একটি বাড়ি আপনার সারা জীবনের সঞ্চয়। এই বাড়িতেই আমরা বসবাস করি দিনের পর দিন। আবার এই বাড়িকেই বেছে নেই বিনিয়োগের জন্য। উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন! বাড়িটির দেখভাল এমন ভাবে করতে হবে যাতে করে বিক্রি করতে কোন ধরণের ঝামেলা না হয়। বাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে কম বেশি আমরা সবাই জানি যে প্রপার্টির মূল্য কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়! কিন্তু কয়জনই বা জানি যে প্রপার্টির মূল্য হ্রাস হয় কী কী কারণে? আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো সে বিষয়গুলো সম্বন্ধে যেগুলো প্রপার্টির মূল্য হ্রাস করতে পারে।
বাড়ির এক্সটেরিয়রে উন্নতমানের পেইন্ট ব্যবহার না করা
বাড়ির বাহিরের অংশটাই যেন সর্বপ্রথম নজরকাড়ে। ক্রেতাদের উপর পড়া এই প্রথম ছাপটাই বাড়ি ক্রয় করতে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। বাড়ির বাহির দেখেই অনেক ক্রেতারা সেই বাড়িটি ক্রয় করতে আগ্রহী হন। তাই আপনার বাড়ির এক্সটেরিয়রে যদি ফাটল ধরে থাকে কিংবা রঙ ফ্যাঁকাসে হয়ে যায় বা রঙ ঝরে গিয়ে থাকে তাহলে তা আপনার প্রপার্টির মূল্য হ্রাস করতে পারে। রঙচটা বাড়ি কখনোই একজন ক্রেতাকে আগ্রহী করতে পারে না। আরও একটি বিষয় হচ্ছে, ক্রেতারা ধূসর, সাদা, ক্রিম কিংবা নিউট্রাল রঙগুলো পছন্দ করে বেশি। তাই অফ বিট রঙগুলো ব্যবহার না করাই ভালো।
রক্ষণাবেক্ষণের অভাব
মূলত একজন ফ্ল্যাট বিক্রেতার এটি প্রধান দায়িত্ব যে অ্যাপার্টমেন্টটি তিনি বিক্রি করতে চাচ্ছেন তা সঠিক ভাবে মেরামত করানো। সময় সময় যে সমস্যাগুলো দেখা দিবে সেগুলো দেরি না করে সাথে সাথে সমাধান করে ফেলা। অনেক সময় ছাদে লিকেজ দেখা দেয়। ছাদ লিকেজ খুব সাধারণ ঘটনা লিকেজ সম্বন্ধে জানা মাত্রই এটি রোধ করা উচিত। এগুলোর পাশাপাশি অনেক সময়, দেয়ালে ড্রিল করা বা অন্য কোনো কারণে দেয়ালে ফুটো তৈরি হয়। যার ফলে দেয়াল থেকে প্লাস্টার উঠে যায়। বিলম্ব না করে সাথে সাথে দেয়ালটি সারিয়ে নেয়া উচিত। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কোন বিকল্প নেই। কখনোই মেরামতের কাজ ফেলে রাখা উচিত নয়।
কিছু সুযোগ-সুবিধা ও ব্যবসার নৈকট্য
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে সমস্ত এলাকায় নির্দিষ্ট কিছু সুযোগ সুবিধা বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থাকে সেখানের প্রপার্টির মূল্য আপনাআপনি হ্রাস পায়। মানুষ বাসস্থান হিসেবে সবসময়ই এমন একটি এলাকা বেছে নেন যেখানে আবাসিক সকল সুযোগ সুবিধা থাকবে। যেখানে সে নিশ্চিতে বসবাস করতে পারবে কোনরকম ঝক্কি ঝামেলার সম্মুখীন হতে হবে না। এই ধরুন, যে এলাকায় ক্লাব, বার হোমলেস শেল্টার, কবরস্থান, পাওয়ার প্ল্যান্ট, শুটিং ক্লাব বা হাসপাতাল থাকে সেখানে সাধারণত মানুষ জন প্রপার্টি ক্রয় করতে আগ্রহী হয় না। এছাড়াও লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বেশির ভাগ আবাসিক এলাকায় উপরে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠান সমূহের অবস্থান একদমই থাকে না। তাই আপনার প্রপার্টির বিক্রয়ের আগে আশেপাশে খোঁজখবর নিন। যাচাই করে দেখুন আপনার প্রপার্টির মূল্য হ্রাস হওয়ার কোন সম্ভাবনা রয়েছে কিনা।
খুব বেশি পার্সোনালাইজেশন
বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে যে প্রপার্টিটি তৈরি করেছেন কিংবা ক্রয় করেছেন সেটাতে খুব বেশি নিজস্বতা যোগ করতে সেই প্রপার্টির মূল্য হ্রাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যখন কোন ক্রেতা একটি বাড়ি কেনার জন্য ঘুরে দেখেন তখন তিনি ভবিষ্যতে এই বাড়িটি কীভাবে সাজিয়ে নেবেন সেই পরিকল্পনাটি করে ফেলেন। আর তাদের পরিকল্পনাতে অনেক কিছু থাকতে পারে যেমন, ওয়ালপেপার, ট্রেন্ডি ফিক্সচার উপস্থাপনের মত বিষয় সমূহ। তাই আপনি যদি প্রপার্টিটি বেশি পার্সোনালাইজেশন করে থাকেন তা ক্রেতার জন্য কিছুটা সমস্যা তৈরি করতে পারে। কেননা, ক্রেতা বাড়ি ক্রয়ের পর নিজের মত করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে চাইবেন তাই যতটা সম্ভব প্রপার্টি স্বাভাবিক রাখা। যাতে করে ক্রেতা তার নিজের মত করে সাজিয়ে নিতে পারেন।
অনুন্নত সংস্কার
উন্নতমানের সংস্কার একটি প্রপার্টির মূল্য যেমন বাড়াতে পারে তেমনি সস্তায় করানো সংস্কার, প্রপার্টির মূল্য হ্রাস করাতে পারে। তাই যেকোন সংস্কার করানোর আগে অবশ্যই সময় নিয়ে সঠিকভাবে সংস্কার করুন। সংস্কার অনেক ক্ষেত্রেই ব্যয়বহুল হয় তখন দেখা যায়, বাড়ির মালিকরা সস্তা উপায়ে সংস্কার করতে চান। কমদামী বা মানে ভালো না এমন কিছু উপকরণ ব্যবহার করেন এতে করে সংস্কারের মান ভবিষ্যতে খারাপ হওয়ার যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সস্তা সংস্কারের উপায় কখনোই অবলম্বন করা উচিত নয়।
কখনো কখনো প্রপার্টির মূল্য হ্রাস হয় বাড়ি মালিকদের অবহেলার কারণে। অজান্তে নেয়া যেকোন সিদ্ধান্ত বাড়ির মূল্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এই সমস্ত ভুল আপনার দ্বারা হয়েছে কিনা। সেটা যাচাই করুন এবং ভুলগুলো শুধরে নিন।