Reading Time: 4 minutes

দুয়ারে কড়া নাড়ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। দুর্গতিনাশিনীর আগমনে প্রতি বছর ঢাকের বোল, কাঁসার ঘণ্টা, শাঁখের ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে সারা দেশের পূজামণ্ডপ। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার গুরুত্ব যেহেতু এখন অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে অনেক বেশি, তাই এ বারের পূজার আমেজ যে খানিকটা ভিন্ন হবে সেটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। হয়তো বন্ধুদের সাথে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়ানো বা দলবেঁধে পূজো দিতে যাওয়ার সুযোগ হবে না এবার। তবে তাই বলে উৎসবের রং কি ফিকে হতে পারে! ঘরে বসে যদি পালন করতেই হয় এবারের দুর্গাপূজা, তবে শারদোৎসবের আবহ না হয় এবার নিজের আঙ্গিনায়ই আনুন। দুর্গা পূজায় ঘরের সাজ কেমন হতে পারে তার আদ্যোপান্ত নিয়েই আমাদের আজকের ব্লগ। 

শারদ শুভেচ্ছায় অতিথি বরণ 

আল্পনা
দরজা খুলে ঘরে ঢোকার পর যেন উৎসবের আমেজ পাওয়া যায় সেটি নিশ্চিত করতে মেঝেতে আঁকতে পারেন আল্পনা

এবারের পূজোয় পরিবার-পরিজন ও বন্ধুদের সমাগম ঘরে করাই বোধহয় সবচেয়ে নিরাপদ হবে। আর সে কথা মাথায় রেখে আপনার বাড়ির সদর দরজা থেকেই না হয় শুরু হোক উৎসবের আবাহন। দুয়ারের সাজসজ্জার মাধ্যমে কিন্তু এন্ট্রান্স এরিয়ায় দারুণ ভিন্নতা আনা যায়। দরজায় ঝুলিয়ে দিতে পারেন মাটির তৈরি দেবী মূর্তির মুখোশ বা ছোট্ট ভাস্কর্য। দেশীয় বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজে পাবেন টেরাকোটা বা মাটির তৈরি থিমেটিক এসব সাজসজ্জার সামগ্রী। দরজা খুলে ঘরে ঢোকার পরও যেন উৎসবের সে আমেজ পাওয়া যায় সেটি নিশ্চিত করতে মেঝেতে আঁকতে পারেন আল্পনা। তবে মেঝে যদি টাইলসের হয় তবে রং দিয়ে আল্পনা না একে ব্যবহার করতে পারেন ফুল। পানিভর্তি মাটি বা কাঁসার পাত্রে ফুল ও প্রদীপ রেখে ঘরে আনতে পারেন দেশীয় এ পূজার আমেজ। দুর্গাপূজার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ শরৎকাল। তাই পূজা উপলক্ষে বড় ফুলদানিটি সাজিয়ে তুলতে পারেন কাশফুলের গুচ্ছ দিয়েও। 

বসার ঘরে পূজোর আমেজ 

কুশন খাবার
বসার ঘরের সোফা, পর্দা ও কুশনের ফেব্রিক বাছাইয়ের সময় মানানসই উজ্জ্বল রংকেই প্রাধান্য দিন

দুর্গা পূজায় ঘরের সাজ এর অন্যতম অনুষঙ্গ হবে দেশীয় উপাদানে তৈরি নানা জিনিস ও উজ্জ্বল রং। তাই বসার ঘরের সোফা, পর্দা ও কুশনের ফেব্রিক বাছাইয়ের সময় মানানসই উজ্জ্বল রংকেই প্রাধান্য দিন। দেশীয় সাজের সাথে আধুনিকতার মিশেল চান যারা, তারা পর্দার জন্য বেছে নিতে পারেন শুভ্র সাদা রং, তাতে ঘরে আসবে স্নিগ্ধতা ও শরতের আবহ। এর সাথে উজ্জ্বল রংয়ের কুশন কাভার আর সোফাও বেশ মানিয়ে যাবে। তবে ফেব্রিক প্যাটার্নের দিকেও খেয়াল রাখতে ভুলবেন না। দেশীয় আবহে ঘর সাজানোর সময় যদি চেকার্ড বা পোলকা ডট ব্যবহার করেন, তা কিন্তু একদম বেমানান হবে। বেছে নিন দেশীয় মোটিফের ডিজাইন করা ফেব্রিক বা ফ্লোরাল কোনো প্রিন্ট। পূজা উপলক্ষে যদি ঘরে আরো একটু ঐতিহ্যের ছোঁয়া আনতে চান, তবে বসার ঘরের এককোণে বিছিয়ে দিতে পারেন শীতল পাটিও। আর সেইসাথে বাঁশ বা বেতের তৈরি ল্যাম্পশেড কিংবা আধুনিক পেনডেন্ট লাইট মিলিয়ে বসার ঘরটি করে তুলতে পারেন দারুণ নান্দনিক। 

পূজার আপ্যায়ন যখন খাবার ঘরে

কাঁসার বাসন
খাবার ঘরে আভিজাত্যের ছোঁয়া আনতে চাইলে কাঁসার তৈরি নকশাকাটা বাসনের জুড়ি মেলা ভার

দুর্গা পূজায় ঘরের সাজ মানেই ঘরে বাঙালি ঐতিহ্যের আবাহন। তাই চীনামাটির বাসনগুলো না হয় এবার তুলেই রাখুন। তার বদলে খাবার পরিবেশন করতে পারেন মাটির বাসন-কোসনে। আভিজাত্যের ছোঁয়া আনতে চাইলে কাঁসার তৈরি নকশাকাটা বাসনের জুড়ি মেলা ভার। শুধু প্লেট-গ্লাস সাজানোতেই কিন্তু খাবার ঘরের আপ্যায়ন পরিপূর্ণ হয় না। ডাইনিং টেবিলে বিছিয়ে দিন নকশি কাঁথার বুননে তৈরি রানার। দেশীয় আবহ আনতে বেছে নিতে পারেন রঙ্গিন সুতোর কাজ করা বা কুরুশ কাঁটায় তৈরি টেবিল ম্যাট। 

প্রতি কোণে উৎসবের রং 

prdIp
ঘরে উৎসবের আলো জ্বালাতে মাটি বা কাঁসার প্রদীপ কিংবা হাল আমলের ফেয়ারি লাইটসের শরণাপন্ন হতে পারেন

দূর্গোৎসব এখন বাঙালি গৃহাঙ্গনে প্রাণের উৎসব। আর সেই প্রাণের ছোঁয়া ছড়িয়ে দিতে ঘরের প্রতিটি কোণে ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন আপনি। শোবার ঘরে উজ্জ্বল রঙ্গের ব্লক করা বা অ্যাপ্লিকের বেডশিট বিছিয়ে দিতে পারেন। ট্রেডিশনাল সাজের ষোলকলা পূর্ণ করতে চারপাশে নেটের লেস কুঁচি দিয়ে বসানো বেডশিট-বালিশের কাভারও ব্যবহার করতে পারেন। সেইসাথে ঘরের প্রতিটি কোণে মাটির তৈরি, কাঁসার তৈরি দেশীয় শোপিস রাখলে পুরো ঘরে কিন্তু ঐতিহ্যের আবহ বেশ টের পাওয়া যাবে। দুর্গা পূজার আরো একটি অনুষঙ্গ হলো আলোকসজ্জা। ঘরে উৎসবের আলো জ্বালাতে মাটি বা কাঁসার প্রদীপ কিংবা হাল আমলের ফেয়ারি লাইটসের শরণাপন্ন হতে পারেন। সেন্টার টেবিলের নিচে, ঘরের পিলারগুলো ঘিরে, জানালার কার্নিশে মঙ্গলপ্রদীপের আভা আপনার আঙ্গিনায় এনে দিবে অন্যরকম এক স্নিগ্ধতা। ঘরের কোণে বড় মোমবাতি স্ট্যান্ড বসিয়ে তাতে কয়েকটা রঙিন মোমবাতিও সাজিয়ে নিতে পারেন।

দুর্গা পূজায় ঘরের সাজ এর জন্য মূলত মাথায় রাখতে হবে তিনটি বিষয়। দেশীয় ঐতিহ্য, উজ্জ্বল রং আর আলোর সমাহার। যে উপাদানগুলো আপনার ঘরে এনে দিবে দেশীয় আবহ, রং আর আলোর ছটা, সেসব দিয়েই চটজলদি সাজিয়ে ফেলুন ঘর। সব যে নতুন কিনতে হবে তা কিন্তু নয়। হয়তো নানীর কাছ থেকে পাওয়া কাঁসার থালাবাটি দিয়ে এবার পুজোয় আপ্যায়ন করতে পারবেন অতিথিদের। কিংবা হয়তো বিয়েতে পাওয়া টেরাকোটার শোপিসটি হয়ে উঠতে পারে আপনার বসার ঘরের সেন্টারপিস। সময় থাকলে কাজে লাগাতে পারেন নিজের সৃজনশীলতাও। পুরোনো চাদরে কুচি করা লেস বসিয়ে শোবার ঘরটা সাজিয়ে নিতে পারেন ঠাকুরবাড়ির আদলে। 

শরৎকালে দেবীর আগমন উপলক্ষে আয়োজিত এ পূজা বাঙালি ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। এবারের ভিন্নধর্মী পূজায় আমাদের এ টিপসগুলো আপনার কতটা কাজে লাগলো সেটি কিন্তু জানাতে ভুলবেন না। সেইসাথে কমেন্টস বক্সে লিখতে পারেন আরো কী কী দারুণ উপায়ে সম্পন্ন করা যায় দুর্গা পূজায় ঘরের সাজ। 

Write A Comment