Reading Time: 4 minutes

ঈদ হল ব্যস্ততার সময়। কোরবানির ঈদ তো আরও বেশি ব্যস্ততায় কাটাতে হয়। কোরবানির হাটে যাওয়া থেকে শুরু। এরপর পছন্দসই কোরবানির পশু কেনা, কোরবানির দিন পর্যন্ত তার দেখাশোনা, ঈদের দিনে কোরবানি করা, মাংস ভাগ করা, সবার মাঝে তা বিলিয়ে দেয়া, কাজের তালিকা যেন শেষ হবার নয়। তাই, ঈদের প্রস্তুতি যদি আগে থেকেই না নেয়া থাকে, শেষ মুহুর্তে তা সামাল দেয়া হয়ে পড়ে অনেক কঠিন। এর ভেতর বেশিরভাগ কাজই ঘর গৃহস্থালী সংক্রান্ত। আর এসব নিজের ঘরের কাজ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজেই করে ফেলা সম্ভব। দরকার শুধু সামান্য সদিচ্ছা এবং সময় বের করা।

পরিষ্কার রাখুন রান্নাঘর

রান্নাঘর
রান্নাঘর রাখুন ঝকঝকে তকতকে

দুই ঈদেই সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে যে জায়গাটি সেটি আপনার রান্নাঘর। আর রান্নাঘরে এমন অনেক কাজ আছে যা আপনি নিজেই সেরে রাখতে পারেন। কোরবানি ঈদে রান্নাঘরের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আগেই লেখা হয়েছে। তবে সকল প্রস্তুতিই বৃথা যদি রান্নাঘর না থাকে ফাংশনাল আর পরিষ্কার। ঈদের সময় অধিক ব্যবহারে এমনিতেই রান্নাঘরের উপর চাপ পড়ে। এ অবস্থায় যদি রান্নাঘর থাকে নোংরা এবং অগোছালো, তা ব্যবহার করা সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ঈদের আগেই রান্নাঘর রাখতে হবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে।

এরপরে আসে রান্নাঘরের সবকিছু ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা সেই বিষয়টিও। ধরুন ঈদের দিনে মাংস রান্না করতে গিয়ে দেখলেন চুলা ঠিকমত জ্বলছে না, পানির লাইন ঠিকমত কাজ করছে না। ঈদের দিনে এগুলো ঠিক করার মিস্ত্রি পাওয়াও হয়ে উঠবে রাজ্যের ঝামেলা। কিন্তু ,নিজে উদ্যোগী হয়ে ঈদের আগেই এগুলো চেক করে রাখলেই কিন্তু এমন সমস্যায় পড়তে হয় না। আর নিজের ঘরের কাজ করতে লোক কেন ডাকবেন? ছোট ছোট যেসব কাজ সম্ভব, নিজেই করে ফেলুন।

ফ্রিজ বা ডিপ ফ্রিজে পর্যাপ্ত জায়গা খালি রাখুন

ফ্রিজ
ফ্রিজে রাখুন পর্যাপ্ত জায়গা

কোরবানি ঈদের আরেকটি অতীব প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হল ফ্রিজ বা ডিপ ফ্রিজের মত স্টোরেজ। আর ঈদ শুরুর আগেই সেগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা করে রাখা জরুরী। সর্বোচ্চ জায়গার ব্যবহারের লক্ষ্যে পুরোনো কী কী জিনিস ফ্রিজের জায়গা দখল করে রেখেছে তা দেখুন এবং সরিয়ে ফেলুন। সম্ভব হলে ফ্রিজ বন্ধ রেখে খালি করে একদিন পরিষ্কার করুন। এছাড়াও ফ্রিজের পিছে এবং নিচে জমে থাকা ধুলা ময়লা পরিষ্কার করে রাখুন। ফ্রিজের উপর চাপ কমিয়ে ফেললে বিদ্যুৎ খরচও কমে যাবে।

চেক করে দেখুন দরজা ও জানালার অবস্থা

দরজা
ঈদের আগেই চেক করুন দরজা-জানালার অবস্থা

ঈদের সকালে দরজার ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ শুনতে আপনার নিশ্চয়ই ভাল লাগবে না? কিংবা সকালে উঠে জানালা খুলতে গিয়ে যদি দেখেন তা খুলছে না, কতই না বিরক্তিকর হবে বিষয়টা! তাই ঈদের আগে পাওয়া ছুটি কাজে লাগিয়ে দরজা জানালা মেইনটেন্যান্সের মত নিজের ঘরের কাজ গুলি নিজেই করে ফেলুন। দরজার নবে, কবজায় বা জং লাগতে পারে এমন যে কোন জায়গা আগে পরিষ্কার শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন। এরপর সে জায়গাগুলোতে অলিভ ওয়েল, যে কোন লুব্রিকেটিং ওয়েল দিন বা WD40 এর মতন কোন ডিগ্রিজার স্প্রে করুন। দেখবেন মুহূর্তেই দরজার শব্দ বা শক্তভাব চলে গিয়েছে। এছাড়া জানালার গ্রিলগুলো মুছে, নতুন পরিষ্কার পর্দাও লাগাতে পারেন আপনি চাইলে।

ঘরের কার্পেটসহ আনুষাঙ্গিক জিনিস পরিষ্কার করুন

ঘর মোছার ছবি
পরিষ্কার রাখুন কার্পেট ও ফ্লোর

ঈদের সময়ে বাসায় আসেন অনেক অতিথি এবং আত্মীয়স্বজন। তাই বাসা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা আবশ্যক। আর বাসা পরিষ্কারের কথা উঠলেই একদম প্রথম কাজ হল বাসার কার্পেট পরিষ্কার রাখা। কার্পেট ঝেড়ে মুছে একদম পরিষ্কার করে রাখুন। সাথে সাথে রুমের অন্যান্য আসবাবও ঝেড়ে রাখুন, নতুবা সেই ময়লা গিয়ে কার্পেটেই পড়বে। ঈদের দিনে অতিথিরা এসে পরিষ্কার রুমেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

সব জায়গায় নিশ্চিত করুন পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ

শাওয়ার
চেক করুন পানির লাইন এবং কল

ঈদের দিন সকালে উঠে গোসল করে পরিষ্কার হয়ে ঈদের নামাজে যাওয়াটাই আমাদের রীতি। এজন্য সকালে উঠেই গোসলখানায় লাইন লেগে যায়। যে মানুষটি অন্য বন্ধের দিনে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘুমায়, সেও দেখা যায় সাত সকালে উঠে গোসল করতে চলে গিয়েছে। কিন্তু কেমন হবে যদি সকালে উঠে দেখেন আপনার পানির কল ঠিকভাবে কাজ করছে না? অথবা কলে পানি নেই? পানির কল বা মোটরের মত জিনিসগুলি নিয়ে আমরা সচরাচর নষ্ট হবার আগে মাথা ঘামাই না। কিন্তু সেই নষ্ট হবার দিনটি যদি হয় ঈদের দিন তবে তার চেয়ে দুর্ভাগা আর কিছু হতে পারে না। তাই ঈদের আগেই বাসার কল বা শাওয়ার চেক করার মত কাজগুলো সেরে ফেলুন। এবার যদিও ঈদ হচ্ছে গরমকালে তবে ঠাণ্ডার দিনে গরম পানিতে গোসল করাটা স্বাভাবিক। এজন্য অনেকেই ব্যবহার করেন গিজার। এই গিজারও তাই আগে আগে চেক করে রাখা ভাল যে তা ঠিকমত কাজ করছে কী না।

ঈদ মানেই আনন্দ। তবে সেই আনন্দ মাটি হয়ে যেতে পারে অপরিষ্কার রান্নাঘর, ফ্রিজে জায়গার অভাব এমনকি দরজার ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দেও! এমন ছোট ছোট সমস্যার সমাধান আবার করা যেতে পারে বাইরের কারো সাহায্য ছাড়াই। তাই নিজের ঘরের কাজ নিজেই করে ফেলুন আগেভাগে আর ঈদের আনন্দ উপভোগ করুন ঝামেলাহীনভাবে। ঈদকে আরও আনন্দদায়ক করতে পানি আর কী কী কাজ করেন? জানিয়ে দিন। আর ঈদের আগে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ে আমাদের ব্লগটি কেমন লাগলো তাও জানাতে ভুলবেন না যেন!

Write A Comment