Reading Time: 4 minutes

রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে বনাঞ্চলে ঘুরে বেড়ানোর মতো দুঃসাহসিক কাজ ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সবসময়ই বিশেষ। এমনকি আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চার পাগল নাও হয়ে থাকেন, তবুও দারুণ এই জায়গাগুলো নিঃসন্দেহে আপনাকে মুগ্ধ করবে। বাংলাদেশে এরকম অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আপনাকে ঠিক এরকমই অনুভূতি দিবে। দক্ষিণ-পশ্চিমে সুন্দরবনের ঘন জঙ্গল থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্বের রাতারগুলের অপরূপ সোয়াম্প ফরেস্ট-সহ বাংলাদেশের বিচিত্র বন সমূহ রোমাঞ্চকর গল্প তৈরির জন্য যেন দারুণ এক উদাহরণ। আর তাই প্রকৃতি প্রেমী মানুষেরা যখনই সময় এবং সুযোগ পান তখনই তারা যেন ছুটে যান অসাধারণ সৌন্দর্যে ভরপুর এইসব জায়গাগুলোতে।  আর তাই আমাদের আজকের আর্টিকেলে ভ্রমণের জন্য বেশ বিখ্যাত বাংলাদেশের ৪টি বিচিত্র বন সম্পর্কে আমরা তুলে ধরেছি, যা প্রত্যেক ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অন্যতম অ্যাডভেঞ্চারাস জায়গা হিসেবে পরিচিত। 

হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা 

বাংলাদেশের রেমা-কালেঙ্গা বন
বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে বাংলাদেশের রেমা-কালেঙ্গা বন বেশ সুপরিচিত

ঢাকা থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে হবিগঞ্জে অবস্থিত বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রাকৃতিক পাহাড়ি বন রেমা- কালেঙ্গা।  সুন্দরবনের পর এই বনভূমিটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জীব ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বন হিসেবে পরিচিত। ৪,৬৮৩ একর জায়গা বিস্তৃত এই বনাঞ্চলের প্রতিটি জায়গাই অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। তবে আপনি যদি এই বনের সৌন্দর্য পরিপূর্ণ রূপে উপভোগ করতে চান, তবে বনটি ঘুরে দেখার জন্য আপনাকে খুব সকালে বেরিয়ে পড়তে হবে। ট্রেকিং করার জন্য এই বনে ৩টি মানবসৃষ্ট পথ রয়েছে। সবচেয়ে দীর্ঘ পথটি দিয়ে ট্রেকিং সম্পন্ন করতে ৩ ঘণ্টা সময় লেগে যাবে। তবে আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এই পথের বাইরেও ট্রেকিং করতে যেতে পারেন। অন্যদিকে আপনি যদি সাইক্লিং করে থাকেন, তবে তো এই বনের ভেতর দিয়ে ট্রেকিং করা আপনার জন্য নিঃসন্দেহে দারুণ এক অভিজ্ঞতা হবে।   

বাংলাদেশের ৪টি বিচিত্র বন এর মধ্যে অপরূপ এই বনের ভেতর দিয়ে ট্রেকিং করার সময় দেখা মিলবে শতবর্ষী বিভিন্ন গাছের, আর সেই সাথে নাম না জানা অনেক পোকামাকড় এবং পাখির কিচিরমিচির শোনার দারুণ সুযোগও হবে। পাতার মর্মর শব্দে আপনার মনে হবে যেন আপনি ভিন্ন এক জগতে পৌঁছে গেছেন। আর এসব কিছুই রেমা- কালেঙ্গাকে বাংলাদেশের অন্যতম মনোমুগ্ধকর বন হিসেবে গড়ে তুলেছে, যেখানে একবারের জন্য হলেও আপনার ঘুরতে যাওয়া উচিত। আর আপনি যদি বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্যাম্পিং স্পটে অর্থাৎ দারুণ এই বনে ক্যাম্পিং করার প্ল্যান করে থাকেন, তবে আপনাকে বেশ কিছু সতর্কতাও অবলম্বন করতে হবে।  এ জন্য আপনাকে খাবারের ব্যবস্থাও সাথে রাখতে হবে, কেননা একবার বনের ভেতর প্রবেশ করলে সেখানে খাবার কেনার কোন উপায়ই নেই। আর এই বনে প্রবেশের জন্য প্রত্যেককে ২০ টাকা করে প্রবেশ মূল্য দিতে হবে।  

মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
লাউয়াছড়ার অপরূপ সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হবেন নিশ্চিত

মৌলভীবাজার  জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সিলেট বিভাগের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিরসবুজ রেইনফরেস্ট হিসেবে পরিচিত। ৩,০৮৯ একরের সংরক্ষিত এই বনটি বিভিন্ন বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির উদ্ভিদ এবং জীবজন্তুর আবাসস্থল। সিলেটের এই বনে আসলেই কেবলমাত্র আপনি দেখা পাবেন  বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের এবং দুর্লভ উদ্ভিদের। তবে বাংলাদেশের ৪টি বিচিত্র বন এর মধ্যে এই বনের অপরূপ সৌন্দর্য প্রতিবছর যেকোনো বয়সের মানুষকেই একবারের জন্য হলেও লাউয়াছড়া ভ্রমণে উৎসাহিত করে। 

 লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সৌন্দর্য এতটাই বেশি, যা শব্দে প্রকাশ করাও বেশ কঠিন। আর এজন্য এই রেইনফরেস্টের রূপ বৈচিত্র্য উপভোগ করতে হলে এই বন থেকে আপনাকে ঘুরে আসতে হবে। এই বনের বিশেষ একটি দিক হচ্ছে আপনি চাইলে এর মধ্যে ট্রেকিং করতে পারবেন।  রেমা- কালেঙ্গা বনের মতো  লাউয়াছড়াতেও রয়েছে মানবসৃষ্ট ৩টি পথ। যার প্রতিটি আপনাকে দারুণ সব অভিজ্ঞতার সাক্ষী করে রাখবে। উদাহরণস্বরূপ এর সবচেয়ে দীর্ঘ পথটিতে ট্রেকিং করে আপনি রোমাঞ্চকর অনুভূতি পাবেন। এই বনের পথ দিয়ে চলতে চলতে আপনি বাংলার সংস্কৃতি ও সম্প্রদায় এর সাথে সম্পৃক্ত খাসিয়া জনগোষ্ঠী এবং তাদের জীবনযাপন সম্পর্কেও ধারণা পেয়ে যাবেন। তবে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি তথ্য হল ১৯৫৬ সালে হলিউডের সিনেমা ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ’ এর একটি দৃশ্যের শুটিং করা হয়েছিল সিলেটের এই  লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। 

সিলেটের রাতারগুল

মিঠা পানির জলাভূমি সিলেটের রাতারগুল
রাতারগুলের নির্মলতা আপনাকে বনের গহীনে আরও দীর্ঘ সময় কাটাতে উৎসাহিত করবে

ঘুরতে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের ১০টি চমৎকার টুরিস্ট স্পট এর মধ্যে সিলেটের রাতারগুল অন্যতম। ভ্রমণের জন্য প্রিয় শহর সিলেট থেকে এর অবস্থান মাত্র ২৬ কিলোমিটার দূরে। বাংলাদেশের অন্যতম বিস্ময়কর জায়গা হিসেবে রাতারগুল বেশ পরিচিত। বাংলাদেশের ৪টি বিচিত্র বন এর মধ্যে এটি অন্যতম। এই বনটি বিশ্বের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মিঠা পানির জলাভূমির মধ্যে একটি। সিলেটের রাতারগুল ঘুরে দেখার মুহূর্তে এর সৌন্দর্যে আপনি রীতিমত বিভোর হয়ে যাবেন। বর্ষাকালে ভারত থেকে আসা প্রবল পানির চাপে যখন এই জায়গা জুড়ে থাকা গোয়াইন নদী যা বনটিকে কয়েকটি অংশে ভাগ করেছে তা পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়, তখন রাতারগুলের সৌন্দর্য যেন স্বর্গীয় এক রূপ ধারণ করে। 

নদীটির দুই পাশ জুড়ে ছাউনির মতো ছড়িয়ে থাকা ১০ মিটারেরও বেশি উঁচু এখানকার গাছপালাগুলো যেন অনেকটা ছাতার মতো বনটিকে ঢেকে রেখেছে। এরকম দারুণ এক পরিবেশে নৌকায় করে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা কেমন হবে, একবার ভাবুন তো? শান্ত এই পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় আপনার মধ্যে যেন একধরনের উত্তেজনা কাজ করবে। আর হবেই বা না কেন, ঘুরতে যাওয়ার জায়গা এর মধ্যে সিলেটের রাতারগুল যে নিঃসন্দেহে দারুণ এক জায়গা! 

সুন্দরবন 

সুন্দরবন
চিতল হরিণের বিশ্রাম নেয়ার দারুণ এই দৃশ্যের দেখা মিলবে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনে ঘুরে বেড়ানোর চেয়ে রোমাঞ্চর কিছু মনে হয় আর নেই। আর রোমাঞ্চের বিষয়টি আরও দ্বিগুণ হয়ে যায় যদি রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার সুযোগ হয়। সুদীর্ঘ এই বনে আপনি চাইলে ১ মাসের জন্য হারিয়ে যেতে পারেন, অথবা এক সপ্তাহের ছোট একটি ট্রিপও দিয়ে আসতে পারেন নদী এবং বনের মধ্য দিয়ে।  সুন্দরবনের বিস্তৃতি ৩,৪৪,৭১২ একরেরও অধিক জায়গা জুড়ে। আর এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও এতটাই মনোমুগ্ধকর, যা শব্দে প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব। আপনি যদি অপূর্ব সুন্দর এই বনের সৌন্দর্য এবং শান্ত-নিস্তব্ধ জলের মধ্যে যাত্রা করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, তবে নদীর মধ্য দিয়ে চলমান ক্রুজের যাত্রী হতে পারেন। আর তাই প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্য যদি আপনিও উপভোগ করতে চান, তবে ঘুরে আসতে পারেন  ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন থেকে। 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশের এই জায়গাগুলো ঘুরে না দেখলে হয়তো কখনোই উপলব্ধি করা সম্ভব না, কী দারুণ সব জায়গা রয়েছে ছোট্ট এই দেশটিতে। দারুণ সব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হলে আপনাকেও তাই ঘুরে আসতে হবে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে থাকা বাংলাদেশের ৪টি বিচিত্র বন থেকে। বনজঙ্গলে ঘুরতে যাওয়া এবং রোমাঞ্চর সব অনুভূতির সম্মুখীন যদি আপনিও হতে চান তবে সময়-সুযোগ এবং পরিস্থিতি বুঝে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন জীব বৈচিত্র সমৃদ্ধ বাংলাদেশের বিখ্যাত এই বনগুলো থেকে।  

কমেন্ট করে জানিয়ে দিন, বাংলাদেশের ৪টি বিচিত্র বনের মধ্যে কোনটিতে আপনার ঘোরার সুযোগ হয়েছে? 

Write A Comment

Author