Reading Time: 4 minutes

পর্দার ওপারের জীবন দেখতেই আমরা অনেকেই ভিড় জমাই সিনেমা হলে। আর পর্দার গল্পগুলোর সাথে ভাগাভাগি করে নেই আনন্দ, হাসি আর কান্না! কখনো বাস্তব থেকে নেয়া গল্প কখনো বা কল্পনার গল্প সবকিছুই আমাদের মন ভুলিয়ে রেখেছে দশকের পর দশক। কখনো সিনেমার গল্পে কখনওবা অভিনেতা বা অভিনেত্রীর টানে আমরা ছুটে গিয়েছি সিনেমা হলে অসংখ্যবার। বিনোদনের এক অনন্য মাধ্যম ছিল এই সিনেমা হল। তাই এক সময় এ দেশে ১৪৩৫ টির মতো সিনেমা হলের সন্ধান পাওয়া যেত যা আজ কমতে কমতে ৭০-৮০ এর ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে। কেন আজ সিনেমা হলের সংখ্যা কমে এসেছে এই প্রশ্নের উত্তর আজ নাইবা আমরা খুজি। বরং চলুন ফিরে যাই সেই সোনালি যুগে যেখানে  সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যাওয়াও ছিল এক আনন্দ ঘন ঘটনা। গোটা দেশের সিনেমা হল নিয়ে নয় আজকের গল্পটা ঢাকা শহরের সিনেমা হল নিয়ে! 

ঐতিহাসিক সিনেমা হল  

সিনেমা হলের ক্যামেরা
হারিকেন আর লন্ঠন দিয়ে সিনেমা প্রদর্শন করা হত প্রথম দিকে

বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা হল “পিকচার হাউজ”। যদিও এর পরবর্তিতে নাম হয় শাবিস্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় লেজার নামক একজন ইংরেজ আরমানিটোলায় প্রতিষ্ঠা করেন এই সিনেমা হল। সম্ভবত এই প্রেক্ষাগৃহের স্থানটি প্রথমে ছিল নবাব ইউসুফ খানের। পরে লেজার নামে জনৈক ইংরেজ এটি কিনে নেন। গ্রেটাগার্বোর একটি ছবি দিয়ে এই সিনেমা হলের যাত্রা শুরু হয়। হারিকেন আর লন্ঠন দিয়ে সিনেমা প্রদর্শন করা হত প্রথম দিকে। প্রতিদিন দুইটি করে ছবি দেখানো হত এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবারে দেখানো হত তিনটি করে সিনেমা। আলাউদ্দিন ও আশ্চর্য প্রদীপ, দ্য কিড, মাই ড্যাডি, মহব্বত এমন সব বিখ্যাত সিনেমা দেখানো হয়েছিল শাবিস্তানে। একুশ শতকের শুরুতে এই হলটি বন্ধ হয়ে যায়। পিকচার হাউজের পর ধীরে ধীরে নির্মিত হতে থাকে আরও অনেক সিনেমা হল। ১৯২৪ সালে সদরঘাটের চিত্তরঞ্জন এ্যাভিনিউতে স্থাপিত হয় ঢাকার দ্বিতীয় প্রেক্ষাগৃহ সিনেমা প্যালেস। ১৯৩০ সালে নির্মিত হয় লায়ন সিনেমা হল। জনসন রোডে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশের আজাদ প্রেক্ষাগৃহটি প্রথমে পরিচিত ছিল ‘মুকুল হল’ নামে। আরও আছে মানসী সিনেমা হল, মায়া সিনেমা ইত্যাদি। বাংলাদেশের সিনেমা ইতিহাস ঘাটলে এমন আরও অজস্র সিনেমা হলের নাম এমনেই চলে আসবে!  

ডিজিটাল সিনেমা হল 

মডার্ন সিনেমা হল
নতুন সিনেমা মুক্তি পেলে সেখানে কোন শ্রেণির দর্শক সমাগম বেশি হতে দেখা গেল

মাঝখানের একটা সময় এমন ছিল মানুষ সিনেমা বিমুখ হয়ে গিয়েছিল। হলে গিয়ে দেখা হতো না আর কোন সিনেমা। ঠিক তখনই এই ডিজিটাল সিনেমা হল গুলোর আরম্ভ হয়। টু ডি থেকে শুরু করে থ্রিডি সবধরনের সিনেমা তখন দেখানো শুরু হল এই সিনএমা হলগুলোতে। স্টাইলিশ ইন্টেরিয়রে এমন সিনেমা হল দেখাও যেন একটা সোনালি অভিজ্ঞতা।  সিনেমাহলের ভিতরকার পরিবেশ কেমন, নতুন সিনেমা মুক্তি পেলে সেখানে কোন শ্রেণির দর্শক সমাগম বেশি হতে দেখা গেল। পরিবার বা বন্ধু নিয়ে হলগুলোতে সিনেমা দেখতে যাওয়া আবার আগের মত বাড়তে থাকলো। আর কেনই বা বাড়বে না, সিনেমা দেখার সাথে হলে সময় কাটানর এক্সপেরিয়েন্সটাও এখানে অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে। ধানমন্ডির সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত স্টার সিনেপ্লেক্স, পান্থপথের বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত ব্লকবাস্টার সিনেমাস, শ্যামলীতে অবস্থিত শ্যামলী সিনেমা এবং নিউমার্কেটে অবস্থিত বলাকা সিনেওয়ার্ল্ড বর্তমানের ডিজিটাল সিনেমা হল। উন্নতমানের প্রজেক্টর, উন্নতমানের সাউন্ড কোয়ালিটি, আরামদায়ক আসনব্যবস্থা, পরিষ্কার টয়লেট, খুবই টিপটপ গোছানো পরিবেশ ইত্যাদি আপনার মনে একপ্রকার শান্তি এনে দিবে। এসব সিনেমাহলে ছোট শিশু হতে শুরু করে বৃদ্ধ অব্দি সব দর্শকদের সমাগম দেখা যায়। টিকেটের দাম সাধারণত ২০০-৪০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ, দাম তুলনামূলক একটু বেশি হওয়ায় এখানে উচ্চবিত্তের সমাগম বেশি। এই ক্যাটাগরির সবগুলো হল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং বলাকা বাদে বাকি সবগুলো হলের টিকেট অনলাইনে বুক করা যায়। আধুনিক সময়ের সাথে সিনেমা হল গুলোতেও এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। 

দশকের সিনেমা হল 

সিনেমা হল
স্মৃতির পাতায় এই হল গুলোর পদচারনা এখনো শক্তিশালী

আগেকার অন্যতম জনপ্রিয় সিনেমা হল বলাকা। এটি ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। ঢাকার নিউ মার্কেটের বিপরীতে এটি অবস্থিত। ঐতিহ্যে ভরা এই সিনেমা হলে এখনো গেলে সেই আগের আপ্যায়ন খুঁজে পাবেন। ঢাকা শহরের অন্যতম প্রাচীন সিনেমা হল হচ্ছে মধুমিতা সিনেমা হল। স্বাধীনতার আগে ১৯৬৭ সালে যাত্রা শুরু করে হলটি।  মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা এবং টিকাটুলির অভিসার সিনেমা হল গুলো এখনো বিখ্যাত। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে রয়েছে আরও বিখ্যাত কিছু সিনেমা হল সময়ের পরিক্রমায় এখন হয়তো আগের অবস্থায় নেই কিন্তু, স্মৃতির পাতায় এই হল গুলোর পদচারনা এখনো শক্তিশালী। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের শাহীন সিনেমা, পুরান ঢাকার হাজারীবাগে অবস্থিত বিজিবি অডিটোরিয়াম, কাকরাইলের রাজমনি সিনেমা, নয়াপল্টনের জোনাকী সিনেমা, রায়েরবাগের পুনম সিনেমা, যাত্রাবাড়ীর গীত সিনেমা হল। এগুলো এখনো মনে করিয়ে দেয় স্কুলের পড়ে লুকিয়ে সিনেমা দেখার সময় গুলো! কিংবা কলেজের বন্ধুদের সাথে নিয়ে ঘুরে আসার মূহুর্তগুলো। এখনকার সিনেমা হলের কাছে হয়তো এই সিনেমা হল গুলো ঘোলাটে পর্দা, মোটামুটি ধরণের সাউন্ড কোয়ালিটি ও ভাঙ্গাচোরা আসন ব্যবস্থা নিয়েই আছে কিন্তু তাতে কী! পেছনের সম গুলো মনে করার মত আনন্দ আর কী কোথাও আছে? মিরপুর-১১.৫ এ অবস্থিত পূরবী সিনেমা, গাবতলী-টেকনিক্যাল মোড়ে অবস্থিত এশিয়া সিনেমা এবং রায়েরবাজারে অবস্থিত মুক্তি সিনেমা হল যেন ইতিহাসেরই সাক্ষী! 

ঢাকার এক একটি সিনেমা হলই জানে শতশত গল্পের কথা! সেই সকল সিনেমা হল থেকে একটু একটু গল্প নিয়ে ছিল আজকের এই ব্লগ। কেমন লাগলো জানাতে কমেন্ট করুন! 

1 Comment

  1. মোহাম্মদ আলী উজ্জল

    সিনেমার স্বর্ণালি যুগ ৯০ এর দশক। ভালো অভিনেতা, নায়ক- নায়িকা ও পরিচালকের মৃত্যু, টিভি সিরিয়ালের প্রভাব, ভালো কাহিনীর অভাব করোনা সহ বিভিন্ন কারণে মানুষ আর সিনেমা হলে যাচ্ছে না। বর্তমানে যে কয়টা হল আছে সামনে ৫ বছরের মধ্যে আর সে কটাও থাকবে না। বর্তমানে সিনেমা দেখলে মনে হয় টেলিফ্লিম, টাকা থাকলেই নায়ক- নায়িকা হওয়া যায় যাদের সিনেমা ফ্রি দিলেও হলে গিয়ে দেখে না। বর্তমানে সাকিব খান ও আরিফেন শুভ ছাড়া আর কোনো ভালো নায়ক নাই, তবে বেশ কিছু নায়িকা আছে। শুধু ২জন নায়ক আর কয়েক জন নায়িকা দিয়ে তো আর সিনেমা হয় না, বাঁকি যারা অভিনেতা তারা সবাই (২- ১জন ছাড়া) পর পারে। এখন সবাই ইউটিবেই সিনেমা দেখে। কিছুদিন পর সিনেমার সাথে সাথে বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল গুলো বিলুপ্ত হবে তাদের বিজ্ঞাপনের জন্য। আমি ইউটিবেই তো সব পাচ্ছি কেন আমি টিভিতে দেখবো? তবে খবরের চ্যানেল গুলো থাকবে।

Write A Comment