Reading Time: 3 minutes

ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। একসময় রাজা বাদশাহরা প্রচুর ধন সম্পদ খরচ করেছেন ভবিষ্যৎ জানতে। আর এখন মানুষ বিভিন্ন ইনফরমেশনের উপর ভিত্তি করে করে ভবিষ্যৎবাণী। কেউ ভবিষ্যৎবাণী করেন একশ বছর পর পৃথিবী কেমন হবে, কেউ বা জানান কেমন হবে ৫০ বছর পর ভবিষ্যতের বাড়িগুলো। আর আবাসন শিল্পের যে বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সবচেয়ে বেশি আশাবাদী সেটি হল থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি। থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি আসলে কী, সেটি বাস্তব কী না, অথবা একে বাস্তবে আনার মত প্রযুক্তি আমাদের হাতে রয়েছে কী না তা নিয়ে আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি। আজকে আমরা জেনে নিব থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে যেসব সুবিধা অসুবিধা আছে তা এবং এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে।

থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি – সুবিধাসমূহ

থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি
থ্রিডি প্রিন্টেড প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাড়ি নির্মাণে রয়েছে নানান সুবিধা

অন্যান্য বিভিন্ন শিল্পে প্রয়োগের পরে হাউজিং শিল্পে যখন থ্রিডি প্রিন্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা উঠল, সবাই আবিষ্কার করল যে এই প্রযুক্তি থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে আসলে আবাসন শিল্পই। থ্রিডি প্রিন্টেড প্রযুক্তির এমন কিছু আশ্চর্য সুবিধা রয়েছে যা যেন আবাসন শিল্পকে মাথায় রেখেই করা!

তুলনামূলক কম খরচ

থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি নিয়ে চিন্তা করার একদম প্রথম নিয়ামকটি হল এর তুলনামূলক কম খরচের বিষয়টি। এই প্রযুক্তি বাড়ি নির্মাণ খরচ কমায় নানাদিক থেকে। বাড়ি নির্মাণে শ্রমিক মজুরি কমে যায় অনেকাংশেই যেহেতু প্রিন্টার নিজেই কাজ এগিয়ে দেয় অনেকটুকু। থ্রিডি প্রিন্টিং এর মাধ্যমে এখন এমন কম খরচে বাড়ি বানানোর কথা ভাবা হচ্ছে যা প্রথাগত উপায়ে বানানোর কথা কল্পনাও করা যায় না। বলাই বাহুল্য যে এমন কম মূল্যে বাসস্থান নির্মাণের সম্ভাবনা স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য হয়ে উঠতে পারে আশীর্বাদস্বরূপ।

বাচে অনেক সময়

থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি তৈরীর সময় ডিজিটাল ডিজাইন থেকেই সরাসরি তা প্রিন্ট হয়ে যায়। এজন্য কন্সট্রাকশন প্রসেস হয় অনেক দ্রুত এবং নির্ভুল। থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি দিয়ে একদিনের মধ্যেই একটি স্ট্রাকচার দাঁড় করিয়ে ফেলা যায় যা প্রথাগত উপায়ে লাগত কয়েকমাস। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আমেরিকার টেক্সাসে থাকা একটি কন্সট্রাকশন স্টার্ট-আপ, আইকন, এমন প্রযুক্তি ডেভেলপ করেছে যাতে ৬৫০ বর্গফুটের একতলা একটি থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি প্রিন্ট করা যাবে মাত্র ২৪ ঘন্টায়। রাশিয়া, চায়নার মত দেশেও শুরু হয়েছে থ্রিডি প্রিন্টেন্ড প্রযুক্তির ব্যবহার।

অজস্র ডিজাইনের সম্ভাবনা

শুধু যে দাম কম আর সময় সাশ্রয়ী তাই না, থ্রিডি প্রিন্টিং হাজির হয়েছে আরেকটি বড় সম্ভাবনা নিয়ে। পুরাতন পদ্ধতিতে যখন সমস্ত নির্মাণকাজ করতে হত হাতে, তখন ডিজাইনে কিছু সীমাবদ্ধতা থেকেই যেত। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দূর করেছে সেই সীমাবদ্ধতাকে। নিত্যনতুন, সৃষ্টিশীল যে সব নকশা এখন তৈরি করছেন স্থপতিরা, থ্রি ডি প্রিন্টিং প্রযুক্তিই সেগুলো করতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছে।  

থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি – প্রধান প্রতিবন্ধকতাসমূহ

বাড়ির ভুল ডিজাইন
থ্রিডি প্রিন্টেড প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাড়ি নির্মাণে প্রতিবন্ধকতাও কম নয়

অনেক সুবিধাজনক দিক থাকার পরেও আবাসন শিল্পে থ্রি ডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি এখনো নতুন। থ্রি ডি প্রিন্টেড বাড়ি তৈরি করতে গেলে এখনো মুখোমুখি হতে হয় নানান প্রতিবন্ধকতার। তারই কয়েকটি হল

নেই কাচামালের সহজলভ্যতা

থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি আবাসন শিল্পে আসার পরপরই যে সমস্যাটি দেখা দিয়েছে তা হল উপযুক্ত নির্মাণ সামগ্রীর অভাব। প্রথাগত বাড়ি তৈরির কাচামাল আর থ্রিডি প্রিন্টারের কাচামাল কখনই এক হবে না। আর বর্তমানে থ্রিডি প্রিন্টারে যেসব কাচামাল ব্যবহার করা যায় তার সংখ্যা খুবই সীমিত। তাছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রতিটি প্রিন্টারের জন্য থাকে নির্দিষ্ট ম্যাটেরিয়াল, অর্থ্যাৎ এক প্রিন্টারের কাচামাল অন্য প্রিন্টারে ব্যবহার করে থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব হয় না।

জনশক্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব

ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে মানুষের অনেক কাজ ইতোমধ্যেই নানান স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের দখলে চলে গিয়েছে। থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি যদি জোরেশোরে শুরু হয়ে যায়, নিশ্চিতভাবেই তার প্রভাব পড়বে বর্তমানের জনশক্তি ও আবাসন শিল্পে সাথে জড়িত মানুষের উপর। বর্তমানে প্রথাগত নির্মাণে যে দক্ষতা প্রয়োজন তার দাম কমে যাবে, হুমকির মুখে পড়বে নির্মাণ শ্রমিকেরা। যারা কন্সট্রাকশনের জন্য বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা করেন তারাও পড়বেন বিপদে। আমাদের বৈদেশিক রেমিটেন্সের এক বড় অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে, যেখানে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করেন আমাদের শ্রমিকেরা। নির্মাণ কাজ করতে তাদের তেমন স্পেশালাইজড কোন দক্ষতা প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু, থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ির জন্য দরকার পরবে নির্দিষ্ট দক্ষতার যা আমাদের সাধারণ শ্রমিকদের নেই। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে আমাদের রেমিটেন্সের উপরেও।

অন্যান্য

এছাড়াও আরও যেসব সমস্যা হতে পারে তার মধ্যে আছে,

⇒    থ্রিডি প্রিন্টার এক স্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যাওয়াটাও হতে পারে বিরাট চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। তাছাড়া কন্সট্রাকশন সাইটে সেফলি এটি অপারেট করাও হবে অনেক কঠিন।

⇒    নির্মাণের সময় রিস্ক বেড়ে যাবে অনেক কেননা থ্রিডি প্রিন্টার একটি মডেল বা নকশা নির্দিষ্ট করে একেবারে সব প্রিন্ট করে ফেলে। এখন ডিজাইনে কোন ভুল থাকলে তার দায় যদিও প্রিন্টারের নয়, কিন্তু সেই ভুলের মাশুল গুনতে হবে তাকেই। কেননা, একবার ভুল প্রিন্ট হয়ে গেলে তা ঠিক করার কোন উপায় নেই।

⇒    যদিও সময় বাঁচানোর কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবতা হল, প্রিন্টিং অস্বাভাবিক দ্রুত হলেও আনুসাঙ্গিক অন্যান্য কাজ চলে সেই ঢিমেতালেই। তাই দেখা যায় অনেকসময়ই পূর্ব পরিকল্পনার চাইতে বেশি সময় লেগে যাচ্ছে।

তবে, এত সমস্যা থাকার পরেও একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তিই হয়ত হতে যাচ্ছে আগামীর আবাসনের মূলকথা। অনেক সম্ভাবনাময় এই খাত নিয়ে আপনার মতামত কী? এ নিয়ে আপনার অন্য কিছু জানার আছে কি? মন্তব্যের ঘরে জানিয়ে দিন আমাদের।

Write A Comment