Reading Time: 4 minutes

‘পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি’ শব্দটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কর্মকাণ্ডের সাথে সরাসরি ভাবে জড়িত না হলেও, এই শব্দটির সাথে পরিচয় আছে এমন মানুষের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। আমাদের প্রতিদিনের জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দলিলটি প্রয়োজন না হলেও, জমিজমার কাজ পরিচালনা, দলিলপত্র নিয়ে দৌড়াদৌড়ি, এবং বিদেশে বসবাসকারী ব্যক্তিদের সম্পত্তি দেখভাল এবং আইনানুক বিভিন্ন ধরনের কাজ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে এই দলিল প্রয়োজন হয়ে থাকে।  

বিশেষ করে প্রপার্টি বিষয়ক সকল কাজ অনেক ক্ষেত্রেই মালিক নিজেই সরাসরি ভাবে যুক্ত থেকে করতে পারেন না। এক্ষেত্রে কোন ব্যক্তিকে যখন প্রপার্টির বিভিন্ন বিষয় দেখভাল এবং প্রয়োজনীয় সকল কাজ সম্পন্ন করার জন্য আইনানুগ অধিকার দিয়ে যেই দলিল প্রস্তুত করা হয়, সেটাই মূলত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি।   

তবে ব্যক্তিগতভাবে নিজে উপস্থিত থেকে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো মোকাবেলা করা গেলে, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রস্তুতের প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে আপনি যদি প্রবাসী বাংলাদেশি হয়ে একের অধিক প্রপার্টির মালিক হয়ে থাকেন,  তবে আপনার “ফরেইন পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি” দলিল প্রয়োজন। আর তাই চলুন এই দলিল কীভাবে কাজ করে এবং কেন এটি প্রয়োজন সে সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।  

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি কী?

ফরেইন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি

খুব সহজ করে যদি বলতে হয়, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি এমন এক ধরনের আইনি দলিল যা লিখিতভাবে কোন ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তির পক্ষ হয়ে কাজ সম্পাদন করার ক্ষমতা প্রদান করে। সেটা হতে পারে কোন প্রপার্টি কেনাবেচা, প্রপার্টি বিষয়ক প্রয়োজনীয় অন্যান্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করার জন্যই মূলত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের প্রয়োজন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি তার পক্ষ হয়ে প্রপার্টি বিষয়ক প্রয়োজনীয় কার্য সম্পাদনের জন্য অপর ব্যক্তিকে অধিকার প্রদান করে থাকেন, তিনি হচ্ছেন অনুদানকারী। আর যাকে এই ক্ষমতা বা অধিকার প্রদান করা হয়, তাকে বলা হয় এজেন্ট বা অ্যাটর্নি।       

সাধারণ পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মতো ফরেইন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি একইভাবে কাজ করলেও, এটি কার্যকরের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি এবং প্রোটোকল অনুসরণ করতে হয়। কারণ, এটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়। যারা বাংলাদেশে বসবাস করেন না, কিন্তু এজেন্ট বা অ্যাটর্নির মাধ্যমে আইনগতভাবে প্রপার্টির লেনদেন করতে চান। আর এই কারণে এর সত্যতা এবং বৈধতা যাচাই করার জন্য, ডকুমেন্ট সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলাদেশে এবং অনুদানকারীর বর্তমান বসবাসের জায়গা উভয় ক্ষেত্রেই বেশ কয়েকটি আইনি সংস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

মালিকের পক্ষ হয়ে কোনো প্রপার্টির দান, বিক্রয়, হস্তান্তর, রক্ষণাবেক্ষণ, বন্ধক রাখা, খাজনা ইত্যাদি কাজ করে থাকেন তার অ্যাটর্নি বা এজেন্ট। আর তাই দলিলে এসব বিষয় অবশ্যই স্পষ্ট করে লেখা থাকা প্রয়োজন যে কী ধরনের ক্ষমতা বা অধিকার থাকে দেয়া হচ্ছে বা তিনি কী করতে পারবেন বা পারবেন না, ইত্যাদি বিষয় সমূহ স্পষ্ট করে লেখা থাকতে হবে।   

উত্তরাধিকার সূত্রে প্রপার্টি বন্টনের আইনী প্রক্রিয়া  

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বিষয় সমূহ  

  • অনুদানকারীর (যে ব্যক্তি এজেন্টকে তার পক্ষ হয়ে কাজ করার অনুমতি দিচ্ছেন) উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য;
  • অধিকার প্রাপ্ত ব্যক্তির দায়িত্ব, ক্ষমতা, এবং সীমাবদ্ধতা, যদি থাকে; 
  • পাওয়ার অব অ্যাটর্নির নির্দিষ্ট মেয়াদ, যদি থাকে; 
  • প্রদান করা ক্ষমতা শর্তাধীন হলে এর সুনির্দিষ্ট বিবরণ 
  • ক্ষমতা প্রদানের বা নির্বাহের বিবরণ, যদি তা একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক যৌথভাবে, বা পৃথকভাবে প্রদেয় হয়; অথবা যদি তা একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক যৌথভাবে, বা পৃথকভাবে, বা যৌথ ও পৃথক উভয়ভাবেই নির্বাহিত হয়;
  • আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ের বিবরণ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে; 
  • স্থাবর অথবা অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে; 
  • রেজিস্ট্রেশন আইনের সেকশন ৫২-তে উল্লেখিত বিষয়ের বিবরণ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে।    

পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে ক্ষমতা অর্পণে সীমাবদ্ধতা 

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি

অনুদানকারীর একজন এজেন্ট হিসেবে যদিও অনেক ধরনের কাজ করার জন্য আপনি ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবেন, তবে ক্ষমতাবলে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাও কিন্তু রয়েছে। 

  • উইল সম্পাদন, বা দাতা কর্তৃক সম্পাদিত উইল নিবন্ধনের উদ্দেশ্যে দাখিলকরণ;
  • দত্তক গ্রহণের ক্ষমতাপত্র সম্পাদন, বা দাতা কর্তৃক সম্পাদিত ক্ষমতাপত্র নিবন্ধনের উদ্দেশ্যে দাখিলকরণ; 
  • দান ও হেবা সম্পর্কিত ঘোষণা সম্পাদন;
  • ট্রাস্ট দলিল সম্পাদন; এবং
  • সরকার কর্তৃক, সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা, ঘোষিত অন্য প্রকার দলিল বা কার্য সম্পাদন।    

মূল প্রক্রিয়া  

দলিলপত্রের সত্যতা যাচাই

মূল প্রক্রিয়ায় সবার প্রথম আপনার আইনজীবী ফরেইন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলটি প্রস্তুত করবে এবং আপনার বাসস্থানের ঠিকানায় তা পাঠিয়ে দিবে। এবার আপনি যেখানে অবস্থান করছেন সেখানের বাংলাদেশের দূতাবাসের একজন কনস্যুলেট জেনারেলের সামনে চুক্তিটি সম্পন্ন করতে হবে। পরবর্তী ধাপে দলিলটি (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) আপনাকে পাঠাতে হবে বাংলাদেশে অবস্থিত আপনার আইনজীবীর কাছে। সকল দলিলপত্র পাওয়ার পর, আইনজীবীকে এই ডকুমেন্ট সমূহ জমা দিতে হবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এবার তারা দলিলের সত্যতা এবং বৈধতা সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হয়ে, তা সত্যায়িত করে দিবে। 

দলিলপত্র গুলো এবার ট্রেজারি অফিসে জমা দিতে হবে। তবে ট্রেজারি অফিস দলিলপত্রগুলো আবারো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং নির্ধারিত এসি ল্যান্ড অফিসে পাঠাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য এবং এর সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য। ট্রেজারি অফিস যদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এসি ল্যান্ড অফিসের পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টে সন্তুষ্ট থাকে, তবে ট্রেজারি অফিসার ট্রেজারি স্ট্যাম্প সহ দলিলপত্র সমূহ স্ট্যাম্প  করবেন।

অবশেষে, ট্রেজারি অফিস থেকে অনুমতি পাওয়ার পর, বাংলাদেশে ফরেইন পাওয়ার অব অ্যাটর্নিকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে নিবন্ধন করতে হবে এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরেই আপনার পক্ষ হয়ে এজেন্ট কাজ (যেমন- প্রপার্টি ক্রয় বা বিক্রয়) শুরু করার জন্য পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত হবে। 

এছাড়াও আপনাকে বাংলাদেশে ফরেইন পাওয়ার অফ অ্যাটর্নির প্রাক-নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কেও প্রয়োজনীয় ধারণা রাখতে হবে। কারণ, এটিই নির্ধারণ করবে আপনি আপনার এজেন্টকে কী ধরনের ক্ষমতা অর্পণ করছেন। তবে এই ধরনের প্রক্রিয়া বেশ ঝামেলাপূর্ণই বটে। এ কারণেই সমস্ত দলিলপত্র পরীক্ষা করার জন্য একজন বিশেষজ্ঞের মতামত, পরামর্শ বা সাহায্য নেয়া অপরিহার্য। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে বিপ্রপার্টি আছে আপনারই পাশে। আর তাই, যেকোনো লিগ্যাল বিষয়ক সহায়তায় আপনি সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন বিপ্রপার্টির দক্ষ লিগ্যাল টিমের সাথে। 

Write A Comment

Author