Reading Time: 3 minutes

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মিউনিসিপ্যাল বন্ড আনার পরিকল্পনা করছে। তারা এক হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করছে যাতে গুলশানের মত বিলাসবহুল এলাকায় বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা যায়। বাংলাদেশে মিউনিসিপ্যাল বন্ড আনছে ডিএনসিসি এটা নতুন একটি প্রকল্প। যেহেতু এমন ঘটনা এই প্রথম ঘোটতে যাচ্ছে, তাই আপনারা অনেকেই জানেন না, যে মিউনিসিপ্যাল বন্ড আসলে কী? এবং কীভাবে এটা দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে! এই কারণেই আমরা বাংলাদেশের প্রথম ডিএনসিসি বন্ড চালু হওয়ার সম্ভাবনাগুলো সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করব। তবে তার আগে আমাদের সবার আগে বুঝতে হবে ডিএনসিসি বন্ড কী এবং কীভাবে এটা কাজ করে! 

বাংলাদেশি টাকা পয়সা
মিউনিসিপ্যাল বন্ড আসলে কী?

মিউনিসিপ্যাল বন্ড

মিউনিসিপ্যাল বন্ড হচ্ছে এক ধরণের “সিকিউরিটি ফান্ড” যেটা কেবল পৌরসভা, শহর এবং রাষ্ট্রের উন্নয়নের লক্ষ্যে তৈরি প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে থাকছে রাস্তা, মহাসড়ক, সেতু, ভবন এবং অন্যান্য অনেক প্রকল্প। এটা এক রকম লোনের মত যা আপনি আপনার স্থানীয় সরকারকে দিচ্ছেন এবং বিনিময়ে পাচ্ছেন মুনাফা। মিউনিসিপ্যাল বন্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এখান থেকে আপনি যতুটুকু মুনাফা পাবেন সেটাতে আপানার কোন ট্যাক্স দিতে হচ্ছে না। আর বিনিয়োগ করতে গেলে ট্যাক্স দিতে হয় না এমন সুযোগ খুব কম আসে। মিউনিসিপ্যাল বন্ডকে তাই নিঃসন্দেহে সবচেয়ে চমৎকার বিনিয়োগক্ষেত্র বলা যায়। কর্পোরেট বন্ডগুলোর চেয়ে মিউনিসিপ্যাল বন্ড সর্বাধিক নিরাপদ আর কম ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণত জেনারেল অবলিগেশন বন্ড, জিও (General Obligation bond,GO)  সরকারী অবকাঠামোগুলোকে তহবিল প্রদানের জন্য জারি করা হয়ে থাকে। যেখানে রাজস্ব আদায় একদমই করা হয় না। এগুলোর মধ্যে স্কুল, রাস্তা এবং সেতুও পরে। অন্যদিকে রাজস্ব বন্ডগুলো শুধু বাণিজ্যিক ভবনের মত প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

মিউনিসিপ্যাল বন্ডে বিনিয়োগ 

গুলশান ১
মিউনিসিপ্যাল বন্ডে বিনিয়োগ করার বিভিন্ন উপায়ও রয়েছে

বাংলাদেশে মিউনিসিপ্যাল বন্ড আনছে ডিএনসিসি! আর তাই মিউনিসিপ্যাল বন্ড কী সে সম্বন্ধে আমরা নিশ্চয়ই জেনে গিয়েছি। এবার জানা যাক এই বন্ড গ্রহণের রিস্ক সম্বন্ধে। মিউনিসিপ্যাল বন্ডে বিনিয়োগ করলে তা বাণিজ্যিক বন্ডের তুলনায় ব্যর্থ কম হয়। এছাড়াও, তারা যথেষ্ট কম হারে সুদ দেয় এবং প্রদত্ত সুদের কোন ট্যাক্সও দিতে হয় না। তবে সুদের হারের ঝুঁকিও রয়েছে। কখনো কখনো বন্ড মার্কেটে এটার মূল্য অনেকটা কমে আসে। তাই মিউনিসিপ্যাল বন্ডে বিনিয়োগ করার বিভিন্ন উপায়ও রয়েছে। অন্যতম হচ্ছে নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা। আপনি চাইলে বন্ড কিনে আবার বিক্রিও করতে পারবেন। কীভাবে? যখন কোন নতুন প্রকল্প মার্কেটে আসে তখনই এই বন্ডগুলো কিনে রেখে এবং সময় বুঝে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি করে দেওয়া বন্ড ম্যাচিউর্ড হওয়ার আগে। আপনি চাইলে মিউচুয়াল ফান্ডগুলিতেও বিনিয়োগ করতে পারেন যা একাধিক বন্ডে বিনিয়োগ করে। 

ডিএনসিসি সিটি বন্ড

বড় শহরের অবকাঠামো প্রকল্পগুলি বেশ ব্যয়বহুল হয় এবং সরকারের তহবিলের জন্য অনুরোধ করা যেমন কঠিন হতে পারে তেমনি সময় সাপেক্ষ্যে হয়। ঠিক এমনই এক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল গুলশান সুপার মার্কেট ২ এর ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে। এটা বেশ বড় একটা প্রকল্প যার জন্য প্রচুর পরিমাণের তহবিলের প্রয়োজন হয়। এরপরই ডিএনসিসি এই প্রকল্পটি নির্মাণের জন্য মিউনিসিপ্যাল বন্ড জারি করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাকিস্তান এবং ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশগুলিতেও বড় বড় প্রকল্প নির্মাণের লক্ষ্যে মূলধন সংগ্রহের জন্য এমন বন্ড উপস্থাপন করা হয়। সুউচ্চ বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য এক হাজার কোটি টাকার বন্ড জারি করা হবে, যা প্রাতিষ্ঠানিক এবং স্বতন্ত্র বিনিয়োগকারী উভয়ই কিনতে পারছেন। এ জাতীয় বন্ড জারির ফলে ডিএনসিসি এ ধরণের ভবন নির্মাণ করতে পারবে, যেখান থেকে তারা প্রয়োজনীয় রাজস্ব অর্জন করতে পারবে।  

বাংলাদেশে মিউনিসিপ্যাল বন্ডের ভবিষ্যৎ

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুর রহমানের মতে,  ডিএনসিসি মিউনিসিপ্যাল বন্ড এই প্রথম উপস্থাপন করা হয়েছে বাংলাদেশে। এবং  ডিএনসিসি মিউনিসিপ্যাল বন্ডগুলোর সম্ভাব্যতা দেখার জন্য এটি পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ। ডিএনসিসির লক্ষ্য ছিল কেবল বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে সরকারের তহবিলের উপর নির্ভর না করে আত্মনির্ভরতা অর্জন করা। এই উদ্যোগ যদি সফল হয় তাহলে ভবিষ্যতে 8এমন বন্ড তহবিল আরও জারি করা হবে। ঢাকা উত্তর জুড়ে মোট ১৮ টিরর মত ওয়ার্ডে প্রকল্প নির্মাণের তহবিল পেতে পারে। ডিএনসিসির এই সাফল্যে আরও অনেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে এবং এই উদ্যোগ গ্রহণে এগিয়ে আসতে পারে।

খুব শীঘ্রই বাংলাদেশে মিউনিসিপ্যাল বন্ড আনছে ডিএনসিসি । এমন চমৎকার একটি উদ্যোগ ভবিষ্যতের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে প্রগতির চূড়ায়। আরও অত্যাধুনিক এবং সম্ভাবনাময় অবকাঠামো নির্মাণ করা এখন আর কঠিন কোন কাজ না। দেশের সকল নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান সমূহই নিজেদের বন্ডের মাধ্যে এই তহবিল সংগ্রহ করতে সহায়তা করবে। সরকারী সংস্থাগুলো ভবিষ্যতের প্রকল্পগুলোর জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে এবং বিনিয়োগকারী খুঁজতে আর হিমশিম খাবে না। এমন একটি উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। 

Write A Comment