রিয়েল এস্টেট এমন একটি খাত, যা কখনো হারিয়ে যাবার নয়। নগরায়ন হবে, শহরে মানুষের ভিড় বাড়বে। ঢাকা শহর মানুষের আবাসনের চাহিদায় বরাবরই শীর্ষে তাই চাহিদা বাড়ছে। সেজন্য জোর দিয়ে বলাই যায় রিয়েল এস্টেট এজেন্সি কিংবা ফার্ম থাকবে স্থায়ীভাবে। আধুনিক ক্রেতারা দিন দিন নির্ভর করছে নানান রিয়েল এস্টেট এজেন্সির ওপর আর সেই একই রকমভাবে বাড়ছে ডেভেলপারদের ব্যবসা ক্ষেত্রও। সময়ের এমন প্রতিযোগিতায় আপনি কেন পিছিয়ে থাকবেন? নিজের স্বপ্নের ফ্ল্যাটটি অনেক কষ্টে আপনি অর্জন করেছেন তা এত সহজেই কাউকে বিক্রয় করা আপনার জন্য মুশকিল হলেও তা অসম্ভব কিছু নয়। আপনি যদি এমন কেউ হয়ে থাকনে যে কিনা এই প্রথম ফ্ল্যাট বিক্রয় করতে যাচ্ছেন তবে আপনার জন্য এই টিপসগুলো পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে! রিয়েল এস্টেট এজেন্সি বিশ্বস্ত একটি মাধ্যম যেটি এখন আর কোন মিথ নয়, বরং বর্তমান বাস্তবতা! এবং সময়ের সাথে এই বর্তমানকে মানিয়ে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এই কয়েকটি রিয়েল এস্টেট টিপস আপনাকে সাহায্য করবে একজন আদর্শ বিক্রেতা হতে, কেননা একেক জন সচেতন বিক্রেতাই একটি সফল রিয়েল এস্টেট খাতের ভিত্তি।
প্রপার্টি মার্কেট সম্বন্ধে জানুন
খেয়ালী কোন দাম ঠিক না করে বরং বর্তমান মার্কেট যাচাই বাছাই করে তবেই একটি দাম ঠিক করা উচিৎ। তা নাহলে, যেমন যোগ্য ক্রেতা পেতে দেরি হবে তেমনি প্রপার্টি মার্কেটে তৈরি হবে বিভ্রান্তি। রিয়েল এস্টেট টিপস এর মধ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। কেন আপনার ফ্ল্যাট বিক্রির আগে মার্কেট দেখা জরুরী তা বলছি! প্রপার্টি মার্কেটের অবস্থা এখন কেমন তা আগে থেকেই দেখে তবেই ফ্ল্যাট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিন। একটু খামখেয়ালী করলে হয়তো আপনার ফ্ল্যাটের দরদামে আসবে আকাশ পাতাল ব্যবধান। অনেক সময় প্রপার্টি মার্কেটের মন্দার জন্য ভালো ক্রেতাও পাওয়া যায় না। তাই ফ্ল্যাট বিক্রয়ের জন্য তাড়াহুড়া করা একদমই ঠিক না। এবং একই সাথে সময় নিয়ে মার্কেট যাচাই করাটাও খুব উপকারী। সারাজীবনের সঞ্চয় এত সহজে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যে কোন বুদ্ধিমত্তা নেই।
ফ্ল্যাট প্রস্তুত করুন
প্রপার্টি মার্কেট যাচাই বাছাই করে যদি ইতিবাচক পরিস্থিতি পেয়ে যান তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে আপনার জন্য রিয়েল এস্টেট টিপস হল, ফ্ল্যাটটি প্রস্তুত করে ফেলুন। ফ্ল্যাটটি যদি আগে ব্যবহৃত হয়ে থাকে তবে, পুনরায় রঙ করিয়ে নিতে পারেন। কোন কিছু ঠিক না থাকলে তবে মেরামতের কাজ সেরে ফেলতে পারেন। পানি,গ্যাস ও বিদ্যুত সরবরাহ ঠিক মত আছে কিনা তা যাচাই করে নিন এবং এইসব সার্ভিসের বিল পরিশোধ হয়েছে কিনা অবশ্যই যাচাই করুন। প্রপার্টির সকল দলিলপত্র ঠিক মত আছে কিনা যাচাই করুন , এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। এছাড়া আপনি নতুন কিংবা ব্যবহৃত দুটো বাসা নিজে ডিজাইন করতে পারেন। তাছাড়া এখনকার সময়ে ফ্ল্যাটে ক্রয় বিক্রয় বিনিয়োগের জন্য উত্তম ব্যবসায়িক উপায়। তার জন্য আপনি চাইলে আধুনিক ফ্ল্যাট ক্রেতাদের পছন্দের ১০টি জিনিষ মাথায় রেখে ফ্ল্যাটটি তৈরি করতে পারেন, যার ফলে মার্কেটে চাহিদা এবং মূল্য দুটোই দ্বিগুণ হারে পাবেন।
রিয়েল এস্টেট এজেন্সির সাহায্য নিন
ব্যস্ততার এই সময়ে নিজের জন্য যেখানে সময় বের করা মুশকিল তখন ফ্ল্যাটের জন্য বিক্রেতার খোঁজ আপনি কেন করবেন? যোগ্য বিক্রেতা খোঁজা এবং পাওয়া দুটোই খুব দুশ্চিন্তা এবং কষ্টের একটি কাজ। তবে কিছু রিয়েল এস্টেট এজেন্সিকে ধন্যবাদ না দিলেই নয়। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রিয়েল এস্টেট কোম্পানি বিপ্রপার্টি। এখানে রয়েছে অভিজ্ঞ একদল প্রপার্টি অ্যাডভাইজার যারা আপনাকে প্রপার্টি নিয়ে গাইড করবেন। এবং বিশাল ডাটাবেসের কল্যাণে বিপ্রপার্টিতে একবার লিস্টিং করে ফেললে আপনার ফ্ল্যাট কম সময়ে যোগ্য ক্রেতার কাছে বিক্রয় হবে। এছাড়া বিপ্রপার্টি ছাড়াও রয়েছে অনেক এজেন্সি সেগুলোর সন্ধান করুন এবং যোগাযোগ করুন। এজেন্সির সাহায্য নিলে যা হবে, আপনার মাথার বোঝা পুরোটাই নেমে যাবে এবং আপনি ঘরে বসেই পেয়ে যাবেন ভেরিফাইড ক্রেতা!
সঠিক মূল্য নির্ধারণ করুন
ফ্ল্যাটের মূল্য এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যেটির উপর নির্ভর করে আপনার সম্পূর্ণ বিনিয়োগটি। তাই মূল্য নির্ধারণের পূর্বে অবশ্যই প্রপার্টির মার্কেট যাচাই করতে ভুলবেন না। আপনার এলাকা অর্থাৎ বিল্ডিং এবং লোকেশনে কেমন দামে ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে তা যাচাই করা খুবই জরুরী। কেননা সেই পরিমাপক থেকেই একটা প্রাথমিক মূল্য আপনি ধারণা করতে পারবেন। এরপর রয়েছে আরও কিছু আনুষঙ্গিক ব্যাপার যেমন, ফ্ল্যাটটি কতটুকু আধুনিক ডিজাইনে তৈরি, কত তালায় অবস্থিত, কত বছর যাবত ব্যবহৃত হচ্ছে এসব কিছুই একটি ফ্ল্যাটের মূল্য নির্ধারণের মূল পরিমাপক হিসেবে কাজ করে থাকে। এছাড়া রিয়েল এস্টেট এজেন্সিগুলোও আপনাকে সহায়তা করবে সঠিক মূল্য নির্ধারণ করতে। সকল অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আপনি নিজেও চাইলে লোকেশন বাছাই করে জেনে নিতে পারবেন একই লোকেশনে আপনার ফ্ল্যাটের স্কয়ার ফিটের দাম কেমন দেখাচ্ছে। তারপর নিজেই একটি মূল্য নির্ধারণ করতে পারবেন।
প্রপার্টি লিস্টিং করুন
এখনকার ফ্ল্যাট বিক্রেতাদের জন্য ক্রেতা খুঁজে বের করাটা আর আগের মত কষ্টের কোন কাজ নয়। বরং খুবই সহজ একটি কাজ, এখন ঘরে বসেই পাচ্ছেন ভেরিফাইড ক্রেতাদের। তাই আরেকটি রিয়েল এস্টেট টিপস হল, সঠিকভাবে সম্পুর্ণ তথ্য দিয়ে প্রপার্টি লিস্টিং করা। সময় নিয়ে চেক করা যে সকল তথ্য সঠিক রূপে রয়েছে কিনা। কিংবা কোন তথ্য প্রদান করতে ভুলে গেছেন কিনা! বাসার ছবি সঠিক ভাবে তুলছে কিনা। ছবি তোলার পূর্বে বাসা পরিষ্কার এবং গুছিয়ে নেয়া। ঘরে থাকা চাই পর্যাপ্ত পরিমাণের আলো। ঘরটি যদি বড় হয়ে থাকে তবে সেই ভাবে ছবি তোলা যাতে ঘরের খোলামেলা ভাব ছবিতে ফুটে ওঠে। যেহেতু অনলাইন পোর্টালে প্রাথমিক ভাবে বাসা দেখা হবে তাই, ছবিগুলো এমন ভাবে তুলতে হবে যাতে করে বাসার প্রতিটি ঘর স্পষ্ট করে দেখা যায়! প্রপার্টি লিস্টিং এর ওপর অনেকটা নির্ভর করে আপনার ক্রেতার রেসপন্স। এবং একজন যোগ্য ক্রেতা যথাযথ লিস্টিং দেখে তবেই আসবে।
ফ্ল্যাট ভিউইং এর মনোভাব তৈরি করুন
আপনি যে মুহূর্ত থেকে ফ্ল্যাটের লিস্টিং করে ফেলবেন তখন থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে যে আগামী যেকোন সময়ে আপনার ফ্ল্যাটে আগমন ঘটতে পারে ক্রেতাদের। ব্যস্ততার এই শহরে সকলেই আমরা ব্যস্ত থাকি। তাই এমন হতেই পারে আপনি যখন অবসরে সময় কাটাচ্ছেন কিংবা কোন কাজে প্রচুর ব্যস্ত আছেন এমন সময়ে ক্রেতা প্রপার্টি ভিউইং এর জন্য হাজির হলেন তখন বিরক্ত হওয়া যাবে না, আন্তরিকভাবে ফ্ল্যাট ভিউইং করাতে হবে, সামান্য ভ্রূক্ষেপও ক্রেতার মনে দাগ ফেলতে পারে। সেই থেকে তৈরি হতে পারে নেতিবাচক ভাবনা। এছাড়া ক্রেতার ভিউইং এর সময়ে আপনার উপস্থিত থাকাটা জরুরী, কেননা আপনার ফ্ল্যাটের সকল তথ্য আপনার থেকে বেশি আর কে জানবে! যতই সেলস অ্যাডভাইজার সেখানে উপস্থিত থাকুক। আপনার আন্তরিক উপস্থিতি ক্রেতাকে অনেকটাই বিশ্বাস এবং স্বস্তি এনে দিবে! ফ্ল্যাট ভিউইং এ কিছুটা বিলম্ব হলে হয়তোবা একজন যোগ্য ক্রেতা আপনি সহজেই হারাতে পারেন।
ওপরের লেখা রিয়েল এস্টেট টিপস গুলো আপনার কাছে কেমন লেগেছে? কমেন্টে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না যেনো।