Reading Time: 5 minutes

শপিং করতে যারা পছন্দের করেন তারা শহরের বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে খুঁজে বের করেন তাদের পছন্দের মার্কেট। যেখান থেকে কেনাকাটা করে তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, পান স্বস্তি। আর এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন মার্কেট নিয়ে লেখা আমাদের সিরিজের আজকের আয়োজনে থাকছে ধানমন্ডির বিভিন্ন মার্কেট। কেনাকাটা করার সাথে যারা প্রতিনিয়তই সম্পৃক্ত থাকেন, তাদের কাছে ধানমন্ডি অন্যতম পছন্দের একটি এরিয়া। ব্র্যান্ডের জিনিস কেনা থেকে শুরু করে বাজেট শপিং, এক ধানমন্ডি ঘুরেই সেরে ফেলা সম্ভব কেনাকাটার অ্যা টু জেড। এমনকি ধানমন্ডি এরিয়া থেকে দূরেও যারা থাকেন, তারাও অনেক সময় কেনাকাটার পুরো লিস্ট সাজিয়ে হাতে সময় নিয়ে চলে আসেন ধানমন্ডিতে, বিশেষ করে যেকোনো বড় উৎসবের সময় কেনাকাটার জন্য এই এলাকার মার্কেটগুলোই যেন থাকে পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। তবে চলুন ধানমন্ডির বিভিন্ন মার্কেট সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।  

সীমান্ত স্কয়ার মার্কেট 

Shimanto Square
এই মার্কেটের সাপ্তাহিক বন্ধ মঙ্গলবার

ধানমন্ডির ২ নম্বর সড়ক দিয়ে ঢুকে বাংলাদেশ রাইফেলস সদর দপ্তরের ৪ নম্বর গেইট সংলগ্ন ধানমন্ডি লেকের বিপরীত পাশে চোখে পড়বে সীমান্ত স্কয়ার মার্কেট। ধানমন্ডি এলাকার অভিজাত শপিং সেন্টারের মধ্যে এটি অন্যতম। বিশাল স্থান জুড়ে নির্মিত এই মার্কেটটি ছয় তলা বিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক শপিং সেন্টার। মার্কেটটিতে স্মার্টেক্স, ক্যাটস আই, রিচম্যান, এপেক্স-সহ বেশ কিছু ব্র্যান্ডের দোকান রয়েছে। এছাড়া রয়েছে দেশিয় বুটিকসহ জুয়েলারি, গিফট শপ, ইলেক্ট্রনিক্স এবং সার্ভিসিং এর বেশ কিছু দোকান। 

আর এই মার্কেটের ভেতরেই রয়েছে আগোরা সুপার শপ, যা এই এলাকায় বসবাসরত মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র এবং কাঁচাবাজার কেনার অন্যতম একটি জায়গা। এই মার্কেটে থাকা ফুড কোর্ট অনেকের কাছেই বেশ জনপ্রিয়। আর তাই ছুটির দিনগুলো পরিবার কিংবা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া এবং মজাদার খাবার খাওয়ার জন্য অনেকেই এই মার্কেটের ফুড কোর্টগুলোকে পছন্দ করেন। মানুষের কেনাকাটার সুবিধার্থে এই মার্কেটের ভেতর রয়েছে এটিএম বুথের ব্যবস্থা। এছাড়া ইনডোর গেমস এবং যেকোনো উৎসব আয়োজনের জন্য এখানে রয়েছে কনভেনশন হল। এই মার্কেটের সাপ্তাহিক বন্ধ মঙ্গলবার, যা করোনাকালীন সময়ের আগে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকতো। এছাড়া এই মার্কেটের রয়েছে নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা। 

প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টার

ধানমন্ডি পার করে সায়েন্স ল্যাবরেটরী মোড় থেকে ঢাকা কলেজ যাওয়ার পথে হাতের বাম পাশে চোখে পড়বে বিশাল এই মার্কেট। ধানমন্ডির খুব কাছাকাছি হওয়ায় এবং গাউসিয়া ও হকারস মার্কেটের অনেক কিছুই এই মার্কেটে পাওয়ার কারণে, অনেকেই এখানে সুবিধামত কেনাকাটা করতে পারেন।  ৪ তলা বিশিষ্ট এই মার্কেটের নিচ তলায় পাঞ্জাবির অনেক গুলো দোকান রয়েছে। বাজেটের মধ্যে বিভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবি কিনতে তাই উৎসবের সময় এখানে রীতিমত ভিড় জমে যায়। এছাড়া যারা ডিজাইন করে জামা বা শাড়ি বানাতে চান তাদের জন্য এই মার্কেটটি বেস্ট। কেননা এখানে আপনি থান কাপড়ের দোকান পাচ্ছেন পুরো মার্কেট জুড়ে। আর এর পাশাপাশি লেইস ও এম্ব্রোয়ডারী এবং টেইলারস তো আছেই। যদিও ক্ষেত্র বিশেষে দামের তারতম্য দেখা যায় নিউমার্কেট বা গাউসিয়া থেকে, তবে টেইলার এর সুবিধা এবং কম ভিড় হওয়ার কারণে অনেকেই এই মার্কেট থেকে কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন।  তবে এর পাশাপাশি থ্রি পিস ও শাড়ির দোকানগুলোতেও বেশ ভালো কালেকশন থাকে, যদিও এই মার্কেট থেকে কেনাকাটা করতে দরকষাকষিতে অবশ্যই এক্সপার্ট হতে হবে। 

মেট্রো শপিং মল 

ব্যাগের বিভিন্ন কালেকশন নিয়ে এই মার্কেটে রয়েছে বেশ কিছু দোকান

ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত এই মার্কেটটি কেনাকাটার জন্য বেশ সুবিধাজনক। বিশেষ করে একই ছাদের নিচে পছন্দের সব জিনিস পেতে  ঘুরে আসতে পারেন এই মার্কেট থেকে। কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড থেকে রাসেল স্কয়ার হয়ে রোড ১১ এর মোড় পার করে শুক্রাবাদের রাস্তায় মাস্টার মাইন্ড স্কুলের বিপরীত পাশে এটি অবস্থিত। এই মার্কেটে আসলে আপনাকে কেনাকাটা করতে হবে দরকষাকষি করে। ব্যাগের বিভিন্ন কালেকশন নিয়ে এই মার্কেটে রয়েছে বেশ কিছু দোকান। এছাড়া মার্কেটের ৬ তলায় রয়েছে মোবাইল এবং অন্যান্য ইলেকট্রিক ডিভাইসের দোকান, যেখান থেকে আপনি প্রয়োজনে সার্ভিসিংও করতে পারবেন। তবে অন্যান্য মার্কেট থেকে আলাদা করে বলতে গেলে, এই মার্কেটে রয়েছে গিটারের একটি দোকান। যেখান থেকে আপনি শুধু গিটারই না, উকুলেলে, বাঁশি-সহ বিভিন্ন দামের মিউজিক্যাল যন্ত্র পাবেন, যা ধানমন্ডি এলাকার মধ্যে অন্যতম। 

এছাড়া ধানমন্ডির বাকি মার্কেটগুলোর মতো দেশিয় বুটিক্স, কসমেটিক্স শপ, পাঞ্জাবি এবং শার্টের দোকান, বাচ্চাদের পোশাক এবং জুয়েলারি দোকানের জন্য ও এই মার্কেটটি অনেক পরিচিত। এই মার্কেটের আশেপাশে স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটি থাকায় বিভিন্ন ধুরনের মানুষের আনাগোনাই এখানে থাকে। তাই বাজেটের ক্ষেত্রে অনেক দামের পণ্য যেমন পাবেন, তেমনি মিডিয়াম বাজেটেও কেনাকাটা সম্ভব। 

প্লাজা এ আর, সোবাহানবাগ

এই মার্কেটটি অবস্থিত মেট্রো শপিং মল এর খুব কাছাকাছি। যা সোবাহানবাগ কর্নার মার্কেট হিসেবেও পরিচিত। সোবাহানবাগ প্রধান সড়ক দিয়ে সোবাহানবাগ মসজিদের একটু সামনে এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে এই মার্কেটের। যা মূলত মেট্রো এবং রাপা প্লাজার মাঝামঝি স্থানে অবস্থিত। খুব কম দূরত্বে এই তিনটি মার্কেট হওয়ার কারণে মানুষজন মূলত মার্কেটগুলো ঘুরে যাচাই বাছাই করে, তবে কেনাকাটা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এই মার্কেটের নিচ তলাতে এবং মার্কেটের ভেতর মিলে মোট দুইটি ফুড কোর্ট রয়েছে। আর মার্কেটের উল্টো পাশে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকার কারণেই অনেকেই ক্লাস শেষে কিংবা শুধুমাত্র আড্ডা দেয়ার জন্য হলেও এখানে এসে থাকেন। এই মার্কেটের ভেতরে ঢুকতেই বেশ খোলা একটা জায়গা দেখা যাবে, যেখানে শপিং শেষে আপনি বসে কিছুক্ষণ রেস্ট করতে পারবেন। এছাড়া গাড়ি পার্কিং এর নিজস্ব ব্যবস্থাও রয়েছে। 

আনাম র‍্যাঙ্কস প্লাজা

Anam Rangs Plaza
এই মার্কেটে গাড়ি পার্কিং এর নিজস্ব ব্যবস্থা রয়েছে

ধানমন্ডির এই মার্কেটটি অবস্থিত ৬/এ সড়কের সাত মসজিদ রোড অংশে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন মার্কেটে প্রায় ১০৫টির দোকান রয়েছে, যা এই মার্কেটের মালিক সমিতি দ্বারা পরিচালিত হয়। সাত মসজিদ রোডে ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস পেরিয়ে হাতের বাম পাশে গেলেই এই মার্কেটটি দেখা যাবে।  ৪ তলা বিশিষ্ট এই মার্কেটে আপনি জুয়েলারির দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজের শোরুম, গিফট শপ, ইলেক্ট্রনিক্স এর দোকান এবং ফুড কোর্ট পাবেন।  এছাড়া এই মার্কেটে গাড়ি পার্কিং এর নিজস্ব ব্যবস্থা রয়েছে। ধানমন্ডির অন্যান্য মার্কেটের মতো এটিও মঙ্গলবার বন্ধ থাকে। 

তাই আপনার বাসা যদি রায়ের বাজার, ঝিগাতলা বা সাত মসজিদ রোডে হয়ে থাকে তবে কেনাকাটার জন্য আপনি এই মার্কেট ঘুরে প্রয়োজনীয় যেকোনো জিনিসই পেয়ে যাবেন। কিছুটা দরকষাকষি করে কেনাকাটায় যারা অভ্যস্ত তারা হয়তো এখানে শপিং করে খুব একটা মজা পাবেন না। কারণ এখানে বেশির ভাগ দোকানেই ফিক্সড প্রাইজ লেখা থাকে। তবে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের পণ্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এই মার্কেটে।   

রাপা প্লাজা

২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত ধানমন্ডির এই মার্কেটটি অবস্থিত ২৭ নম্বর সড়কের একবারে পূর্ব প্রান্তে। ধানমন্ডি এবং এর আশপাশের এলাকার মানুষ তাই কেনাকাটার জন্য যেকোনো সময় চলে আসতে পারেন এই মার্কেটে। ৪ তলা বিশিষ্ট এই মার্কেটের রয়েছে দুইটি প্রবেশ পথ। এই মার্কেটে রয়েছে টাইম জোনের একটি বিশাল শো রুম। এছাড়া পোশাকের দোকান, জুতা, জুয়েলারীর দোকান, এমনকি টেইলার্সও রয়েছে। নীল আঁচল শাড়ীজ, ময়ূরী শাড়ীজ, তানিশা শাড়ীজ ইত্যাদি দোকানগুলোতে রয়েছে শাড়ির এক্সক্লুসিভ কালেকশন। শুধু দেশের নয়, বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানির পণ্যও এই মার্কেটে পাওয়া সম্ভব। তাই কেনাকাটার জন্য লিস্ট তৈরি করে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন মঙ্গলবার ছাড়া যেকোনো দিন চলে আসতে পারেন এই মার্কেটে। 

তবে এসব মার্কেটের পাশাপাশি কাঁচাবাজার এর প্রয়োজনে ধানমন্ডি তে বসবাসরত মানুষজন সাধারণত মোহাম্মাদপুরের টাউন হল অথবা নিউমার্কেটের কাঁচাবাজার থেকে সাপ্তাহিক বা মাসিক বাজার করে থাকেন। তাজা মাছ-মাংস এবং শাক সবজি কেনার জন্য মোহাম্মাদপুরের টাউন হল মার্কেট বেশ জনপ্রিয় এবং ধানমন্ডির কাছাকাছি হওয়ায় অনেকেই তাই এখানে চলে আসেন।  টাউন হল মার্কেট সম্পর্কে আরও বিস্তারিত উল্লেখ করা আছে আমাদের মোহাম্মাদপুরের বিভিন্ন মার্কেট এই আর্টিকেলে।  

নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে, জামাকাপড়, প্রসাধনী, গেজেট ইত্যাদি কেনার জন্য প্রত্যেক এলাকাতেই থাকে বেশ কিছু মার্কেট। কোন নতুন এলাকায় বসবাস করার আগে তাই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনতে কোথায় যেতে পারেন এই বিষয়ে জেনে নেয়া অত্যন্ত জরুরি। আর আপনার জন্য এই বিষয়টি আরও সহজ করে দিতে আমাদের এলাকা ভিত্তিক মার্কেট বিষয়ক লেখাগুলো আশা করি কাজে আসবে। তো এরই ধারাবাহিকতায় মিরপুরের বিভিন্ন মার্কেট এর পর আজকের আর্টিকেলে আমরা কাভার করলাম ধানমন্ডির বিভিন্ন মার্কেট নিয়ে বিস্তারিত।

Write A Comment

Author