Reading Time: 3 minutes

যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সার্বিক উন্নতির ক্ষেত্রে মহাসড়কের গুরুত্ব অনেক। বিভিন্ন মহাসড়ককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে শহর, নগর, উন্নয়ন প্রকল্প। দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সচল রাখতে অর্থাৎ বাণিজ্যিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে সংযুক্তি বাড়াতে এ মহাসড়কগুলো অনেকটা শিরা- উপশিরার মতো কাজ করে।বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি মহাসড়কও এর ব্যতিক্রম নয়। আজকের ব্লগের বিষয় তাই বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি মহাসড়ক ও অর্থনীতিতে এর প্রভাব। 

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (এন-১) 

National Highway 1
রুট: ঢাকা (N8) – কাঁচপুর (N2) – মদনপুর (N105) – ময়নামতি (N102) – কুমিল্লা (R140) – ফেনী (N104) – চট্টগ্রাম (N106) – মনসারটেক (N107) – সাতকানিয়া (N108) – রামু (N109) – কক্সবাজার (N110) – টেকনাফ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বা এন-১ বাংলাদেশের ব্যস্ততম মহাসড়কগুলোর মধ্যে একটি। ৪৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ মহাসড়কটি দেশের দ্বিতীয় দীর্ঘ মহাসড়কও বটে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রবিন্দু ঢাকার সাথে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে এর ভূমিকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আমদানিকৃত পণ্য পৌঁছে দিতে ব্যবহৃত হয় এ মহাসড়কটি। এছাড়া রপ্তানি পণ্য বিশেষত তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানিতে পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে দেয়ার জন্য এ মহাসড়ক বহুল ব্যবহৃত। 

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি সম্প্রতি চার লেনের এক্সপ্রেসে রুপান্তর করা হয়েছে, যার ফলে যাতায়াত হয়েছে ভীষণ দ্রুত। এ হাইওয়েটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট কক্সবাজারের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সাথেও সংযুক্তি বাড়িয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা ও ফেনীর সাথেও যাতায়াত ব্যবস্থা এর ফলে উন্নত হয়েছে। এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক রুট ৪১ (এএইচ ৪১) এর সাথে দেশের দুটো গুরুত্বপূর্ণ বন্দর চট্টগ্রাম ও মংলার সংযুক্তির ক্ষেত্রেও এন-১ রুটটি গুরুত্বপূর্ণ। এ মহাসড়কটি এন-২ এর সাথে কাঁচপুরে সংযুক্ত হয়েছে। 

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক (এন-২) 

National Highway 2
রুট: কাঁচপুর (N1) – ভুলতা (N105) – সরাইল (N102) – জগদীশপুর (N204) – শায়েস্তাগঞ্জ (N204) – মীরপুর (N207) – শেরপুর (N207) – সিলেট (N205, *N208) – জৈন্তাপুর – জাফলং

ন্যাশনাল হাইওয়ে ২ নামে খ্যাত এ মহাসড়কটি ঢাকা ও সিলেটকে সংযুক্ত করেছে এবং পরবর্তীতে সিলেটকেও সীমান্তবর্তী শহর তামাবিলের সাথে সংযুক্ত করেছে। রাজধানীর সাথে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় শহরের যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করেছে বলে এটিকে বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি মহাসড়ক গুলোর মাঝে একটি বিবেচনা করা হয়। ঢাকা-সিলেটের বাণিজ্যিক করিডোর হিসেবেও এর ভূমিকা অনেক। সিলেটের উল্লেখযোগ্য শিল্প যেমন চা শিল্প, মৎস্য শিল্প, সিমেন্ট শিল্প ইত্যাদির উন্নয়নেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গুরুত্ব অপরিসীম। 

এন-২ হাইওয়ের যে অংশটি সিলেট থেকে তামাবিল গিয়েছে সেটিকে বলা হয় সিলেট-তামাবিল হাইওয়ে, যা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্বশেষ শহর। তামাবিল পার হলেই ভারতের মেঘালয়ের শুরু। এ হাইওয়েটি বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী রেইনফরেস্ট ও পাহাড় বেষ্টিত ট্যুরিস্ট স্পট জাফলংয়ের সাথে যাতায়াতকে সহজ করেছে। এশিয়ান হাইওয়ে নেটওইয়ার্কএর এশিয়ান হাইওয়ে-১ (এএইচ ১) এবং এশিয়ান হাইওয়ে- ২ (এএইচ ২) এর অংশ এ মহাসড়কটি।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক (এন-৩) 

National Highway 3
রুট: ঢাকা – প্রগতি স্মরণি (N301) – টঙ্গী (N302) – জয়দেবপুর (N105, N4) – ময়মনসিংহ

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক (এন-৩) রাজধানীর সাথে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহের যাতায়াত সহজ করেছে। যদিও এন থ্রি বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি মহাসড়ক এর মধ্যে সবচেয়ে কম দৈর্ঘ্যের তবুও এর গুরুত্ব কিন্তু কম নয়। টংগী, গাজীপুরের রেডিমেড গার্মেন্টস শিল্পের উন্নয়নে ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে নির্মাণ উপকারী ভূমিকা রেখেছে। তবে এন থ্রি রুটে ট্র্যাফিক জ্যামও বেশ পরিচিত দৃশ্য। 

এ হাইওয়ের বেশিরভাগ অংশ ঢাকার অন্তর্ভুক্ত, যা পূর্বাচল, বসুন্ধরা, নিকুঞ্জ এবং উত্তরা এলাকা অতিক্রম করেছে। দেশের সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এ হাইওয়েতে অবস্থিত। এখানে বেশ কিছু রিসোর্ট, দুটো ন্যাচার পার্ক- ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক এবং বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেই পাবেন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোতে এক বড় সহায়ক এন থ্রি হাইওয়ে রুট। 

জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-জামালপুর হাইওয়ে (এন-৪) 

National Highway 4
রুট: জয়দেবপুর (N3, R310) – কাড্ডা (N105) – টাঙ্গাইল (N404) – এলেঙ্গা (N405) – মধুপুর (N401) – জামালপুর

ব্লগের পূর্ববর্তী অংশে আমরা ন্যাশনাল হাইওয়ে থ্রি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। ঢাকা বা টঙ্গী থেকে এন থ্রি ধরে উত্তর দিকে এগিয়ে গাজীপুরে চৌরাস্তায় এসে ডানে মোড় নিলেই পাবেন এন-৪ রুট। গাজীপুরের সাথে উত্তর মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোর যোগাযোগ বাড়াতে হাইওয়ে দারুণ কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। এন-৪ রুট ধরে এগোলে প্রথম যে জেলা পাবেন সেটি হলো টাঙ্গাইল, যেখানকার মিষ্টি দেশ বিখ্যাত। এলেঙ্গায় এন ৪ রুটটি এন ফোর জিরো ফাইভের সাথে সংযুক্ত হয়েছে যা দেশের দীর্ঘতম সেতু যমুনা ব্রিজের উপর দিয়ে অতিক্রান্ত হয়েছে। ব্রিজ পার হলেই উত্তরাঞ্চলের ঐতিহাসিক শহর সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও বগুড়া। এর শেষপ্রান্তে ময়মনসিংহ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ শহর জামালপুর। 

বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি মহাসড়ক এর সংক্ষিপ্ত বিবরণী বিষয়ক এ ব্লগটি দুই পর্বের প্রথম পর্ব। পরবর্তী পর্বে আরো চারটি হাইওয়ে সম্পর্কে জানানো হবে। সে পর্যন্ত বিপ্রপার্টি ব্লগের সাথেই থাকুন। আর কমেন্টস বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত জানাতে একদম ভুলবেন না!

Write A Comment