Reading Time: 5 minutes

রঙের টেক্সচার বা নকশায় বরাবরই তাই চাই নতুন কিছু। আর নতুন একটা আমেজ এনে দিতে পারে ফেব্রিক প্যাটার্ন। হোম ডেকোরে নানা ধরনের ফেব্রিক প্যাটার্ন কিন্তু, জাদুর মত কাজ কর‍তে পারে! কিন্তু, কালার স্কিম ম্যাচ করে ফেব্রিকের প্যাটার্নগুলো বাছাই করাও ভীষণ চ্যালেঞ্জের কাজ। কোন রঙের সাথে কোন রঙ মানাবে সেটার জন্য জানতে হবে, বিভিন্ন রকমের কালার স্কিম সম্বন্ধে। তেমনি কোথায় কোন প্যাটার্ন মানাবে এবং দুটো প্যাটার্ন কিভাবে ব্যবহার করা যায় বা আদৌ করা যায় কিনা তার জন্যও নানা ধরনের ফেব্রিক প্যাটার্ন সম্বন্ধে ভালো করে জানতে হবে।  

হোম ডেকোরে ফেব্রিক প্যাটার্নের প্রভাব 

লিভিং রুম
দেয়ালে, পর্দায় বা আসবাবের কাভারে প্যাটার্নের ব্যবহার মুহুর্তেই ঘরের আদল বদলে ফেলতে পারে

এক কালারের দেয়ালে এক কালারের পর্দা কি কখনো ফুটে উঠতে পারে? সম্ভবত না। কখনো কখনো পর্দার উজ্জ্বল রঙও তেমন ফুটে ওঠে না। ঠিক এখানেই নানা ধরনের ফেব্রিক প্যাটার্ন ব্যবহার করা যায়। দেয়ালে, পর্দায় বা আসবাবের কাভারে প্যাটার্নের ব্যবহার মুহুর্তেই ঘরের আদল বদলে ফেলতে পারে। যে ঘরটা ক’দিন আগে বেশ একঘেয়ে লেগেছিল আজ সেই ঘরটাই বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে। ফেব্রিক প্যাটার্ন ব্যবহার করে হোম ডেকোরে বেশ সহজেই স্টেটমেন্ট তৈরি করা সম্ভব। হোম ডেকোরে যারা খুব বেশি খরচ করতে চান না তারা কিন্তু, ফেব্রিকের ক্ষেত্রে প্যাটার্ন আছে এমন ফেব্রিক বাছাই করলে কিন্তু ঘরটা বেশ সাজানো গোছানো দেখাবে। এই ধরুন সোফার কাভারটা প্যাটার্নের বেছে নিলেন বা ড্রয়িং রুমের রাগস বা কার্পেটটা প্যাটার্নের বাছাই করলেন। আর কিছু প্রয়োজন আছে বলুন তো? আমার মনে হয় না। অন্য যেকোন আসবাবে যদি প্যাটার্ন নাও ব্যবহার করতে চান এক্ষেত্রে, পর্দায় কিন্তু প্যাটার্ন ব্যবহার করতে পারেন। নানা ধরনের ফেব্রিক প্যাটার্ন এর ভেতর যে প্যাটার্নটা আপনার পছন্দ হয় সেটা বেছে নিতে পারেন। ঘরের সাজে বাহারি পর্দা  বাছাই করে হোম ডেকোরের অর্ধেক কাজ সেরে ফেলা যায়। 

নানা ধরনের ফেব্রিক প্যাটার্ন

প্যাটার্ন ফেব্রিক
প্রায় ৩০ টির মত প্যাটার্ন আছে

কিছু প্যাটার্ন আছে যেগুলো সহজেই চেনা যায় বা আমাদের খুব পরিচিত। কিন্তু, এগুলোর বাইরেও প্রায় ৩০ টির মত প্যাটার্ন আছে যেগুলো সম্বন্ধে হয়তো আমরা তেমন ভাবে জানি না। জনপ্রিয় বেশ কিছু প্যাটার্ন নিয়ে আমরা আজকে আলাপ করবো। চলুন শুরু করা যাক। প্রথমে সিম্পল বা বহুল ব্যবহৃত প্যাটার্ন সম্বন্ধে জানা যাক। 

শেভরন (Chevron)

জিগজ্যাগ প্যাটার্ন
জিগজ্যাগ প্যাটার্ন

সবচেয়ে মজাদার জিগজ্যাগ প্যাটার্ন হচ্ছে এই শেভরন। স্ট্রাইপগুলি বেশীরভাগ সময়ই দুইটা কনট্রাস্ট রঙের মধ্যে হয়ে থাকে। এই যেমন, সাদা বা কালো। বিপরীত রঙের কনট্রাস্ট হলে তা সহজেই চোখে ধরা পড়ে। এই প্যাটার্নটি আপনি মাল্টি পার্পাজ। বিভিন্ন স্টাইলের সাথে বিভিন্ন অনুষঙ্গ এর সাথে ব্যবহার করতে পারছেন। ট্র্যাডিশনাল থেকে শুরু করে মর্ডান যেকোন ডেকোর স্টাইলে এটা সহজেই মানিয়ে যায়। এবং এই প্যাটার্নটির ব্যবহারও রয়েছে। এই প্যাটার্নের জ্যামিতিক লাইনগুলো ঘরের ভেতর এত সুন্দর করে ন্যাচারাল কনট্রাস্ট তৈরি করবে যা অবাক করা। এই প্যাটার্নটা আপনি ঘরের সোফা, রাগস বা আউটডোর সিটিং এ ব্যবহার করতে পারবেন। শেভরন প্যাটার্নটা বেশ সহজেই চোখে পড়ে, এই প্যাটার্নটা দিয়ে ঘরের ভেতরে স্টেটমেন্ট ক্রিয়েট করতে পারবেন বলে, হোম ডেকোরে এর একটা আলাদা জায়গা রয়েছে। এই প্যাটার্নের জন্য  উজ্জ্বল রঙের কনট্রাস্ট বেছে নিলে ফেব্রিক ময়লা হলেও তা চোখে অত সহজে ধরা পড়ে না। সোফার কাভার বা পর্দার কাপড় কম ময়লা দেখাবে এ তো সব ঘরণীর স্বপ্ন! 

প্লেইড এবং চেকার্ড (Plaid & Checkered)

 চেকার্ড বা চেক
এই প্যাটার্নটাই চেকার্ড বা চেক নামে পরিচিত

হরাইজন্টাল বা ভার্টিকাল স্ট্রাইপের বেশ কমন একটি প্যাটার্ন এই “প্লেইড”। হালকা বা গাড় এক রঙা কাপড়ের উপর পাতলা লাইন হরাইজন্টাল বা ভার্টিকালভাবে ব্যবহার করেই তৈরি করা হয় এই প্লেইড প্যাটার্ন। ফেব্রিকের ভেতরে এই প্লেইড প্যাটার্ন বা স্ট্রাইপ বেশ জনপ্রিয়। এই প্যাটার্নটা ব্যবহার করা হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছেলের শার্ট, পর্দা বা আসবাবের কাভার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশীয় পোশাকেও প্লেইড প্যাটার্নটা বেশি ব্যবহৃত হয়। এমনকি হোম ডেকোরে রাস্টিক লুক আনতেও প্লেইড প্যাটার্নের ভূমিকা রয়েছে। একাধিক রঙের চারকোণা বক্স আকারে পাশাপাশি থাকার এই প্যাটার্নটাই চেকার্ড বা চেক নামে পরিচিত। সাধারণত দুই রঙের সংমিশ্রণেই এইচেক প্যাটার্ন তৈরি হয়। দেশীয় পোশাকে এই চেক প্যাটার্নের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। গ্রামীণ চেক ব্র্যান্ডের সব পোশাকেই থাকে চেক। এমনকি ঘরের ডেকোরে নান্দনিকতা আনতেও এই প্যাটার্ন বেশ জনপ্রিয়।

পোলকা ডট (Polka Dot)

পোলকা ডট
পোলকা ডট

অনেকের কাছে পোলকা ডট ‘বল প্রিন্ট’ হিসেবেও পরিচিত। এক রঙের ভেতর ছোট বড় অনেক ডট বা বল আকারে প্রিন্ট থাকে বলে অনেকে একে বল প্রিন্টও বলে থাকে। পোলকা ডটের এই প্যাটার্নটা বেশ প্রাণবন্ত একটা আমেজ এনে দেয় দেখে হোম ডেকোরে পোলকা ডট বেশ সুন্দর করে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ছোটদের ঘরের পর্দা বা বেডশীটের জন্য এই পোলকা ডট সহজেই মানিয়ে যায়। বেডশীটের নকশায় প্যাটার্ন আর থ্রেড কাউন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

অ্যানিম্যাল-প্রিন্ট ফ্যাব্রিক (Animal print)

ল্যাপটপ
অ্যানিম্যাল স্কিন প্যাটার্ন

অ্যানিম্যাল স্কিন প্যাটার্নের মত করেই তৈরি করা হয়ে থাকে এই অ্যানিম্যাল-প্রিন্ট ফ্যাব্রিক। স্নেকস্কিন প্রিন্ট, টাইগার স্কিন প্রিন্ট ও জেব্রা প্রিন্টগুলোই বেশি জনপ্রিয়। উজ্জ্বল রঙের কনট্রাস্টে এই প্রিন্টগুলো বেশ ফুটে উঠে। এই প্রিন্ট অনেকে পোশাকের জন্য বেছে নেওয়ার পাশাপাশি হোম ডেকোরের জন্যও বেছে নিচ্ছেন। অ্যানিম্যাল স্কিন প্যাটার্নের সোফা কাভার বা কার্পেট বেশ জনপ্রিয় এবং দেখতেও আভিজাত্যময়। অ্যানিম্যাল স্কিন প্যাটার্নটা ঠিক রেখেই বিভিন্ন রঙ রকম নিয়ে নকশা করা দেখে এর চাহিদা সবসময়ই বেশি। 

ফ্লোরাল (Floral)

ফ্লোরাল ফেব্রিক
ফ্লোরাল প্যাটার্ন

নানা ধরনের ফেব্রিক প্যাটার্ন এর ভেতর এই ফ্লোরাল প্রিন্টটা কমবেশি সবাই ভালোবাসেন। নিজের পোশাক থেকে শুরু করে ঘরের ডেকোরে ফ্লোরাল প্যাটার্ন বেশ চমৎকারভাবে মানিয়ে যায়। ভিনটেজ থেকে শুরু করে মডার্ন সব ডেকোর স্টাইলে ফ্লোরাল প্যাটার্নের নিজস্ব একটা জায়গা রয়েছে। নানারকম ফুলের নকশা নিয়ে এই প্রিন্ট তৈরি করা হয় থাকে দেখে, এই প্যাটার্নের চাহিদা সব সময়ই তুঙ্গে। ফ্লোরাল প্রিন্ট এতটা জনপ্রিয় হওয়ার আর একটি কারণ হচ্ছে, এর কালার কনট্রাস্ট। হালকা বা উজ্জ্বল রঙে ফ্লোরাল প্রিন্ট এত সুন্দর করে নকশা করা হয় যা প্রথম দেখাতেই সকলের মন কেড়ে নেয়। আর ঘরের ভেতর প্রকৃতির ছোঁয়া কে না ভালোবাসে? ফ্লোরাল প্যাটার্নকে আপনি যেকোন কিছুতে ব্যবহার করতে পারেন। বেডশীট থেকে শুরু করে ঘরের পর্দা। গায়ের পোশাক বা সোফার কাভার সবকিছুতেই এই প্যাটার্ন তার সৌন্দর্য ছড়িয়ে যায়।

নানা ধরনের ফেব্রিক প্যাটার্ন এর ভেতর এই ছিল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় কিছু প্যাটার্ন। আপনার পছন্দের প্যাটার্ন এখান থেকে কোনটা আমারদের জানাতে কমেন্ট করুন।

Write A Comment