কোরবানির ঈদ আসা মানেই, রান্নাঘরে রাজ্যের ব্যস্ততা। বেডরুম, লিভিং বা ঘরের অন্য যে কোনো জায়গা থেকে রান্নাঘরেই কেটে যায় অধিকাংশ সময়। একদিকে কোরবানির মাংস কাটা, বিলি-বন্টন অন্যদিকে হরেক রকম রান্নায় অতিথি আপ্যায়ন। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর দিনটিতে বেডরুম, লিভিং রুমের থেকেও জরুরি হয়ে ওঠে কিচেন স্পেসটি। কিন্তু, এই কিচেন স্পেসটিই যদি আপনার মনের মত না হয়, তাহলে কিন্তু ঈদের আনন্দেও থেকে যায় অপরিপূর্ণতা।
বিশেষ করে, বর্তমান ঢাকার বহুতল বাড়িগুলোতে রান্নাঘর হয়েছে আরো ছোট। বাড়ির সবচেয়ে ব্যস্ত ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই অংশের প্রতি আমাদের অবহেলা যেন আরো বেশি। তবে, ইচ্ছে থাকলে ঈদ উল আজহার মত উৎসবে রান্নাঘরের পরিবেশকেও প্রাণবন্ত ও আরামদায়ক করা সম্ভব কিচেন রেনোভেশন এর মাধ্যমে। আপনিও কি এ সময়ে আপনার কিচেন স্পেসের আরামপ্রদতা ও নতুনত্ব নিয়ে ভাবছেন?
তাহলে, ঈদের আগে বাজেট ফ্রেন্ডলি কিচেন রেনোভেশন এর দারুণ ৬টি টিপস জেনে নিন আজকের আর্টিকেলে।

দেয়ালে বৈচিত্র্য আনুন
ঈদ উল আজহার মত উৎসবে কিচেনের দেয়ালটা তেল চিটচিটে, দাগ-ময়লা যুক্ত আর রঙহীন হলে কি মানায়? এমন কিচেনে রান্নার মত শিল্প চর্চায় শিল্পীরও কিন্তু মন বসানোটা দায়। তাই, কিচেন রেনোভেশনের অংশ হিসেবে পুরো রান্নাঘর এর দেয়াল রাঙিয়ে নিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে দেয়াল রঙ করার সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে চলুন এবং কিচেনের দেয়ালের জন্য সঠিক রঙ বেছে নিন। এক্ষেত্রে দেয়ালে দুইটি বিপরীতমুখী রঙ এর ব্যবহারে নিয়ে আসতে পারেন কন্ট্রাস্ট। তবে এভাবে সম্পূর্ণ দেয়ালে রঙ করা আমাদের অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। কেননা এটি একদিকে যেমন সময়সাপেক্ষ, খরচসাপেক্ষও বটে। তাই রং করতে না চাইলে, ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন কারুকাজের ওয়াল পেপার বা স্টিকার। রান্নাঘরের সাথে, কেবিনেটের পাল্লাগুলো স্প্রে পেইন্টের সাহায্যে রাঙিয়ে দিতে পারেন, যে কোনো নিউট্রাল রঙ-এ।

পেগবোর্ড ব্যবহার করুন
একটি পেগবোর্ড রান্নাঘরে কি পরিমান স্টোরেজ সেভ করতে পারে তা আপনার কল্পনার বাইরে। পেগবোর্ডের জন্য আপনার আলাদা কোন কেবিনেট বা ড্রয়ার প্রয়োজন হয় না। আর পেগবোর্ডের খরচও অনেক কম। বিশেষত, ভাড়া বাসা হলে, কিচেন রেনোভেশনের জন্য এটিই আপনার জন্য সব থেকে সহজ অপশন। রান্নাঘরের ছুরি, কাঁচি, চামচ থেকে শুরু করে নিত্য ব্যবহার্য অসংখ্য জিনিস আপনি এতে ঝুলিয়ে রাখতে পারবেন। পেগবর্ডে ঝুলিয়ে রাখার ফলে, জিনিসপত্র গুলো ড্রয়ারে বা কেবিনেটে খুঁজতে হবে না। কাজের সময় পেয়ে যাবেন একদম চোখের সামনে। তাছাড়া, পেগবোর্ড ব্যবহার করলে কেবল আপনার খরচই বাঁচবে না, সাথে সাথে রান্নাঘরের জায়গাও বেঁচে যাবে অনেকখানি।

ফোল্ডিং চেয়ার যোগ করুন
আমরা অনেকেই দাঁড়িয়ে রান্না করতে পারিনা। এক্ষেত্রে রান্নাঘরটি যদি কিছুটা বড় হয়ে থাকে তাহলে একটি ছোট চেয়ার যোগ করতে পারেন। তবে, খেয়াল রাখবেন, চেয়ারটি যেন ফোল্ডিং চেয়ার হয়। কেননা, এই চেয়ারগুলো ব্যবহারের পর ফোল্ড করে রাখার সুযোগ থাকে এবং অনেক জায়গা বেঁচে যায়।
বাজারে নান্দনিক ডিজাইনের বাজেট ফ্রেন্ডলি ফোল্ডিং চেয়ার পাওয়া যায়। কোরবানির ঈদের আগে কিচেন রেনোভেশন এর অংশ হিসেবে আপনি সেগুলি ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া এই চেয়ারগুলো স্থানান্তর করাও অনেক সহজ। ফলে কিচেনে যখন দীর্ঘসময় বসে থাকার প্রয়োজন নেই, তখন আপনি এটিকে ব্যালকনি বা লিভিংরুমের রিলাক্সিং সিটার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।

এক্সহোস্ট ফ্যান যোগ করুন
কিচেন ইন্টেরিয়র যেমনই হোক না কেন, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসার জন্য সেখানে ফাঁকা জায়গা বের করে দিতে কাজে লাগে এক্সহোস্ট ফ্যান। বিশেষত, কোরবানির ঈদের মত সময়ে, যখন উৎসবের কেন্দ্রেই থাকে নানা রকমের রান্না, তখন এই ফ্যানটিই আপনার জন্য সবচেয়ে দরকারি। নয়তো কিচেনের গরম বাতাসে ও তেল চিটচিটে পরিবেশে রান্না করতে হবে আপনাকেই। তাই, এখনো যদি আপনার কিচেনে এক্সহস্ট ফ্যান না থাকে, তাহলে কিচেন রেনোভেশন এর অংশ হিসেবে এটি যোগ করতে একদমই ভুলবেন না।
কেবিনেট অথবা তাক যোগ করুন
ঈদ আয়োজনে কিচেনের সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে তা ভীষণ দৃষ্টিকটু লাগে। এতে করে, অতিথিদের সামনেও ইতস্তত বোধ করতে হয়। তাই, রান্নাঘরের সবকিছু পরিপাটি ভাবে গুছিয়ে রাখতে বাজেট অনুযায়ী তাক বা বিভিন্ন ধরনের কেবিনেট ব্যবহার করুন। এই তাক বা কেবিনেটগুলো প্রয়োজন অনুসারে আলাদা ভাবে ভাগ করে নিন এবং কোন কেবিনেটে কেমন জিনিস রাখবেন সেই পরিকল্পনাটি আগেই করে নিন। যেমন, মূল্যবান ক্রোকারিজ, যেগুলো কম ব্যবহৃত হয়, সেসব ওপরের দিকের বায়ুনিরোধক তাকে রাখুন। রাখা উচিত, যাতে ধুলোবালি না ঢুকতে পারে। দৈনন্দিন ব্যবহারের তৈজসপত্র রাখতে পারেন স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি তাকে বা ক্যাবিনেটের পুলআউট ড্রয়ারে। মশলা ও অন্যান্য দরকারি ব্যবহারি জিনিস রাখার জন্য চুলা বা বার্নার স্টোভের পাশেই কিছু খোলা কেবিনেট এর ব্যবস্থা রাখুন।
উচ্চতা অনুযায়ী কিচেন ডিজাইন
কিচেন রেনোভেশনের সময় যে বিষয়টি আমাদের অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে তা হলো ব্যবহারকারীর উচ্চতা। কোরবানির আয়োজনে যেহেতু কাটা-বাছা, ধোয়া-মোছা, রান্না সহ অসংখ্য কাজ একসাথে করতে হয় তাই উচ্চতা ঠিক না থাকলে ব্যবহারকারীর জন্য দীর্ঘসময় কিচেনে কাজ করা, বেশ কষ্টদায়ক। তাই কিচেন আইল্যান্ড, কিচেন বার্নার, কিচেন হুড, সিংকসহ পুরো রান্নাঘরেই ব্যবহারকারীর উচ্চতা ও তার ব্যবহার্য জিনিসপত্রের মাঝে সামঞ্জস্য থাকাটা জরুরি। এটি হলে ব্যবহারকারী আরামদায়ক ভাবে ও স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে কাজ করতে পারবে। ফলে কাজে আসবে স্বস্তি, ঈদের আনন্দ তার জন্যও হবে দ্বিগুণ।
এছাড়া, বাজেটের মধ্যে আধুনিক কিচেন রেনোভেশনের সহজউপায় হিসেবে রয়েছে বিপ্রপার্টি ইন্টেরিয়র। আজকের টিপস অনুসরণ করে আপনার কিচেন রেনোভেশন করিয়ে নিতে পারেন এখান থেকেও।