে ছুটি কাটানোর জন্য দ্বিতীয় বাড়ি কেনার চাহিদা যদি বেড়ে যায় তবে এর প্রভাব কেমন হবে? অথবা

২। যদি আয়ের পরিমাণ কমে আসে এবং সন্তানরা অন্যত্র বসবাস করা শুরু করে, সেক্ষেত্রে সুবিশাল বাড়ি কেনার আদৌ চাহিদা কতটা থাকবে?

এ ধরনের প্রশ্নই একজন বিনিয়োগকারীকে রিয়েল এস্টেট খাতের ধরন এবং অবস্থান সম্পর্কে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে আগেভাগেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে। 

সুদের হার

Interest rates
হাউজিং মার্কেট এর অগ্রগতিতে আরেকটি বড় দিক হলো সুদের হার

রিয়েল এস্টেট মার্কেটে সুদের হারের প্রভাবও উল্লেখ করার মতো। ধরুন আপনি যদি বন্ধকী-সহ কোনও বাড়ি কেনার কথা ভেবে থাকেন, তবে সেক্ষেত্রে বন্ধকী ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে সুদের হার নির্ণয় করে তা নিয়ে গবেষণা করা আপনার নিজের জন্যই বেশ উপকারী  হবে। আবাসিক সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে সুদের হারের পরিবর্তন সম্পত্তি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি সামর্থ্যকে বেশ ভালোভাবেই প্রভাবিত করে। কেননা সুদের হার যত কমতে থাকবে, বাড়ি কেনার জন্য সম্পত্তি বন্ধক রাখার খরচও তত কমতে থাকবে, যা একদিকে রিয়েল এস্টেট খাতের চাহিদা বাড়াবে, অন্যদিকে মূল্য বৃদ্ধিতেও প্রভাব ফেলবে।  

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বিগত বছরে যখন ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সুদের হারের পরিমাণ একক অঙ্কে নেমে আসে, তখন রিয়েল এস্টেট মার্কেটে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। একদিকে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ নতুন বাড়ি কেনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়, অন্যদিকে হোম লোন নেয়ার জন্যও নির্বাচিত হন। আর তাই এটা জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি যখন সুদের হার বৃদ্ধি পায়, তখন বন্ধক রাখার ক্ষেত্রে এর খরচও বেড়ে যায়, যা রিয়েল এস্টেট এর চাহিদা এবং মূল্য দুটোই কমিয়ে দেয়।

অর্থনীতি

Economy
রিয়েল এস্টেট খাতের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করতে একটি অর্থনৈতিক মন্দাই যথেষ্ট

রিয়েল এস্টেট খাতের মূল্যকে প্রভাবিত করে এমন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা। যা সাধারণত জিডিপি, কর্মসংস্থানের তথ্য, উৎপাদন কার্যক্রম, দ্রব্যমূল্যের হার ইত্যাদি অর্থনৈতিক নির্ধারকের উপর নির্ভর করে। আর তাই যখন অর্থনীতির চাকা অচল হয়ে পড়ে, তখন এর অবস্থান রিয়েল এস্টেট খাতকেও প্রভাবিত করে। তবে পরিবর্তনশীল অর্থনীতির চিত্র রিয়েল এস্টেট খাতকে নানা ভাবে প্রভাবিতও করে থাকে।

যেমন ধরুন- অর্থনৈতিক মন্দায় হোটেল ব্যবসায় বিনিয়োগ করার চেয়ে অফিস বিল্ডিং-এ বিনিয়োগ করা কম ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কেননা হোটেল ব্যবসা অনেকাংশেই নির্ভর করে মানুষের উপার্জন ক্ষমতার উপর। একটি হোটেল রুম ভাড়া দেয়া আর স্বল্পমেয়াদের জন্য ইজারা দেয়া অনেকটা একই কথা, যা অর্থনৈতিক মন্দার সময় একজন গ্রাহক খুব সহজেই এড়িয়ে যেতে পারেন। তবে অন্যদিকে, অফিসের জন্য সাধারণত দীর্ঘমেয়াদে ইজারা দেয়া হয়, যা চাইলেও অর্থনৈতিক মন্দার মাঝে পরিবর্তন বা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। ফলে ঝুঁকির পরিমাণটাও কম থাকবে।      

সরকারি নীতিমালা

Legislations
রিয়েল এস্টেট বিষয়ক আইনানুগ যেকোনো পরিবর্তন প্রপার্টি মার্কেটের উপর বেশ বড় রকমের প্রভাব ফেলে

প্রপার্টির চাহিদা এবং মূল্য এর উপর প্রভাব ফেলার ক্ষেত্রে সরকারি আইনকানুন আরেকটি বড় বিষয় হিসেবে কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে রেজিস্ট্রেশন ফি, কর এবং ভর্তুকি সহ এমন কিছু বিষয় যা সীমিত করণের মাধ্যমে সরকার সাময়িক সময়ের জন্য রিয়েল এস্টেট এর চাহিদা বাড়াতে সাহায্য করলেও, তা একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে পৌঁছানো পর্যন্ত ধরে রাখা প্রয়োজন। তবে বর্তমান সময়ে সরকারের দেয়া প্রণোদনা বিষয়ে মানুষের মধ্যে রিয়েল এস্টেট মার্কেটের চাহিদা এবং যোগান সম্পর্কে কিছুটা ভুল ধারণাও হতে পারে।  

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, অঘোষিত অর্থ বৈধ করার জন্য রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগের সুযোগ থাকার কথা, যার প্রভাব বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট মার্কেটে বেশ ভালোভাবেই সাড়া ফেলেছে। বিগত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে রিয়েল এস্টেট খাতে অঘোষিত অর্থের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩,২০০ কোটি টাকা। এছাড়াও, রিয়েল এস্টেট খাতকে প্রভাবিত করে এমন আরও অনেক জটিল বিষয় রয়েছে। আজকের ব্লগে মূলত ঢাকার রিয়েল এস্টেট মার্কেটে সরাসরি প্রভাব ফেলে এমন কিছু বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে, তবে বাস্তবে এর ভিন্নতাও দেখে যেতে পারে। তবে রিয়েল এস্টেট মার্কেট পরিচালনার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে, এই খাতে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে এসব ব্যাপারে আগে থেকেই পরিষ্কার ধারণা থাকা উত্তম।  

Write A Comment

Author