Reading Time: 3 minutes

নিজের এক টুকরো জমিতে মনের মত করে বাড়ি বানাতে কে না চায়! কিন্তু ঢাকার মত জনবহুল শহরে জমির দাম ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় জমি কিনে বাড়ি বানানো আমাদের অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। অনেকে আবার জমি কিনে বাড়ি বানানোর ঝামেলা এড়াতেই ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কেবল সিদ্ধান্ত নিলেই কি ফ্ল্যাট কিনে ফেলা যায়? একদমই না! এক্ষেত্রে ফ্ল্যাট কেনার আগে, ফ্ল্যাট এর অবস্থান, সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি বিষয়গুলো যেমন জানতে হবে, তেমনি জানতে হবে ফ্ল্যাট কেনার আইনি ধাপ গুলো সম্পর্কে। নয়তো আপনার অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে, অসাধু ডেভেলপার বা বিক্রেতা আপনাকে সর্বশান্ত করে দিতে পারে। তাই, আজকের লেখায় আসুন জেনে আসি ফ্ল্যাট কেনার আইনি ধাপ সমূহ সম্পর্কে! 

ফ্ল্যাট কেনার আইনি ধাপ গুলো সম্পর্কে আগে থেকেই জানতে হবে

ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন

যে কোনো ফ্ল্যাট কেনার আইনি ধাপ হিসেবে প্রথমেই, যে অনিবার্য  ডকুমেন্ট গুলো চেক করে নেবেন তা হচ্ছে- 

১। জমির দলিল

২। মিউটেশন 

৩। সিটি জরিপ

৪। রাজউক প্লান অ্যাপ্রভাল 

৫। পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি (যদি প্রযোজ্য হয়) 

এই ডকুমেন্ট গুলো বিক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করে অবশ্যই একজন লিগ্যাল এক্সপার্টকে এর মাধ্যমে ভেরিফিকেশন করতে হবে।  

যে কোনো প্রপার্টি কিনতে গেলেই জরুরি কিছু ডকুমেন্ট যাচাই বাছাই জরুরি

লিজহোল্ড ও ফ্রিহোল্ড প্রপার্টির ডকুমেন্ট ফেরিফিকেশন 

বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেটে লিজহোল্ড জমি ও  ফ্রিহোল্ড জমি -এই দুই রকমের জমি রয়েছে। লিজহোল্ড জমি সরকার বা সরকারী কোন এজেন্সির কাছ থেকে ইজারায় নেয়া হয়। আর ফ্রি হোল্ড হচ্ছে, ব্যক্তিগত  মালিকানায় থাকা প্রপার্টি। এক্ষেত্রে আপনি লিজহোল্ড প্রপার্টিতে একটি নতুন ফ্ল্যাট কিনতে চাইলে অবশ্যই নিম্নোক্ত ডকুমেন্টগুলো চেক করতে হবে- 

১। অ্যালটমেন্ট লেটার

২। লিজ ডিড

৩। পজিশন লেটার 

৪। ফাইনাল এলটমেন্ট লেটার ইত্যাদি

অন্যদিকে, ফ্রিহোল্ড প্রপার্টিতে ফ্ল্যাট কিনতে চাইলে চেক করবেন- 

১। মূল মালিকানা দলিল

২। বায়া দলিল 

৩। বন্টননামা থাকলে বন্টননামা দলিল 

৪। নামজারি বা মূল নামজারি

৫। বন্টন সূত্রে নামজারি (যদি প্রযোজ্য হয়)

পুরাতন প্রপার্টির ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন 

ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনার সুবিধা-অসুবিধা তো আছেই।  তবে, সবটা জেনে বুঝেই আপনি যদি একটি পুরাতন ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলেলে ফ্ল্যাট কেনার আইনি ধাপ হিসেবে নির্ধারিত কয়েকটি ডকুমেন্ট অবশ্যই চেক করে নিতে হবে। এগুলো হচ্ছে-  

১। পূর্বের মালিকানা দলিল

২। সেল পারমিশন রাজউক 

৩। রাজউক কর্তৃক বিক্রেতার মিউটেশন

৪। এসি ল্যান্ড মিউটেশন ইত্যাদি 

লিখিত চুক্তিপত্র
পুরাতন ফ্ল্যাট কিনলেও কয়েকটি ডকুমেন্ট অবশ্যই চেক করে নিতে হবে

পুরাতন ফ্লাট এর ক্ষেত্রে যদি ২০০৮ সালের পরে হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই অকুপেন্সি সার্টিফিকেট সংগ্রহ করবেন এবং একজন অভিজ্ঞ লিগ্যাল এক্সপার্টকে দিয়ে সেটি যাচাই করে নেবেন। সেইসাথে, ভবনের আর্কিটেকচার ও স্ট্রাকচারাল ডিজাইন প্রণয়নকারী স্থাপতি ও প্রকৌশলীর নাম এবং পেশাগত রেজিস্ট্রেশন নাম্বারও সংগ্রহ করে রাখুন। 

ডেভেলপার কোম্পানির চুক্তিপত্র যাচাই 

আপনি যদি কোনো ডেভেলপার কোম্পানির কাছ থেকে অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে চান, তাহলে কিন্তু শুধুমাত্র ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনই যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে ফ্ল্যাট কেনার আইনি ধাপ হিসেবে আপনাকে নজর দিতে হবে, ডেভেলপার কোম্পানির সাথে চুক্তিপত্র বা ডিড অফ এগ্রিমেন্ট-এ। কেননা অ্যাপার্টমেন্টের রেজিস্ট্রি ও নামজারি হওয়া পর্যন্ত এই চুক্তিপত্রটিই মালিকানার একমাত্র প্রমাণ। 

একজন সচেতন ক্রেতা হিসেবে আইনি সহায়তায় চুক্তি করুন। ফ্ল্যাট কেনার  শর্তগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে কিনা দেখে নিন। ফ্ল্যাটের অনুমোদিত নকশাও কিন্তু আবাসন নির্মাতা আপনাকে দেখাতে এবং দিতে বাধ্য। আপনি কোন ফ্ল্যাটটি কিনছেন তা চুক্তিতে স্পষ্ট করে উল্লেখ করুন। এবং আপনার বিনা অনুমতিতে ফ্ল্যাট পরিবর্তন করতে পারবে না, তা চুক্তিতে বলে রাখুন। শর্তের বাইরে অতিরিক্ত কোনো অর্থ দিতে যে আপনি বাধ্য নন, সেটিও চুক্তিতে উল্লেখ করুন।

একজন সচেতন ক্রেতা হিসেবে আইনি সহায়তায় চুক্তি করুন

রিয়েল এস্টেট আইন অনুযায়ী আপনার সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের ৩ মাসের মধ্যে আবাসন নির্মাতা দখল হস্তান্তর, দলিল সম্পাদন এবং নিবন্ধনের কাজ করবেন সম্পাদন করতে বাধ্য। আর যদি আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হয় তাহলে চুক্তিতে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণসহ সব অর্থ ৬ মাসের মধ্যে ফেরত দিতে হবে, এ বিষয়টিও চুক্তিতে আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। অবশ্য, চুক্তিতে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ না থাকলে তা আইন অনুযায়ী পরিশোধিত অর্থের ওপর ১৫ শতাংশ হারে নির্ধারিত হয়।  ডেভেলপারের সাথে ফ্ল্যাট কেনার আইনি ধাপ হিসেবে অবশ্যই উপরোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করে চুক্তিতে সই করুন, সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে যে কোনো ঝামেলায় আপনি আইনী সহায়তা নিতে পারবেন। 

ফ্ল্যাট কেনার আইনি ধাপ হিসেবে উপরোক্ত যে বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে,  তা বাস্তবায়নের জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একজন দক্ষ আইনি পরামর্শকের। এক্ষেত্রে দ্রুত সময়ে ঝামেলা মুক্তভাবে আপনাকে আইনি সহায়তা দিতে রয়েছে বিপ্রপার্টি লিগ্যাল সল্যুশন। আমাদের দক্ষ আইনি পরামর্শকের মাধ্যমে নিশ্চিন্তে ফ্ল্যাট কিনতে কল করুন বিপ্রপার্টিতে- ০৯৬১২১১০০১১। 

Write A Comment

Author