Reading Time: 4 minutes

চটগ্রাম এবং সিলেটের অপূর্ব জলপ্রপাত এবং পর্বতমালা থেকে শুরু করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মন শান্ত করা দৃশ্য। সকলেই একমত হবেন যে, বাংলাদেশে দেখার মতো জায়গার অভাব নেই। কিন্তু এই জায়গাগুলোর সৌন্দর্য সবসময়ই বেশি। কিন্তু, সময় বেঁধে এই জায়গাগুলোর সৌন্দর্য আরও তীব্র হয়ে ওঠে। যেমন, বর্ষাকাল। এই মৌসুমে কিছু কিছু ঘোরার জায়গা আরও মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে। দেখলে যেন ফিরে আসতে মন চাইবেই না। ভাবুন তো, বৃষ্টিস্নাত একটি দিনে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে পানি স্পর্শ করছেন! প্রশান্তিময় একটি মুহূর্ত। তবে আপনি যদি যাদুকরি মৌসুমটিকে পুরোপুরি উপভোগ করতে চান তবে আপনাকে নিজের বাসা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে হবে। চলুন তবে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে বর্ষাকালে ঘুরতে যাওয়ার জন্য চমৎকার ৫ টি জায়গা সমন্ধে জেনে নেই।

রাতারগুল, সিলেট

রাতারগুল জলাবদ্ধ বন
রাতারগুল জলাবদ্ধ বন

সিলেট থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাতারগুল জলাবদ্ধ বন। পৃথিবীর বুকে যতগুলো মিঠা পানির জলাভূমি রয়েছে তার মধ্যে এই রাতারগুল অন্যতম। এই জলে ডুবে থাকা বনটিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সাপ থেকে শুরু করে ৭০ টিরও বেশি প্রজাতির গাছপালা এবং প্রানী।  বর্ষাকালে, গোয়াইন নদী বনের সাথে সংযুক্ত রয়েছে কিন্তু ভারত থেকে নদীর পানি বেশি আসার কারণে তখন এই জলাভূমি প্লাবিত হয়। এবং ঠিক তখনই এই বনটি সত্যিই আরও বেশি সুন্দর হয়ে ওঠে। বনের পুরোটা পানির তলদেশে নিমজ্জিত হয়ে যায়। এবং গাছগুলো মাটির উপরে ১০ মিটার উঁচুতে ছড়িয়ে পড়ে ঠিক ছাউনির মত। ছাতার মতো ছড়িয়ে বনকে আগলে রাখে। বছরের এই সময়টিতে নৌকায় করে নদী পার হতে খুব ভালো লাগে। এমনকি পাখির কিচিরমিচির কথা এবং পাতায় বৃষ্টির ফোটার শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। এমন পরিবেশে বেশ কিছুক্ষণ থাকলেই আপনি এই পরিবশের দ্বারা নির্ঘাত বশীভূত হয়ে যাবেন। এই বর্ষাকাল রাতারগুলকে এত চমৎকার একটি ঘুরতে যাওয়ার জায়গা করে তোলে।

টাঙ্গুয়ার হাওর, সুনামগঞ্জ

টাঙ্গুয়ার হাওর
টাঙ্গুয়ার হাওর

বর্ষাকাল বেশ স্পেশাল। এই সময়ে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের মত প্রাকৃতিক দৃশ্যও আরও অনেক বেশি সুন্দর হয়ে ওঠে।  তার মধ্যে বর্ষাকালে হাওর কেমন জমে উঠবে ভাবুন তো। বর্ষার রোমাঞ্চকে পুরোপুরি উপভোগ করার জায়গা হিসেবে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর সেরা। ভরা জোছনার রাতে নৌকায় ভেসে বেড়াচ্ছেন আর গুনে যাচ্ছেন একেকটি তারা। ভাবা যায় এমন একটি রাতের কথা? বৃষ্টি ধারার পর আকাশটা আরও যেন কাছে চলে আসে, এত পরিষ্কার এত কাছের হয়ে ওঠে যেন মনে হয় এখনই স্পর্শ করা যাবে। আপনি যখন হাওরের গভীরে প্রবেশ করতে শুরু করবেন, আপনার রোবোটিক জীবনের সমস্ত তাড়াহুড়ো এই হাওয়ের পানির শব্দের সাথে সাথে বদলে যেতে থাকবে। বর্ষাকালে হাওরকে উপভোগ করতে চাইলে এখানে আপনাকে একটি রাত নৌকায় কাটাতেই হবে। তবে নৌকা ভাড়া করার সময় অবশ্যই পকেট ভারী হওয়া চাই নাইলে এমন সুযোগ বার বার কি আসে নাকি? বর্ষাকালে ঘুরতে যাওয়ার জন্য টাঙ্গুয়ার হাওর এক স্বপ্নের জায়গা। 

বিছানাকান্দি, সিলেট

বিছানাকান্দি
বিছানাকান্দি

রাতারগুল যেমন জলাবদ্ধ বন এবং বর্ষাকালে যেন আরও ফোটে ওঠে তেমনি সিলেটের বিছানাকান্দিও। বর্ষাকালে মেঘালয়ের “সেভেন সিস্টারস” থেকে যখন জলের স্রোত যখন আকাশ থেকে নেমে আসে তখন এই বিছনাকান্দি জলপ্রপাত এবং নদীর মিশ্রণে পরিণত হয়। এর আগে একসময় মানুষজন এখানে শিলা সংগ্রহ করত, কিন্তু এই জায়গায় মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে এটাকে একটি বিশিষ্ট পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। এই জায়গটির বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে খাসি পাহাড়ের উভয় পক্ষ থেকে এক সাথে মিলিত হওয়ার  দৃশ্য দেখা। যেটা দেখতে প্রতিবছর অনেক পর্যটক সেখানে ভিড় জমায়। পাহাড়গুলো এতই লম্বা যে পাহাড়ের চূড়া থেকে কখনো কখনো মেঘ ছুঁয়ে নিতেও পারবেন। মেঘকে স্পর্শ করার এমন জায়গা বাংলাদেশের বুকে সত্যিই কম। কিন্তু জায়গাটি সত্যিই বর্ষাকালে অন্যমাত্রা খুঁজে পায়। বর্ষাকালে বৃহৎ জলধারা প্রবাহিত হয়ে তৈরি হয় জলপ্রপাত যা কিনা সংযুক্ত হন পিয়াইন নদীর সাথে। এ সময়টাতে বিছানাকান্দি আরও জিবন্ত হয়ে ওঠে। সবুজের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া এমন জলপ্রপাত দেখার মত আনন্দ প্রকৃতিপ্রেমীদের  জীবনে খুব আসে। আপনি যদি বর্ষায় বিছানাকান্দি প্রলুব্ধ না করতে চান তবে এই জায়গাটি দেখার ব্যবস্থা করুন।

খৈইয়াছড়া জলপ্রপাত, মিরসরাই, 

খৈইয়াছড়া
খৈইয়াছড়া

চমৎকার জলপ্রপাতের দৃশ্য উপভোগ করা জন্য আপনাকে আসতেই হবে, মিরসরাই এর খৈইয়াছড়ায়। ঘুরে বেড়ানোর মতো সাহসিকতা যাদের আছে তাদের জন্য এ এক অন্যোন্য গন্তব্য। মিরসরাই উপজেলার খোয়াইচোড়া ইউনিয়নের নামানুসারে এই জলপ্রপাতের নাম রাখা হয় যা কিনা, এই উনিয়নের ৪ কিমি পূর্বে অবস্থিত। মূলত এখানে পৌঁছতে আপনাকে বনের মধ্য দিয়ে ট্র্যাকিং করতে হয়। এবং খোয়াইছোড়ায় পথে যেতে যেতে দেখা যায় একাধিক ক্যাসকেড। চড়াই উতরাই পেরিয়ে যখন একবার পৌঁছে যাবেন তখন মনে হবে এই দৃশ্য দেখার জন্য আরও যত কষ্ট আছে সব এক সাথে করলেও এমন দৃশ্য আর কোথাও মিলবে না। এমন মন হারানো সৌন্দর্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিতে কেও বাধা দিতে পারে না। অন্যদিকে শরতের বরফ-ঠান্ডা প্রবাহে সেখানে কিছু সময় উপভোগ করা আরও মধুর একটা সময়ে। আমাদের আজকের তালিকার প্রতিটি জায়গার মতোই, খৈইয়াছড়ার জলপ্রপাতটি বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি সুন্দর দেখায়। আর আপনি যদি ভাগ্যবান হয়ে থাকেন তবে একটি রংধনুও দেখতে পাবেন।

নাফাখুম জলপ্রপাত, বান্দরবান

নাফাখুম জলপ্রপাত
নাফাখুম

যেমন আগেই বলা হয়েছিল, একটি দুর্দান্ত ঝর্ণার সামনে দাড়িয়ে থাকার চেয়ে সুন্দর আর মনোরম দৃশ্য ও অনুভূতি আর কোথাও নেই। আর যদি তা হয়ে থাকে নাফাখুম তাহলে তো কথাই নেই। কারণ এটা দেশের বৃহত্তম জলপ্রপাত। এটার আকার বা উচ্চতার কারণে নয় বরং তার চিত্তাকর্ষক জলপ্রপাতের জন্য। এখানে ঘুরতে এলে আপনি এর প্রেমে পড়বেনই নিশ্চিত থাকুন। বান্দরবানের অরণ্যের গভীরে অবস্থিত এই নয়ন মহনীয় জলপ্রপাতটি। নাফাখুমে যেতে আপনার কেমন সময় লাগবে তা নির্ভর করে আপনি কোন মৌসুমে সেখানে যাচ্ছেন। বর্ষাকাল বা শরৎকালে সেখানে পৌঁছানো তুলনামূলকভাবে সহজ এবং সময় সাশ্রয়ী, কারণ নৌকা দিয়ে অনেকটুকু পথ যাওয়া যেতে পারে। সেখানে পৌঁছতে আপনাকে বনের মধ্য দিয়ে ট্র্যাকিং করতে হবে। আর বান্দরবানের মধ্য দিয়ে সেখানে ট্র্যাকিং করে যাওয়া সহজ নয়, এতে অনেক সাহসিকতার ব্যাপার রয়েছে। জলের এমন ঝর্ণা ধারা দেখে আপনি ভুলে যাবেন আপনার পেছন ফেলে আসা জীবনকে। প্রকৃতি কতটা জাঁকজমকপূর্ণ হতে পারে তা এই ঝর্ণা না দেখে বোঝার উপায় নেই।  

বর্ষাকালে ঘুরতে যাওয়ার জন্য এই কয়টি জায়গা এতই চমৎকার যে আপনি গেলে আর ফিরে আসতে চাইবেন না। বাংলাদেশে আপনি ঘুরে দেখতে পারেন এমন প্রচুর জায়গা রয়েছে। তবে আপনি যদি সেরা অভিজ্ঞতা পেতে চান তবে বর্ষাকালে যেতেই হবে। 

Write A Comment