Reading Time: 4 minutes

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বেশ জনপ্রিয় ডিএনসিসি নামে, যেখানে রয়েছে দেশের সেরা কিছু পরিকল্পিত এলাকা। পশ্চিম উত্তরা, পূর্ব উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, বিমান বন্দর, খিলক্ষেত, ভাটারা, বাড্ডা, রামপুরা, হাতিরঝিল, শিল্পাঞ্চল, তেজগাঁও, শেরে বাংলা নগর, মোহাম্মদপুর, আদাবর, দারুসসালাম, মিরপুর, পল্লবী, রূপনগর, শাহালী, কাফরুল, ভাষানটেক, ক্যান্টনমেন্ট, বনানী এবং গুলশান ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতায় পড়ে। পরিকল্পিত এই এলাকাগুলো বাদেও ঢাকা উত্তরে বসবাস করার আরও অনেক কারণ রয়েছে। যেমন- লাইফস্টাইল, ভাড়া ও সুযোগ-সুবিধার সামঞ্জস্য, দৈনন্দিন সুযোগ-সুবিধা সবকিছু এই দিককার এলাকায় রয়েছে। আরও রয়েছে চমৎকার কিছু কলেজ। তাই আজকে লিখবো ঢাকা উত্তরের সেরা কলেজ সমূহ নিয়ে।

রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ

রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ

১৯৯৪ সালে, মানুষের জন্য শিক্ষা এই শ্লোগান নিয়ে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ পথ চলা শুরু করে। বহু বছর শিক্ষার আলো ছড়িয়ে এই কলেজটি এখন শহরের অন্যতম সেরা কলেজ হিসেবে পরিচিত। উত্তরার বাসিন্দাদের কাছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই কলেজটি বেশ পছন্দের। এই কলেজের বয়স একদমই বেশি নয়, তবে অল্প সময়ের ভেতর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ এই প্রজন্মের অনেকের কাছে সেরা কলেজ হিসেবে পরিচিত। এখানে রয়েছে সহশিক্ষা ব্যবস্থা সহ দুটি শিফট। একাডেমিক সাফল্য ছাড়াও, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ছাত্রদের এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি রয়েছে যা এই কলেজে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের বেশ সহায়তা করে থাকে। এমনকি এই কলেজের ডিবেটিং ক্লাব জাতীয় পর্যায়ে অনেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণও করেছে। এই কলেজে একাডেমিক কার্যকলাপের বাইরে হোস্টেল সুবিধা থেকে শুরু করে চিকিৎসা সেবা, কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। 

ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ 

ঢাকা উত্তরের সেরা কলেজ এর মধ্যে সহজেই জায়গা করে নিবে মোহাম্মদপুরের মিরপুর রোডে অবস্থিত, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ (ডিআরএমসি)। প্রায় ৫২ একর জমির উপর নির্মিতএই ক্যাম্পাসটি শহরের অন্যতম বড় ক্যাম্পাস। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে, ডিআরএমসি তার একাডেমিক গুণমান বজায় রেখেছে এবং তা সততার যাথে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য কলেজ থেকে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ সহজেই আলাদা করা যায় এর ‘হাউজ ফ্যাসিলিটি’ এর জন্য। এখানে ছাত্রদের জন্য রয়েছে আলাদা ৬টি হাউজ, এবং একেকটি হাউজে প্রায় ১০০০ ছাত্রের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের তালিকায় শীর্ষে আছে। 

ঢাকা কমার্স কলেজ 

ঢাকা কমার্স কলেজ
ঢাকা কমার্স কলেজ

১৯৮৯ সালে যাত্রা শুরু করে ঢাকা কমার্স কলেজ। যাত্রার শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি লালমাটিয়া ও ধানমন্ডিতে ভাড়া বাসায় তাদের পাঠ্য কার্যক্রম শুরু করে এবং ১৯৯৫ সালের জানুয়ারিতে এটি মিরপুর ২ -এর নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়। দেশের সর্বপ্রথম কমার্স গ্রুপ বিশেষায়িত কলেজ এটি। ৯৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কলেজটি শুরু হলেও এখন ৭ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে এখানে। ৪ জন শিক্ষক এবং ১ জন কর্মী থেকে আজকের কমার্স কলেজ হয়ে উঠেছে ১৩৭ জন শিক্ষক এবং ১১৭ কর্মীর এক অনবদ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সময়ের সাথে কলেজের এমন বেড়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে কেবল এই কলেজের শিক্ষাগত মানের কারণে। মিরপুরে যাদের বাসা তাদের জন্য কমার্স কলেজ অবশ্যই প্রথম পছন্দ। কেবল মিরপুর নয় এই কলেজের রাজনীতির এবং ধূমপানমুক্ত পরিবেশের জন্য মিরপুরের বাইরের শিক্ষার্থীদেরও আকর্ষণ করে থাকে। কেউ কেউ এমনও আছেন যারা এই কলেজে পড়ালেখার সুবিধার্থে মিরপুরে বাসা নিয়েছেন। যাতে করে যাতায়াত হয়ে ওঠে সহজ।

বিএএফ শাহীন কলেজ

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী শাহীন কলেজ, বা বিএএফ শাহীন কলেজ, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দ্বারা পরিচালিত একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যা আগে থেকেই শাহীন স্কুল নামে পরিচিত। ১৯৬০ সালে শাহীন কলেজ ইংরেজি মাধ্যম স্কুল হিসাবে যাত্রা শুরু করে এবং ১৯৬৭ সালে বাংলা মিডিয়াম চালু হয়। ১৯৭৮ সাল থেকে শাহীন কলেজের অবস্থান হয় জাহাঙ্গীর গেটে। ঢাকা উত্তরের সেরা কলেজ এর তালিকা করতে গেলে বিএএফ শাহীন কলেজের নাম প্রথমেই চলে আসবে। গত পাঁচ দশক ধরে এই কলেজটি সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। দেশকে যোগান দিচ্ছে অসংখ্য মেধাবী ছাত্র। কলেজটিতে ৬০০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী এবং ১২০ জনের অধিক কর্মচারী রয়েছে।

হলি ক্রস কলেজ

হলি ক্রস কলেজ
হলি ক্রস কলেজ

ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত হলি ক্রস কলেজ মেয়েদের জন্য একটি উচ্চ মাধ্যমিক  ক্যাথলিক বিদ্যালয়। ঢাকা উত্তরের সেরা কলেজ সমূহের ভেতর সবচেয়ে আলাদা হচ্ছে হলি ক্রস কলেজ। এখানের পাঠ্যক্রম পদ্ধতি একটু ব্যতিক্রম যা কিনা একজনকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে। মাত্র ৫ জন  শিক্ষার্থী নিয়ে ১৯৫০ সালে যাত্রা শুরু করা কলেজটিতে প্রায় ২৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। বর্তমানে এই কলেজে ৪৭ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। । হলি ক্রস কলেজের ছাত্রীদের মধ্যকার ঐক্য বেশ প্রশংসনীয়। তারা যেখানেই যান না কেন নিজেদেরকে এই মর্যাদাপূর্ণ কলেজের ছাত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন। ফার্মগেটে অবস্থিত হলি ক্রস কলেজের অন্য কোন শাখা নেই।

সেন্ট জোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়

১৯৫৪ সালে সেন্ট জোসেফ ইংরেজি মাধ্যম স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর বর্তমান ক্যাম্পাস ৯৭ আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর, ঢাকাতে অবস্থিত। প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল “সেন্ট জোসেফ হাই স্কুল”। ২০০১ সালে সেন্ট জোসেফে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা চালু হয়েছিল, কিন্তু পরে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয় “সেন্ট জোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়”। এই স্কুলটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকশিক্ষা বোর্ড ঢাকা,বাংলাদেশ কর্তৃক স্বীকৃত। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয় এবং পাঠ্যসূচিতে বাংলা এবং ইংরেজি উভয় সংস্করণও রয়েছে।

সরকারী বাংলা কলেজ 

সরকারী বাংলা কলেজ মিরপুর দারুস-সালাম রোডের পশ্চিম পাশে অবস্থিত। ১ একরের মত জায়গায় গড়ে ওঠা এই কলেজটি দেখতে বেশ সুন্দর। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত, বাংলা কলেজের আকর্ষণীয় একটি ইতিহাস রয়েছে। যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই নামটি তেমন কোন গুরুত্ব বহন করে না, কিন্তু ১৯৬০ এর দশকে দৃশ্যপটটি ছিল একদমই ভিন্ন। পাকিস্তান আমলে উচ্চশিক্ষার সকল ক্ষেত্রে শিক্ষার মাধ্যম ছিল ইংরেজি। এছাড়াও যোগাযোগের মাধ্যম ছিল উর্দু। এইরকম পরিস্থিতিতে, দেশের কিছু বিজ্ঞরা ছাত্রদের জন্য বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করতে উৎসাহিত করার জন্য বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। আর এই ব্যাপারে বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠা ছিল প্রথম পদক্ষেপ। একটা সময় যখন সব কলেজে ইংরেজি এবং উর্দু ছিল লেখাপড়ার মাধ্যম সেখানে কেবল বাংলা পড়ানো হতো এই কলেজে। এর ঐতিহাসিক পটভূমি এবং ঐতিহ্যের কারণে এই কলেজ ঢাকা উত্তরের সেরা কলেজ। যেহেতু, এটি সরকারী কলেজ তাই আসন সংখ্যা সীমিত এবং অনেক শিক্ষার্থী এখানে ভর্তির সুযোগ পায় না। 

ঢাকা উত্তরের সেরা কলেজ সমূহ নিয়ে এই ছিল আমাদের আজকের ব্লগ। ঢাকা উত্তর এলাকাটি বেশ সুগঠিত। কি নেই এখানে!

Write A Comment