Reading Time: 3 minutes

বর্ষাকাল মানেই দিনভর বৃষ্টির আনাগোনা। চলে একটানা বৃষ্টিপাত। বর্ষা মৌসুমে বাসার বাইরের আবহাওয়ার মতো ভেতরেও যেন থাকে বৃষ্টি ভাব। স্যাঁতসেঁতে দেয়াল, গুমোট ভাব, সোঁদা গন্ধের কারণে ঘরের ভেতরে এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আর তাই এমন অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন ঘরের বাড়তি যত্ন। বর্ষায় সুরক্ষিত ঘর এর জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ নিলেই, ঘর থাকবে পরিচ্ছন্ন। বর্ষায় সুরক্ষিত ঘর এর জন্য কী কী উপায় অবলম্বন করবেন, এর বিস্তারিত আলোচনা থাকছে আমাদের আজকের ব্লগে।  

বৃষ্টিস্নাত দিনে ঘরের বাইরের মতো ভেতরটাও যেন আর্দ্র বা ভেজা ভেজা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এসময় মেঝেতে কার্পেট ব্যবহার না করে বরং কার্পেটগুলো পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য তুলে রাখুন। বর্ষাকালে ভেজা কাপড় শুকানোর জন্য কখনোই ঘরের ভেতর ফ্যানের নিচে দেয়া উচিত নয়। এতে করে ঘরে আর্দ্রতা জমে, যা ঘরের ভেতরটা আরও বেশি স্যাঁতস্যাঁতে করে তোলে। বর্ষাকালে যেহেতু পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়, তাই নিয়মিত ঘরের নির্দিষ্ট জায়গাতে কার্বলিক অ্যাসিড দিয়ে রাখতে পারেন। বিশেষ করে রান্নাঘর এবং বাথরুমে যেখানে পাইপ বা ছিদ্র আছে এমন জায়গায়।

Rain water damage in wall
দেয়ালের কালচে ছোপ ঘরের ভেতরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করে

দেয়াল জুড়ে কালচে ছোপ

বর্ষা মৌসুমে চারপাশ অনেক বেশি স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে থাকে। অনবরত বৃষ্টির কারণে এই স্যাঁতস্যাঁতে ভাব থেকে সৃষ্টি হয় দুর্গন্ধ। একটানা বৃষ্টি, আর্দ্রতা এবং চারপাশের ভেজা ভাব থেকেই অদ্ভুত এসব গন্ধের আবির্ভাব। এমন সময় ঘরের দেয়ালের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং দেয়ালে এক ধরনের কালচে ছোপ পড়ে। যেখান থেকে উদ্ভট গন্ধের সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থায় যা করতে পারেন তা হল, খুব সাবধানতার সাথে ব্লিচ ও পানির একটি মিশ্রণ দিয়ে দেয়ালের কালচে অংশগুলো মুছে নিন। এক্ষেত্রে ব্লিচ কেবলমাত্র পরিষ্কারক হিসেবেই নয়, বরং জীবাণুনাশক হিসেবেও কাজ করবে। যা দেয়ালে কালচে ছোপ বাড়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।          

কাঠের দরজা-জানালার যত্ন   

বর্ষা মৌসুমে কাঠের দরজা-জানালা অনেক সময়ই ফুলে ওঠে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণেই মূলত এমনটি হয়ে থাকে। স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া এবং অনবরত বৃষ্টি হওয়ার কারণে দীর্ঘসময় ধরেই কাঠ ফোলা অবস্থায় থাকে। আর তাই এ ধরনের অবস্থা যেন না হয়, সে জন্য কাঠের দুই পাশেই তেল লাগিয়ে নিতে পারেন। এছাড়া স্যান্ডপেপার ব্যবহার করেও কাঠের ফুলে ওঠা অংশটি ঘষে নিতে পারেন। এতে করে বাড়তি যে অংশটি দরজা খুলতে বা বন্ধ করতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল, তা সমান হয়ে যাবে। অন্যদিকে আর্দ্রতার কারণে ধাতব ফ্রেমের দরজা বা জানালায় খুব সহজেই মরিচা পড়তে পারে। এক্ষেত্রে মরিচা দূর করার একটি সহজ উপায় হল দরজা নিয়মিত রঙ করা। এর ফলে বর্ষায় সুরক্ষিত ঘর পাবেন নিশ্চিন্তে।  

ফাটল ধরা জায়গা সারিয়ে নিন

বাড়ির ছাদে, দেয়ালে কিংবা বাড়ির কোন পাইপ এর লাইনে যদি ফাটল বা ছিদ্র থেকে থাকে, তবে বর্ষা মৌসুমের আগেই তা ঠিকভাবে মেরামত করতে হবে। কেননা বাড়ির বিভিন্ন অংশ থেকে চুইয়ে পড়া পানি বাড়ির ভেতরের এবং বাহিরের ক্ষতি করার জন্য যথেষ্ট। আর তাই ছাদ লিকেজ বা ছিদ্র থাকা জায়গাগুলো আগে সনাক্ত করে নিয়ে, উক্ত স্থানের পাইপ বদলানো, ভাঙ্গা অংশ ঠিক করা এবং সিমেন্টের আস্তর দিয়ে ভালোভাবে আটকে দেয়া অত্যন্ত জরুরি। এরপর ওয়াটার প্রুফ পেইন্ট ব্যবহার করুন যেন পানি এসে আর ক্ষতি করতে না পারে। এতে করে ঘর থাকবে সুরক্ষিত।

Water Damage Wall
বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির ছাদ এবং দেয়াল

দরজা-জানালার প্যানেল মেরামত

অনেক সময়ই দেখা যায় ঘরের দরজার নিচে ফাঁকা থাকে অথবা জানালার প্যানেল উপচে ঘরে পানি ঢুকে যায়। এক্ষেত্রে বাঁকা, ত্রুটিপূর্ণ প্যানেল বা ভেঙে যাওয়া এই সমস্যার কারণ হতে পারে। আর তাই সময় থাকতেই প্যানেল মেরামত করে জানালা এবং দরজার লক ঠিকমতো কাজ করে কিনা তা দেখতে হবে। প্রয়োজনে নিয়মিত জানালার প্যানেল পরিষ্কার করতে হবে যেন ধুলোবালির কারণে বৃষ্টির পানি অন্যদিক দিয়ে ঘরে ঢুকে না যায়।

বর্ষা মৌসুমে টানা বৃষ্টির কারণে দেয়ালের পাশাপাশি বাড়ির ছাদ এবং মেঝেও ড্যাম্প হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে করে বাড়ির বিভিন্ন অংশে ক্ষয় দেখা দেয়। যেহেতু বিষয়টি খুবই সিরিয়াস, তাই বর্ষা আসার আগেভাগেই বাড়ির ত্রুটিপূর্ণ স্থানগুলোর মেরামত করে নেয়া অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া বৃষ্টি পড়াকালীন সময়ে নিয়মিত বাড়ির ছাদে এবং সানশেডে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় বাড়ির ছাদের ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। বর্ষার সুরক্ষিত ঘর এর জন্য তাই আগে থেকেই হতে হবে সচেতন। 

এছাড়া বৃষ্টিতে ঘরের ক্ষতি হওয়া রোধে আরও যেসব বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে তা হল-

–   বৃষ্টির কারণে ঘরের সব দরজা-জানালা পুরোপুরি বন্ধ না রেখে কিছুটা ফাঁকা রাখতে হবে যেন ঘরে গুমোট ভাব না হয়। আর এর সাথে রান্নাঘর ও বাথরুম দিয়ে যেন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসে সে ব্যবস্থাও করতে হবে।

–   দেয়াল ঘেঁষে রাখা আসবাবপত্রগুলো দেয়াল থেকে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার দূরে রাখতে হবে, যেন দেয়ালের ভেজা ভাবের কারণে আসবাবের ক্ষতি না হয়।

–   বর্ষাকালে কাঠের আসবাব এ পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয় বিধায় এর আশেপাশে পোকা মারার চক, গুঁড়ো পাউডার অথবা ন্যাপথালিন দিয়ে রাখতে হবে। 

বর্ষায় সুরক্ষিত ঘর পেতে এবং বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি ঘরে ঢুকে যেন ঘরের কোন ক্ষতি করতে না পারে, তাই সময় থাকতেই এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। তা নাহলে পুরো বর্ষাকাল জুড়েই হয়তো অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে। 

Write A Comment

Author