অগোছালো বাসা, জিনিসপত্র এদিক-সেদিক এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে, গুছিয়ে রাখার নাম করে হয়তো স্তূপ করে সেই আলমারি বা ড্রয়ারের ভেতরেই রাখা হল। ফলাফল, আলমারি খুলতেই সব কিছু আবার পড়ে গেল। এভাবেই হয়তো সঠিক জায়গায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার অভাবে, কাজের সময় অনেক কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না। আর এসব কিছু করতে কত পরিশ্রমই না করতে হয়! তো কষ্ট করে গুছিয়ে রাখার পরিশ্রমটা যেহেতু করাই হয়, তাই একটু বুঝেশুনে করলে হয়তো ঝামেলাটাও কমে যাবে অনেকাংশে। আর এ জন্য করতে পারেন বাস্কেটের ব্যবহার ।
ঘরের ভেতরটা তাই একদম সাজানো-গোছানো, টিপটপ রাখতে প্রয়োজন হোম অরগানাইজারের। আলমারি, ড্রয়ার, শেলফ ইত্যাদি সবই মূলত হোম অরগানাইজারের ভূমিকাই পালন করে। তবে আজকে আমরা কথা বলবো বাস্কেট বা ঝুড়ি নিয়ে। কাপড় থেকে শুরু করে কসমেটিকস, খাবার, লন্ড্রি, খেলনা এমনকি গাছ যেকোনো কিছুই রাখতে পারেন নির্ধারিত বাস্কেটের মধ্যে। আর এই বাস্কেট ব্যবহারের ফলে ঘরের ভেতরটা যেমন দেখতে ভালো লাগে, তেমনি দরকারের সময় আপনি যে জিনিসটি খুঁজছেন, তা খুব সহজেই বের করতে পারবেন। বাস্কেটের ব্যবহার বর্তমান সময়ে বেশ ট্রেন্ডি। শৌখিনতার বসেও অনেকেই বাসার বিভিন্ন কোণে রাখেন বিভিন্ন সাইজ এবং আকৃতির ডিজাইনার বাস্কেট, যা একই সাথে হতে পারে ঘর সাজানোর নতুন এক সমাধান। তবে চলুন আজকের ব্লগে জেনে নেয়া যাক হোম অরগানাইজার হিসেবে বাস্কেটের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত।
খেলনা রাখার পারফেক্ট জায়গা
যাদের বাসায় ছোট বাচ্চা আছে, তারা জানেন খেলনা গুছিয়ে রাখা কী যে কঠিন এক কাজ! একদিকে গুছিয়ে রাখতে না রাখতেই আরেকদিকে চোখের পলকেই সব এলোমেলো হয়ে যায়। এ অবস্থায় অনেকটা বিরক্ত হয়েই আমরা গোছানোই বাদ দিয়ে দেই। কিন্তু এভাবে কতক্ষণ? তাই খেলনা গুছিয়ে রাখার বিশাল এই চ্যালেঞ্জ এখন সহজেই সমাধান করা যাবে যদি বাসায় করা হয় বাস্কেটের ব্যবহার।নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় জুড়ে থাকা খেলনাগুলো এখন থাকবে বেশ বড় একটি বাস্কেটের ভেতরে। বাচ্চারা যেহেতু যখন-তখন খেলনা বের করে ফেলে, তাই ড্রয়ারে বা কেবিনেটে খেলনা তুলে রাখার কাজটা একেবারেই অযথা। এর চেয়ে বিভিন্ন রুমের কোণায় কাপড়ের বাস্কেট বা ঝুড়ি রেখে দিলে, খেলা শেষে খেলনাগুলো আপনিও যেমন বাস্কেটে ভরে রাখতে পারবেন, তেমনি অল্প কিছুদিনের ট্রেনিং পেলে আপনার দেখাদেখি খেলা শেষে বাচ্চারাও খেলনাগুলো বাস্কেটে রেখে দিবে।
কাপড় অথবা সুতার বিভিন্ন ডিজাইনের বাস্কেট বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। আর এই বাস্কেটগুলো পরিষ্কার করাও অনেক সহজ। প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর হালকা সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে বা কাপড় দিয়ে মুছে খুব সহজেই আপনিও হোম অরগানাইজার হিসেবে বাস্কেট ব্যবহার করতে পারবেন।
স্টেশনারী রাখার প্রয়োজনে স্টাডি রুমে মিনি বাস্কেট
স্টেশনারী জিনিসগুলো সাধারণত খুব সহজেই হারিয়ে যায়। তাই এদিক-সেদিক ফেলে না রেখে ছোটো আকৃতির এক বা দুইটি বাস্কেট কিনে তা স্টাডি রুমের টেবিলে রাখতে পারেন। শুধু যে স্টেশনারী আইটেম রাখা যাবে তা কিন্তু নয়। বই, ম্যাগাজিন, ফাইল, এমনকি পেপার রাখার জন্যও ব্যবহার করতে পারেন সাইজ ভেদে বিভিন্ন প্যাটার্নের বাস্কেট। সাথে কোন বাস্কেটে কোন আইটেম রাখা হলো তা বুঝার সুবিধার্থে রঙিন কাগজে মার্কার বা সাইনপেন দিয়ে সংক্ষেপে নাম লিখে তা বাস্কেটের উপরে আঠা দিয়ে আটকে দিতে পারেন। যদি শেলফে বাস্কেটগুলো রেখে থাকেন, সেক্ষেত্রে জায়গাটা আরেকটু সুন্দর করে তুলতে শেলফে ইনডোর প্ল্যান্টস রাখতে পারেন।
ঘরের বিভিন্ন কোণের জন্য কর্নার বাস্কেট
খেলনা রাখার পাশাপাশি ঘরে এমন অনেক জিনিসই থাকে, যা রাখার জন্য প্রয়োজন হয় নির্দিষ্ট কোন জায়গা। যেমন ধরুন প্রতিদিন সকালে আসা পত্রিকা, দরজার পাশে ছাতা রাখা কিংবা রুমের ডেকোরেশন এর জন্য রাখা কিছু ফুল, এসব কিছুই কিন্তু রাখতে পারবেন বাস্কেটের মধ্যে। এতে করে ড্রইং রুম কিংবা লিভিং স্পেসের জায়গাটা এলোমেলো তো দেখাবেই না, বরং আপনিও জানবেন কোন জিনিসটি কোথায় রাখতে হবে। বিশেষ করে বলতে হয় এই বাস্কেটের কথা। যেহেতু বাহির থেকে আপনি বাস্কেটের ভেতরের কিছুই ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছেন না, তাই বাস্কেটের ভেতর জিনিসপত্র ফেলে রাখলেও তা দেখতে খারাপ দেখাবে না।
বিভিন্ন সাইজ এবং আকৃতির বাস্কেট বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে গোলাকার, ওভাল শেপ, লম্বাটে কিংবা চ্যাপ্টা ধরনের। প্রয়োজন ভেদে বাসার কোন কাজের জন্য বাস্কেটটি কেনা হচ্ছে, তা ভেবে কিনলে ঘরে রাখলে তা দেখতেও বেশ ফ্যাশানেবল দেখাবে।
লন্ড্রির কাজে বাস্কেটের ব্যবহার
যারা নিয়মিত বাসার বাইরে যান, তাদের তো সপ্তাহ শেষে ধোয়ার জন্য কাপড়ের বিশাল স্তূপ হয়ে যায়। কেননা সপ্তাহ জুড়ে কাজের ব্যস্ততায় হয়তো কাপড় ধোয়ার সময় হয়ে ওঠেনি। অন্যদিকে ধোয়ার জন্য রাখা কাপড় অগোছালো করে ফেলে রাখলে অনেক সময় পরবর্তীতে তা খুঁজতে অনেক সময় ও লেগে যায়। আর যদি বাসায় বাচ্চা থাকে, তবে তো আর কথাই নেই, ধোয়ার কাপড় অনেক হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই লন্ড্রি করার জন্য রাখা কাপড়গুলো এবার থাকুক আরেকটু অরগানাইজড ভাবে। এজন্য কাপড়ের ধরন বুঝে যেমন সাদা কাপড় এক বাস্কেটে, বাচ্চাদের কাপড় এক বাস্কেটে, কিংবা ভারী কাপড় গুলোর জন্য একটু বড় সাইজের বাস্কেটের ব্যবহার করতে পারেন। আর তাই অপরিষ্কার কাপড় এদিক-সেদিক ফেলে না রেখে বরং সেগুলো একসাথে করে রাখুন লন্ড্রি বাস্কেটে।
গাছ সাজাই বাস্কেটে
ঘরের ভেতর বা বাহিরে রাখা ছোট বা মাঝারি আকৃতির পাতাবাহার গাছের টব দড়ি বা পাটের বাস্কেটে রাখা এখন বেশ ট্রেন্ডি। যদিও বেতের ঝুড়িতে আপনি সরাসরি গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করতে পারবেন না, তবে শৌখিনতার সাথে ঘর সাজাতে বাস্কেটের ব্যবহার অনেকেরই পছন্দের। এমনকি প্লাস্টিকের রঙিন পট বা মাটির টবে থাকা গাছগুলো আরও সুন্দর দেখাতে সেগুলো বাস্কেটের মধ্যে রাখা যেতে পারে।
মূলত কী ধরনের গাছ রাখছেন এবং এর আকৃতি কত বড় এর উপর নির্ভর করেই বাস্কেট কিনতে হবে। বাস্কেটের সুবিধা হল আপনি পছন্দমত যেকোনো সাইজের গাছ লাগানোর জন্য তা ব্যবহার করতে পারবেন। এমনকি খুব সহজেই এই বাস্কেট সমূহ ঘরের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় সেট করতে পারবেন।
কিচেনে বাস্কেটের ব্যবহার
রান্নাঘরে জার বা বাক্সে খাবার স্টোর করা গেলেও অনেক সময় তা অতিরিক্ত জায়গা নিয়ে নেয়। যদিও আজকাল সব রান্নাঘরেই কেবিনেট করা থাকে তাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে তেমন একটা অসুবিধা হয় না। তবে এক্ষেত্রে কেবিনেটের বাইরে রাখা কাঁচের জার, মসলা কিংবা জেলি বা ব্রেড যদি মাঝারি সাইজের কোনও বাস্কেটে রাখা হয়, তবে তা গোছানো থাকবে। রান্নাঘর বা ডাইনিং টেবিলের জন্য মানানসই হবে এমন বাস্কেট কিনে তা সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার পছন্দমতো জায়গায়। এছাড়া কিচেন স্পেস ব্যবহারের বিভিন্ন টিপস সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন এই লিংকে।
বাঁশ, বেত কিংবা পাটের তৈরি বাস্কেটের যেকোনোটি আপনি বেছে নিতে পারেন। যা আপনি কিনতে পারবেন পান্থপথ-সহ, কলাবাগান, নিউমার্কেট, মিরপুর-সহ শহরের বিভিন্ন জায়গায়। সুযোগ থাকলে ঢাকার বাইরে থেকেও কিনতে পারেন বেতের বিভিন্ন ধরনের বাস্কেট। যার দাম বাস্কেটের সাইজ এবং আকৃতি ভেদে একেক জায়গায় একেক ধরনের হয়ে থাকে। ঝুড়ি ব্যাগ কিনতে চাইলে এছাড়া আরও যেতে পারেন আড়ং, যাত্রা, জয়িতা, দোয়েল চত্বর, সোর্স, ইউনিমার্ট-সহ বিভিন্ন জায়গায়। ঘর পরিপাটি রাখতে দারুণ এই বাস্কেটগুলো তাই হতে পারে আপনার ঘর সাজানোর নতুন এক উৎস।