যখন তখন বাসা বদল করা সহজ কথা নয়। সুন্দর করে বাসা বদল করতে গেলে আপনার প্রয়োজন শক্তি, সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং চেকলিস্ট। মানে কখন কী এবং কোনটার পর কী করবেন সে বিষয়ে জানতে হবে নয়তবা একটা হযবরল অবস্থা লেগে যেতে পারে। তাই একটি তালিকা তৈরি করুণ যেখানে লেখা থাকবে সব কাজ। বাসা বদল এক রাজ্যের কাজ। সবকিছু এক সময়ে একের পর এক করতে হয়। সুতরাং আপনাকে খেয়াল করতে হবে যেন কোন কাজ এই চেক লিস্ট থেকে বাদ না পরে। এরপর চেক লিস্ট মেনে চললেই আপনার সবগুলো কাজ এক সাথে শেষ হয় যাবে। চলুন তাহলে শুরু করি নিরাপদে বাসা বদলানো নিয়ে আমাদের আজকের ব্লগ।
চেকলিস্ট তৈরি করুন
বাসা বদলের সময় আপনার সকল কাজ, খরচ এবং জরুরী সবকিছু একটি চেকলিস্টে লিখে ফেলুন। বাসা বদলের সময় অনেক এমন দায়িত্ব আসবে যার সম্বন্ধে আপনি আগে থেকে অবগত নন তাই কোনরকম ভুলের হাত থেকে রক্ষা পেতে সবকিছু লিখে রাখুন। যেমন, মাসের বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, সংবাদপত্রের বিল, ইন্টারনেট বিল এ জাতীয় বিল পরিশোধের মত সকল কাজ চেকলিস্টে টুকে রাখুন। যাতে করে শেষ মুহূর্তের অসুবিধাগুলো সহজেই এড়ানো যায়। আরও একটি বিষয় যেটা লিস্টে থাকা জরুরী তা হল, বাসা বদলের আগে বর্তমান বাসার কোন কিছু মেরামত করার প্রয়োজন রয়েছে কিনা সেটাও খেয়াল রাখা জরুরী।
অপ্রয়োজনীয় সবকিছু ফেলে দিন
আপনার বাড়িতে এমন প্রচুর জিনিস রয়েছে যা আপনি ভবিষ্যতে কখনও ব্যবহার করবেন না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলুন কিংবা ফেলে দিন। আরও চমৎকার উপায় হচ্ছে, পরিবেশের কোনও ক্ষতি না করে এগুলোকে দান করুন। চাইলে বিক্রিও করুন বা এগুলোকে যথাযথভাবে নষ্ট করুন। প্লাস্টিক বা কোনও ধরণের রাসায়নিক বর্জ্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাসহ সঠিকভাবে নষ্ট করুন। আচারের জারস এবং সস জাতীয় পাত্র এগুলো দ্বিতীয়বার আর তেমন কাজে আসে না তাই এগুলো নষ্ট করে ফেলাই ভালো। এই সমস্ত কাজ শেষ করে তবেই নিরাপদে বাসা বদলানো উচিত।
কার্ডবোর্ডের বাক্সগুলো ব্যবহার করুণ এবং ভবিষ্যতের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করুন
কার্ডবোর্ডের বাক্সগুলো বাসা বদলের সময় বেশ উপকারী। যে সমস্ত জিনিসগুলো ভেঙ্গে যাওয়ার ভয় থাকে সেগুলো যত্ন সহকারে এই কার্ডবোর্ডের বাক্সগুলোতে রাখলে তা একদম অক্ষুণ্ণ থাকে। গ্লাসওয়্যার, ইলেক্ট্রনিক্স বা সিরামিকের জিনিস কম বেশি আমাদের সবার বাসায়ই থাকে তাই এগুলো সাবধানে রাখুন। কার্ডবোর্ডের বাক্সগুলোর ভিতরে কাপড়ের সাহায্যে পেচিয়ে এরপর বাক্সের মুখ স্কচটেপ দিয়ে ভালোভাবে সিল করুন দেখবেন জিনিসগুলো ঠিক আছে। কার্ডবোর্ডের প্রয়োজন শেষ হলে এগুলো কখনো ভাঙবেন না। ভবিষ্যতের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করে রাখুন।
খোঁজ নিয়ে দেখুন বাসা বদলে সাহায্য করবে এমন প্যাকার বা মুভার রয়েছে কিনা!
এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখুন এমন কোন ভালো প্যাকার বা মুভার রয়েছে কিনা, যারা দায়িত্ব নিয়ে আপনার বাসার সব মালামাল সরিয়ে নিবে। পরামর্শের জন্য আপনি বিপ্রপার্টি রেন্টাল এক্সপার্টের সহায়তা নিতে পারেন। এছাড়াও অনেক অনালাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেগুলোর সহায়তা আপনি নিতে পারেন। নিরাপদে বাসা বদলানো এর জন্য এই সার্ভিসগুলো ব্যবহার করুন। অন্যথায়, মূল্যবান এই জিনিসগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
যাবার আগে আপনার খালি বাড়ির ছবি তুলুন
বাসা বদলের সময় বৈদ্যুতিক পয়েন্ট, বাথরুম এবং সমস্ত রুম এবং রান্নাঘরের ছবি নিন। বৈদ্যুতিক পয়েন্টের নিলে যে সুবিধাটা পাবেন তা হল, নতুন বাসায় যাওয়ার পরে আগের বাসার মত করে বৈদ্যুতিক পয়েন্টগুলো প্রতিস্থাপন করা সহজ হবে। বাড়ির বাথরুমের এবং অন্যান্য জায়গাগুলোর ছবি তুলুন এতে করে, বাড়িওয়ালাদের দ্বারা কোন অনিচ্ছাকৃত ফিক্সিং চার্জ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন। কেননা আপনার কাছে তখন ছবি আছে বাড়িওয়ালার দোষারোপ থেকে বাঁচার জন্য। তাই বাসা বদলের পর সেই ছবিগুলো একটি নির্দিষ্ট ফোল্ডারে রাখুন।
মূল্যবান দলিলপত্র আলাদাভাবে প্যাক করুন এবং নিজেই বহন করুন
মূল্যবান নথি বা দলিল। বিশেষত আপনার প্রশংসাপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং অন্য কোনও ডকুমেন্টেশনগুলোকে এক জায়গায় রাখুন। একটি স্যুটকেসে লক করে রাখুন এবং নিজেই নতুন বাসায় নিয়ে যান তাহলেই, ভাল। বাসা বদলের সময় এই বিষয়টি কখনই অবহেলা করা উচিত নয়। এই সকল মূল্যবান দলিল পত্রের জন্য হয় আপনি কিংবা আপনার ঘনিষ্ট কাউকে দায়িত্ব দিন। নতুন বাসায় গিয়েও ঠিক একইভাবে গুছিয়ে নিন।
প্রত্যেকের জন্য জরুরি এবং প্রয়োজনীয় ব্যাগ তৈরি করুন
জরুরি অবস্থা ওষুধ, কাপড় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিষগুলো প্যাক করুন যা আপনার বাসা বদলের সাথে সাথে প্রয়োজন হবে। এছাড়াও, বোতলগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি রাখুন এবং প্রতিটি ব্যাগে একটি করে বোতল রাখুন। এই সমস্ত কাজ সাবধানতার সাথে করুন এবং একদম তাড়াহুড়া করবেন না। চেষ্টা করবেন কিছু মিস করার।
ফ্রিজ পরিষ্কার করুন এবং এখনই সুইচ অন করবেন না
হোম অ্যাপ্লায়েন্স পরিষ্কার ও মেইন্টেইন করা খুব জরুরী একটি ব্যাপার। যেমনি সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত তেমনি বাসা বদলের সময় সবকিছু গুছিয়ে তবেই এটা চালু বা অন করা উচিত। বাসা বদলের আগে অবশ্যই এগুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার করুন। এবং বাসা বদলের এক মাস আগে থেকে ভারী বাজার যেমন মাছ মাংস কিনে জমিয়ে রাখা বন্ধু করুন। নয়তো বা বাসা বদলের সময় এক বিরক্তিকর ঝামেলার মুখোমুখি হবেন। নতুন বাসার বৈদ্যুতিক ভোলটেজ সম্বন্ধে জানুন তার পরই ফ্রিজ অন করুন।
সবকিছু জীবাণুমুক্ত করুন
বাসা বদলের আগে এবং পরে অ্যালকোহলিক দ্রবণ বা অন্যান্য জীবাণুনাশক দিয়ে সাথে সাথে সমস্ত জিনিসকে জীবাণুমুক্ত করুন। জীবাণু যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সমস্ত কার্ডবোর্ডের বাক্স এবং প্যাক করা জিনিসগুলোকে অবশ্যই সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জীবাণু থেকে রক্ষা পেতে ঘরের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আপনারই দায়িত্ব।
এই তালিকাটা অনুসরণ করলে বাসা বদল কখনই আর ঝামেলার মনে হবে না। তবুও এই তালিকার পাশে আরও একটি কাজ চাইলে করতে পারেন আর তা হল, মনের মত বাসা খুঁজতে বিপ্রপার্টির সহায়তা নিতে পারেন কেননা তারা এই সময়েও আপনার জন্য বাসা খুঁজে দিচ্ছে। এমন আরও চমৎকার সব টিপস জানতে পড়তে থাকুন বিপ্রপার্টির ব্লগ।