Reading Time: 5 minutes

রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে যে বিষয়টি তা হল প্রপার্টির মূল্য। প্রপার্টি কেনার ক্ষেত্রে অন্যান্য সকল চাহিদা মিলে গেলেও প্রপার্টির মূল্য যদি বাজেটের মধ্যে না থাকে বা বাজেটের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হয়, তবে অনেক ক্ষেত্রেই প্রপার্টিতে বিনিয়োগ করা আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। যদিও এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সম্মুখীন আপনাকে হতেই হয়, আর তা হল প্রপার্টির সঠিক মূল্য আসলে কত সে সম্পর্কে আপনি জানবেন কী করে?

তবে দুঃখের বিষয় হল, বাংলাদেশে প্রপার্টির মূল্য নির্ধারণের জন্য এমন কোন প্যারামিটার নেই, যার সহায়তায় আপনি প্রপার্টির মূল্য সম্পর্কে ধারণা পেতে পারবেন। আর এ কারণেই অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট এর মতো প্রপার্টির মূল্য কত হবে তা নির্ধারণের জন্য প্রপার্টির মূল্যকে প্রভাবিত করা বিষয়সমূহ এর উপর নির্ভর করতে হয়। আর এই বিষয়সমূহ প্রপার্টির লোকেশন, ধরন, এমনকি প্রপার্টি বিক্রেতার উপরও অনেকাংশে নির্ভর করে। যদিও প্রপার্টির মূল্যকে প্রভাবিত করা বিষয়সমূহ এর মধ্যে বেশ কিছু বিষয় রয়েছে, তবে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল আজকের ব্লগে।         

প্রপার্টির যোগান এবং চাহিদা 

বাড়ছে প্রপার্টির চাহিদা
উন্নত সুযোগ-সুবিধা যে এলাকায় বেশি থাকে, সেখানে প্রপার্টির মূল্যও হয় অধিক

প্রপার্টির মূল্যকে প্রভাবিত করা বিষয়সমূহ এর মধ্যে প্রধান এবং উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হল প্রপার্টির চাহিদা এবং যোগান এর মতো বিষয়। প্রপার্টির চাহিদা বাড়ার সাথে সাথেই মার্কেটে ভারসাম্য ধরে রাখতে প্রপার্টির মূল্য ও চাহিদার সমন্বয় করা হয়। বিশেষ করে আমরা যদি ঢাকার প্রপার্টি মার্কেটের দিকে তাকাই, তবে চাহিদা এবং যোগানের মতো বিষয়ে বেশ তারতম্য লক্ষ্য করা যাবে। বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ায় অন্যান্য শহর থেকে ঢাকায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতাও থাকে বেশি। এর ফলে উন্নত সুযোগ-সুবিধা ও আধুনিক জীবনযাপনের জন্য মানুষজন ঢাকা শহরকেই বেছে নেন।  আর এসকল কারণেই ঢাকায় প্রপার্টির মূল্য অনেক বেশি হয়ে থাকে। আর সুযোগ-সুবিধার উপর নির্ভর করে ঢাকায় ফ্ল্যাট বিক্রয় এর ক্ষেত্রে এক লোকেশন থেকে অন্য লোকেশনের প্রপার্টির মূল্যেও বেশ তারতম্য দেখা দেয়।             

মার্কেটে সুদের হার 

সুদের হারে ওঠানামা
সহজ শর্তে হোম লোন নেয়ার সুবিধা থাকলে প্রপার্টি কেনার ক্ষেত্রেও মানুষ আগ্রহী হয়ে উঠবে

প্রপার্টি কেনার ক্ষেত্রে অনেক মানুষকেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লোন এর উপর নির্ভর করতে হয়। এক্ষেত্রে মার্কেট এ সুদের হার এবং অন্যান্য শর্ত সমূহের এর উপর নির্ভর করে, গ্রাহকরা আসলে কী পরিমাণ টাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে লোন নিতে পারছেন। সুদের হার কম থাকা মানে কম খরচে এবং সহজে লোন নেয়ার সুযোগ, এর ফলে বন্ধকী ঋণ বা হোম লোন নেয়ার জন্য অধিক মানুষ আগ্রহী হয়ে উঠবেন। ফলাফলে ক্রেতাদের জন্য লোন পাওয়া যেমন হবে, তেমনি প্রপার্টির চাহিদাও বাড়বে উল্লেখযোগ্য হারে, আর সে সাথে প্রপার্টির মূল্য বৃদ্ধিতেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব লক্ষ্য করা যাবে।        

অর্থনৈতিক উন্নয়ন 

অর্থনৈতিক উন্নয়ন
চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নও প্রপার্টির মূল্য বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে

প্রপার্টির মূল্যকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে অর্থনীতির বিকাশ অনস্বীকার্য। উন্নয়নের ধারা যত এগিয়ে যাবে সে সাথে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলাফলে বসবাসের জন্য প্রপার্টির চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে নির্দিষ্ট কোন এলাকার কোন সেক্টরে যদি উন্নয়ন ঘটে, তখন এর প্রভাব অন্যান্য দিকেও পড়ে। ফলাফলে উক্ত এলাকার প্রপার্টির মূল্যও স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়ে যায়। যেমন ধরুন আমরা যদি গুলশান এলাকার আজকের অবস্থানের দিকে তাকাই, তবে বলতেই হয় অনেক কর্পোরেট অফিসের প্রধান কার্যালয় গুলশান এলাকায় গড়ে ওঠার কারণে গুলশানের প্রপার্টির মূল্য বেড়ে যাওয়ার পেছনে এর বেশ ভূমিকা রয়েছে।         

সহজলভ্যতা 

যাতায়াত ব্যবস্থা
উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা এর সাথে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রপার্টির মূল্যতে প্রভাব ফেলে

প্রপার্টির মূল্যকে প্রভাবিত করা বিষয়সমূহ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হল সহজলভ্যতা। প্রপার্টিটি যে এলাকায় অবস্থিত সে এলাকার সাথে অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, যাতায়াত এর জন্য যানবাহন পাওয়ার সুবিধা ইত্যাদি থাকে মৌলিক চাহিদার তালিকায়। আর এর পাশাপাশি নির্দিষ্ট সে এলাকার কাছেই যদি কমার্শিয়াল অফিস স্পেস, রেস্টুরেন্ট এবং শপিংমল থাকে, তবে তো কথাই নেই! প্রপার্টিতে বিনিয়োগের আগে একজন ক্রেতা তাই এসকল বিষয়কে বেশ গুরুত্বের সাথেই দেখে থাকেন। আর এ কারণেই যেসকল এলাকা থেকে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা খুব সহজেই পাওয়া সম্ভব প্রপার্টির মূল্যও সেখানে স্বাভাবিকভাবেই অধিক হবে।     

যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল ঢাকা মেট্রো রেল প্রজেক্ট। আর তাই লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যেসকল এলাকায় মেট্রো রেলের স্টেশন নির্মিত হচ্ছে সেই এলাকা সমূহের প্রপার্টির মূল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমান্নয়ে।      

অ্যাপার্টমেন্ট এর বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা সমূহ 

অ্যাপার্টমেন্ট এর ফ্লোর প্ল্যান
অ্যাপার্টমেন্ট এর ইউনিক কোন বৈশিষ্টও অ্যাপার্টমেন্টের মূল্যকে প্রভাবিত করতে পারে

প্রপার্টির মূল্যকে প্রভাবিত করা বিষয়সমূহ এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুইটি বিষয় হল প্রপার্টির গুণগতমান এবং এর বৈশিষ্ট। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রপার্টি যতটা লাক্সারিয়াস এবং সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন হবে, এর মূল্যও ততটাই বেশি হবে। যেমন ধরুন একটি অ্যাপার্টমেন্ট এর ফ্লোর প্ল্যান, অ্যাপার্টমেন্ট এর সাইজ, পার্কিং ব্যবস্থা, ওপেন স্পেস এরিয়া, ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রপার্টিটি নির্মাণে কী ধরনের ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়েছে ইত্যাদি সকল কিছুই প্রপার্টির মূল্যকে প্রভাবিত করা বিষয়সমূহ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে।  

এক্ষেত্রে ডেভেলপার কোম্পানিগুলো বেশ বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে। কেননা অ্যাপার্টমেন্টটি যদি দেশের বিশ্বস্ত এবং জনপ্রিয় ডেভেলপার কোম্পানি দ্বারা নির্মিত হয়ে থাকে, তবে এর নান্দনিক আর্কিটেকচারাল প্ল্যান এবং প্রিমিয়াম কোয়ালিটির জন্য গ্রাহকরা খুব সহজেই অধিক অর্থ বিনিয়োগে উৎসাহী হয়ে ওঠে। তবে এর পাশাপাশি প্রপার্টির ধরনও প্রপার্টির মূল্যকে সমানভাবে প্রভাবিত করে। যেমন ধরুন, কন্ডোমনিয়াম অ্যাপার্টমেন্ট এর সুবিধা সমূহ যদি কোন সাধারণ রেসিডেন্সিয়াল অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে থাকে, তবে সেই অ্যাপার্টমেন্ট এর মূল্য কিন্তু কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। আর তাই এ ধরনের নানাবিধ দিকগুলো প্রপার্টির মূল্যকে প্রভাবিত করা বিষয়সমূহ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে।  

লোকেশন 

কোন একটি প্রপার্টির মূল্য কতটা বেশি বা কম হবে তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এলাকাটির আশেপাশে এলাকা সমূহ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক ক্ষেত্রেই প্রপার্টির চেয়েও বেশি প্রপার্টিটি যে লোকেশনে অবস্থিত তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে দেখা যায় প্রপার্টির লোকেশনই অন্যসব বিষয় থেকে প্রপার্টির মূল্যকে বেশি প্রভাবিত করে। আশেপাশের এলাকাটির সুযোগ-সুবিধা, উন্নত ব্যবস্থা, নির্দিষ্ট এলাকায় প্রপার্টির চাহিদাকে যেমন প্রভাবিত করে, তেমনি এর মূল্যতে এর প্রভাব পড়ে লক্ষণীয় মাত্রায়। আর তাই প্রপার্টির মূল্যকে প্রভাবিত করা বিষয়সমূহ এর মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হল প্রপার্টির লোকেশন। 

উপরে উল্লেখিত এই বিষয় সমূহ ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় আরও কিছু বিষয় প্রপার্টির মূল্যকে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে রয়েছে বসবাসের জন্য এলাকাটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা ইত্যাদি। যদিও এসকল বিষয়সমূহ ব্যক্তির চাহিদার উপর নির্ভর করবে, তবে প্রপার্টিতে বিনিয়োগের আগে প্রপার্টির মূল্যকে প্রভাবিত করা বিষয়সমূহ এবং এর তাৎপর্য সম্পর্কে অবশ্যই আগে থেকেই ধারণা থাকা প্রয়োজন।

কমপ্লিট প্রপার্টি সল্যুশন খুঁজছেন? এখনই ডাউনলোড করুন বিপ্রপার্টি অ্যাপ
অ্যান্ড্রয়েড এর জন্য: www.tinyurl.com/bpropertyapp
আইওএস এর জন্য: www.tinyurl.com/57kj4dnw

Write A Comment

Author