Reading Time: 3 minutes

২০১৯ সাল থেকে গোটা বিশ্ব যুদ্ধ করে যাচ্ছে এক ভয়ংকর ভাইরাসের বিপরীতে। প্রাণঘাতী রোগের নাম কোভিড-১৯। এখনো চলছে লকডাউন। এই রোগে আক্রান্ত যেকোন রোগীর সংস্পর্শে আসা মাত্রই এই রোগের বিস্তার ঘটে। তাই এই রোগ থেকে বাঁচতে আরও সাবধানতা নিতে হয়। মাস্ক পরা, একটু সময় পর পর হাত স্যানিটাইজ করা ইত্যাদি এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এই সমস্ত কিছু করার পাশাপাশি রাখতে হয় নিরাপদ দূরত্ব। কিন্তু, এত কিছুর পরও যখন আক্রান্ত হয় তখন কি করণীয়? এমন প্রশ্ন নিশ্চয়ই মাথায় আসে? এর একটাই সমাধান বাসায় কোয়ারেন্টাইন রুম প্রস্তুত করা। কীভাবে তা জানতে পড়তে থাকুন এই আর্টিকেলটি। 

কোয়ারেন্টাইন শব্দটির ইতিবৃত্ত 

Quarantine room

লাতিন কোয়াড্রাগিন্টা থেকে আসা শব্দ “কোয়ারেন্টাইন” যার অর্থ “ফর্টি বা বাংলায় চল্লিশ “। এই শব্দ বা টার্মটির প্রথম ব্যবহার হয়েছিল সেই ১৪শ শতাব্দীতে। তখন “ব্ল্যাক ডেথ প্লেগ” ছড়িয়ে পড়ে। সেই সংক্রমণ থেকে বাঁচতে একটি জাহাজ প্রায় চল্লিশ দিন ধরে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখে। এর পর থেকেই বিভিন্ন রোগ যেমন, ফ্লু মহামারী, ডিপথেরিয় ইত্যাদি ও বর্তমানে কোভিড এর জন্য কোয়ারেন্টাইন উপায়টি অবলম্বন করা হয়ে থাকে।  

কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশন 

disinfection of clothes

কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশন উভয়ই ব্যবহৃত হয় যেকোন রোগকে ছড়িয়ে পরা থেকে বাধা দিতে। এই দুটি উপায়ে সংক্রমিত রোগীরা অনাক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকে।  

আইসোলেশন তাদের জন্য যারা ইতিমধ্যে সংক্রমিত হয়ে গেছে। অন্যান্যদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার জন্যই সংক্রমিত রোগীকে আইসোলেশনে রাখা হয়।

অন্যদিকে কোয়ারেন্টাইন হচ্ছে যাদের মহামারি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাদের জন্য। বাকিদের থেকে আলাদা করে রেখে রোগটির লক্ষণ দেখা দিচ্ছে কিনা এই বিষয়টি যাচাই করা হয়ে থাকে। এই দুটি পদ্ধতির উদ্দেশ্য হল রোগটির সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা। 

হোম কোয়ারেন্টাইন রুম 

a drawing room

বাসায় কোয়ারেন্টাইন রুম প্রস্তুত করা খুব একটা কঠিন বিষয় নয়। বাড়িতে নির্ধারিত কোয়ারেন্টাইন রুমটি সদস্যের বাকী কক্ষগুলি থেকে পৃথক হওয়া উচিত। সম্ভব হলে ঘরের সাথে একটা বাথরুম রাখাও উচিত। এতে করে রোগীকে ঘরের বাইরে আর যেতে হবে না। চেষ্টা করবেন রোগীর জন্য আলাদা ঘর বরাদ্দ করার। যদি না থাকে তাহলে বাসার গেস্ট রুমটি ব্যবহার করুন। ঘরটি অবশ্যই খোলামেলা হতে হবে। যেন আলো বাতাস চলাচল করতে পারে ঠিক মত। ঘরটি যতটা সম্ভব পরিষ্কার এবং স্যানিটাইজ করুন। এবং রোগীকে দেখাশোনা করুন নিয়মিত। নিরপদ দূরত্বে থেকে খাবার ও পানীয় দিন। 

কোয়ারেন্টাইন রুম যেভাবে ম্যানেজ করবেন 

room with two beds and adequate sunlight

বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে প্রত্যেকেরই উচিত আলাদা কোয়ারেন্টাইন রুম প্রস্তুত করা। যা রোগীর ঘুমানোর এবং খাওয়ার জন্য বরাদ্দ থাকবে। এবং এই ঘরটি নিয়মিত পরিষ্কার ও স্যানিটাইজ করতে হবে। বাড়িতে এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে জীবাণু লুকিয়ে থাকতে পারে। ঘরের সেই কোণা বা জায়গাগুলো বারবার পরিষ্কার করার পরও দেখা যায় একটু না একটু জীবাণু সেখানে থাকেই যায়। ছত্রাক, জীবাণু বা এই ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচতে প্রত্যেকে যতটা সম্ভব জিনিস বা জায়গাগুলো পরিষ্কার করার চেষ্টা করতে হবে। এবং করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য আপনাকে অবশ্যই ঘরকে পরিষ্কার করতে হবে। এবং ঘরের বিভিন্ন জায়গা আলাদা করে স্প্রে বা স্যানিটাইজার দিয়ে মুছে নিবেন।  

সংক্রামিত ব্যক্তির কাপড় ধোয়ার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন। সতর্কতার সাথে কীভাবে সেগুলো ধুতে হয় সে সম্বন্ধে জানুন এই আর্টিকেল থেকে। ব্লিচযুক্ত ডিটারজেন্ট দিয়ে সময় নিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন ৬০ ডিগ্রী- ৯০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে কাপড় ধোঁয়া ও জীবাণুমুক্ত করতে নির্দেশনা দিয়েছে। এবং কাপড়গুলো ধোয়ার সময় অবশ্যই গ্লাভস পরিধান করুন। কাজ শেষ হয়ে গেলে হাত ভালভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত। কাপড় ধোয়ার  সময় যেন কোনভাবেই আপনার হাত মুখের কাছে না আসে। অবশ্যই খেয়াল করুন এবং এই সম্বন্ধে আরও জানতে পড়ুন এই ব্লগ। 

স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে কোয়ারেন্টাইন রুম যেভাবে ম্যানেজ করা হয়ে থাকে 

a mask and a mobile

রোগীদের কোয়ারেন্টাইন রুম এমন এক জায়গা হওয়া উচিত যেখানে জনসাধারণের আনাগোনা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। একটু বিচ্ছিন্নভাবেই কোয়ারেন্টাইন রুম বরাদ্দ করুন। কোয়ারেন্টাইন রুমগুলোতে অবশ্যই আলো বাতাস থাকতে হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ রুমগুলো কয়ারেন্টাইন রুম হিসাবে উপযুক্ত নয়। আর এগুলো যথাযথভাবে পরিষ্কার করাও অসম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এই কোয়ারেন্টাইন রুম হিসেবে সিংগেল রুম বেশ উপকারী। পরিষ্কার করা যেমন সহজ তেমনি আলোবাতাস চলাচলের জন্যও বেশ সহজ।  

হাসপাতাল বা বাসায় কোয়ারেন্টাইন রুম প্রস্তুত করা উভয় ক্ষেত্রেই কিছুটা কঠিন হতে পারে। কিন্তু বর্তমান এই পরিস্থিতিতে কোয়ারেন্টাইন রুম ছাড়া আর কোন উপায়ও নেই আসলে। করোনা ভাইরাসকে সাথে করে বেঁচে থাকার অভ্যাস আমাদের ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে এবার কেবল সমাধানের পালা। 

Write A Comment