Reading Time: 4 minutes

মাসলোর প্রয়োজনীয়তার মাপকাঠি (Maslow’s Hierarchy of Needs) অনুযায়ী, মানুষের প্রথম যে প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা দরকার সেটি হলো মানসিক চাহিদা। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য বাতাস, পানি, খাদ্য এবং বাসস্থানের পাশাপাশি মানসিক চাহিদাও অন্যতম উপাদান। এসব থেকে অনুমান করা যায় যে, পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বের জন্য পানি অপরিহার্য। শুধু মানুষ নয়, জগতের সকল প্রাণির বেঁচে থাকার জন্য পানির প্রয়োজন। এটি আমাদের বাস্তুসংস্থানের একটি অপরিহার্য উপাদান। যদিও পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে এবং এর উৎসও নবায়নযোগ্য, তবুও পৃথিবীর সকল স্থানে পানির প্রাপ্যতা সমান নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের মতো বৈশ্বিক শহরসহ পৃথিবীর আরও অনেক স্থানে পানির অভাব লক্ষ্য করা যায় এবং আমাদের শহর ঢাকাও এ তালিকা থেকে মুক্ত নয়। কেননা ঢাকার অনেক স্থানের অধিবাসীদের আজ পানির সংকটে ভুগতে হয়। মূলত এ কারণেই আমরা  কীভাবে আপনি বাড়িতে পানির অপচয় রোধ এবং এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে এমন ব্যবস্থা নেবেন সে সম্পর্কে কিছু টীপস নিয়ে আলোচনা করব।।

বৃষ্টির পানি জমানো

Rain falling on Sloped Tiled Roof

মানবসভ্যতায় পানি সংরক্ষণের জন্য প্রাচীনতম কার্যকর পদ্ধতির একটি হল বৃষ্টির জমানো পানি ব্যবহার। প্রাচীন পশুখাদ্য সংগ্রাহক কিংবা সভ্যতার ছোঁয়া না পাওয়া মানুষেরা ভূগর্ভস্থ পানির সঞ্চয় থেকে কূপ খনন করে পানি সংগ্রহ করার দক্ষতা অর্জন করেনি। তারা সবসময় নদীর পানির উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু সবসময় নদীর পানি সংগ্রহ করাও খুব সহজ কাজ না। এজন্য রান্নাবান্না এবং পান করার পরিস্কার পানির অত্যন্ত চমৎকার একটি উৎস ছিলো বৃষ্টির পানি। হাজার বছর পর বর্তমান সময়েও এটি একইভাবে সত্য। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ তেমন কঠিন নয় বরং এটি আপনাকে পানির সুব্যবস্থা সম্পন্ন বাড়ি তৈরীর ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য কিছু সাধারন ধাপ রয়েছে। চলুন, এখন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের সামগ্রিক পদক্ষেপের উপর আলোকপাত করা যাক।

প্রথমত, বৃষ্টির পানি ধারন বা সংরক্ষণ করার উপযোগী একটি মাধ্যম অথবা স্থানের প্রয়োজন। আপনার বাসার ছাদের উপরিভাগের যেকোন অংশে ঢালু কোন অংশের ব্যবস্থা থাকলে তা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত। এটি পানিকে নিচের দিকে ধাবিত করবে। বৃষ্টির পানি এখান থেকে নালার মধ্যে গিয়ে পড়বে যা পরবর্তীতে পাইপলাইনের মাধ্যমে বৃষ্টির পানির জন্য নির্ধারিত জলাধারে গিয়ে জমা হবে। জলাধার থেকে বৃষ্টির পানি বিতরণ পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হবে। জলাধারের অবস্থানের উপর নির্ভর করে পানি সরবরাহের কাজ অভিকর্ষ বলের প্রভাবে অথবা বৈদ্যুতিক মোটরের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যেতে পারে। এভাবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করলে এটি ট্যাপের পানির ব্যবহার কমিয়ে আপনার বাড়িকে পানি সরবরাহের দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলবে।

পানির অপচয় রোধ করতে সক্ষম এমন ডিজাইন করা

Man With Gardening Hose

আমরা অনেকেই বাগান করতে পছন্দ করি। এটি খুব কষ্টসাধ্য কাজ হলেও অনেক ফলপ্রসূও বটে। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে সুন্দর ফুলের দর্শন পাওয়া নিঃসন্দেহে একটি দিনের চমৎকার সূচনাকে নির্দেশ করে। কিন্তু এ ধরণের বাগান করতে অনেক পানির প্রয়োজন হয়। একটি সুন্দর ও কার্যকরী পরিকল্পনাই পারে পানির অপচয় অনেকাংশে নির্মূল করতে এবং পানিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাসা তৈরীর ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করতে। আমরা যদি বাগানে বীজতলা তৈরী করতে চাই, তাহলে সবার প্রথমে আমরা সেখানে মালচিং করতে পারি। যে মাটিতে চারা রোপণ করা হবে মালচ সে মাটিকে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ করে তোলে। পচনশীল পাতা, সার অথবা গাছের ছিন্ন বাকল এসব নিয়ে তৈরী হয় জৈব মালচ। আপনার সখের বাগান তৈরী করতে বাড়তি খরচ হতে পারে, কিন্তু নিজস্ব বাগানের উপকারিতা বহুগুণে এর খরচকে ছাড়িয়ে যায়। এটি মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে, মাটির ভেতরের পরিবেশ উন্নত করে এবং মাটি থেকে পানির বাষ্পীভূত হয়ে যাওয়া প্রতিহত করে।

এছাড়াও আমরা এমন গাছ বাছাই করতে পারি যেগুলোর জন্য খুব বেশি পানির দরকার হয় না। গাছের মধ্যেও রকমফের আছে। কিছু গাছের জন্য যেমন প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়, কিছু কিছু গাছের জন্য আবার দরকার তুলনামূলক কম পানি। তাই গাছ বাছাই করার সময় কিছুটা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়া যেতে পারে পানির অপচয় রোধ করতে। এছাড়া বাগানে পানি দেয়া বা সেচের জন্য আধুনিক বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন ড্রিপ ইরিগেশন, স্প্লিংক্লার ইরিগেশন, সোকার হোজ, ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। সাথে সাথে বৃষ্টির জমানো পানি দিয়েও এই সেচের কাজ করা যেতে পারে প্রয়োজনমাফিক। 

পানির অপচয়নিরোধী পার্টস ব্যবহার

Facuet

বাড়িতে পানির অপচয় কমানোর আরেকটি পদ্ধতি হল পানির অপচয়নিরোধী পার্টস ব্যবহার করা। সারা বাড়িতে যে যে যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ পানি ব্যবহারের সাথে জড়িত তার সবগুলোই আধুনিক কী না তা নিশ্চিত করুন। প্রয়োজন হলে আপডেট করে নিন। বিভিন্ন ফিচার যেমন ডুয়াল ফ্ল্যাশ, লো-ফ্লো ফিক্সার পানির অপচয় রোধে সাহায্য করে। কারণ বাথরুমের প্রচুর পানি ব্যবহৃত হয়। আর সামান্য পানি সেখানে সেভ করতে পারলে বছরে দেখা যায় কয়েক হাজার লিটার পানির অপচয় রোধ করা গিয়েছে! এরকম বিভিন্ন উন্নত ও আধুনিক উপায় ব্যবহার করেও পানি খরচ কমিয়ে আনা যায়।

পানি ছাড়া মানুষ অচল। সেই প্রাচীনকাল থেকে দেখা গিয়েছে, নদীর ধার ঘেঁষে সভ্যতা গড়ে উঠেছে, তা পানির সহজলভ্যতার জন্যই। আজ মানুষ বিশুদ্ধ পানি নিয়ে চরম সংকটে আছে। তাই পানির অপচয় রোধে সাবধান হবার সময় এখনই! এ কথা মাথায় রেখেই আমরা পানি এবং এর উপযুক্ত ব্যবহার নিয়ে সিরিজ আর্টিকেল লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভবিষ্যৎ আর্টিকেলগুলো দেখতে আমাদের বিপ্রপার্টি ব্লগে চোখ রাখতে ভুলবেন না!

Write A Comment