Reading Time: 3 minutes

যে কোনো প্রপার্টি কেনা-বেচা বা হস্তান্তর করতে চাইলে বেশ কিছু আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়। বিশেষত জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে, রেজিস্ট্রেশনের পরেই যে গুরুত্বপূর্ণ আইনি প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা জরুরি তা হচ্ছে নামজারি বা মিউটেশন। কারণ, নামজারি করা না থাকলে আইনের ফাঁক-ফোকরে নানাভাবে প্রপার্টি বেদখল হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই আইনি বিষয়টি এখনো পর্যন্ত আমাদের অনেকের কাছেই দুর্বোধ্য।  তাই  নামজারি বা মিউটেশন কী, কেন জরুরি এবং কীভাবে মিউটেশন করতে হয়, সব প্রশ্নের বিস্তারিত থাকছে আজকের লেখায়। 

নামজারি কী ?

নামজারি বিষয়টি প্রণয়ন করা হয়েছে ভূমির মালিকের মালিকানা নিয়ে জটিলতা এড়ানোর জন্য। যখন কোন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান বৈধভাবে অথবা আইনগতভাবে ভূমি বা জমির মালিকানা অর্জন করে সরকারি রেকর্ডে মালিকানার নাম হালনাগাদ করা হয়, আইনি ভাষায় যাকে বলা হয় নামজারি। অর্থাৎ, নামজারি বা মিউটেশন অর্থ হলো বর্তমানে থাকা খতিয়ান থেকে নতুন মালিকের নাম সংযোজন করে নতুন একটি খতিয়ান তৈরি করা। 

নামজারি যখন সম্পন্ন হয় নতুন নাম্বারের এই খতিয়ানটি নতুন মালিককে দেওয়া হয়। এতে নতুন মালিকের নাম, কোন মৌজা, মৌজার নাম্বর (জে এল নাম্বর), জরিপের দাগ নাম্বর, দাগে মোট জমির পরিমাণ, একের অধিক মালিক হলে তাদের নির্ধারিত জমির পরিমাণ ও প্রতি বছরের ধার্যকৃত খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) ইত্যাদি বিবরণী লিপিবদ্ধ থাকে।

নামজারি কেন জরুরি? 

প্রপার্টির আইনী সুরক্ষার জন্যই নামজারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

প্রপার্টি হস্তান্তরের পর নতুন মালিকের নামে নামজারি না করলে প্রপার্টি ভোগ-দখল, খাজনা প্রদান, কেনা-বেচা ও ব্যাংক লোন পেতে নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে ও নানাভাবে আপনি হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হতে পারেন। যেমন- নামজারি না করলে আগের মালিকের নামে রেকর্ডে থেকে যায় এবং ক্রেতা হিসেবে রেকর্ড অব রাইটে আপনার নাম রেকর্ডভুক্ত হয় না। এতে একদিকে যেমন আপনি সরকারের খাজনাভুক্ত হতে পারবেন না তেমনি প্রপার্টি বিক্রি বা দান করতে পারবেন না। তাছাড়া, যেহেতু পূর্বের মালিকের নামেই রেকর্ডটি থেকে যাচ্ছে, তিনি পূর্বের মালিক মিউটেশন দেখিয়ে প্রপার্টির উপর দাবি করতে পারে। তাই নতুনভাবে কেনা প্রপার্টির আইনী সুরক্ষার জন্যই নামজারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও নামজারি করার থাকলে আপনি বেশ কিছু আইনি সুবিধা পাবেন। যেমন- 

প্রপার্টি কেনার পর নামজারি করে নিলে আপনার নামে একটি স্বতন্ত্র খতিয়ান তৈরি। ফলে, জমির মালিকানার প্রমাণ হিসেবে সব জায়গায় এই খতিয়ানটি গ্রহণযোগ্য হবে। এছাড়া, নামজারি বা খারিজ খতিয়ানের উপর সহজেই আপনি ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারবেন। এবং এই দাখিলা সহজে ভূমির মালিকানা ও দখল প্রমাণ করতে আপনাকে সাহায্য করবে।

এছাড়াও, আরেকটি বড় যে সুবিধা আপনি পাবেন তা হচ্ছে, গৃহ নির্মাণ, ব্যাংক ঋণ, জমি বিক্রয় ইত্যাদি যে কোনো কাজে নামজারিটি অনেক বেশি কাজে দেবে।  কারণ, জমির উপর বাড়ি নির্মাণ, ব্যাংক লোন এর আবেদন সহ যে কোনো আইনি কাজে নামজারি বা মিউটেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি দলিল। এটি ছাড়া মর্টগেজ লোন নেয়া বা বাড়ি নির্মাণ, কোনোটিই আইনিভাবে সম্ভব নয়। 

কীভাবে করতে হয়? 

সেল পারমিশন লেটার
নামজারি করতে একজন লিগ্যাল এক্সপার্ট এর সহায়তা নিন

সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে নামজারীর জন্য নির্ধারিত আবেদন ফরম সংগ্রহ করে পূর্ণাঙ্গভাবে পূরণ করে আবেদন করতে হবে। যে প্রপার্টি বা জমির নামজারি আপনি করতে চাচ্ছেন তার একটি বিস্তারিত বিররণীও এখানে দিতে হবে।

আবেদন পত্রে যা যা আবশ্যক: 

১। আবেদনকারীর পূর্ণ নাম ও ঠিকানা

২।রেজিস্ট্রিকৃত হস্তান্তর দলিল যেমন, সাব-কবলা, হেবা, উইল ইত্যাদি দলিলের নম্বর ও সাল স্পষ্ট থাকতে হবে।

৩। দলিলের অনুলিপি, বায়া দলিলের ফটোকপি (যদি থাকে)

৪। পরচা বা খতিয়ানের অনুলিপি

৫। ডিসিআর এবং ভূমি-উন্নয়ন কর পরিশোধের রসিদ

৬। বণ্টননামা দলিল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

৭। কোন ওয়ারিশান জমির নামজারি করতে চাইলে ওয়ারিশান সনদপত্র (তিন মাসের মধ্যে ইস্যু করা) জমা দিতে হবে ।

৮। পূর্বের মালিকের নামে নামজারি থাকলে তার ফটোকপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

৯। কোনো রায় বা ডিক্রির বলে নামজারি করলে উক্ত ডিক্রি বা রায়ের অনুলিপি

১০। আবেদনকারী অথবা আবেদনকারীর প্রতিনিধির পাসপোর্ট আকারের ২ কপি ছবি

আপনি চাইলে নিজেই সব আইনি কাগজপত্র সংগ্রহ করে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে নামজারীর জন্য আবেদন করতে পারেন। কিংবা একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী বা প্রতিনিধিও নিয়োগ করতে পারেন। 

এক্ষেত্রে ঢাকার মাঝে নামজারি সহ প্রপার্টি সংক্রান্ত যে কোনো আইনি সুবিধা দিতে রয়েছে বিপ্রপার্টি লিগ্যাল সল্যুশন। ঝামেলা এড়িয়া, দ্রুততর সময়ে নামজারির মত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে যোগাযোগ করতে পারেন বিপ্রপার্টির এক্সপার্ট লিগ্যাল টিমের সাথে। নামজারি সম্পর্কে আর কোনো প্রশ্ন বা দ্বিধা-দ্বন্দ থাকলে, এখনই জানিয়ে দিন মন্তব্যের ঘরে।   

1 Comment

  1. AHM SHAFIQ ULLAH

    আমি ক নামের একজন মহিলা থেকে ৬.৮১ শতক ভুমি খরিদ করি, ক ও খ ওয়ারিশ সুত্রে মোট ৫ দাগে ওয়ারিশি সম্পত্তির মালিক ছিল। ক ও খ কোন বন্টক নামা দলিল করে নি, খ ৫ দাগে যা মালিক ছিল তাহা দুই দাগে আপোষ বণ্টক মতে বিক্রয় করে নিঃসত্ত্ববান হন, ক আপোষ বণ্টক মতে ৩ দাগে দখলে থাকিয়া ক এর নামে জমাখারিজ করতঃ আমার নিকট বিক্রয় করে নিঃসত্ত্ববান হন।আমি ক থেকে খরিদ করে নিজ নামে জমাখারিজ করি এবং ২০১২ সাল থেকে খাজনা দিয়ে আসিতেছি, ক ওখ উভয়ই বর্তমানে মৃত। খ এর ওয়ারিশ ২০২২ সালে আসিয়া দাগ মুলে আমার খরিদা ভুমিতে মালিকানা দাবি করিতে চায়,এবং জবর দখল করে। এতে বর্তমান ভুমি অপরাধ আইনে প্রতিকার কি? জানালে উপকৃত হবো।

Write A Comment

Author