Reading Time: 4 minutes

সবার একই স্বপ্ন নিজের একটা বাড়ি হবে। হোক সে বাড়ি ছোট বা বড়, খুব সাধারণ কিংবা বিলাসবহুল নিজের একটা স্বপ্নকে এভাবে নিজের করে নেওয়ার মত শান্তি আর আনন্দ কোন কিছুতেই নেই। বাড়ি তৈরি করার স্বপ্ন দেখা থেকে শুরু করে বাড়ি তৈরির কাজ সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত এক মূহুর্তের স্বস্তি মেলে না। কতগুলো জরুরী ধাপ পেরিয়ে তবেই একটি বাড়ি নিজের হয়ে ওঠে। সেই ধাপগুলো সম্বন্ধে আমরা অনেকেই জানি না। যেহেতু জানি না, সহজেই আমরা ঠকে যাই। না জেনে বুঝে খরচ করে ফেলি অনেকগুলো টাকা। অথচ, বাড়ি তৈরির আগে আইনী ধাপগুলো এতটাও কঠিন আর বোঝার জন্য অসম্ভব নয়। চাইলে, আপনি নিজেই বাড়ি তৈরির আগে আইনী ধাপগুলো সম্বন্ধে জানতে পারবেন। নিজের স্বপ্ন পূরণ হবার পথগুলো কিন্তু নিজেরই চিনতে হয়! আসুন, বাড়ি তৈরির আগে আইনী ধাপগুলো সম্বন্ধে জানি। নিজের একটি বাড়ি তৈরির আগে আপনাকে যে সমস্ত আইনী কাজ নিজেই করতে হবে সেগুলো হল, 

বিল্ডিং প্ল্যান 

বিল্ডিং প্ল্যান
বিল্ডিং প্ল্যান বা স্থাপত্য নকশা

বাড়ি তৈরির আগে আইনী ধাপগুলো এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে আইনী ধাপ সেটি হচ্ছে বিল্ডিং প্ল্যান বা স্থাপত্য নকশা। এই বিল্ডিং প্ল্যানের অনুমোদন না থাকলে আপনি বাড়ি তৈরি করতে পারছেন না। আপনার বাড়ির জমিটি যদি সিটি কর্পোরেশনের ভেতর হয়ে থাকে এক্ষেত্রে আপনার সিটি কর্পোরেশনের “নকশা অনুমোদন শাখা” থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। রাজউকের মধ্যে হয়ে থাকলে রাজউক অফিস থেকে সেই একই নকশা অনুমোদন শাখা থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। এছাড়া, “স্থানীয় সরকার” হলে এক্ষেত্রে, জেলা অফিস, উপজেলা অফিস এবং ইউনিয়ন অফিস থেকে ভবন নকশার ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। জমির লোকেশন অনুযায়ী এই অফিসগুলো পরিবর্তিত হতে পারে কিন্তু, ছাড়পত্র গ্রহণের শাখা বা ডিপার্টমেন্ট একই থাকছে। এবং খেয়াল রাখা জরুরী, বিল্ডিং প্ল্যানটি যেন, আই এ বি দ্বারা রেজিস্টার্ড আর্কিটেক্ট দ্বারা করানো হয়। কেননা, আপনার বাড়ির প্ল্যানটি রেজিস্টার্ড আর্কিটেক্ট দ্বারা হয়েছে কিনা এটাও নির্ভর করে ছাড়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে। 

ফাউন্ডেশন

ফাউন্ডেশন দেয়া হচ্ছে
ফাউন্ডেশন প্ল্যান করতে হবে

ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি বাড়ি তৈরির আগে আইনী ধাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জরুরী। ফাউন্ডেশন দু-ধরণের হয়ে থাকে, ১. গভীর ভিত্তি ( Deep Foundation) এবং ২. অগভীর ভিত্তি (Shallow Foundation)। বাড়ি তৈরির আগে যে ধরণের ফাউন্ডেশনই আপনি বেছে নেন না কেন, তা বিল্ডিং প্ল্যানের মতই “নকশা অনুমোদন শাখা” থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। ভবনের লোড বা ক্যাপাসিটি অনুযায়ী ক’তলা ভবন হবে বা ভবন সংক্রান্ত সকল তথ্য আপনি এই ফাউন্ডেশন প্ল্যানে পেয়ে যাচ্ছেন। বিল্ডিং প্ল্যানটা আপনি করছে আর্কিটেক্ট দ্বারা আর ফাউন্ডেশন প্ল্যান করতে হবে আইইবি দ্বারা রেজিস্টার্ড ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা। এবং ফাউন্ডেশনের স্ট্রাকচারাল প্ল্যানটা অবশ্যই আইইবি অনুমোদিত ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে করানো জরুরী। নয়তোবা, “নকশা অনুমোদন শাখা” থেকে বাতিল হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। 

ভবনের উচ্চতা বা তলা বিষয়ক 

উঁচু ভবন
ভবনের উচ্চতা নির্ভর করে এর সামনে কতটুকু পরিমাণের রাস্তা রয়েছে

বিল্ডিং বা কন্টস্ট্রাকশন আইনের ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) অনুযায়ী জমির পরিমাণ, সামনের রাস্তার প্রশস্ততা ইত্যাদি দেখে তবেই ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তারপর, ফ্লোরের উচ্চতা ক্লিয়ারেন্সের জন্য “সিভিল এভিয়েশন অথরিটি” থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। যদিও ভবনের উচ্চতা নির্ভর করে এর সামনে কতটুকু পরিমাণের রাস্তা রয়েছে। ধরা যাক,৬০ ফিটের বেশি প্রশস্ত রাস্তা হলে তাহলে এফএআর অনুযায়ী যেকোন উচ্চতার ভবন তৈরি করা সম্ভব। এই তলা সংক্রান্ত অনুমতি আপনার  “নকশা অনুমোদন শাখা” থেকে নিতে হবে এবং বিমানবন্দরের আশেপাশের এলাকা হলে, সিভিল এভিয়েশন থেকে এর ছাড়পত্র অবশ্যই নিতে হবে। 

ইউটিলিটি কানেকশন 

ইউটিলিটি সার্ভিস
এই সার্ভিস গুলো সম্পর্কে জানতে হবে

আপনি যদি আগে থেকেই এই সার্ভিস গুলো সম্পর্কে জেনে থাকেন তাহলে বাড়ি তৈরির সময় আপনার এই সব বিষয়ে ছাড় পত্র পেতে সুবিধা হবে। বাড়ি তৈরির আগে সব ধরনের ইউটিলিটি সার্ভিস যেমন- পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পয়োনিষ্কাশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অগ্নিনিরোধক ব্যবস্থা ইত্যাদি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংযোগ থাকতে হবে। বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে পিডিবি, ডিইএসএ, ডিইএসসিও,ডিপিডিসি এবং পল্লী বিদ্যুত এ আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। পানির ক্ষেত্রে ওয়াসাতে আবেদন জমা দিতে হবে। এবং গ্যাস সংযোগের জন্য তিতাস বা জ্বালানি মন্ত্রণালয়য়ে আবেদন করতে হবে। আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর সংযোগ স্থাপনের কাজ শুরু করতে হবে। আপনার প্রপার্টিটি যদি রাজউকের মধ্যে হয়ে থাকে সেক্ষত্রে, অবশ্যই অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নিতে হবে।

প্রপার্টি কেনা হয়ত খুব সহজ বিষয় কিন্তু আইনগতভাবে প্রপার্টির মালিকানা নিজের করে নেয়া অনেক জটিল এবং সূক্ষ্ম একটি বিষয় যা করতে হয় অনেক সাবধানে, যত্ন নিয়ে। বাড়ি তৈরির আগে আইনী ধাপগুলো ভালো মত আমাদের জানা প্রয়োজন তবেই বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া উত্তম। 

শুধু বাড়ি তৈরির জন্য জমি বা জায়গা প্রস্তুত করলেই শেষ নয়। বাড়ি তৈরির কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে সেগুলোও মেনে চলা উচিৎ। ইমারত তৈরির নিয়ম কানুনগুলো অবশ্যই মেনে বাড়ি তৈরি করতে হবে নয়তবা সরকার যে কোন সময় ভেঙ্গে দিতে পারে। এছাড়াও বাড়ি তৈরি খরচাদি সম্বন্ধে জানতে হবে। একটা বেসিক পরিকল্পনা হাতে নিয়ে তবেই নামা উচিৎ। কোন একটি জমি বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনা অর্থ কিন্তু শুধুমাত্র সেই সম্পত্তির জন্য অর্থ পরিশোধ নয়। বরং আরও বেশকিছু আইনী অন্যান্য খরচ জড়িত থাকে একটি সম্পূর্ণ ট্রাঞ্জাকশনের সাথে। তাই কোন প্রপার্টি কেনার বাজেট করার সময় অবশ্যই খরচের হিসাব করতে হবেআজকের ব্লগটি কেমন লেগেছে? এই তথ্য কি কোন উপকারে এসেছে? আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন। 

2 Comments

  1. Shuvashish Chakroborty

    Please send me the soft copy of building purchase with land

Write A Comment