শীতকাল মানেই একটু আরামদায়ক উষ্ণতার খোঁজ। উলের বুননে, সোয়েটারের ভাঁজে কিংবা কম্বলে মোড়ানো একান্ত বিছানায় দীর্ঘক্ষণের অলসতা। হাড় কাঁপানো ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়াটাই তখন ভীষণ শক্ত কাজ। তবে একবার যদি গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে পারা যায়, তাহলে এই শীতকালই আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে তার অবারিত আনন্দ উপভোগ করতে। শীতকালে সবকিছুই থাকে স্থির। স্থিরতা আসে বাতাসের গতিতে, ঝিলের জলে, এমনকি নাগরিক জীবনের কর্মপ্রবাহেও। তবে এত শত স্থিরতার মাঝেও চাঞ্চল্য খুঁজে ফেরেন শীতবিলাসীরা। শীতের নরম মিষ্টি ঘ্রাণ নিতে চান বুক ভরে। খুঁজে ফেরেন ঢাকায় শীত বিলাসের প্রিয় কিছু জায়গা। তারা জানেন, ঘরের মাঝে নিজেকে তালাবদ্ধ করার থেকেও এই ঋতুতে উপভোগ করার রয়েছে আরও অনেককিছু। সেই অনেককিছুর ভীড়ে শীত বিলাসে ঢাকার সেরা ৩ টি জায়গা নিয়েই আজকের আলাপন।
পূর্বাচল ৩০০ ফিট
পূর্বাচল নামের এই জায়গার সৌন্দর্য কেবল চোখ জুড়ানোর নয়। এই অঞ্চলে বসবাসরত মানুষগুলোর মায়াবী জীবনযাত্রা আপনার ঝুলিতে যোগ করবে নতুন এক অভিজ্ঞতা। সম্ভবত ঢাকার যান্ত্রিকতা থেকে দূরে বলেই খুব সহজে তারা প্রকৃতির মতো সুন্দর ও সবুজ থাকতে শিখেছে। তবে কেবল এ কারণেই পূর্বাচলকে ঢাকায় শীত বিলাসের প্রিয় কিছু জায়গা এর একটি হিসেবে ভাবছি না। এর বাইরেও এই জায়গাটিকে আলাদা করে ভাবার কারণ হচ্ছে এর প্রকৃতির গতিশীল বৈচিত্র্য যা প্রতি মৌসুমে ধরা দেয় নতুন রূপে। আর সেই রূপটি শীত ঋতুতে ঠিক কতোটা মনোগ্রাহী সেটা জানতে হলে আপনাকে আসতে হবে পূর্বাচল, ৩০০ ফিট।
বলা হয়ে থাকে, শীতকালে পূর্বাচল তার সৌন্দর্যের চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছায়। বালু নদীর ধার থেকে শুরু করে পূর্বাচলের প্রতিটি অংশই একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। যেন প্রকৃতির ছন্দে ছন্দ মিলিয়ে চলার এক বিশাল আনন্দযজ্ঞ। খালি পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে শীতের মৃদুমন্দ বাতাস গায়ে লাগানোর সময়টুকু আপনাকে মনে করিয়ে দিতে পারে ৯০ দশকের ফেলে আসা গল্পগুলো থেকে কোনো এক শীত-বিকেলের কথা। বালু নদীর ধার ঘেষে হাঁটতে হাঁটতে মনের কোনে উঁকি দিতে পারে কনকনে শীতে তিস্তার বুকে ঝাপিয়ে পড়া কোনো এক অবাধ বালকের শৈশব। তবে কেবল স্মৃতি রোমন্থনেই নয়, পূর্বাচলের বালু নদী বর্তমান কে যাপন করার অপার সুযোগও দিয়েছে দু হাত ভরে। শীতকালেও এ নদী শুকায় না। নৌকা বেশ আপনমনেই দুলতে পারে বালু নদীর অপরিপক্ক স্রোতগুলোকে অনুসরণ করে। আর সেই নৌকার যাত্রী হয়ে, এমন একটা অসাধারণ মূহুর্তকে এড়িয়ে যাবার সাধ্য সম্ভবত আপনার হবে না। তবে, এই নৌ-ভ্রমণ যদি হয় শীতকালের কোনো এক পূর্ণচন্দ্রের রাতে, তবে নিঃসন্দেহে আপনি শীত বিলাসী। আপনার জন্যই এ ধরাধামে শীতঋতুর আগমন।
কেবল প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য কেন! পূর্বাচলের নীলামার্কেটে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়ানো ছোট ছোট দোকানগুলোও তো শীত উপভোগে পূর্বাচলকে বেছে নেয়ার আরও একটি কারণ। শীতকালে উৎসব শুরু হয় এখানে। মিষ্টির দোকানগুলোর ম-ম গন্ধ জ্বীভে জল আনে। তাই, চোখের ক্ষুধা মিটিয়ে, পেটের ক্ষুধাতেও মনোযোগী হতে হয় নীলামার্কেটে এসে। ভাপা পিঠা, চাপটি থেকে শুরু করে রান্না করা হাঁসের মাংস! শীতের দিনে প্রকৃতির পাশাপাশি এই অঞ্চলটি উৎসবের আমেজ ধরে রেখেছে তার খাবারেও।
শেফস টেবিল কোর্টসাইড, বেরাইড
শীত বিলাস মানে কিন্তু খাদ্য বিলাসও বটে!
তাইতো, শীত বিলাসীরা শীতকালে খাবার উপভোগের জন্য খোঁজেন ভিন্ন রকম জায়গা। আর এমনই একটি জায়গা হচ্ছে শেফ’স টেবিল কোর্টসাইড। নতুন বাজার মোড় থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটারের দূরত্বে অবস্থিত শেফস টেবিলে একই ছাদের নিচে অবস্থান করছে অনেকগুলো মাল্টি কুইজিন রেস্টুরেন্ট। সেই সাথে মজার ছলে সময় কাটাতে শিশুদের জন্যও এখানে রয়েছে একটি ছোট পার্ক। তবে শেফস টেবিল, ঢাকায় শীত বিলাসের প্রিয় কিছু জায়গা এর একটি হয়ে উঠেছে এর অবস্থান ও নান্দনিক গঠনশৈলীর জন্য। প্রত্যেকটি রেস্টুরেন্ট তৈরি হয়েছে কন্টেইনারের আদলে। বাইরে ও ভিতরে, বসার জন্য দুই রকমের ব্যবস্থাই রয়েছে এখানে। তবে, শীতকালে দিনের প্রথম ভাগের চাইতে শেষভাগেই অনেক বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে শেফস টেবিল। রাত নামার সাথে সাথে রঙিন আলোর ঝলকানিতে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দৃশ্যপটে বদলে যায় পুরো এলাকা। কনকনে শীতেও পারিবারিক আড্ডা শেফ’স টেবিলের টেবিলগুলোতে উষ্ণতা আনে। আর একারনেই, শীতের সন্ধ্যায় সম্পর্কের উষ্ণতাকে আরেকটু জিইয়ে রাখতে শীতবিলাসীরা ভীড় করেন শেফ’স টেবিল কোর্টসাইডে।
ঠিকানা ডে আউটার্স, বেরাইদ
শেফস টেবিল কোর্টসাইড থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঠিকানা ডে আউটার্স। পাশ দিয়ে প্রবাহমান শান্ত নদী আর প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, শীতকালে এ জায়গাটিতে এনে দেয় ভিন্ন মাত্রা। আর তাই ঢাকায় শীত বিলাসের প্রিয় কিছু জায়গা এর কথা বলতে হলে, নৈসর্গিক এই জায়গাটিকে এড়িয়ে যাবার উপায় থাকে না। বালু নদীর ধারে বাংলাদেশের গ্রামীণ স্থাপত্যশিল্পের আদলে গড়া তোলা বহুতল টিনের ঘর, পুরাতন শীতের ছাপ ফেলে যায়। রাত নামলে টিনের চালে শিশিরের টপ টপ শব্দ কানে লেগে থাকে। শিশির ভেজা ঘাসে পা রেখে হেঁটে আসা যায়, কয়েক কদম। চাইলে ফুডকোর্ট থেকে উদরপূর্তিটাও সেরে নেয়া যায় মুখরোচক খাবারে। তবে রাতে থাকার ব্যবস্থা নেই এখানে। সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্তই কেবল ঠিকানা ডে আউটার্স সঙ্গ দেবে আপনার শীতযাপনের। তবুও ঢাকার নাগরিক জীবন থেকে মুক্ত হয়ে শীতের রোমাঞ্চ উপভোগে এটুকু প্রাপ্তিও তো কম নয়!
আপনার প্রাপ্তির ঝুলিতে কতটুকু যোগ হল এই শীতে? ঢাকায় শীত বিলাসের প্রিয় কিছু জায়গা এর মধ্যে আপনি কোথায় যেতে চান? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।