Reading Time: 4 minutes

তিনিই বইপোকা, যিনি বই পড়ে আনন্দ পান, বই পড়ে বিরক্ত হন, বই পড়েই কাঁদেন অথবা হাসিতে ফেটে পড়েন। এই যে বইয়ের সাথে মিশে থাকা এত রকম স্মৃতি, ঘরের সবচেয়ে নিরিবিলি কোণটা খুঁজে নেয়ার তাগিদ, পড়ার বইয়ের আড়ালে গল্পের বইয়ের নেশা-  এই অভিজ্ঞতাগুলো কিন্তু প্রত্যেক বইপিপাসুর ঘরের মাঝে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিগত আবেগ। এজন্যই হয়তো বইপোকাদের ঘরও প্রতিবিম্ব হয়ে ওঠে তাদের মননের, তাদের বইয়ের সাথে জমে থাকা অনুভূতির। ঘরের এক একটা কোনেই তাই বইয়ের সাথে গড়ে ওঠে তার আজন্ম সখ্যতা। আর সেই সখ্যতাকে লালন করতে বইপোকারা গোটা ঘরটাকেই যদি বইয়ের রাজ্য বানিয়ে ফেলে তাতে কিন্তু তাদের দোষ দেয়া চলে না এতটুকুও! কিন্তু কেমন হবে বইপোকাদের ঘর? আপনি নিজেও কি একজন বই পোকা? তাহলে কিভাবে সাজাতে চাইছেন হাজার হাজার বইসমেত ঘরটাকে?  আপনার অন্দরে বইয়ের গল্পগুলো কতটা নান্দনিক করা যায় তা জানতেই চলুন পথ হাটা যাক একই পথে। 

ঘরেই যদি হয় লাইব্রেরি 

টেবিল আর বই
যে কক্ষটিতে প্রচুর আলো-বাতাস আছে সেটিই লাইব্রেরি হবার জন্য আদর্শ

বইপোকাদের কে না চান ঘরের মাঝেই একটি ব্যক্তিগত লাইব্রেরি গড়ে নিতে! কেবল বইপ্রেমীদের ঘরই নয়, যে কোনো বাড়িতে ছোটখাটো একটি লাইব্রেরি থাকা মানে, ঘরের সৌন্দর্য আর আভিজাত্য শতগুণে বেড়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে শখের লাইব্রেরিটি কোন ঘরে করতে চান সেই সিদ্ধান্তটিও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আলাদা একটি ঘরকেই স্টাডিরুম এবং লাইব্রেরি হিসেবে তৈরি করে নেয়া যায়। যে কক্ষটিতে প্রচুর আলো-বাতাস আছে সেটিই আপনার লাইব্রেরি হবার জন্য আদর্শ। এবার, বুকশেলফ,  সিটার ইত্যাদি কেমন হবে, কোথায় কোনটি রাখবেন সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন। বর্তমানে নানা রকম আরামদায়ক সিটার রয়েছে যেখানে বসে আপনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতে পারবেন বই পড়ে। পছন্দসই এমন কোনো সিটার বেছে নিতে পারেন। এছাড়া আপনার লাইব্রেরি বা স্টাডিরুমটি যদি পরিসরে বেশ ছোট হয় তাহলে ঘরকে বড় দেখাতে রঙের ব্যবহারও নান্দনিক হওয়া চাই। হালকা নীল, হালকা সবুজ ইত্যাদি হালকা রঙের সাহায্যে ছোট ঘরকে বড় দেখানোর রয়েছে নানা উপায়। ঘরের দেয়ালে রুচিশীল রং এবং টেক্সচার নির্বাচন কিন্তু আপনার বইপড়ুয়া মননেরই পরিচায়ক। সেই সাথে ঘরকে আরেকটু নান্দনিক করে তুলতে পারেন আলো-ছায়ার ব্যবহারে। অনেক বইপড়ুয়ারাই ভালোবাসেন ল্যাম্পের আলোয় বই পড়তে। এক্ষত্রে রুচির সাথে মানানসই একটি স্ট্যান্ড ল্যাম্প কিংবা টেবিল ল্যাম্প থাকাটাও বাঞ্ছনীয়। এবারে আপনার লাইব্রেরিটিকে নিয়ে আসুন প্রকৃতির কাছাকাছি। মাটির বা সিরামিকের টবে সাজানো গাছগুলো হতে পারে বইপোকাদের ঘরের সবুজসঙ্গী। 

বই পোকাদের শোবার ঘর

বইপোকারা কি কেবল লাইব্রেরিতেই বই পড়বেন? তাহলে শোবার ঘরের সময়গুলো কিভাবে কাটবে? কিংবা যে বইপোকাদের ঘরে আলাদা লাইব্রেরি করার সুযোগ নেই তার তো ব্যক্তিগত শোবার ঘরটুকুই সম্বল, তাইনা? একারণে বেডরুমকে কী করে বই সাজানোর ও বই পড়ার উপযুক্ত করে গড়ে নেয়া যায় তা নিয়েও ভাবতে হবে। বই রাখার জন্য জানালার পাশে বুকশেলফ রাখতে পারেন। এছাড়া, পিলারের কারনে রুমের যে জায়গাটি নষ্ট হচ্ছে সেখানেও নিচ থেকে উপর পর্যন্ত অনেকগুলো তাক করে বই সাজিয়ে রাখতে পারেন। আজকাল তো বেড কাম শেলফ ও পাওয়া যাচ্ছে যেখান বিছানার নিচের অংশটিকে শেলফের মতো করে ব্যবহার করা যায়। বেডরুম ছোট হলে এমন অনেক উপায়ে বেডরুমকে নান্দনিক করে তোলাও কিন্তু বইপোকাদের ঘরের জন্য মন্দ হবে না।

 তবে শোবার ঘরটা যদি একটু বড় হয় আর সেখানে ছোট্ট এক টুকরো লাইব্রেরি যদি করে নিতে চান তাহলে বেডরুম কেবিনেটের কথা ভাবতেই পারেন। একই সাথে অসংখ্য সুবিধা রয়েছে বেডরুম কেবিনেটের। প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস রাখার পরও কেবিনেটের একটি বড় অংশ এখানে থাকতে পারবে বইয়ের দখলে। আর বেডরুম কেবিনেটে সেই বইগুলোই রাখুন যেগুলো আপনার একান্ত প্রিয়, বা যে বইগুলো বর্তমানে পড়ছেন বা আগামী কয়েক মাস ধরে পড়বেন। তাহলে বই খুঁজতে বার বার নানান রুমে ছোটাছুটি করতে হবে না। আরো সহজ হবে, যদি কেবিনেটের একেক তাকে লেখকভিত্তিক বা বিষয়ভিত্তিক  ক্যাটালগ অনুসারে বই সাজিয়ে রাখতে পারেন। তবে বই যেভাবেই সাজান না কেন, বই পড়ার জন্য আপনার শোবার ঘরে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে নিন। পর্যাপ্ত আলো, পর্যাপ্ত বাতাস সেইসাথে হৈ চৈ বিহীন একটু নিরিবিলি পরিবেশ। ব্যস, আপনার শোবার ঘরটিতেও তৈরি হয়ে গেল আপনার ব্যক্তিগত লাইব্রেরির একাংশ। 

বই নির্বাচন ও সাজসজ্জা 

মাল্টি পার্পাজ বুক শেলফ
শেলফে বইগুলো কিভাবে সাজাবেন তা নির্ভর করে আপনার রুচিবোধ, পছন্দ এবং প্রয়োজনের ওপর

আপনি যখন বইপোকা, ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত অজস্র বই যে কিনেছেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এত অসংখ্য বইয়ের ভীড়ে অনেক সময় দরকারি বইটি হাতের কাছে পাওয়া যায় না। এই বিড়ম্বনা এড়াতে সংগ্রহে থাকা বইগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে ফেলুন। আপনি হয়তো অনেক বই নানা কারণে কিনেছেন। কিন্তু এখন আর রাখতে চাইছেন না। তাহলে বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিন, কোন বইগুলো রাখবেন আর কোনগুলো রাখবেন না। এটা করলে সহজেই অপ্রয়োজনীয় বইগুলোকে আলাদা করতে পারবেন। যে বইগুলো রাখতে চাইছেন না, সেগুলো পুরোনো বই বিক্রির দোকানে বিক্রি করে দিতে পারেন। আরও ভালো হয় বিক্রি না করে যদি পরিচিত কোনো বইপ্রেমী কিংবা কোনো পাঠাগারে উপহার পাঠান। বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন ইত্যাদিও সংগ্রহ করতে পারেন আপনি আপনার ঘরোয়া সংগ্রহশালায়। বই সাজাতে কেবিনেট ঘরানার শেলফ, ফ্লোটিং শেলফ কিংবা সরাসরি ঘরের মেঝেটিও ব্যবহার করা যায়।  তবে খেয়াল রাখুন ঘরোয়া লাইব্রেরিতে যত কম ফার্নিচার রাখা যায় ততোই ভালো। বই নির্বাচনের পর শেলফে বইগুলো কিভাবে সাজাবেন তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার রুচিবোধ, পছন্দ এবং প্রয়োজনের ওপর। অনেকভাবেই সাজানো যায়-লেখকের নাম অনুসারে কিংবা বইয়ের মলাটের রং অনুসারে। সাজানো যায় বিষয়ানুসারেও। যেমন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস, চলচ্চিত্র, চিত্রকলা, জীবনী, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, অভিধান বা পরিভাষা প্রভৃতি। বিষয়ভিত্তিক বই সাজানোর প্রধান সুবিধা হচ্ছে, যে বইটি যখন প্রয়োজন তাৎক্ষণিকভাবে সে বইটি খুঁজে বের করা যায়। এ ছাড়া বড় সাইজের বইগুলো যদি তাকের যেকোনো এক দিকে বা একটি নির্দিষ্ট তাকে রাখা যায় তাহলে দেখতে ভালো লাগবে। শেলফজুড়ে বইয়ের মাঝে শোপিস ও ফটোফ্রেম সাজাতে পারেন। শেলফের কাঁচটাকেও এক কোণে একটুখানি সাজিয়ে তুলতে পারেন গ্লাস পেইন্টিং হিসেবে।

প্রতি কোণে বইয়ের ঘ্রাণ

বুকশেলফ ও চেয়ার
বইয়ের ঘ্রাণ বইপ্রেমীদের ঘরের প্রতিটি অংশের সাথেই ভীষণ মানানসই

কেবল লাইব্রেরি বা শোবার ঘর নয় ব্যালকনি, লিভিংরুম এমনকি ডাইনিং! বইপোকাদের ঘরের প্রতিটি কোণেই যদি হরেক রকম বই থাকে, তাহলেও কিন্তু বাড়াবাড়ি হবে না। কারণ বইয়ের ঘ্রাণ বইপ্রেমীদের ঘরের প্রতিটি অংশের সাথেই ভীষণ মানানসই। ব্যালকনির একপাশে ছোট টেবিল আর রিলাক্সিং চেয়ার জুড়ে নিয়ে সমরেশের সাতকাহনে হারিয়ে যেতেই পারেন আপনি। কিংবা জানালার ধারে বৃষ্টির রমঝম শব্দে নির্মলেন্দু গুণের প্রেমের কবিতা থেকে উগড়ে দিতেই পারেন প্রিয় দু-তিন লাইন। 

ঘরে ঢুকেই অতিথিরা যেখানে স্থান পান, সেটা হল ড্রয়িংরুম। ড্রয়িংরুমের ডেকোর হিসেবে অন্যান্য শো-পিস আর আসবাবের বিপরীতে কয়েক প্রস্থ বই থাকলে, সেটিই অতিথির কাছে আপনার রুচির পরিচায়ক। শুধু অতিথি কেন? বিকেলবেলা সোফা অথবা ডিভানে গা এলিয়ে বইয়ের সমুদ্রে ডুব দেওয়াও তো আপনার জন্য নতুন নয়, তাই না? আপনার ঘরের কোন কোন জায়গা বইয়ের ঘ্রাণে পরিপূর্ণ? কোথায় বসে আপনার বইপোকা মন সবচেয়ে বেশি তৃপ্ত হয়ে বই পড়ে? জানিয়ে দিন কমেন্টে।

Write A Comment

Author