পানি একটি নবায়ন যোগ্য সম্পদ, অন্তত বিজ্ঞান তাই বলে। আমরা অনেকেই আমাদের শিক্ষা জীবনে পানি-চক্র পড়েছি। জলাধার, জলীয় বাষ্প, মেঘ, বৃষ্টি হয়ে কীভাবে পানি চক্র পুরণ করে। আবার পৃথিবীতে পানির প্রাচুর্যও আছে। ভূপৃষ্ঠের ৭১ শতাংশই পানি দিয়ে পরিপূর্ণ, এ তথ্যও অনেকের অজানা নয়। তবে আপনি কি জনেন, এত অসীম জলরাশির মধ্যে, স্বাদু পানি অর্থ্যাৎ সুপেয় পানির পরিমাণ মাত্র ০.৩ শতাংশ? তাতেও চিন্তার কিছু ছিল না কেননা এই পরিমাণ মানুষের জন্য যথেস্ট। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু ক্রএছে, পৃথিবীর অনেক স্থানেই শুরু হয়েছে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার। আর সেজন্যই সমগ্র মানবজাতিকে একটি সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য একযোগে কাজ করতে হবে পানির অপচয় রোধ কল্পে। পানি ব্যবহারে যতটুকু সম্ভব সাশ্রয়ী হতে হবে। আমাদের আগের লেখায় আমরা দেখেছি কীভাবে একটি বাড়িকে পানির সাশ্রয়ী ব্যবহারের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা যায়। আমাদের পানি সংক্রান্ত লেখার এবারে আমরা দেখব পানির অপচয় রোধ করে এমন বাড়ি কীভাবে তৈরি করা সম্ভব, কী কী উপায় রয়েছে সেজন্য।
বাড়িতে পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া
পানির ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিটি পর্যায়ে মিতব্যয়ী হতে হবে। এর অর্থ আসলে কী? আমরা হয়ত সবসময় সেভাবে উপলব্ধি করতে পারি না তবে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে আমরা শতশত লিটার পানি ব্যবহার করে যাচ্ছি। আপনার বাথরুম ফ্ল্যাশ করলে প্রায় ১০ লিটার পানি ব্যবহার হয়, একবার শাওয়ার বা ঝর্না ছেড়ে গোসল করতে দরকার ৫০-৬০ লিটার পানি। বাড়ির কোন সাধারণ ট্যাপ খুলে রাখলে প্রতি মিনিটে ৬ লিটারের চেয়েও বেশি পানি প্রবাহিত হয়। অর্থ্যাৎ প্রতিবার আপনি গোসল করুন, বাথরুম করুন কিংবা দাঁত ব্রাশ করুন, সেখানে একটি খরচ সংযুক্ত আছে যা অনেক সময়ই চোখ এড়িয়ে যায়। এতে যে শুধু আপনার পানির বিলের উপর প্রভাব পড়ে তাই না, এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে পরিবেশের উপরেও। আর এজন্যই আমাদের উচিত প্রতিটি ক্ষেত্রে বাড়িতে পানির অপচয় রোধ করা।
বাথরুমে পানির অপচয় রোধ
অনেকের অভ্যাস আছে বাথরুমে ধূমপান করার, অনেকে কমোডে টুকটাক ময়লাও ফেলে থাকেন। পরিবেশের প্রতি সচেতন হলে আজকেই এসব অভ্যাস ত্যাগ করুন। শুধুমাত্র সিগারেটের অবশিষ্টাংশের জন্য ১০ লিটার পানি ব্যবহার করা কি উচিত? ডাস্টবিন কিংবা অ্যাস্ট্রেই কিন্তু যথেষ্ট। শাওয়ারে গসল করার সময় চেষ্টা করুন কম পানি ব্যবহার করতে, সম্ভব হলে বালতিতে পানি নিয়ে গোসলের অভ্যাস গড়ে তুলুন। মুখ-হাত ধোয়ার সময় কিংবা দাঁত মাজার সময় ট্যাপ বন্ধ রাখতে ভুলবেন না। একই কথা প্রযোজ্য শেভ করার সময়ও।
গৃহস্থালীর কাজে পানির অপচয় রোধ
কাপড় কিংবা থালাবাসন ধোয়ার সময়েও পানির অপচয় রোধ করার সুযোগ রয়েছে। অল্প কাপড় দোয়ার চাইতে একেবারে বেশি করে কাপড় নিয়ে ধুয়ে ফেললে পানি অপচয় রোধ হয় অনেকটাই। থালাবাসন ধোয়ার সময় একটি বড় গামলাতে পানি নিয়ে আস্তে আস্তে তার ভেতরেই সব বাসনকোসন ধুয়ে ফেলুন। এসময় পানির ট্যাপ খোলা রাখলে অনেক বেশি পানির অপচয় হবে। শুধু থালাবাসনই নয় বরং তরুতরকারি, সবজি ধোয়ার সময়ও একই কায়দা অনুসরণ করুন।
ঘরের বাইরে পানির অপচয় রোধ
শুধু যে ঘরের ভেতর পানির অপচয় হয়, এমন তো না। ঘরের বাইরেও অনেক অপচয় রোধ করার সুযোগ রয়েছে। গাছে পানি দেয়া, গাড়ি ধোয়া, গ্যারেজ কিংবা ওয়াক ওয়ে পরিষ্কার, সব কিছুর জন্যই প্রচুর পানির প্রয়োজন। গাছে আপনি দেবার জন্য গোসল বা কাপড় ধোয়ার কাজে যে পানি ব্যবহার হয়েছে সেটি পূনঃব্যবহার করতে পারেন। গ্যারেজ পরিষ্কারের জন্য শুধু পানির ফ্লো ব্যবহার না করে একটি শলার ঝাড়ু ব্যবহার করুন, পানির অপচয় রোধ হবে অনেকটাই। শুধুমাত্র পাইপ আর স্প্রে দিয়ে একটি সাধারণ গাড়ি ধুতেও ৩০০ লিটারের বেশি পানি প্রয়োজন। তাই একটি বালতিতে ফেনা-পানি নিন এবং একটি স্পজের মাধ্যমে সমস্ত গাড়ি মুছে ফেলুন। এরপর সামান্য পানি খরচ করে গাড়িটি ধুয়ে ফেলুন।
কোথাও লিক থাকলে সারিয়ে ফেলুন
সব বিষয়ে সাবধান থাকলেও যদি পানির লাইনের কোথাও লিক থাকে, তাহলে তাই পানির বিশাল অপচয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। মনে হতে পারে একটি ট্যাপ টাইট হয়ে না লাগলে এ আর এমন কী? কিন্তু প্রতি সেকেন্ডে যদি এক ফোঁটা পানিও পড়ে, সারাদিনে পানির অপচয়ের পরিমাণ দাড়ায় ৭০ লিটার! এজন্য যে কোন লিক, নষ্ট ট্যাপ, ফাটা পাইপ বা জোড়ার দিকে লক্ষ্য রাখুন পানির অপচয় রোধ করতে চাইলে।
তাই বলা যায় যে, ঠিকভাবে উপলব্ধি না করেও মানুষ অনেক বেশি পানি ব্যবহার করে প্রতিদিন। আমাদের প্রতিদিনের অভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন আনলেই আমরা পানির অপচয় রোধ করতে পারি খুব সহজেই। এতে যে শুধু পানি দূষণ কমবে তাই না বরং প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার কিছুটা পরিশোধিত হবে। সবাই একসাথে করতে পারলে আসলেই বিশাল অবদান আছে এ সবকিছুর।
এমন আরও লেখা পড়তে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন বিপ্রপার্টি ব্লগ থেকে, যেখানে আমরা প্রতিদিন নতুন নতুন লাখা দিচ্ছি। আমাদের লেখা নিয়ে কোন মন্তব্য থাকলে নির্দ্বিধায় তা জানিয়ে দিন কমেন্ট সেকশনে।