Reading Time: 4 minutes

চলে এসেছে বর্ষাকাল! আর বর্ষা মানেই তো এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া মনের কোণ! হৃদয়ের দখিন দুয়ার খুলে দিয়ে দমকা হাওয়ার আলিঙ্গন!  বর্ষার আগমণে আপনার মন ঠিক এমনি করে ভালো হয়ে গেলেও, ভালো থাকছে কি আপনার অন্দরে সাজিয়ে রাখা কাঠের আসবাবপত্র? একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, বর্ষার এই স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া  আপনার প্রিয় হলেও, ওদের কাছে কিন্তু মোটেই প্রিয় নয়। কারণ, বর্ষায় বাতাসে মিশে থাকা জলীয়বাষ্প প্রভাব ফেলে কাঠের আসবাবে। আসবাবপত্র ফেঁপে যাওয়ার বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায় এসময়ে। তাইতো বর্ষাকালে কাঠের আসবাবে প্রয়োজন একটু বাড়তি যত্ন। একটু বাড়তি সতর্কতা। তহলেই, কেবল শীত, গ্রীষ্ম বা বসন্ত নয়, বর্ষাতেও সুন্দর থাকবে আপনার গৃহকোণের নান্দনিক আসবাবপত্র। চলুন জেনে নেই, কী কী উপায়ে বর্ষাকালেও যত্নে থাকবে কাঠের আসবাবপত্র।

আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখুন

ড্রেসিং টেবিল
বৃষ্টির পানি আপনার আসবাবপত্র পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারে

বর্ষাকালে আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে ঘরের দেয়ালের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পাবে এটাই স্বাভাবিক। আর এই দেয়াল থেকে আর্দ্রতা টানার একটা প্রবণতা থাকে কাঠের আসবাবের। যার ফলে আসবাবে ছত্রাক পড়ে চকচকে ভাব নষ্ট হতে পারে। তাই, আসবাবপত্রকে ছত্রাক থেকে বাঁচাতে দেয়াল থেকে কম পক্ষে ছয় ইঞ্চি দূরে আসবাবপত্র রাখুন। বৃষ্টির সময় চেষ্টা করুন ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে, যাতে করে বৃষ্টির পানি আপনার আসবাবপত্র পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারে। আর বৃষ্টি থেমে গেলেই জানালা খুলে দিন। এতে ঘরে আলো-বাতাস ঢুকবে এবং ঘর আর্দ্রতামুক্ত থাকবে।  প্রয়োজনে আসবাব জানালা-দরজার কাছ থেকে সরিয়ে রাখতে পারেন। যেন বৃষ্টির পানি এসবের গায়ে না লাগে।

ন্যাপথালিন ব্যবহার

ন্যাপথালিন
ন্যাপথালিন দিয়ে রাখুন

আর্দ্রতা শোষণের কার্যকরী একটি উপাদান হলো কর্পূর বা ন্যাপথালিন। ন্যাপথালিন ব্যবহারে কাঠের আসবাবে গুছিয়ে রাখা কাপড় ভালো থাকে। কেবল কাপড়ই নয়, কাঠের ওয়ারর্ড্রোব বা আলমারিও পোকামাকড়সহ অন্যান্য কীট থেকে রক্ষা করে। তাই, বর্ষা আসার আগেই এ ধরণের আসবাবের কোণায় কোণায় কিংবা ড্রয়ারে ন্যাপথালিন দিয়ে রাখুন। কেবল বর্ষাই নয়, স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ এড়াতে, সারা বছরই প্রয়োজনীয় আসবাবে এই ন্যাপথালিন আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।

হিউমিডিফায়ার ব্যবহার

 হিউমিডিফায়ার
কিনে নিতে পারেন হিউমিডিফায়ার

পছন্দের আসবাব মানেই এর সাথে মিশে থাকে অসংখ্য স্মৃতি। কখনো কখনো তো, একটু একটু করে সঞ্চয় করা অর্থ ব্যয় করে কিনে ফেলি, শখের কোনো আসবাব! তাইতো, ঘরের আঙিনায় প্রতিটি আসবাবের মূল্যই যেন একটু বেশি। আর সে কারণেই, মূল্যবান এই আসবাবগুলো ভালো রাখতে কিছু অর্থ খরচ করে কিনে নিতে পারেন হিউমিডিফায়ার। এটা একইসাথে আপনার ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখবে ও স্যাঁতসেঁতে ভাব দূর করবে। আর, ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকা মানেই, আপনার আসবাবের স্থায়ীত্ব বেড়ে গেল কয়েক গুণ।

আসবাবপত্র পরিষ্কার করতে শুকনো কাপড় ব্যবহার

শুকনো কাপড় এর সাহায্যে পরিষ্কার করুন
শুকনো কাপড় বা ব্রাশ-এর সাহায্যে পরিষ্কার করুন

কাঠের আসবাব যখন পরিষ্কার করবেন তখন অবশ্যই শুকনো কাপড় বা ব্রাশ-এর সাহায্যে পরিষ্কার করুন। নিয়মিত পরিষ্কার করলে বর্ষায় কাঠের আসবাবে ময়লা আটকানোর প্রবণতা কমবে। ভুল করেও ভেজা কাপড় লাগাবেন না, এতে আসবাবপত্রে ছত্রাক পরতে পারে। এবং আদ্রতার কারনে ফাটলও ধরতে পারে। যেকোনো আসবাবই সব সময় পানি থেকে দূরে রাখুন। এমনকি হাতে পানি লেগে থাকা অবস্থায় কোনো আসবাব হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন না। যত্ন যখন নিতেই হবে, সঠিক উপায়ে যত্ন নিন। এতে করে বর্ষাকালেও যত্নে থাকবে কাঠের আসবাবপত্র।

বাসার মেঝে শুকনো রাখুন

আপনার ঘরের মেঝে বিভিন্ন রকম হতে পারে।  অনেক ক্ষেত্রে, বাইরের আবহাওয়ার আর্দ্রতা প্রভাব ফেলে এই মেঝেতে। ফলে, ঘরের মেঝে ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে থাকে। কিন্তু, দীর্ঘদিন এ অবস্থা বিরাজ করলে, কাঠের আসবাবের ক্ষতি হতে পারে খুব দ্রুত। তাই বাসার মেঝে, সব ঋতুতেই শুকিয়ে রাখার চেষ্টা করুন। ভেজাভাব শুকিয়ে ফেলার জন্য শুকনা কাপড় দিয়ে মেঝে মুছে নিন এবং সিলিং ফ্যান চালু করে রাখুন। এতে মেঝে দ্রুত শুকিয়ে যাবে ও আপনার আসবাবপত্র সুরক্ষিত থাকবে।

চায়ের লিকার ব্যাবহার

সবরকম সতর্কতার পরেও যদি কোনো কারনে, ফাঙ্গাস জমে, তাহলে কড়া করে চায়ের লিকার তৈরি করে নিন। এবার তার মধ্যে সামান্য ভিনিগার মিশিয়ে সেই মিশ্রণ দিয়ে আসবাবপত্রের ফাঙ্গাস লাগা অংশ পরিষ্কার করুন।

নিমপাতা বা নিমের তেল ব্যবহার

বর্ষাকালে কাঠের আসবাবে পোকা বা ঘুন ধরার প্রবণতা বাড়ে। নিমপাতা, নিমের তেল, কর্পূর ও রাবিং অ্যালকোহল বা স্পিরিট একসঙ্গে মিশিয়ে একটা স্প্রে বোতলে ভরে রেখে দিন এবং যেখানে ঘুন ধরেছে সেখানে স্প্রে করে দিন। এই মিশ্রণ আপনার সাধের আসবাবকে পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচাবে।

বার্নিশ ব্যবহার

কাঠের আসবাব ভালো রাখতে বছরে দু-একবার বার্নিশ বা লিকারের প্রলেপ দিতে পারেন। এতে কাঠের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যাবে। যার ফলে এর ফোলাভাব দূর হয়ে কাঠ ভালো থাকবে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন রকম ঘর রয়েছে। আর এই ঘরেগুলোতে কাঠের তৈরি আসবাবের রয়েছে আলাদা এক নান্দনিকতা। রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির ছোঁয়া। কাঠের আসবাবের আবেদন যেহেতু বেশি, এর যত্নের পরিধিটাও একটু বড় হবে এটাই স্বাভাবিক। বিশেষত বর্ষাকালেও যত্নে থাকবে কাঠের আসবাবপত্র। বর্ষায় আপনি নিজেকে যেমন ঠান্ডা, জ্বর, কাশিসহ বাকি সব রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সতর্ক, ঠিক তেমনি সতর্ক থাকুন শখের আসবাবপত্রগুলোর সুরক্ষাতেও। আর সেজন্যই মেনে চলুন প্রয়োজনীয় এই টিপসগুলো। এই, বর্ষায় আপনার ঘরের আসবাবগুলো কেমন আছে, জানিয়ে ফেলুন কমেন্ট বক্সে।

Write A Comment

Author