Reading Time: 5 minutes

জনবহুল ঢাকায় বর্তমানে প্রায় ২ কোটির অধিক মানুষ বসবাস করলেও, প্রতিনিয়ত এ শহরের জনসংখ্যা বেড়েই চলছে। বাড়ছে বাড়ি কেনা, ভাড়া নেয়ার চাহিদা। এক্ষেত্রে একেকজনের পছন্দ একেক এলাকা। তবে যেসকল এলাকায় নাগরিক সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান এমন এলাকায় বাড়ি কেনার চাহিদা বরাবরের মতোই বেশি থাকে। ছিমছাম, সাজানো-গোছানো, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ঢাকায় যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এলাকাগুলো রয়েছে তার মধ্যে উত্তরা এবং মিরপুর এলাকা দুইটি অন্যতম।  

ঢাকার কয়েকটি সুপরিকল্পিত এলাকার মধ্যে একটি হল উত্তরা। সুবিশাল অ্যাপার্টমেন্ট, মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা, চিকিৎসা সুবিধা থেকে শুরু করে বিনোদনের সকল ব্যবস্থাই রয়েছে উত্তরাতে। অন্যদিকে, ঢাকার অন্যতম পুরাতন এলাকা হিসেবে মিরপুরও রয়েছে অনেকের পছন্দের তালিকায়। বিগত কয়েক বছরে এই এলাকায় লক্ষণীয় বেশ কিছু পরিবর্তনও হয়েছে। আর তাই দিনকে দিন মানুষের আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে এই এলাকায় বসবাসের জন্য। 

তবে ঢাকার স্বয়ংসম্পূর্ণ আবাসিক এলাকা হিসেবে আপনার কোনটি পছন্দ? উত্তরা নাকি মিরপুর? 

চলুন আজকের ব্লগ থেকে এই দুই এলাকা বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক! 

স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন

ঢাকা শহরে বসবাস করার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত আমাদেরকে নানা ধরনের হিসাবনিকাশ করতে হয়। বাড়ি ভাড়া কত দিতে হচ্ছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে কিনা, স্কুল-কলেজ, কমিউনিটি, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ অন্যান্য আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান আছে কিনা ইত্যাদি। এক্ষেত্রে উত্তরার কথা বলতে গেলে চলে আসে উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরের কথা। যেখানে পার্ক, প্রশস্ত রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল ইত্যাদি সবই আছে প্রতিটি সেক্টরের খুব কাছেই। এর মধ্যে বসবাসের জন্য উত্তরার সেক্টর ৭, ৯, ১১, ১৩ এবং ১৪ এই সেক্টরগুলোতে আপনি বিভিন্ন সাইজ এবং বাজেটের অ্যাপার্টমেন্ট পাবেন আপনার চাহিদামতো।   

তবে আপনার প্ল্যান যদি থাকে মিরপুরে বসবাস করার, সেক্ষেত্রে চাহিদামতো বাজেটে অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য মিরপুর হতে পারে আপনার পরবর্তী ঠিকানা। মধ্যবর্তী পরিবারের অনেকেই তাই বাড়ি কেনার জন্য বেছে নেন মিরপুর এরিয়াকে। মিরপুর ১, পল্লবী, মিরপুর ১১, দারুসসালাম এর মতো এলাকাতে আপনি বাজেটের মধ্যেই অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে পারবেন। তবে আপনার যদি বাজেটের সীমাবদ্ধতা না থাকে, সেক্ষেত্রে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকাকেও রাখতে পারেন পছন্দের তালিকায়।  

যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা 

উত্তরা থেকে ঢাকা এবং ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার জন্য যাতায়াতের বেশ ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। গণপরিবহন কিংবা গাড়ি, যেভাবেই আপনি যাতায়াত করেন না কেন, উত্তরা থেকে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার জন্য আপনি যানবাহন পাচ্ছেন যেকোনো সময়ই। বিদেশ ভ্রমণে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়া উত্তরা থেকে কিছুক্ষণের দূরত্ব মাত্র। এমনকি ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়েটিও দুইটি অংশে বিভক্ত হয়ে উত্তরার মধ্য দিয়েই গিয়েছে। শহরের বাইরে যাওয়ার জন্য উত্তরায় রেলওয়ে স্টেশনও রয়েছে। 

অন্যদিকে উত্তরার মতো যাতায়াতের দারুণ ব্যবস্থা রয়েছে মিরপুরেও। এখান থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াতে আপনি বাস পেয়ে যাবেন খুব সহজে। মিরপুরের একটি দিক নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি, পান্থপথের সাথে সংযুক্ত হয়েছে, অন্যপাশে রয়েছে ফার্মগেট, তেজগাঁ, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার ইত্যাদি। তবে মিরপুর থেকে আপনি খুব সহজেই এয়ারপোর্ট রোড, মহাখালী যেমন যেতে পারবেন, তেমনি গুলশান এবং বনানীতে যেতেও আপনাকে তেমন ভোগান্তি পোহাতে হবে না। ফলে আপনি শহরের যেকোনো জায়গায় যেতে পারছেন কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই। 

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে মেট্রো রেলের নির্মাণ কাজ। একবার এই রেল লাইনের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে মিরপুরবাসী খুব দ্রুত সময়ে মতিঝিল চলে যেতে পারবেন বলেই আশা করা যাচ্ছে।   

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান 

উত্তরায় বসবাসরত মানুষের কাছে বহুল পরিচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ঢাকা উত্তরের সেরা কলেজ রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ। স্কলাস্টিকা, মাস্টারমান্ড, রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল এবং কলেজ, আগা খান স্কুল, এবং ইন্টারন্যাশনাল টার্কিশ হোপ স্কুল সহ স্বনামধন্য বেশ কিছু স্কুল। ফলে উত্তরায় বসবাসে আপনার সন্তানের সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে আপনাকে আর চিন্তিত হতে হবে না। 

এবার আসুন মিরপুরের কথায়, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজ, মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এবং কলেজ, এসওএস হারম্যান মেইনার কলেজ এবং স্কলাস্টিকা মিরপুরের অন্যতম জনপ্রিয় কলেজ। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস বা বিইউপি এবং এমআইএসটি এর মতো স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ও মিরপুরেই অবস্থিত। আর তাই বলতেই হয়, বসবাসের জন্য মিরপুর বেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি এলাকা।     

হেলথকেয়ার ফ্যাসিলিটি 

উত্তরা কিংবা মিরপুর, যে জায়গার কথাই বলি না কেন, চিকিৎসা সেবা নিয়ে এ দুই এলাকায় বসবাসরতদের তেমন একটা চিন্তিত না হলেও চলে। কেননা, কুয়েত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, বারডেম, ল্যাবএইড, এবং ইবনে সিনা এর মতো সুপরিচিত হাসপাতাল থেকে আপনি যেকোনো প্রয়োজনে স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারবেন।  

অন্যদিকে মিরপুরের সুপরিচিত হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর মধ্যে রয়েছে ডেল্টা হাসপাতাল, হার্ট ফাউন্ডেশন, এক্সিম ব্যাংক হাসপাতাল এবং লাজ ফার্মার দুটি শাখা সহ অন্যান্য আরও অনেক চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র এবং ফার্মেসি।   

শপিং সেন্টার

কেনাকাটার কথা বলতেই, উত্তরার সুপরিচিত রাজলক্ষ্মী শপিং সেন্টার এর নাম উঠে আসবে সবার প্রথমে। বহু বছর ধরে এই নাম পরিচিত মানুষের মুখে মুখে। এমনকি লোকেশন চেনানোর জন্যও অনেকেই রাজলক্ষ্মী মার্কেটের কথা উল্লেখ করে থাকেন। এছাড়া পলওয়েল কনভেনশন মার্কেট, ম্যাসকট প্লাজা, রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স ইত্যাদি শপিং সেন্টার ইত্যাদি উত্তরা এবং এর আশেপাশের এলাকায় অবস্থিত মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া বাজেটের মধ্যে শপিং করার ক্ষেত্রে উত্তরার ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে অন্যতম পছন্দের একটি হল সেক্টর ৭ এর সোনারগাঁ জনপথের স্ট্রিট মার্কেটগুলো।        

অন্যদিকে মিরপুরে কেনাকাটা এর কথা বলতেই ক্যাপিটাল টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্স, মিরপুর শপিং সেন্টার, রজনীগন্ধা মার্কেট, সনি স্কয়ার উঠে আসবে, যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে, হোম অ্যাপ্লায়েন্স সহ যেকোনো জিনিসই খুব সহজেই পাওয়া সম্ভব। 

এছাড়া মিরপুর যে মার্কেটের জন্য বিখ্যাত তা হল বেনারশী পল্লী। ঢাকা শহরের সেরা শাড়ির মার্কেট প্লেস হিসেবে পরিচিত বেনারশী পল্লীতে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ শপিং করতে আসেন। 

বিনোদনের ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সমূহ 

ঢাকার স্বয়ংসম্পূর্ণ আবাসিক এলাকা হিসেবে উত্তরায় অন্যান্য সকল সুযোগ-সুবিধার পাশপাশি গল্প-আড্ডা এবং খাওয়া-দাওয়ার জন্য বেশ ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে বেশ জনপ্রিয় কয়েকটি রেস্টুরেন্টের মধ্যে রয়েছে অজো আইডিয়া স্পেস, পিজ্জা হাট, টেকআউট, ট্রভেইল ইত্যাদি। এছাড়া ছুটির দিনে বিকেলে লং ড্রাইভে যাওয়ার জন্য উত্তরায় দিয়াবাড়ির মতো চমৎকার একটি জায়গাও রয়েছে। লেক ঘিরে প্রকৃতির কাছে নিরিবিলিতে কিছুটা সময় কাটাতে উত্তরাবাসী তাই খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারেন দিয়াবাড়ি থেকে। 

এছাড়া উত্তরার প্রায় প্রতিটি সেক্টরেই পার্ক রয়েছে। ক্লান্ত দিনশেষে কিংবা পরিবারের সাথে প্রকৃতির মাঝে কিছুটা সময় কাটাতে উত্তরার পার্ক এবং লেকগুলো তাই বিশেষ পরিচিত। 

অন্যদিকে আমরা যদি মিরপুরের কথা বলি, তবে কোন ধরনের দ্বিধা ছাড়াই বলতে হবে বিনোদনের জন্য মিরপুর এক কথায় সেরা। ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য মিরপুরে রয়েছে শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এছাড়া বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং জাতীয় চিড়িয়াখানাও ঢাকার জনবহুল এই লোকেশনে অবস্থিত।      

আর তাই উপরের এই বিষয়গুলোকে অনুযায়ী বলাই যায় যে, বসবাসের জন্য যারা ঢাকার স্বয়ংসম্পূর্ণ আবাসিক এলাকা এর সন্ধানে আছেন, তারা মিরপুর এবং উত্তরা এলাকা দুইটিকে রাখতে পারেন পছন্দের তালিকায়। দৈনন্দিন জীবনের সুযোগ-সুবিধা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শপিং সেন্টার এবং চিকিৎসা সেবা ইত্যাদি সকল ব্যবস্থাই এই দুইটি এলাকায় থাকায়, আপনাকে শহরের অন্য কোন জায়গায় না গেলেও চলবে!    

Write A Comment

Author