Reading Time: 5 minutes

প্রপার্টি ক্রয় নাকি ভাড়া দেয়া, কোনটি হবে সঠিক সিদ্ধান্ত? এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে বেশিরভাগ মানুষই বলবেন প্রপার্টি ক্রয়ের কথা। কেননা যদি সামর্থ্য এবং উপায় থাকে তবে অবশ্যই প্রপার্টি ক্রয়েই বিনিয়োগ করা উচিত। প্রপার্টি ক্রয়ের ক্ষেত্রে যেহেতু বেশ অংকের অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়, তাই অনেকক্ষেত্রেই যারা নবদম্পতি আছেন, তাদের জন্য প্রপার্টিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া যেন কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। এ কারণে প্রপার্টি ক্রয়ের ক্ষেত্রে নবদম্পতিদের বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, যা আপনার প্রপার্টি ক্রয়ের সিদ্ধান্তকে আরও সহজ করে তুলবে। তবে চলুন আজকের ব্লগ থেকে জেনে নেয়া যাক নবদম্পতিদের প্রপার্টি ক্রয়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে হবে ।  

প্রপার্টি খোঁজার ধাপ

গতানুগতিক উপায়ে প্রপার্টি খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন

প্রপার্টি খোঁজার এটি প্রাথমিক ধাপ, যা প্রপার্টি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্তকরণের ধাপের আগ পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত।  

১। পছন্দ এবং অগ্রাধিকার এর তালিকা তৈরি করুন 

প্রপার্টি ক্রয়ের ক্ষেত্রে নবদম্পতিদের যে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে, তার মধ্যে সবার প্রথম তালিকায় থাকবে পছন্দ এবং অগ্রাধিকার এর তালিকা তৈরি করা। অর্থাৎ, প্রপার্টি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আপনার চাহিদা, আপনি কোন লোকেশনে চাচ্ছেন, বাজেট ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে ভেবে তবেই সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি। বাড়ি কত স্কয়ার ফিটের হলে আপনার জন্য সুবিধাজনক, বাড়িতে কয়টি রুম থাকতে হবে ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে আপনার চাহিদা এবং পছন্দের একটি তালিকা তৈরি করে নিন। এবার সে অনুযায়ী প্রপার্টি খোঁজা শুরু করুন। অনেক ক্ষেত্রে চাহিদা এবং পছন্দ মিলিয়ে প্রপার্টি খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। এমতাবস্থায় আপনার কাছে কোন বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাবে সেটিও আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখা জরুরি।    

২। বাজেট নির্ধারণ 

প্রপার্টি পছন্দ করা শেষে এবার বাজেট নির্ধারণের পালা। প্রপার্টি ক্রয়ের জন্য আপনি কত টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন, এ বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়া ছাড়া আপনার কখনোই প্রপার্টি ক্রয়ের দিকে অগ্রসর হওয়া ঠিক হবে না। প্রপার্টির চাহিদা, বাজারের বর্তমান অবস্থা এবং মালিকানা স্থানান্তর করার খরচ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে তবেই বাজেট ঠিক করতে হবে। আর তাই নবদম্পতি হিসেবে আপনাকে এই দিকটিও খেয়াল রাখতে হবে যে ভবিষ্যতে যদি কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে তবে যেন আপনার সঞ্চয়ের টাকা থাকে, যা আপনি সে সময় খরচ করতে পারবেন। এসব দিক বিবেচনা করে তবেই প্রপার্টির জন্য বাজেট নির্ধারণ করা প্রয়োজন।  

৩। প্রয়োজনীয় জিনিসের নৈকট্য 

পছন্দ অনুযায়ী প্রপার্টি খুঁজে পাওয়ার পর, এবার দেখতে হবে আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণ লোকেশন থেকে এর অবস্থান কতটা কাছে বা দূরে। কেননা পছন্দের লোকেশনে প্রপার্টি খুঁজে পাওয়া অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। এমতাবস্থায় আপনার প্রপার্টির লোকেশন থেকে শপিংমল কতটা কাছে বা দূরে অবস্থিত, কিংবা স্কুল-কলেজ বা অফিস এর দূরত্ব কতটা এই বিষয়গুলোও বিবেচনা করে দেখতে হবে।    

৪। শব্দের মাত্রা এবং বাতাস চলাচল এর ব্যবস্থা পরীক্ষা 

প্রপার্টিটি কোন কোলাহল জনক এলাকায় অবস্থিত কিনা তা প্রপার্টি ক্রয়ের আগে অবশ্যই দেখে নেয়া প্রয়োজন। প্রপার্টি যদি প্রধান সড়কের খুব কাছাকাছি অবস্থিত হয়, সেক্ষেত্রে রাস্তার গাড়ির আওয়াজ বাসার ভেতরে প্রবেশের সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা পরীক্ষা করার জন্য প্রপার্টিতে দিনের আলোয় ভিজিট করতে হবে, এতে করে ঘরে প্রাকৃতিক আলো এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা কতটা আছে তা পরীক্ষা করে দেখা যাবে।      

৫। প্রপার্টি বিষয়ক জরিপ

প্রপার্টি ক্রয়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে হবে এর প্রধান ধাপ হচ্ছে প্রপার্টি বিষয়ক জরিপ চালানো। জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি সাধারণত বেশি প্রযোজ্য হয়। এটি প্রপার্টির অবস্থা নির্ধারণ করে, প্রপার্টিটি বিনিয়োগযোগ্য কিনা, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। আর এক্ষেত্রে নিজে থেকেই প্রপার্টি যাচাই-বাছাই না করে বরং বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া জরুরি।

৬। ইউটিলিটির সংযোগ যাচাই করা 

প্রপার্টি ক্রয়ের আগে উক্ত প্রপার্টির গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ এর সংযোগ ঠিকমতো আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নেয়া অত্যন্ত জরুরি। যেমন ধরুন, নতুন করে নির্মাণ করা ভবনগুলোতে এখন আর গ্যাসের সংযোগ দেয়া হচ্ছে না। আর এক্ষেত্রে যারা সেখানে বসবাস করছেন তাদের এলপিজি এর উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যদিও এলপিজি ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে, তবে এ সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে আগে থেকেই সচেতন থাকা প্রয়োজন। এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সাধারণত সরাসরি আলোচনা করা হয়। তবে যদি ভুলবশত আলোচনার সময় উল্লেখ করা না হয়, সেক্ষেত্রে সরাসরি জিজ্ঞেস করে নেয়া উত্তম।     

চূড়ান্তকরণের ধাপ

প্রপার্টি বিষয়ে কার সাথে ডিল করছেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন

প্রপার্টি পছন্দ করা শেষে, এবার আপনি যখন উক্ত প্রপার্টি ক্রয়ের ব্যাপারে পুরোপুরি ভাবে নিশ্চিত হতে পারছেন এবং প্রপার্টি ক্রয়ের চূড়ান্ত আলোচনায় যাওয়ার জন্য একেবারে প্রস্তুত, ঠিক তখন থেকেই প্রপার্টি ক্রয়ের চূড়ান্তকরণের ধাপের কাজ শুরু।

৭। প্রপার্টির মূল্য সংক্রান্ত রিসার্চ 

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় একটি নির্দিষ্ট এলাকার দুইটি একই ধরনের প্রপার্টির মূল্য দুই রকম। বিশেষ করে প্রপার্টিটি যদি কোন জনপ্রিয় আবাসিক এলাকায় হয়ে থাকে, তবে তো এ ধরনের উদাহরণ প্রায়ই চোখে পড়ে। আর এক্ষেত্রে প্রপার্টির মূল্য সংক্রান্ত রিসার্চ করা অত্যন্ত জরুরি। কেননা, এর উপর ভিত্তি করেই আপনি প্রপার্টির মালিকের সাথে মূল্য নিয়ে দরকষাকষি করতে পারবেন। এমনকি ভবিষ্যতে আপনি যদি প্রপার্টি বিক্রয় করতে চান, তখন এর মূল্য কত হতে পারে, সে ব্যাপারেও আপনি ধারণা পাবেন।   

৮। আর্থিক সহায়তার উৎস নির্ধারণ 

প্রপার্টিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত সহজ কোন বিষয় নয় বিধায়, প্রপার্টি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া মাত্রই অনেক বিষয় নিয়ে ভাবা অত্যন্ত জরুরি। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি বিষয় হল আর্থিক সহায়তার উৎস নির্ধারণ করা। প্রপার্টি ক্রয়ে যেহেতু একইসাথে অনেক বড় অংকের অর্থ বিনিয়োগ করা হয়, তাই সঞ্চয় করে রাখা টাকা দিয়ে বিনিয়োগ করা সম্ভবপর নাও হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে প্রপার্টিতে বিনিয়োগের জন্য অন্য কোন আর্থিক উৎসের প্রয়োজন হয়, যার সহায়তায় আপনি নিশ্চিন্তে প্রপার্টিতে বিনিয়োগ করতে পারবেন। প্রপার্টি ক্রয়ে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার পরিচিত মাধ্যমগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সুদের বিনিময়ে হোম লোন অফার করে থাকে।        

৯। লিগ্যাল ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই

প্রপার্টি ক্রয়ের আগে অবশ্যই বেশ কিছু দলিলপত্র যাচাই করে নেয়া উচিত। আর এ জন্যই আপনার দলিলপত্র যাচাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা রাখা প্রয়োজন। কেননা, আইনের ফাঁক-ফোকরের সুযোগ নিয়ে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের রিয়েল এস্টেট কেলেঙ্কারি ঘটে। তাই এই বিষয়টিকে উপেক্ষা করা বা খুব হালকাভাবে নেওয়া কখনোই বুদ্ধিমানের মতো কোন কাজ হবে না। আর এক্ষেত্রে আপনাকে সবচেয়ে ভালো সহায়তা করতে পারবে একজন লিগ্যাল এক্সপার্ট। 

১০। প্রপার্টির মূল্য নিয়ে দরকষাকষি

বাংলাদেশিরা মূল্য নিয়ে দরকষাকষিতে বরাবরের মতোই বেশ পটু। আর এ কারণেই প্রপার্টির উল্লেখিত মূল্যতে প্রপার্টি ক্রয়ে রাজি হয়ে যাওয়ার তো কোন প্রশ্নই হয় না। তাই প্রপার্টি পছন্দ হয়ে যাওয়া মাত্রই এবার প্রপার্টির মূল্য নিয়ে দরকষাকষির করার উপযুক্ত সময়। যদিও এই বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না যে, প্রপার্টির মূল্য কিন্তু কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর নির্ভর করে না। কেননা, প্রপার্টির মূল্যকে প্রভাবিত করে এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যার উপর নির্ভর করেই প্রপার্টির সম্ভাব্য মূল্যটি নির্ধারণ করা হয়। ফলে, অনেক ক্ষেত্রেই প্রপার্টির মূল্য আপনার বাজেটের অধিক বা কমও হতে পারে।          

১১। মালিকানা হস্তান্তরের জন্য দলিলপত্র জমাদান 

প্রপার্টি ক্রয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ক্রয়কৃত প্রপার্টির মালিকানা হস্তান্তরের জন্য দলিলপত্র জমাদান। যেসকল দলিলপত্র জমা দিতে হবে এর মধ্যে রয়েছে প্রপার্টির মিউটেশন, নিবন্ধনপত্র এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় লিগ্যাল ডকুমেন্ট সমূহ। আর সম্পূর্ণ এই প্রক্রিয়াটি আপনাকে অত্যন্ত সাবধানতার সাথে করা উচিত যেন আপনি সঠিক অফিসে সঠিক দলিলপত্র গুলো জমা দিতে পারেন।  

বিয়ে করার সময় আমরা যেমন অনেক বিষয় বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেই। প্রপার্টি ক্রয়ের বিষয়টিও এর চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। অনেক দিন বিবেচনা করে তবেই আমরা প্রপার্টি ক্রয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আর একারণেই প্রপার্টি ক্রয়ের ক্ষেত্রে নবদম্পতিদের উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে, তবেই আপনি প্রপার্টিতে বিনিয়োগ করতে পারবেন সহজে এবং ঝামেলাহীন ভাবে।  

Write A Comment

Author