Reading Time: 7 minutes

বাঙালি নারীর কাছে শাড়ি শুধু পোষাক নয়। একেকটি শাড়ি যেন তাদের কাছে একেকটি গল্প। কোনোটি হয়তো সদ্য কৈশোরে পা রাখা মেয়ের আবদার পূরণে মায়ের কিনে দেয়া! আবার কোনো শাড়িতে হয়তো জড়িয়ে আছে প্রেমিকের প্রথম উপহারের আবেগ। দেশীয় সংস্কৃতিরও এক অনন্য অনুষঙ্গ শাড়ি। বারো হাত দীর্ঘ এই বস্ত্রখন্ড- বাহারি রঙে, রকমারি নকশায় আর সুচারু বুননে বাঙালির পোশাক ভাবনাকে দিয়েছে আলাদা পরিচিতি। আমাদের ঐতিহ্যে-আবেগে জড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের নানান রকম শাড়ি নিয়ে তাই আমাদের আজকের ব্লগ।  

শাড়ির ইতিহাস 

ব্যুৎপত্তি 

“শাড়ি” শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ “সতীকা” থেকে যার অর্থ “এক ফালি কাপড়”। ঐতিহাসিক মতে প্রায় ৫৫০০ বছরের আগে আর্যগণ শাড়ি পরার প্রচলন শুরু করে। অনার্য সভ্যতায় অনেক আগে থেকেই শাটী’ শব্দটি প্রচলন পরিলক্ষিত হয় বিধায় কেউ কেউ মনে করে শাঢীই শাড়ির মূল শব্দ। ঐতিহাসিক মতে প্রায় ৫৫০০ বছরের আগে আর্যগণ শাড়ি পরার প্রচলন শুরু করে। তবে সিন্ধু ও মেহের গড়ের মতো অনার্য সভ্যতার ধবংসাবশেষ থেকে প্রাপ্ত চিত্রে নারীদের পরনে শাড়ি মত কাপড়ের ব্যবহার দেখা যায়।

বিবর্তন 

কখন কীভাবে শাড়ি উদ্ভূত হয়েছিল সে ইতিহাস খুব একটা স্পষ্ট নয়। ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রাচীন ভারতের পোশাক সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে, তখন মেয়েরা আংটি, দুল, হার এসবের সঙ্গে পায়ের গোছা পর্যন্ত শাড়ি পরিধান করত, উপরে জড়ানো থাকত আধনা (আধখানা)। পাহাড়পুরের পাল আমলের কিছু ভাস্কর্য দেখেই তা অনুমান করা যায়। এই তথ্য অনুযায়ী বলা যায় যে, অষ্টম শতাব্দীতে শাড়ি ছিল প্রচলিত পোশাক। ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায়ের মতে, দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে সেলাই করা কাপড় পরার রেওয়াজ আদিম কালে ছিল না। এই সেলাইবিহিন অখন্ড বস্ত্র পুরুষের ক্ষেত্রে ‘ধুতি’ এবং মেয়েদের বেলায় ‘শাড়ি’ নামে অভিহিত হয়।  

সেলাই করার জ্ঞান লাভ হওয়ার পর এই অখন্ড বস্ত্রই নানা এলাকায় বিচিত্ররূপে ও বিভিন্ন নামে রূপান্তরিত ও আদৃত হয়, যেমন ঘাগরা, সালোয়ার, কুর্তা, কামিজ প্রভৃতি। কিন্তু কয়েকটি এলাকায় তা সেলাই ছাড়াই টিকে যায়। এসব এলাকা হচ্ছে আজকের বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, আসাম, কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র প্রদেশ, গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, বিহার, পাঞ্জাব এবং পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ ও পাঞ্জাব। 

শাড়ি পরার রকমফের 

শুধুই শাড়ি গায়ে জড়িয়ে রাখার প্রথা আজ আর নেই, এর সঙ্গে অনিবার্য অনুষঙ্গ হিসেবে এসেছে ব্লাউজ এবং পেটিকোট। আদিকালে বর্তমান যুগের মতো শাড়ি পরার কায়দা ছিল না। কালিদাসের শকুন্তলার শাড়ি আর ভারতচন্দ্রের বিদ্যাসুন্দর কাব্যের নায়িকা বিদ্যার শাড়ি এক নয়। এ ভিন্নতা শুধু শাড়ির বৈচিত্র্যে নয়, শাড়ি পরার ধরনেও। এক কালে শাড়ি পরার দুটি ধরন ছিল, আটপৌরে ও পোশাকি।পরবর্তীকালে এ ধরনও পরিবর্তিত হয়েছে। পরার ধরনে এসেছে ‘কুচি পদ্ধতি’। এ কুচি পদ্ধতি বাঙালি সমাজে শুরুতে সমালোচিত হয়েছিল। তবে বাঙালি সমাজে শিক্ষিতা ও আধুনিকা মেয়েরাই এ পদ্ধতি আগে গ্রহণ করে। ঠাকুরবাড়ির বধূ জ্ঞানদানন্দিনী পার্সি কায়দায় কুঁচি দিয়ে শাড়ি পরার স্টাইল আরম্ভ করেন, যা এখন সকল নারীদের শাড়ির পরার সচারাচর পদ্ধতি।শাড়ির সাথে ব্লাউজের চল শুরু করতেও ঠাকুরবাড়ির ফ্যাশনেরই বেশি অবদান। তবে ‘আটপৌরে’ বা ‘এক প্যাঁচ’ শাড়ি পরার প্রথা আজও অবলুপ্ত নয়। গ্রামাঞ্চলে প্রবীণ মহিলারা এর চল অব্যাহত রেখেছেন। তরুণীরাও পহেলা বৈশাখ, দুর্গা পূজা বা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে এ ভাবে শাড়ি পরে থাকেন। 

শাড়ির ইতিহাসবিদ এবং স্বীকৃত বস্ত্রশিল্প পণ্ডিত রতা কাপুর চিশতি তার ‘শাড়ি’সঃ ট্রেডিশন অ্যান্ড বেয়ন্ড’ বইতে শাড়ি পরিধানের ১০৮টি পদ্ধতি নথিভুক্ত করেছেন। এতে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, গোয়া, কর্ণাটক, কেরলা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, এবং উত্তরপ্রদেশ মোট ১৪টি রাজ্যের শাড়ি পরিধানের পদ্ধতি রয়েছে।  

বাংলাদেশের নানান রকম শাড়ি  

জামদানি শাড়ি 

জামদানি
জামদানির আবেদন এখনো অমলিন

বাংলাদেশের নানান রকম শাড়ি এর মধ্যে সবচেয়ে স্বতন্ত্র ঘরানার শাড়ি হলো জামদানি৷ জামদানি হল কার্পাস তুলা দিয়ে প্রস্তুত একধরনের পরিধেয় বস্ত্র যার বয়ন পদ্ধতি অনন্য। জামদানির বুননে তৃতীয় একটি সুতা দিয়ে নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। এর বয়নে সাধারণত ৭০-৮০ কাউন্টের সূতা ব্যবহৃত হয়। মোঘল আমলে জামদানি উত্‍কর্ষতার চরম শিখরে পৌঁছে যায়৷ ঐ সময়টিতে পুরুষ-মহিলা উভয়ের পোশাকেই জামদানির ডিজাইন পরিলক্ষিত হয়৷ সে সময়ের ইউরোপিয়ান চিত্রকলার দরবার ভার্সিলি এবং লন্ডনের মহিলাদের পোশাকে জামদানি গজ কাপড়ের ব্যবহার দেখা যায়৷ পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতেও রাজ দরবারে জামদানি ব্যবহৃত হত৷ জামদানি তৈরিতে কারিগরী দক্ষতা ও শৈল্পিক দক্ষতা সমান জরুরি।  

জামদানির আবেদন এখনো অমলিন৷ এর পেছনে জামদানির ডিজাইনে জ্যামিতিক প্যাটার্নের ধারাবাহিকতা ও বুননের বিষয়টিই ঘুরে-ফিরে প্রাধান্য পায়৷ জামদানি শিল্প আগের সেই জৌলুস হারালেও ঢাকার রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও এবং সিদ্ধিরগঞ্জের প্রায় ১৫০টি গ্রামে এ শিল্প টিকে আছে৷ বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে জামদানির প্রাণ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারতের কিছু প্রদেশে জামদানি তৈরি করা হলেও বৃহত্তর ঢাকাকেই জামদানির আদি জন্মস্থান বলে গণ্য করা হয়। জামদানি বয়নের অতুলনীয় পদ্ধতি ইউনেস্কো কর্তৃক একটি অনন্যসাধারণ নির্বস্তুক সংস্কৃতিক ঐতিহ্য (ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেইজ) হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।  

জামদানির পাড় ও আঁচলের নানা নকশার মধ্যে কলকা, আংটি, শামুক, ময়ূর পেখম, তাজেল, কাজল লতা, সন্দেশ, পানকী, পানপাতা প্রভৃতি প্রসিদ্ধ। আর জমিনের নকশা বুটা, জাল ও তেছরি এ তিন ভাগে বিভক্ত৷ জমিনের নকশার মধ্যে হাজার তারা, মটর দানা, নয়ন সুখ, ময়ূর জোড়া, কদম বাহার, জীবন তারা, সঙ্খমতি, কলসী ফুল, গজ মতি প্রভৃতিও উল্লেখযোগ্য৷ জামদানি মূলত দু’ধরনের হয়। একটি হলো হাফসিল্ক জামদানি আর আরেকটি সুতি জামদানি। 

মসলিন শাড়ি 

মসলিন
বর্তমানে বিভিন্ন দেশীয় ফ্যাশন হাউজ, উদ্যোক্তা ও ফ্যাশন ডিজাইনাররা মসলিন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করবার চেষ্টা করছেন

ফুটি কার্পাস নামক তুলা থেকে প্রস্তুত অতি চিকন সুতা দিয়ে মসলিন তৈরি করা হত। চড়কা দিয়ে কাটা, হাতে বোনা মসলিনের জন্য সর্বনিম্ন ৩০০ কাউন্টের সুতা ব্যবহার করা হত যার ফলে মসলিন হত কাচের মত স্বচ্ছ। এই মসলিন রাজকীয় পোশাক নির্মাণে ব্যবহার করা হত। এই সুতোর তৈরি কাপড় এতোই মিহি ছিল যে একটি আংটির ভিতরেও প্রবেশ করানো যেত। মসলিন নামটি ইরাকের বর্তমান মোসুল শহর থেকে নেওয়া হয়েছিল। এই সুতো ১৭তম শতাব্দীতে মধ্য প্রাচ্য থেকে ইউরোপে রপ্তানি করা হতো।

চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলায় আগত মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা ‘কিতাবুর রেহালা’ বইতে সোনারগাঁওয়ে তৈরি মসলিনের বিশেষ প্রশংসা করেন। পঞ্চদশ শতকে এ অঞ্চলে আসা চীনা লেখকরাও এখানকার মসলিনের ভুয়সী প্রশংসা করেন। মোগল সম্রাট আকবরের সভাসদ আবুল ফজলও সোনারগাঁওয়ে প্রস্তুতকৃত এই সুক্ষ্ম বস্ত্রের প্রশংসা করতে ভুলেন নি। সপ্তদশ শতকের প্রথম দিকে ঢাকাকে বাংলার রাজধানী ঘোষণার পর হতেই ইউরোপিয় ব্যবসায়ীরা বাংলায় আসা শুরু করেন। এসকল বণিক কোম্পানি গুলোর তৎকালীন দলিল-দস্তাবেজ এবং ঐ সমকালীন ইউরোপীয় লেখকদের বিবরণে মসলিন সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে ইংরেজরা ক্ষমতাকে তাদের হাতে কুক্ষিগত করে ফেললে আস্তে আস্তে মসলিন বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করে। 

বর্তমানে বিভিন্ন দেশীয় ফ্যাশন হাউজ, উদ্যোক্তা ও ফ্যাশন ডিজাইনাররা বাংলাদেশের নানান রকম শাড়ি এর তালিকায় উল্লেখযোগ্য এ মসলিন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করবার চেষ্টা করছেন। 

বেনারসি ও কাতান শাড়ি 

কাতান
বর্তমানে কাতানের চাহিদা খানিকটা পড়তির দিকে হলেও নিজেদের সংগ্রহে বাহারী কাতান রাখতে পছন্দ করেন অনেকেই

বাংলাদেশের নানান রকম শাড়ি এর মধ্যে বেনারসি ও কাতান স্বমহিমায় উজ্জ্বল৷ অত্যন্ত জনপ্রিয় এ দুরকম শাড়ি বোনা হয় রেশমি সুতো দিয়ে। এক রং ব্যবহার করে পুরো শাড়িতে বিভিন্ন নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। সোনালী, রুপালি সুতো এই নকশা ফুটিয়ে তোলার জন্য ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য শাড়ির তুলনায় এ শাড়িগুলো ওজনে ভারী হয়, যা আভিজাত্য ও গাম্ভীর্য তুলে ধরে। 

লাল বেনারসি না পরলে বাঙালি মেয়ের বিয়ের দিনের সাজ যেন সম্পূর্ণই হয় না! আর বিভিন্ন উত্‍সব-পার্বণেও অনেকদিন পর্যন্ত নারীদের প্রথম পছন্দই ছিল কাতান৷ বর্তমানে কাতানের চাহিদা খানিকটা পড়তির দিকে হলেও নিজেদের সংগ্রহে বাহারী কাতান রাখতে পছন্দ করেন অনেকেই। ইদানিং টাঙ্গাইলের তাঁতিরাও তৈরি করছেন বেনারসি, ফুল সিল্ক টাঙ্গাইল কাতান, বালুচুরি কাতান ইত্যাদি৷ তবে বেনারসি ও কাতান শাড়ির মূল ক্ষেত্রটি হলো মিরপুর ১০ নম্বরের বেনারসি পল্লী।

সিল্কের শাড়ি 

সিল্ক
রাজশাহীর সিল্ক দিয়ে তৈরি শাড়ি খুবই জনপ্রিয় এবং বিদেশেও এর ব্যাপক চাহিদা

বাংলাদেশের নানান রকম শাড়ি এর তালিকায় ‘সিল্ক’ মানেই ‘রাজশাহী সিল্ক’।রাজশাহীর সিল্ক অনেক সুক্ষ এবং নরম মোলায়েম। এ শাড়ির সুতার আঁশের উপাদান  পিউপা, যা আসে তুঁত রেশম। সাধারনত তিন ধরনের সিল্ক হয়: তুঁত সিল্ক, ইরি(অথবা ইন্ডি) সিল্ক এবং তসর সিল্। ভারী কাজের তুঁত সিল্ক, তসর সিল্ক সাধারণত উৎসবে-পার্বণে পরা হয়। তবে নিত্যদিনের ব্যবহার্য হিসেবে কেউ কেউ হালকা কাজের তুঁত সিল্ক ও ইরি সিল্ক পরেন। 

রাজশাহীর সিল্ক দিয়ে তৈরি শাড়ি খুবই জনপ্রিয় এবং বিদেশেও এর ব্যাপক চাহিদা।  রাজশাহী জেলায় রেশম শিল্পের উন্নয়নে একটি সিল্ক কারখানা এবং একটি সিল্ক গবেষণা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হয়েছে। এ অঞ্চলের রেশম চাষ সমগ্র বাংলাদেশে সিল্কের যোগান দেয়। প্রায় ১০০,০০ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই খাতের নিযুক্ত রয়েছে। 

সুতি শাড়ি 

সুতি শাড়ি
আবহমান কাল ধরেই বাঙালি নারী সুতি শাড়িতে অদ্বিতীয়া

আবহমান কাল ধরেই বাঙালি নারী সুতি শাড়িতে অদ্বিতীয়া৷ কর্মস্থলে কিংবা ঘরে, উৎসবে কিংবা ভ্রমণে সর্বত্র বাঙালি নারী সুতি শাড়িতে স্বচ্ছন্দ। বাংলাদেশে তাঁতে বোনা সুতি শাড়ি উত্‍পাদিত হয় পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলায়৷ এছাড়া ঢাকা এবং কুমিলতেও স্বল্প পরিমাণ সুতি কাপড় তৈরি হয়৷ তবে সুতি শাড়ির কথা উঠলেই টাঙ্গাইলের শাড়ির কথাই বেশি আসে৷ টাঙ্গাইলের পাথরাইল, বিষ্ণুপুর, দেলদুয়ার, বাজিতপুর প্রভৃতি জায়গা জুড়ে রয়েছে বিরাট তাঁত অঞ্চল৷ 

সুতি কাপড় তৈরির জন্য রয়েছে বিভিন্ন রকমের তাঁত, যার মধ্যে পাওয়ার লুম, পিট লুক, জামদানী, চিত্তরঞ্জন ইত্যাদি তাঁত উল্লেখযোগ্য৷ সীসা দিয়ে ঝোলানো থাকে সারি সারি সুতা, সেসব সাজিয়ে পা দিয়ে চালানো তাঁতে ডিজাইন অনুসারে সুতা উঠানামা করানো হয়৷ এক প্রস্থ সুতা থাকে উপরের দিকে আরেক প্রস্থ নীচের দিকে৷ এ দুই সারি সুতার মাঝখানে দিয়ে মাকু চালিয়ে, বিভিন্ন রঙের সুতা দিয়ে এভাবেই সুতি শাড়ি তৈরি হয়৷ ডিজাইন ভেদে আড়াই হাত প্রস্থ আর বারো হাত দৈর্ঘ্যের একটি শাড়ি তৈরি করতে সময় লাগে ১ থেকে ১০ দিন৷ সুতি শাড়ির উপর ইদানিং বাটিক, জল ছাপ, হালকা অ্যামব্রয়ডারির পাশাপাশি হ্যান্ডপেইন্ট, অ্যাপ্লিক, সিকোয়েন্স প্রভৃতি ডিজাইনও বেশ জনপ্রিয়৷  

মণিপুরী শাড়ি 

মণিপুরী শাড়ি
বাংলাদেশের সিলেট-শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার অঞ্চলেই মণিপুরী শাড়ি বোনা হয়

মণিপুরী নারীদের সুনাম আছে তাঁতে তৈরি কাপড়ের জন্য। কাপড় বুননের জন্য তাদের নিজস্ব তাঁত রয়েছে আর সেখানেই বোনা হয় মণিপুরি শাড়ি। বাংলাদেশের সিলেট-শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার অঞ্চলেই মণিপুরী শাড়ি বোনা হয়। তবে এর কদর এখন সিলেটের চেয়েও ঢাকা কিংবা অন্যান্য অঞ্চলে বেশি। সিলেটে বেড়াতে গেলেও পর্যটকরা এসব শাড়ির দোকানে ঢুঁ মারেন। 

আরামদায়ক ও হালকা নকশার এ শাড়ি মূলত এর স্বতন্ত্রতার জন্যই জনপ্রিয়। তবে চাহিদা অনুপাতে যোগান নেই এ শাড়ির। কারণ মণিপুরী তাঁতশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ঘাটতি রয়েছে।  

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায় বিভিন্ন রকম শাড়ি। একদিকে উত্তরাঞ্চলের তাঁতিরা দিনরাত বুনে চলেছেন সুতি শাড়ি। আবার পূর্বাঞ্চলের মণিপুরী শাড়ির চাহিদা রয়েছে দেশে-বিদেশে। এছাড়া পশ্চিমের বিভাগীয় অঞ্চল রাজশাহীতে সমৃদ্ধ হয়েছে সিল্ক শিল্প। সবশেষে রাজধানী ও এর আশেপাশের জেলাগুলোর দিকে তাকালেও দেখা যায় এখানকার জামদানি-মসলিন, বেনারসি-কাতান আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের নানান রকম শাড়ি এভাবেই নিজস্ব বয়নে-নকশায়-বুননে বিশ্বের বুকে তুলে ধরছে নিজস্ব ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্রতা।

Write A Comment