Reading Time: 4 minutes

আলো ছাড়া যেকোন বাড়িই হয়ে উঠবে কারাগার। নিজের বাড়িতে বা কেন বন্দী জীবন কাটাবেন? ভাড়া বাসা বা নিজের বাসা সব ক্ষেত্রেই এখন প্রাধান্য পাচ্ছে প্রাকৃতিক আলো। এছাড়া, পরিবেশ বান্ধব ঘর বা জীবন গড়ে তুলতে অবশ্যই আপনাকে আলোর শতভাগ ব্যবস্থা রাখতে হবে। হোম ইন্টেরিয়রে প্রাকৃতিক আলোকে রাখা হয় গুরুত্বের শীর্ষে। আলো যেকোন ছোট ঘরকে বড় দেখাতে সাহায্য করে। যেকোন ইন্টেরিয়র ডেকোরকে ফুটিয়ে তুলতে সহায়তা করে। রাতের বেলায় কৃত্তিম ছাড়া যেহেতু কোন উপায় নেই তাই দিনের বেলায় যেন বাসায় প্রাকৃতিক আলো থাকে সেটা এখন কম বেশি সকলের চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু রেসিডেন্সিয়াল নয় বাণিজ্যিক ভবনগুলোতেও দিনের বেলায় ব্যবহার করা হয় প্রাকৃতিক আলো। অনেক ভবনের নকশায় দেখা গিয়েছে টান্সপারেন্ট গ্লাসের ব্যবহার। এতে করে ভবনের ভেতরে চারদিক দিয়ে আলো প্রবেশ করতে পারে। এগুলো তো গেল নকশার দিকে বা ইন্টেরিয়র সম্পৃক্ত কিছু বিষয় এবার আলাপ করা যাক ঘরের জন্য প্রাকৃতিক আলোর গুরুত্ব আসলে কতটুকু? এবং কী সেই বিষয়গুলো? 

ঘরে প্রাকৃতিক আলোর ৫ টি চমৎকার সুবিধা রয়েছে

ঘরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো থাকলে আপনার ঘরে একটু একটু করে বড় করা গাছগুলো ঠিক মত রোদ পাবে, নিজেদের মত করে বেড়ে উঠবে। বাড়িটায় সবুজের ছায়া থাকবে। ঘরের ভেতর আলো যাতায়াত করলে ঘরটা অনেক প্রাণবন্ত লাগবে, যেকোন ইন্টেরিয়র ডেকোর সহজেই ফুটে উঠবে। সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে একদম পরিপূর্ণ মনে হবে, যেকোন ক্ষেত্রে পূর্ণ শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার মত মনবল খুঁজে পাওয়া যাবে। তাছাড়া, না বললেই নয়, ঘরটা অনেকটা চাঙ্গা হয়ে উঠবে। কোন রকম অন্ধকার বা ড্যাম ভাব থাকবে না। এইরকম আরও বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে সেগুলো জানতে পড়তে থাকুন। 

পরিবেশ বান্ধব 

পরিবেশ বান্ধব ঘর গড়ে তুলতে অবশ্যই আপনাকে প্রাকৃতিক আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবেশ বান্ধব জীবন যাপন করতে প্রাকৃতিক আলোর গুরুত্ব মূলত পুরোটাই। যখন আপনার ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বা বাতাস প্রবেশ করবে তখন আপনি কৃত্রিম লাইট বা ফ্যান চালানো থেকে বিরত থাকবেন। যার ফলে বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যবহার এমনিতেই কমে আসবে এবং এভাবে একটি ঘরও যদি বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে তাহলে দিন শেষে তা কতটুকু পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করবে, একবার ভাবুন! তাই বাসা বাড়ি বদলের পূর্বে বা তৈরির আগে অবশ্যই পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলোর ব্যবস্থা করুন।

প্রাকৃতিক আলো সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর  

  • ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে দেয় না।
  • ভিটামিন ডি এবং বি পাওয়া যায়।
  • প্রাকৃতিক আলোতে নিরাময় শক্তি থাকে।
  • রোদ থেকে পাওয়া আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি প্রাকৃতিকভাবে এন্টিসেপটিক তৈরি করে। 
  • প্রাকৃতিক আলো ক্ষুধা জাগায় ও হজমে সাহায্য করে।
  • প্রাকৃতিক আলো সঞ্চালনে সহায়তা করে।
  • প্রাকৃতিক আলো লাল রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করে।
  • সূর্যের আলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • প্রাকৃতিক আলো শ্বেত রক্ত কোষের সংখ্যা বাড়ায়। 
  • প্রাকৃতিক আলো এন্ডোরফিন এবং সেরোটোনিন বৃদ্ধি করে।
  • প্রাকৃতিক আলো রাতে ভালো ঘুমের যোগান দিয়ে থাকে। 
  • প্রাকৃতিক আলো শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। 
  • শক্তি বাড়ায় এবং শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে। 

প্রাকৃতিক আলো নিরাপদ

প্রাকৃতিক আলো থেকে আপনি কখনোই ক্ষতিকর কিছু পাবেন না কিন্তু কৃত্তিম আলোতে সবসময়ই ক্ষতিকর রশ্মি থাকে যা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ঘরে ছোট বাচ্চা থাকলে তার জন্যও কৃত্তিম আলো বেশ ক্ষতিকর। সেদিক দিয়ে প্রাকৃতিক আলো বেশ নিরাপদ। আপনি নির্ভেজাল একটা অনুভব খুঁজে পাবেন। ঘরে ছোট বাচ্চা থাকলে আর জন্যও তা আশীর্বাদ স্বরূপ। 

প্রাকৃতিক আলোর কোন খরচ নেই

ঘরে যদি প্রাকৃতিক আলোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে তা আপনার বিদ্যুৎ বিল অনেকটাই কমিয়ে আনবে। এমন অনেক বাসা খুঁজে পাওয়া যাবে যেখানে দিনের বেলাও কৃত্তিম আলো জ্বালাতে হয়। এই সব বাসায় বিদ্যুৎ বিল সবসময়ই বেশি। তাছাড়াও আগের দরজা জানালাগুলোর তেমন একটা বায়ু নিরোধক ক্ষমতা ছিল না, যা বর্তমানের দরজা জানালায় রয়েছে। আপনি চাইলেই এমন কিছু চমৎকার দরজা জানালা বাজার থেকে খুঁজে আনতে পারবেন যা কিনা অধিক শক্তি সঞ্চয় করতে পারে।  

ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করে

সূর্য একটি হতাশ দিনকেও আশাবাদী দিনে পরিণত করতে পারে। সহজেই একটি উত্সাহী পরিবেশ তৈরি করতে পারে। লয়োলা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্পাদিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সূর্যের আলোতে কাজ করা কারিগরদের ছায়ায় কাজ করা কারিগরদের চেয়ে স্বল্প জ্ঞানীয় ক্ষমতা রয়েছে। আবার অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রাকৃতিক আলোয় কাজ করা শ্রমিকরা কৃত্তিম আলোতে কাজ করা শ্রমিকের চেয়ে বেশি উত্পাদনশীল ও কর্মঠ। প্রাকৃতিক আলোর শ্রমিকরা অন্যান্য শ্রমিকের চেয়ে 

খুব কম দিন কাজে অনুপস্থিত থাকে। তবে, আপনার বাড়িটি কোনও কর্মক্ষেত্র নাও হতে পারে, কিন্তু এটি এমন একটি জায়গা যেখানে ইতিবাচক শক্তির খুব প্রয়োজন হয়। 

প্রাকৃতিক আলোর গুরুত্ব বসবাসের ক্ষেত্রে অনেক বেশি। প্রাকৃতিক আলো আপনার আবাসকে আরও স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলবে। আর ইন্টেরিয়রের দৃষ্টিকোণ থেকে আপনার ঘরটি যতটা হালকা, উজ্জ্বল এবং আরামদায়ক হবে তা ততটাই বসবাসের উপযোগী হবে। বাইরের দেশগুলোতে সূর্যের আলো সত্যিই একটি মূল্যবান বস্তু, বছরের বেশীরভাগ সময় যা পাওয়া যায় না। কিন্তু আমাদের দেশের বছরের পুরোটা সময়ই সূর্যের আলো থাকে তাই, নিজদের বাসা বাড়ি তৈরির বা ভাড়ার সময় অবশ্যই এইদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

Write A Comment