Reading Time: 4 minutes

বাড়ি নির্মাণ, রেসিডেন্সিয়াল এবং কমার্শিয়াল স্পেস ক্রয়, বা প্রপার্টিতে বিনিয়োগ এর জন্য প্রয়োজন হয় মূলধন। যেহেতু বিনিয়োগের অংকটা বেশ বড় হয়, তাই সঞ্চয়ের টাকার পাশাপাশি হোম লোন নেয়ার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নির্ভর করতে হয়। বিশেষ করে, বড় বাজেটের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লোনের পরিমাণটাও যেহেতু বেশি হয়, সেক্ষেত্রে হোম লোন নেয়ার প্রয়োজনীয়তাও থাকে বেশি । এক্ষেত্রে হোম লোন নেয়ার জন্য ব্যাংক সহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করতে হয়। বাংলাদেশে হোম লোনের জন্য সেরা ব্যাংক রয়েছে বেশ কয়েকটি। এর মধ্যে অন্যতম স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং (ডিবিএইচ) ফাইন্যান্স কর্পোরেশন লিমিটেড ইত্যাদি। উপরোক্ত এই প্রতিষ্ঠান গুলোর সাথে বিপ্রপার্টি চুক্তিবদ্ধ থাকায় গ্রাহকরা হোম লোন নেয়ার জন্য এখন খুব সহজেই হোম লোনের আবেদন করতে পারবেন। 

তবে চলুন আজকের ব্লগ থেকে জেনে নেই বাংলাদেশে হোম লোনের জন্য সেরা ব্যাংক গুলো সম্পর্কে কিছু তথ্য। হোম লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কী কী যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন এবং গ্রাহকরা বিশেষ কী সুবিধা পাচ্ছেন চলুন বিস্তারিত জেনে আসা যাক। 

মিডল্যান্ড ব্যাংক 

মিডল্যান্ড ব্যাংক
মিডল্যান্ড ব্যাংক

বেসরকারি কমার্শিয়াল ব্যাংক হিসেবে পরিচিত মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড গ্রাহকদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে বেশ দীর্ঘ সময় ধরে। গ্রাহকদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে শুরু করা কার্যক্রম নিয়ে মিডল্যান্ড ব্যাংক আস্থা এবং বিশ্বস্ততার সাথে ঢাকা সহ বিভিন্ন অঞ্চলে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে হোম লোনের জন্য সেরা ব্যাংক এর মধ্যে অন্যতম একটি ব্যাংক হিসেবে আর্থিক সেবা প্রদানের পাশাপাশি মানসম্পন্ন ব্যাংকিং সার্ভিস যেমন- লকার, বিভিন্ন ধরনের টার্ম লোন ও ব্যাংকিং সহ বিভিন্ন কাজের জন্য ইতোমধ্যেই এই সেক্টরে বেশ সুনাম অর্জন করেছে ব্যাংকটি। 

এক্ষেত্রে মিডল্যান্ড ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের যে যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন –  

  • বয়স সর্বনিম্ন ২১ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ বছর
  • সর্বনিম্ন আয় ৪০,০০০ টাকা (সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য)
  • সর্বনিম্ন আয় ৫০,০০০ টাকা (বেতনভুক্ত কর্মচারীদের জন্য ) 
  • সর্বনিম্ন আয় ৫০,০০০ টাকা (ব্যবসায়ী ও প্রফেশনালদের জন্য)

বিশেষ সুবিধা সমূহ 

জনপ্রিয় এই ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার ক্ষেত্রে বিপ্রপার্টির গ্রাহকরা যে বিশেষ সুবিধাগুলো পাবেন। এর মধ্যে রয়েছে –  

  • ২ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন নেয়ার সুবিধা  
  • লোনের মেয়াদকাল থাকবে ২৫ বছর পর্যন্ত
  • আংশিক এবং সম্পূর্ণ সেটেলমেন্টের সুবিধা
  • সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা লোন প্রসেসিং ফি- বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী বিপ্রপার্টির ক্লায়েন্টদের জন্য 
  • লুকায়িত অন্য কোন চার্জ নেই 

লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড 

লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড
লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড

লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড একটি যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠা মাল্টি-প্রোডাক্ট ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন, যা ১৯৯৭ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ এর অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু করে। লংকাবাংলার অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেড, লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড এবং লংকাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড। 

এক্ষেত্রে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড  থেকে লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের যে যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন –  

  • লোন প্রসেসিং এর সময় প্রধান ঋণগ্রহীতা, সহ-ঋণগ্রহীতা এবং সহ-আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ন্যূনতম ২১ বছর।  
  • বেতনভুক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে লোনের মেয়াদকাল শেষে সর্বোচ্চ বয়স হতে হবে ৭০ এবং বাকিদের ক্ষেত্রে ৬৫/৭০।   

সর্বনিম্ন আয় –

  • সরকারি চাকুরীজীবী ৪০,০০০ টাকা   
  • বেতনভুক্ত চাকুরীজীবী ৪০,০০০ টাকা  
  • প্রফেশনাল ৪০,০০০ টাকা  
  • ব্যবসায়ী ৫০,০০০ টাকা
  • জমির মালিক ৪০,০০০ টাকা    

বিশেষ সুবিধা সমূহ 

জনপ্রিয় এই ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার ক্ষেত্রে বিপ্রপার্টির গ্রাহক হওয়াতে আপনি বিশেষ যে সুবিধাগুলো পাচ্ছেন –  

  • ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন নেয়ার সুবিধা 
  • লোনের পরিমাণ রেজিস্ট্রেশন খরচ সহ ৮০% পর্যন্ত 
  • দ্রুত সময়ে মূল্যায়ন এবং লিগ্যাল ডকুমেন্টের বৈধতা যাচাই 
  • হোম লোনের জন্য ন্যূনতম আয় হতে হবে ৪০,০০০ টাকা 

স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক

স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক
স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক

গ্রাহকদের সর্বোচ্চ ব্যাংকিং সার্ভিস দিতে ১৯৪৮ সাল থেকে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক এর কার্যক্রম শুরু করে। গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা যেমন হোম লোন, পার্সোনাল লোন, অটো লোন ইত্যাদির পাশাপাশি ই-স্টেটমেন্টের মতো সুবিধাগুলোও গ্রাহকরা পাচ্ছেন স্বনামধন্য এই ব্যাংক থেকে।

এক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের যে যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন –  

লোন পাবার যোগ্যতা

  • লোন প্রসেসিং এর সময় প্রধান ঋণগ্রহীতার বয়স হতে হবে ন্যূনতম ২৫ বছর, 
  • সহ-ঋণগ্রহীতার বয়স ২২ এবং সহ-আবেদনকারীর বয়স ১৮    
  • লোনের মেয়াদকাল শেষে অথবা অবসরগ্রহণের সর্বোচ্চ বয়স হতে হবে ৭০ (যেটা আগে হবে)
  • বেতনভুক্ত কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে সর্বনিম্ন আয় ৭৮,০০০ টাকা এবং বাকিদের ক্ষেত্রে ৭০,০০০ টাকা 
  • বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে ৩ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা  

বিশেষ সুবিধাসমূহ

  • বিশেষ ধরনের ক্যাম্পেইনের জন্য বিপ্রপার্টির গ্রাহকরা উপযোগী 
  • লোনের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত অথবা প্রপার্টির মূল্যের ৭০%
  • লোনের সময়কাল ব্যবসায়ের মালিকদের জন্য ১০ বছর এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ২৫ বছর
  • দ্রুত সময়ে মূল্যায়ন এবং লিগ্যাল ডকুমেন্টের বৈধতা যাচাই 
  • আউটস্ট্যান্ডিং লোন ৭০ লাখের বেশি হলে গ্রাহকরা প্রায়োরিটি ব্যাংকিং এর সুবিধা পাবে 
  • ক্যাশ ব্যাক পাওয়ার সুযোগ (যখন প্রযোজ্য) 
  • সাদিক হোম ফাইন্যান্স, ইসলামিক শরীয়াহ অনুযায়ী হোম ফাইন্যান্সিং এর সুবিধা  
  • দ্রুত সময়ে প্রপার্টির মূল্যায়ন এবং বৈধতা যাচাই 
  • প্রসেসিং ফি সর্বোচ্চ ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত 
  • আউটস্ট্যান্ডিং হিসেবে ৭০ লাখ টাকার বেশি লোনের ক্ষেত্রে প্রায়োরিটি ব্যাংকিং এর সুবিধা 

ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন লিমিটেড (ডিবিএইচ) 

ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন লিমিটেড
ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন লিমিটেড

বাংলাদেশের বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন লিমিটেড (ডিবিএইচ) ১৯৯৭ সালে এর কার্যক্রম শুরু করে। রিয়েল এস্টেট খাতে অর্থায়নের জন্য বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ডিবিএইচ। এটি বাংলাদেশের একমাত্র আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা ধারাবাহিকভাবে সাত বছর ধরে সর্বোচ্চ ‘এএএ’ ক্রেডিট রেটিং পেয়ে আসছে।

এক্ষেত্রে ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন লিমিটেড (ডিবিএইচ) থেকে লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের যে যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন –

লোন পাবার যোগ্যতা

  • বয়স সর্বনিম্ন ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ বছর
  • সর্বনিম্ন আয় ৩৫,০০০ টাকা প্রতি মাস
  • লোন অ্যাপ্রুভের জন্য দরকার মাত্র ১জন গ্যারান্টার
  • বেতনভুক্ত কর্মকর্তার জন্য ২ বছরের অভিজ্ঞতা
  • ব্যবসায়ী আবেদনকারীর জন্য ৩ বছরের অভিজ্ঞতা

বিশেষ সুবিধাসমূহ

  • প্রপার্টির ক্রয়মূল্যের উপর সর্বোচ্চ ৭০% এবং নির্মাণ খরচের উপর সর্বোচ্চ ৮০% পর্যন্ত লোন সুবিধা
  • ১ বছর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫ বছর মেয়াদে লোন নেবার সুবিধা
  • লোন প্রসেসিং ফি ১% (বিপ্রপার্টির মাধ্যমে লোন নিলে)
  • লুকায়িত কোন চার্জ নেই
  • আংশিক এবং সম্পূর্ণ সেটেলমেন্ট সুবিধা

আর তাই হোম লোন নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে হোম লোনের জন্য সেরা ব্যাংক সমূহ এর মধ্য থেকে যেকোনোটি হতে পারে আপনার জন্য সুবিধাজনক। আর আপনি যদি বিপ্রপার্টির গ্রাহক হয়ে থাকেন, তবে হোম লোন নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সব সুবিধা তো আপনি পাচ্ছেনই। জমি ক্রয় কিংবা বাড়ি নির্মাণ, ভবিষ্যতের সুনিশ্চিত ঠিকানা গড়ে তুলতে প্রপার্টিতে বিনিয়োগের জন্য হোম লোন নিতে আজই যোগাযোগ করতে পারেন বাংলাদেশে হোম লোনের জন্য সেরা ব্যাংক গুলোতে।     

Write A Comment

Author