Reading Time: 4 minutes

বাইরের যে কেউ যখন ঘুরবার জন্য এশিয়া, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার কথা চিন্তা করে তাদের কারো মাথাতেই কিন্তু খুব সহজে বাংলাদেশের নাম আসে না। বরং ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মত দেশগুলোই সবার গন্তব্যের প্রথমদিকে থাকে। শুধু বিদেশীরাই নন বরং আমাদের দেশের স্বচ্ছল পরিবারের অনেকেই সামান্য ছুটিছাটা পেলেই ছুটে যান বাইরের দেশে “ভ্যাকেশন” কাটানোর উদ্দেশ্যে। অথচ বাংলাদেশের পর্যটন খাত কিন্তু যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। কক্সবাজার, বান্দরবান, সিলেট, খুলনা বা রাজশাহীর মত জায়গায় মজুদ রয়েছে দেশী বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করার সবরকমের উপাদান। চলুন সংক্ষিপ্ত আকারে দেকে নেয়া যাক ঠিক কী কারণে এখনো টুরিস্টদের কাছে এইদেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। কী কী সমস্যা এবং সম্ভাবনা রয়েছে অথবা পর্যটন খাতকে জনপ্রিয় করে তুলতে কী কী পদক্ষেপই বা গ্রহণ করা হয়েছে এ পর্যন্ত।

কারা হতে পারেন দেশের পর্যটন খাতের সম্ভাব্য গ্রাহক

পর্যটন খাত
বাংলাদেশে পর্যটন খাতের সম্ভাবনা অনেক

একটা সময় ভাবা হত পর্যটন খাত বুঝি শুধুই বিদেশী নির্ভর, তবে সময়ের সাথে সাথে এ ধারণায় এসেছে পরিবর্তন। বাংলাদেশের পর্যটনে অভ্যন্তরীণ যে চাহিদা তাই ঠিক মত মিটিয়ে উঠা যাচ্ছে না। তবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন, একটি শক্তিশালী অবকাঠামো নির্মাণ করা গেলে শুধু দেশের মানুষই নয় বরং দেশের বাইরে থেকেও অনেকে আসতে পারেন আমাদের দেশে ঘুরতে। বিশেষ করে যারা মিডিয়াম বাজেটে ঘুরতে পছন্দ করেন। থাইল্যান্ড হতে পারে এ বিষয়ে একটি চমৎকার উদাহরণ। কিছুদিন আগেও টুরিস্ট স্পট হিসাবে অতটা জনপ্রিয় ছিল না এই দেশটি। কিন্তু পরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ এবং পর্যটকদের নানা সুযোগ সুবিধা মাথায় রেখে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করার ফলে কয়েক দশকের মধ্যেই থাইল্যান্ড হয়ে উঠেছে পর্যটকদের জন্য একটি কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। ব্যাকপাকার থেকে শুরু করে হামিনুনার, সবার জন্য থাইল্যান্ড এক প্রিয় জায়গার নাম।

বাংলাদেশের পর্যটন খাত

বাংলাদেশ হল সবুজ আর জলের রাজ্য। জল আর জঙ্গলের কাব্য এখানে লেখা হয় প্রতিনিয়ত। জাতিগতভাবেই আমরা বেশ আরামপ্রিয়। তাই হয় আমাদের পর্যটন খাত পুরোটাই বেশ ধীরস্থির। আর অনুন্নত পর্যটন শিল্প এবং অবকাঠামোর পুরোটাই এর সাথে মিলে যায়, শান্ত, স্নিগ্ধ, ধীরস্থির। তাই কেউ যদি বাংলাদেশে  কেউ একটি “ঝটিকা সফর” দিতে চাইলে তাকে হতাশ হতে হবে। ধীরে সুস্থে, রিলাক্স করে ট্রিপ দিতে চাইলে আমাদের দেশের মত দেশ আর খুব কমই আছে। আর এর মূল কারণ খুব সম্ভবত এদেশের মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবেই অতিথিপরায়ণ। আর অন্যান্য দেশের মতই বাংলাদেশের পর্যটন খাতে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে এদেশের মানুষের অতিথিপরায়ণ মানুষিকতা। হোক তা ঢাকা কিংবা দেশের উত্তর বা দক্ষিণপ্রান্ত, সব জায়গায় সাধারণ মানুষই সাদরে বরণ করে নেয় তাদের অতিথিকে।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এবং সম্ভাবনাময় বিভিন্ন এলাকা

পর্যটন খাত
ঘুরাঘুরির জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিভিন্ন এলাকা

সিলেট, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী না ময়মংসিংহ, ঘোরাঘুরির কথা মাথায় নিলে প্রতিটি এলাকাই প্রচুর সম্ভাবনাময়। বৃহত্তর সিলেটে আছে সীমান্তবর্তী মেঘালয়, চা বাগান, ছোট বড় অসংখ্য টিলা, বিখ্যাত সব হাওড়। বৃহত্তর চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজারে দেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ থেকে শুরু করে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত। খুলনার সুন্দরবন তো  পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। বরিশালের ব্যাক ওয়াটারসহ ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকারের মত অন্যান্য জায়গাও সম্প্রতি আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাগেরহাটের ৬০ গম্বুজ মসজিদ, রাজশাহী পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার, কুষ্টিয়ার লালন আখড়া কিংবা বগুড়ার মহাস্থানগড়, স্বীকৃত টুরিস্ট স্পটের নেই কোন অভাব। দেশের এমনই ১০টি জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট সম্পর্কে জানা যাবে এই লেখাটিতে।
আর এর সাথে বাংলাদেশের পর্যটন খাতের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলে এই ব-দ্বীপের অসংখ্য নদী। এই ছোট্ট দেশটাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে রেখেছে ৭০০ টির মত ছোট বড় নদী। নদী থেকেই সম্ভব এদেশের রূপের সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্য উপভোগ করা। তাই নদীপথকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠতে পারে পর্যটনের বিশাল রমরমা বাজার।

পর্যটন সংক্রান্ত কিছু পরিসংখ্যান

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কাউন্সিল বাংলাদেশের চালানো এক সমীক্ষা মতে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন সাড়ে ৪ লক্ষেরও বেশি মানুষ। তারা আশা করছেন এই সংখ্যা বেড়ে সাড়ে ৬লক্ষে পৌঁছাবে ২০২৫ সাল নাগাদ। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও নানা দেশ থেকে বিদেশীরা আসছে এই দেশে, তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছে সমগ্র পৃথিবীর সাথে।


ঘুরাঘুরির জন্য খ্যাত ইউটিউব চ্যানেল JASON BILLAM TRAVEL -এর জেসন ঘুরে গিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে

বর্তমানে নানা অব্যবস্থাপনার মধ্যেও পর্যটন শিল্পের বাজার কোটি টাকার। পর্যটন বোর্ডের আশা, নানান ব্যবস্থাপনা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে একে বাড়িয়ে হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাবার। পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে তাতে উপকৃত হবে সাধারণ মানুষ কারণ পর্যটন খাত সৃষ্টি করবে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান।

মূল সমস্যাগুলি

বাংলাদেশের ট্যুরিজম সেক্টরকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। কিছুদিন আগ পর্যন্তও রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মৌলবাদের ভয় দেখিয়ে দূরে রাখা হত পর্যটকদের। কিন্তু এ ভয় থেকে দেশ এখন অনেকটাই মুক্ত।
পর্যটন খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল অবকাঠামোগত এবং অব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত। প্রথমেই আসে যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা। অনেক যায়গাতেই এখনো নেই সহজে প্রবেশের উপায়। এরপর থাকে বিভিন্ন টুরিস্ট স্পটে সিন্ডিকেটের বিষয়টি। সিন্ডিকেটের কারণে খরচ যেমন বেড়ে গিয়েছে বহুগুণে সাথে সাথে বেড়েছে নানারকম নিরাপত্তা ঝুঁকি। এছাড়া আবাসনের বিষয়টি তো থাকেই। অল্প কিছু হোটেল ছাড়া ঘুরতে গিয়ে থাকার জন্য বৈচিত্রময় জায়গার অভাব  প্রকট। যে অল্প কয়েকটি বাংলো বা রিসোর্ট গড়ে উঠেছে সেগুলোর খরচও আকাশছোঁয়া। 

ভবিষ্যতের ভাবনা এবং সম্ভাবনা

 

কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া এই “বিউটিফুল বাংলাদেশ” ভিডিও ক্যাম্পেইনটার কথা মনে আছে? এত সুন্দর করে দেশের পর্যটন সম্ভাবনাকে খুব কম জায়গাতেই তুলে ধরার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরে আসলে সেই অর্থে দেশকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা চোখে পড়েনি। অথচ The Food Ranger -এর মত  বিখ্যাত বিভিন্ন ভ্লগারদের আমরা বাংলাদেশে দেখেছি।

 

খাওয়া দাওয়া নিয়ে বিখ্যাত ইউটিউব চ্যানেল The Food Ranger এর ট্রেভর জেমসও ঘুরে গিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে।

তাই পর্যটন খাত বাংলাদেশে বরাবরই সম্ভাবনাময়। এত ছোট দেশে এত এত বৈচিত্র্য রয়েছে যা আসলেই বিরল। তাই সঠিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন পারে বাংলাদেশকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটক গন্তব্য হিসাবে বিশ্বের কাছে পরিচিত করতে।

Write A Comment