Reading Time: 5 minutes

এক কথায় ফ্যাশনেবল, ব্যবহার উপযোগী এবং প্রয়োজনীয় একটি জিনিস গেজেট। অস্তিত্ব নির্ধারণ করা যাবে না এমন বস্তুর সাথে যোগাযোগ করা থেকে শুরু করে হাতের কব্জি দেখেই শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করা এবং বাড়ি থেকে কয়েকশ মাইল দূরে থেকেও বাড়ির সব কিছু পর্যবেক্ষণ করার এই সুযোগ শুধুমাত্র অসাধারণ এই গেজেটসগুলোর কারণেই বর্তমানে সম্ভব হচ্ছে। অসম্ভবকে সম্ভব করা তাই এখন আর কোনও কাল্পনিক বিষয় না। বাস্তবতার অংশ হয়ে অত্যাধুনিক এই গেজেটসগুলো এখন আমাদের জীবনের সাথে জড়িত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পাওয়া যাচ্ছে স্মার্ট গেজেটস। ঢাকার বাইরে এ ধরনের গেজেটস পাওয়া গেলেও, ঢাকা শহরই এখন পর্যন্ত অন্যতম সেরা জায়গা যেখানে আপনি প্রয়োজনীয় যেকোনো ডিভাইস কিনতে পারবেন খুব সহজে। তো চলুন জেনে নেয়া যাক, ঢাকায় গেজেটস কিনতে কোথায় যাবেন?

বসুন্ধরা সিটি

বসুন্ধরা সিটি
বসুন্ধরা সিটিতে আছে গ্যাজটের জন্য সেরা কিছু দোকান

শুরুটা ঢাকার ব্যস্ততম সড়কে গড়ে ওঠা শপিং সেন্টারের কথা দিয়েই করা যাক। ঢাকায় যারা বসবাস করেন তাদের জন্য শহরের এই মার্কেটটি যেন ঘোরাফেরার অন্যতম জায়গা। জামাকাপড় থেকে শুরু করে জুয়েলারি, হ্যান্ডিক্রাফট এর দোকান, ঘর সাজানোর জিনিসপত্র ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, ফোন এবং গেজেটস; এখানে সব কিছুই পাওয়া যায় একই ছাদের নিচে। বলছি বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের কথা। অবশ্য গেজেটস কেনার জন্য এই সেন্টারটি সেরা না হলেও, শুরুটা কিন্তু এই জায়গা থেকে করাই যায়। এই শপিং কমপ্লেক্সের ১ম, ৫ম এবং ৬ষ্ঠ তলায় রয়েছে প্রযুক্তি নির্ভর যন্ত্রপাতির সব দোকান। যারা বিভিন্ন ধরনের গেজেটস এর ব্যাপারে অনেক উৎসাহী, তারা স্মার্ট-টেকনোলজির জগতে যাত্রা শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় যেকোনো জিনিসই পেয়ে যাবেন এই শপিং সেন্টারে। স্মার্ট হোম ডিভাইস থেকে শুরু করে স্মার্ট লাইটস, ভিআর সেট, পরিধানযোগ্য যন্ত্র এবং ক্যামেরার মতো জিনিসপত্র প্রচুর পরিমাণে খুঁজে পেতে ঘুরে আসতে পারেন পান্থপথে অবস্থিত এই শপিং কমপ্লেক্সটি থেকে।

ইউ.এ.ই মৈত্রী কমপ্লেক্স

মৈত্রী কমপ্লেক্স
সব রকম গ্যাজেটের সন্ধান মিলবে এখানে

দেখতে বিশাল হলেও খুব কম মানুষের কাছেই পরিচিত ইউ.এ.ই মৈত্রী কমপ্লেক্সটি অবস্থিত বনানীতে। দূর থেকে দেখলে বিশ্বাসই হবে না যে এই মার্কেটে এত ধরনের দোকান রয়েছে। তবে মার্কেটটির ভেতরে ঢোকা মাত্রই চোখে পড়বে বিভিন্ন নামকরা ব্র্যান্ডের দোকান, ডিজাইনার টেইলর এবং দারুণ সব গেজেটের দোকান। যদিও এই মার্কেটে খুব বেশি দোকান নেই, তবে এখানে আপনি নিশ্চিন্তে উন্নতমানের অনেক জিনিসের খোঁজ পাবেন। ড্রোন, পরিধানযোগ্য বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইস, গেমিং এর জিনিস, ভিআর সেট এসব কিছুই খুঁজে পাবেন ইউ.এ.ই মৈত্রী কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ফ্লোরে।

ইষ্টার্ন প্লাজা

ইষ্টার্নপ্লাজা
পছন্দমত মূল্যছাড়ে এখান থেকে নিতে পারেন যেকোন গ্যাজেট

আপনি যদি বিগত ২৫ বছর ধরে ঢাকা শহরে বসবাস করে থাকেন, তাহলে ইস্টার্ন প্লাজা নিয়ে বেশ কিছু পছন্দের স্মৃতি হয়তো আপনার থাকবে। কারণ, ঢাকার আধুনিক শপিং মলের মধ্যে এটিই ছিল প্রথম। এই মার্কেট থেকে কেনাকাটা করা সে সময় অ্যাডভেঞ্চার এর চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না। একটা দীর্ঘ সময় ধরে এই শপিং মলে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অনেক জিনিস পাওয়া যেত, যা পুরো শহর জুড়ে, এমনকি পুরো দেশ জুড়ে আর কোথাও পাওয়া যেত না। এই মার্কেটের ৪র্থ তলায় ছিল গেজেটের সব দোকান, যেখানে সেই সময় শুধুমাত্র হোম অ্যাপ্লায়েন্স এবং পোর্টেবল ডিভাইস পাওয়া যেত। আগের সেই ট্রেন্ড এখন আর না থাকলেও, ইস্টার্ন প্লাজায় এখনও অনেক ধরনের গেজেটস পাওয়া যায়, এর মধ্যে মোবাইল ডিভাইস, স্মার্ট হোম গেজেটস, অত্যাধুনিক হোম অ্যাপ্লায়েন্স অন্যতম।  

মোতালিব প্লাজা

মোতালিব প্লাজা
গ্যাজেটের রাজ্য

মোতালেব প্লাজার কথা বললেই সবার প্রথম মাথায় ঘোরে গেজেটস এর কথা! সাধ্যের মধ্যে ঢাকায় গেজেটস কিনতে, অন্যান্য শপিং সেন্টারের পাশাপাশি মোতালেব প্লাজার নামটি ইতোমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে। ছোট-বড় বিভিন্ন ডিভাইস যেমন- ড্রোন, পরিধানযোগ্য স্মার্ট আইটেম, ভিআর সেট, ভিডিও ডোরবেলস এবং অন্যান্য স্মার্ট হোম সিকিউরিটি ডিভাইসের সেন্টার বলা যায় ইস্টার্ন প্লাজার ঠিক পাশেই অবস্থিত মোতালেব প্লাজাকে। ঢাকার মধ্যে প্রয়োজনীয় সব স্মার্ট ডিভাইস খুঁজে পাওয়ার জন্য এই মার্কেটটি দুর্দান্ত এক জায়গা বলতে পারেন।

যমুনা ফিউচার পার্ক 

যমুনা ফিউচার পার্ক
একের মধ্যে সব কিছু পাবেন এখানে

বিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা যমুনা ফিউচার পার্কটিতে রয়েছে সারি সারি দোকান। এখানে সময় নিয়ে একটু কষ্ট করে খুঁজলে আপনিও হয়তো পেয়ে যাবেন স্মার্ট ডিভাইস থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজের প্রয়োজনীয় যেকোনো জিনিস। আর যা না বললেই নয়, এই মার্কেটটি বিশ্বের ১৩ তম বৃহত্তম শপিং মলের মধ্যে একটি। তাই তো দীর্ঘ এই শপিং মলের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গেজেট এর দোকান খুঁজতে আপনাকে বেশ খানিকটা কষ্টই করতে হবে। কেননা, এসব দোকানগুলো মার্কেটের বিভিন্ন কর্নারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। স্মার্ট ঘড়ি থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক স্মার্ট রেফ্রিজারেটর সব কিছুরই সন্ধান পাবেন এই মার্কেটে, তবে সঠিক দোকানটি খুঁজে পেতে হয়তো কিছুটা সময় লেগে যাবে।

বিসিএস কম্পিউটার সিটি

বিসিএস কম্পিউটার সিটি
বিসিএস কম্পিউটার সিটি

মোতালেব প্লাজার পাশাপাশি, বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে আপনি পেয়ে যাবেন কম্পিউটার এবং গেজেটস বিষয়ক যেকোনো ডিভাইসের খোঁজ। গেজেটস কেনার জন্য ঢাকার মধ্যে এই সেন্টারটি অন্যতম। ভালো মানের ডিভাইসের খোঁজে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে আসেন। কেননা প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রয়োজনে বিসিএস কম্পিউটার সিটি আস্থার অন্য এক নাম। চার তলা বিশিষ্ট এই মার্কেটটিতে রয়েছে গেজেটস কেনাবেচার বিভিন্ন ধরনের দোকান। মিরপুর এবং ফার্মগেট এলাকার মাঝামাঝি বেগম রোকেয়া সরণীতে অবস্থিত বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে বছরের সেরা ডিভাইসগুলো খোঁজ পাবেন নিঃসন্দেহে।

অনলাইন 

অনলাইন শপিং হচ্ছে মোবাইল ফোনে
অনলাইন শপগুলোতে আছে উন্নতমানের গ্যাজেট

ঢাকায় গেজেটস কেনার জন্য অন্যতম সেরা জায়গা কোনও দোকান নয়, বরং সেটা হচ্ছে অনলাইন শপিং স্টোর। বিগত বছরগুলোতে জনপ্রিয়তার তালিকায় উঠে আসা অনলাইন শপিং স্টোরগুলোতে আপনি খুঁজে পাবেন প্রয়োজনীয় যেকোনো জিনিসের সন্ধান। অনলাইনের পাশাপাশি অনেক শপিং স্টোরের আবার মার্কেটে দোকানও রয়েছে, যেখানে গিয়ে আপনি সরাসরি প্রোডাক্টের মান পরীক্ষা করে তা কিনতে পারবেন। তবে সেটা ক্ষেত্র বিশেষে কিছু দোকানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অন্যথায়, সামনাসামনি না দেখে অনলাইন থেকেই প্রয়োজনীয় ডিভাইসটি কিনতে হয়। অনলাইন থেকে কেনা প্রোডাক্টটি হাতে পেতে ৩ দিন থেকে ১ মাসের মতো সময় লাগতে পারে, যদিও তা নির্ভর করবে প্রোডাক্টটি মার্কেটে আছে কী নেই তার উপর। তবে সরাসরি মার্কেটে গিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় না এমন অনেক কিছুর সন্ধানই হয়তো আপনি পেয়ে যাবেন অনলাইন শপিং সেন্টারগুলোতে।

বর্তমানে আমরা যেসব গেজেটস ব্যবহার করছি, সেগুলো হয়তো কিছুদিন আগেও সায়েন্স ফিকশনে দেখা যেত। তবে সেই অসম্ভব ব্যাপারটাই এখন বাস্তবে সম্ভব হচ্ছে বলা যায়। আর ঢাকায় বসেই আপনি যখন এ ধরনের ডিভাইসের খোঁজ পাচ্ছেন, তখন বিষয়টা আসলেই বেশ মজার। তাই গেজেট এর দুনিয়ায় ঘুরে আসতে চাইলে, বেছে নিন উপরে উল্লেখিত যেকোনো জায়গা এবং যাত্রা শুরু করে দিন গেজেটের দুনিয়ায়।

আপনি কি গ্যাজেট প্রেমী? আপনি কোন ধরনের গ্যাজেট বেশি ভালোবাসেন? কমেন্টে আমাদেরকে জানিয়ে দিন!

Write A Comment

Author