Reading Time: 3 minutes

প্রকৃতির মাঝে দাড়িয়ে থেকে প্রকৃতিকে অনুভব করার মাঝে যে রোমাঞ্চ রয়েছে তা আর কোথাও নেই। এমন কোন বনের ভেতর দিয়ে ঘুরে বেড়ানো যেখানে পাখির কলরব, পশুর গর্জন সব কিছু নিজে অনুভব করার মাঝেও রয়েছে প্রশান্তি। যা পৃথিবীর বুকে থাকা এই চমৎকার বনগুলোতে ঘুরতে গেলে অচিরেই খুঁজে পাবেন। দৈনন্দিন জীবন থেকে দূরে সরে গিয়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি বনের মাঝে কিছুটা সময় কাটানো। যেখানে কোন হুড়োহুড়ি নয় থাকবে কেবল স্থিরতা। চলুন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর বনগুলো থেকে ঘুরে আসি যেখানে গেলে মায়ায় হারিয়ে যাবেন আপনিও। 

আরাশিয়ামা ব্যাম্বো ফরেস্ট, জাপান

আরাশিয়ামা ব্যাম্বো ফরেস্ট
আরাশিয়ামা ব্যাম্বো ফরেস্ট

জাপানের কিয়াটো শহরে অবস্থিত এই অত্যন্ত জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট আরাশিয়ামা। রাস্তার দুপাশে বাঁশের বন। ঋতু ভেদে হয়ে ওঠে একেক সময়ে একেক রকম। চারদিকে বাঁশের এই ডালপালা ছড়ানো মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনাকে মুহুর্তেই মুগ্ধ করে দিবে। এই বাঁশ বনের ফাঁকে সূর্যের মৃদু আলো যেন এক স্বপ্নের ভুবন তৈরি করে। আপনি যখন এই বনের পথ ধরে হাঁটবেন, তখন আপনি নিজেই এটা উপলব্ধি করতে পারবেন কেন, এটাকে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর বন বলা হয়ে থাকে। এখানের পরিবেশটাই এমন আপনার মনে হবে আপনি অন্য কোন মহাবিশ্বে অবস্থান করছেন। বাঁশ বনের এই পথের শুরু তেনরিউজি টেম্পল এর প্রবেশপথ থেকে। এখানেই প্রথম বাঁশ ঝাড়ের গোড়াপত্তন হয়। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে এবং ঘন বাঁশ বনে রূপান্তর ঘটে। আপনি যদি এই বনের সৌন্দর্যকে সম্পূর্ণরূপে উপভোগ করতে চান তবে আবহাওয়া যেদিন পরিষ্কার সেদিন ঘুরে আসতে পারেন এই বন থেকে। সাধারণত, এপ্রিল বা মে বা অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে থাকে সেই জায়গায় মানুষ ঘুরতে যায়। 

ডেইনট্রি রেইনফরেস্ট, অস্ট্রেলিয়া

ডেইনট্রি রেইনফরেস্ট
ডেইনট্রি রেইনফরেস্ট

অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে বহু বছরের পুরনো এ ডেইনট্রি রেইনফরেস্ট। এই বনটি এতই মনোমুগ্ধকর যে অনেকের কাছে বিভিন্ন রকমের শৈল্পিক কাজের অনুপ্রেরণার মূল উৎস হয়ে উঠেছে। অস্ট্রেলিয়ার ডেইনট্রি রেইনফরেস্ট তারই নাম। এই রেইনফরেস্টটি ১৩৫ মিলিয়ন বছর পুরনো এবং বিশ্বের প্রাচীনতম গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইন ফরেস্ট হিসাবে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়।  এই বনের বৃষ্টিপাতকে ১৯৮৮ সালের ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় স্থান দিয়েছে। এই বনের ভেতর প্রবেশের সাথে সাথে এর সৌন্দর্য আপনার মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করবে। ১২২ টির মত বিরল প্রজাতির প্রাণী এবং উদ্ভিদ আছে এই বনে। আরও রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন আরাকুরিয়া গাছ। এছাড়া অন্যান্য ট্রপিক্যাল পাইন ও প্রাচীন ডেইনট্রি গাছের সন্ধান পাওয়া যাবে এখানে। বনভূমিটি সাগরের ধারে অবস্থিত। আর এ সাগরেই রয়েছে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ। এখানে পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থাও চমৎকার। 

 মন্টেভার্ডের ক্লাউড ফরেস্ট, কোস্টারিকা

মন্টেভার্ডের ক্লাউড ফরেস্ট
মন্টেভার্ডের ক্লাউড ফরেস্ট

এমন এক জায়গায় দাড়িয়ে আছেন যেখানে চারপাশে সবুজ প্রকৃতি আর মাথার উপর মেঘেরা ছুটে বেড়াচ্ছে।  জলপ্রপাতের গুনগুন করা শব্দে মন ভরে উঠতে পারে। নিমিষেই আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছেন আর হারিয়ে যাচ্ছেন প্রকৃতির মাঝে। যেকোন প্রকৃতি প্রেমীর জন্য এই কয়েকটি উপাদানই যথেষ্ট নিজের বাড়ি ছেড়ে বনে ছুটে আসার জন্য। কোস্টা রিকার মন্টেভার্দে ক্লাউড ফরেস্ট বিশ্বের অন্যতম সুন্দর বন। ক্যানোপি ওয়াক, জিপ লাইন এবং তারের গাড়ি পার্কটিকে আরও প্রাণবন্ত করে দেয়, ঝুলন্ত ব্রিজ এবং রাতের সাফারিগুলি আরও চমৎকার। চমৎকার মেঘ, সবুজ ও সবুজের সমাহারে, মন্টেভার্ডের মেঘ বনটি বিশ্বের অন্যতম সুন্দর জায়গা। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর বনগুলো এর মধ্যে এই বনটি একটু বেশিই বিশেষ।

আমাজন রেইনফরেস্ট

আমাজন রেইনফরেস্ট
আমাজন রেইনফরেস্ট

পৃথিবীর বেশীরভাগ মানুষের এই জায়গাটির পরিচয় লাগবে না। ঠিক একইভাবে, আমাজন রেইনফরেস্টের নাম শুনলেও আমরা অনেকেই জানি না যে, পৃথিবীর প্রায় ২০% অক্সিজেনের উৎপত্তি এই আমাজন রেইনফরেস্ট থেকেই। আর এজন্য একে পৃথিবীর ফুসফুস নামেও ডাকা হয়। আমাজনে কী নেই? প্রাকৃতিক দৃশ্য, বন্যজীবন, অজানা উপজাতিরা এমনকি বিশ্বের দীর্ঘতম নদীগুলির একটি রয়েছে এই আমাজনে। পাশে বয়ে চলা নদীর নামও হয়ে যায় আমাজন নদী। আয়তনে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নদী। বলা হয়, আমাজন নদী থেকেই পৃথিবীর বেশীরভাগ নদীর উৎপত্তি। এই বনে বড় প্রাণীদের তুলনায় ছোট পোকা-মাকড় আর রং-বেরংয়ের পাখিতে আমাজান সমৃদ্ধ। এটি কেবল বিশ্বের অন্যতম সুন্দর বন নয়, নয়টি ভিন্ন দেশ জুড়ে থাকা বিস্তৃত বৃহত্তম বন এটি। এই বিশাল অরণ্যতে এমন কোন কীট পতঙ্গ নেই যা এখানে পাওয়া যাবে না। পৃথিবীর ২০% অক্সিজেনের ভাণ্ডার হল এই আমাজান বন। এই বনের ব্রাসিল নামের নদীটি বেশ প্রশস্ত এবং কয়েক মাইল জুড়ে বিস্তৃত। এই অঞ্চলের রেইন ফরেস্টের শুকনো জমিতে বাকী বনের তুলনায় বড় এবং প্রাচীনতম গাছ রয়েছে। এছাড়াও, আপনার গাইড হিসাবে স্থানীয়দের বেছে নিতে পারেন। স্থানীয়দের বেছে নেওয়ার কারণ হচ্ছে, তারা বন সম্বন্ধে অনেক ভালো ভাবে জানেন।

 পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর বনগুলো নিয়ে আমাদের আজকের ব্লগ এখানেই শেষ। আপনি এই বন গুলো থেকে কোনটিতে যেতে বেশি আগ্রহী? এবং কেন? আমাদের কমেন্ট করে জানিয়ে দিন। 

Write A Comment