Reading Time: 6 minutes

‘নোনা দেয়াল থেকে,

যীশু ছলছল চোখে, 

হাত তুলে আশ্বাস দেয় এখনো!’ 

বছর দশেক আগে যখন স্কুলব্যাগ কাঁধে নিয়ে অবাক বিস্ময়ে দেখতাম নীল-সাদা গির্জার চূড়ো, তখন থেকেই মাথার ভেতর বেজে ওঠে অঞ্জন দত্তের গাওয়া এই গান। এরপর সময় পেরোলো অনেক। তবু কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুরোনো কোনো গির্জায় যখন শেষ বিকেলের ঘন্টা বেজে ওঠে, যখন নির্জন কোনো দুপুরে পার হই গির্জা চত্ত্বর – ফিরে তাকাই অবাক বিস্ময়ে, আবারও মাথার মাঝে ঘোরে পুরোনো গীতিকবিতা। সারা বিশ্বেই অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী, ঐতিহ্যগত তাৎপর্য, ইতিহাসের প্রেক্ষিতে গুরুত্বের সূত্র ধরে পুরোনো গির্জাগুলো হয়ে উঠেছে অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। আমাদের দেশের গির্জাগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। স্থাপত্যের বৈচিত্র্যে, ইতিহাসের স্বাতন্ত্রের আলোকে বাংলাদেশের পুরোনো গির্জা গুলো অনন্য নিদর্শন। ‘ ফিরে দেখি ইতিকথা’ সিরিজের প্রথম পর্বে থাকছে এ গির্জাগুলোর গল্প!   

আর্মেনিয়ান চার্চ

আর্মেনিয়ান চার্চ

আরমানিটোলার এই গির্জাটি ঢাকার একমাত্র আর্মেনীয় স্থাপনা

আরমানিটোলার ভিড়-হইচই, রাসায়নিক পদার্থের ঝাঁঝালো গন্ধ পেরিয়ে এসে দাঁড়ালাম সাদা-সোনালি রঙের এক সুবিশাল ফটকের সামনে। এর আকার বা অলংকরণ দেশি চোখে ঠিক পরিচিত ঠেকে না। চোখে পড়ে বাঁ দিকের দেয়ালে নামফলকে ইংরেজিতে লেখা: আর্মেনিয়ান চার্চ, ১৭৮১। তিনশো বছর আগের এই স্থাপনার সামনে দাঁড়িয়ে তাই শুরুতেই পাওয়া যায় পুরোনো সময়ের ঘ্রাণ, শোনা যায় ফেলে আসা সময়ের পদধ্বনি। 

আরমানিটোলার এই গির্জাটি ঢাকার একমাত্র আর্মেনীয় স্থাপনা। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন তাঁর বই ‘ঢাকাঃ স্মৃতি-বিস্মৃতির নগরী’ তে বলেছেন, “গির্জা তৈরির আগে এখানে একটা ছোট উপাসনালয় ছিল। আর এর চারপাশে ছিল আর্মেনীয়দের সমাধিস্থল। পরে ১৭৮১ সালে বড় করে গির্জা তৈরির সময় ছয়টি কবরও উপাসনাঘরের ভেতরে পড়ে যায়।” 

আর্মেনিয়ান গির্জায় এখন আর প্রার্থনাসভা বসে না। তাই পর্যটকেরা সমাধিভূমি ও গির্জা ভবনের বাইরের অংশ, বারান্দাই ঘুরে দেখতে পারেন। মুগ্ধতা গাঢ় হয় সাদা-সোনালিতে মোড়ানো গির্জার আঙ্গিনা দেখে। শান্ত, নীরব, পবিত্র এক অনুভব ছড়িয়ে যায় মনে ও মননে। সমাধির সারিতে দেখা মেলে পোগজ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক অধ্যক্ষ এন পি পোগজের। এখানে ঘুমিয়ে আছেন সেন্ট গ্রেগরি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এভিয়েটর গ্রেগরিও। প্রায় সব সমাধিতেই এপিটাফের ভাষা আর্মেনীয় ও ইংরেজি। দেখতে দেখতে কিছু এপিটাফের লেখায় চোখ আটকে যায়। ১৯২৯ সালে ২৪ বছর বয়সে মারা গিয়েছেন ম্যাক এস ম্যাকারটিক। এপিটাফে তাঁর বাগদত্তা পরম মমতায় লিখেছেন, ‘খুব ভালোবাসতাম বলেই তাকে এতটা মনে পড়ে। আমার স্মৃতিতে সে খুব দূরের কেউ নয়। অজস্র বোবা কান্নায় এখনো তাকে ভালোবাসি, মনে করি, কাছে পেতে চাই।’ 

আর্মেনীয়রা ব্যবসার উদ্দেশ্যে আঠারো শতকের দিকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছিলো। লবণ-চামড়া-কাপড়-পাটের ব্যবসা করে আর জমিদারি কিনে অল্প সময়েই তারা ঢাকার একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী হয়ে ওঠে। যে অঞ্চলে আর্মেনীয়রা বসবাস করতে শুরু করে তার নাম হয়ে যায় আরমানিটোলা।  সেখানেই নিজেদের প্রার্থনার জন্য তারা নির্মাণ করেছিলো এই গির্জা। তারপর কোম্পানি আমলের শেষ দিকে এসে ব্যবসা পড়তে শুরু করে আর পাকিস্তান আমলে ঢাকায় আর্মেনীয়দের বাস প্রায় উঠে যায়। তবে আজও কালের সাক্ষী হয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে এপিটাফে ঘেরা এই শুভ্র গির্জা। 

সেন্ট থমাস চার্চ  

সেন্ট থমাস চার্চের সাথে আমার পরিচয় ব্রিটিশ লাইব্রেরির ওয়েবসাইটে। নাম না জানা এক আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছিলো এর ছবি। সেই ছবি দেখেই ছুটে গিয়েছিলাম পুরান ঢাকায়, স্বচক্ষে দেখতে চেয়েছিলাম এর সৌন্দর্য। 

সেন্ট থমাস চার্চ প্রাঙ্গণে পা রাখার পর প্রথমেই আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো এর চূড়ায় বসানো ঘড়ি। গির্জার গায়ে প্রাচীনত্বের ছাপ স্পষ্ট। আর চূড়ায় বসানো বিশালাকার ঘড়ি যেন ঘোষণা করছে সময়ের জয়যাত্রা। ভারত উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে উনিশ শতকে যে স্থাপত্যের অনুকরণে অ্যাংলিকান গির্জাসমূহ নির্মিত হয়েছিল, তার সঙ্গে এই গির্জার তেমন কোনো পার্থক্য নেই। দুই শ বছর হয়ে গেলেও গির্জার আসবাবগুলো এখনো অটুট ও মজবুত। শুধু সচল নেই ঘড়িটি। 

বাহাদুর শাহ পার্কের উত্তরে শাঁখারীবাজারের পূর্ব পাশে জনসন রোডে অবস্থিত এই গির্জা ঢাকার আদি গির্জাগুলোর একটি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বেশ কয়েকজন ইংরেজ কর্মচারী-কর্মকর্তা এ অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করেন। তাঁদের প্রার্থনার জন্য গির্জাটি নির্মাণ করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে খ্রিস্টান ধর্মের এক প্রবর্তক হলেন সেন্ট থমাস আর তাঁর নাম অনুসারেই গির্জাটির নামকরণ করা হয় ‘সেন্ট থমাস চার্চ’। ১৮৬৩ সালে গির্জাটির চূড়ায় ঘড়ি স্থাপন করা হয়। বিশ্বখ্যাত ঘড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিগবেন এটি নির্মাণ করেছিল বলে জানা যায়। বলা হয়ে থাকে, একসময় পুরান ঢাকাবাসী এ বিশাল ঘড়িতেই সময় দেখত। 

ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের ‘ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী’ বইটিতে বলা হয়েছে, “১৮১৯ সালে ঢাকা জেলের কয়েদিদের শ্রমে নির্মিত হয়েছিল এই গির্জা।”  

অক্সফোর্ড মিশন চার্চ 

অক্সফোর্ড মিশন চার্চ স্থানীয় মানুষের কাছে ‘লাল গির্জা’ নামে পরিচিত। বরিশালের জীবনানন্দ দাশ সড়কে যখন আমরা গির্জাটি দেখতে গেলাম, তখন পেলাম এই নামকরণের সার্থকতাও। মূল গির্জাটির রং সত্যিই ইট-লাল। তবে এর আঙিনায় পরতে পরতে রয়েছে সবুজের সমারোহ। 

গ্রিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এক অপরূপ শৈল্পিক নিদর্শন বাংলাদেশের পুরোনো গির্জা গুলোর তালিকায় অন্যতম এই অক্সফোর্ড মিশন চার্চ । ৪০টি খিলানের ওপর গির্জাটি দাঁড়িয়ে আছে আর সুদৃশ্য পামগাছে ঘেরা এর চারদিকের সীমানা। ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বৃক্ষশোভিত উদ্যান, মাঠ, ফুল ও ঔষধি বাগান। বিশাল ও নান্দনিক প্রার্থনাকক্ষ এ গির্জার প্রধান আকর্ষণ। গির্জা সূত্রে জানা যায়, প্রার্থনাকক্ষের চারটি বেদির মার্বেল পাথর আনা হয়েছিল কলকাতা থেকে। আর বড় ক্রুশটি আনা হয়েছিল ফিলিস্তিনের বেথলেহেম থেকে। এর ছাদ কাঠের তৈরি, আর মেঝেতে সুদৃশ্য মার্বেলের টাইলস। গির্জাটির স্থাপনা নির্মিত হয়েছিল দেশীয় মাটি দিয়ে তৈরি, পোড়া লাল শক্ত ইট দিয়ে। গির্জার দক্ষিণ পাশে রয়েছে শানবাঁধানো বড় পুকুর। পুকুরের টলটলে জলে দেখা যায় এই নান্দনিক গির্জার প্রতিচ্ছবি। ৩৫ একর জমির ওপর উঁচু প্রাচীরঘেরা এই গির্জার অভ্যন্তরে ১৩টি ছোট-বড় পুকুর আছে। মূল গির্জার আদলে পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে বেল টাওয়ার। এখানে রাখা সুদৃশ্য ঘণ্টা দিনে সাতবার বেজে ওঠে, প্রার্থনার জন্য আহ্বান জানায় ভক্তদের।  

অক্সফোর্ড মিশন গির্জার প্রাতিষ্ঠানিক নাম ‘এপিফানি গির্জা’। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯০৩ সালের ২৬ জানুয়ারি এটির উদ্বোধন করা হয়। ওই দিনই ‘এপিফানি গির্জা ভগ্নী সমাজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১১৪ বছরের প্রাচীন এই স্থাপনা বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যের স্মারক। প্রার্থনা কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও এটি শিক্ষা বিস্তারে ও মানবসেবায় অবদান রেখে চলেছে। সিস্টার এডিথের নকশায় নির্মিত এ গির্জাটি একতলা হলেও এর উচ্চতা চারতলা ভবনের সমান (প্রায় ৫০ ফুট)। বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ ফাদার স্ট্রং সিস্টার এডিথের করা নকশা উন্নত ও চূড়ান্ত করেছিলেন। প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক ফ্রেডরিক ডগলাস। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের ফলে আজও সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে এই প্রত্নতত্ত্ব। 

সেন্ট নিকোলাস চার্চ 

বাংলাদেশের পুরোনো গির্জা গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও বহু বছরের স্মৃতির স্মারক সেন্ট নিকোলাস চার্চ। দেয়ালে খোদিত সময়কাল বাংলাদেশের পুরোনো গির্জা গুলোর মধ্যে অন্যতম এই গির্জা সম্পর্কে বলছেন, এটি আনুমানিক ১৬৬৩ সালে নির্মিত হয়েছে। অন্যদিকে নতুন নির্মাণ তারিখ হিসেবে সেখানকার দেয়ালে লেখা ১৮৮৮ সাল। 

ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে পর্তুগিজ খ্রিষ্টানরা আসেন গাজীপুরে এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের অনুমতিক্রমে ১৬৬৪ সালে তারা গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী এলাকায় প্রথম গির্জা স্থাপন করে। পরে ১৬৮০ সালে পাকা ভবন হয় সেন্ট নিকোলাস চার্চ চত্ত্বরে। পরবর্তীতে বেশ বড় আকারে আরেকটি গির্জা ভবন তৈরি করা হয়। ভবনের সামনে স্থাপন করা হয় হস্ত প্রসারিত যীশু খ্রিস্টের সৌম্যদর্শন এক মূর্তি। পর্তুগিজ স্থাপত্য নিদর্শনে তৈরি এই চার্চ দেখতে প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকেরা আসেন। নতুন করে নির্মাণের পর বর্তমান সুদৃশ্য গির্জাটি দেখে অনেকে অবাক হতে পারেন। কেননা এতে আধুনিক নির্মাণশৈলীর ছাপ সুস্পষ্ট। 

আমাদের ইতিহাসের বড় কিছু ঘটনা ঘটেছে এই গির্জাকে কেন্দ্র করে। এখান থেকে কালীগঞ্জের আঞ্চলিক বাংলা ভাষার প্রথম বাইবেল অনূদিত হয়। এমনকি বাংলা ভাষার প্রথম দ্বিভাষিক অভিধান ও প্রথম ছাপা বইও এখান থেকেই প্রকাশিত হয়। গির্জাটির স্থাপত্য পরিকল্পনায়ও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। লোহার ১২টি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে একতলা গির্জা ভবনটি। এখানে রয়েছে বারান্দাযুক্ত প্রবেশপথ,  সমবেত উপাসনার জন্য কক্ষ, বেদী ও একান্ত প্রার্থনাকক্ষ। তবে সেন্ট নিকোলাস চার্চে চিরাচরিত ‘নার্দেক্স’ স্থাপত্যশৈলীর পরিবর্তে বাংলাঘরের নির্মাণ বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করা হয়েছে। এখানে দেখবেন চারটি মজবুত খুঁটির ওপর নির্মিত সমতল ছাদযুক্ত একটি বারান্দা। তাই একে ইউরোপীয় গির্জা স্থাপত্যের দেশি চরিত্র হিসেবেও ধরা যেতে পারে। এর নির্মাতারাও  ছিলেন দেশি। বর্তমানেও এটি যাজকদের রক্ষণাবেক্ষণে বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে, ধারণ করছে সময়ের সাক্ষ্য। 

হলি রোজারি চার্চ 

বাংলাদেশের পুরোনো গির্জা গুলোর মধ্যে এর তাৎপর্য বেশ গভীর। হলি রোজারি চার্চ পর্তুগিজ মিশনারিদের দ্বারা নির্মিত একটি গির্জা। ঢাকার তেজগাঁওয়ে  তেজকুনী পাড়ায়, বর্তমান হলিক্রস গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের পূর্বদিকে এটি অবস্থিত। সাদা-নীল দেয়ালের এই গির্জা ঢাকার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্মারক। 

১৫৮০ খ্রিস্টাব্দের দিকে ঢাকায় পর্তুগিজদের বসতি গড়ে ওঠে। পর্তুগিজরা এখানে নিজস্ব বাণিজ্যকুঠি ও উপাসনালয় নির্মাণ করেন। আর সেই ধারাবাহিকতায়ই নির্মিত হয় এই গির্জা। কিন্তু গির্জাটির প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে ঐতিহাসিক, ভ্রমণকারী ও ধর্মযাজকদের মধ্যে ভিন্ন মতভেদ রয়েছে। ইতিহাসবিদ জেমস টেলর বলেন, ঢাকার সন্নিকটে তেজগাঁও এর গির্জাটি ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে স্থাপিত। তাঁর মতে, প্রথমে এটি নেস্টোরীয় খ্রিস্টান বণিকদের দ্বারা নির্মিত হয় এবং পরবর্তীকালে রোমান ক্যাথলিক মিশনারীগণ এটি সংস্কার করেন। ১৮৪৫ সালে  ক্যালকাটা রিভিউতে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে তেজগাঁওয়ের গির্জাটি নির্মাণকাল ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দ বলে উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে আরেকজন প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক জি.জি.এ ক্যাম্পোজ গির্জাটির প্রতিষ্ঠাকাল ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে বলে উল্লেখ করেন। আবার গয়া’র প্রধান ধর্মযাজক গির্জাটি ১৭১৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয় বলে মতামত দেন। 

জেসুইট ফাদার আনতাইন দা মেগালহাইস এর মতে, প্রথমদিকে এটি গির্জা ছিল না। সম্ভবত নেস্টোরীয় খ্রিস্টানগণ চ্যাপেল বা উপাসনার স্থান হিসেবে গির্জার পশ্চিম দিকের অংশটি নির্মাণ করেছিল। এই আদি চ্যাপেলটি পরবর্তীকালে দুটি অংশে বিভক্ত করা হয়; প্রথম অংশ হলো পশ্চিমের ০.৭ মি. উচ্চতা বিশিষ্ট বেদী আর দ্বিতীয় অংশ উপাসকদের জন্য নির্ধারিত সম্মেলন কক্ষ। গির্জাটির দেয়ালের প্রশস্ততা এবং ছাদ নির্মাণের ক্ষেত্রে দুই অংশের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, সম্ভবত পর্তুগিজ ক্যাথলিক অগাস্টিনিয়ানরা পরবর্তী সময়ে এর পূর্ব দিকের অংশটি নির্মাণ করেছিল। প্রশস্ত বিজয় তোরণ এবং কৌণিক খিলানযুক্ত গলিপথটি গির্জাটির পূর্ব দিকের বৃহদাংশের সঙ্গে পশ্চিমের ক্ষুদ্রাংশের সেতু বন্ধন রচনা করেছে। রোজ সকালে ও বিকেলে এখনো বেজে ওঠে ঐতিহাসিক এই গির্জার ঘন্টা। এই ঘন্টাধ্বনি যেন স্মরণ করে কালের প্রবাহকে। 

বাংলাদেশের পুরোনো গির্জা নিয়ে যখন লিখছিলাম, মনে হচ্ছিলো যেন ডুব দিচ্ছি কালের অতল গহীনে, যেখানে ইতিহাস কথা বলে। প্রাচীন ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে আগ্রহী যারা, তারা চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন এ গির্জা গুলো। তবে ধর্মীয় তাৎপর্যপূর্ণ এসব স্থানে আচরণবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সতর্ক থাকাই কাম্য। বাংলাদেশের পুরোনো গির্জা গুলোর ব্যাপারে আপনিও যদি কোনো তথ্য যোগ করতে চান বা এ নিয়ে যদি আপনার কোনো মতামত থাকে, লিখতে পারেন আমাদের কমেন্টস বক্সে। সেইসাথে জানাতে ভুলবেন না কেমন লাগছে আমাদের ‘ফিরে দেখি ইতিকথা’ সিরিজ। 

Write A Comment