Reading Time: 3 minutes

পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার বা সমুদ্র সৈকতে দৌড়ে বেড়ানোর অনুভূতিগুলো আপনার কাছে কেমন?  শুধু আপনি না, প্রকৃতির কাছাকাছি থাকলে যে কারোরই আলাদা এক রকম ভালো লাগা তৈরি হয়। প্রাণবন্ত মন আর ভরপুর স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে উপভোগ করা যায় জীবনের সব আয়োজন। আপনিও যদি প্রকৃতিপ্রেমী এমন একজন মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে বায়োফিলিক ডিজাইনের ধারণাটি আপনার জন্যই। বায়োফিলিক ডিজাইন এমন একটি স্থাপত্য ডিজাইন যার উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষকে প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে আসা। প্রাকৃতিক আলো এবং বায়ু চলাচল, প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপ এবং এরকম আরো অসংখ্য প্রাকৃতিক অনুষঙ্গ গুলোকে সুপরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা হয় বায়োফিলিক ডিজাইনে। ফলে ভবনের অভ্যন্তরে একটি পরিবেশ বান্ধব স্বাস্থ্যকর স্পেস বজায় থাকে সব সময়। 

আজকের ব্লগে বায়োফিলিক ডিজাইনের আরো কিছু শাখা প্রশাখা থেকে চলুন ঘুরে আসা যাক আর জেনে নেয়া যাক এই ডিজাইনটির জনপ্রিয়তার কারণ সম্পর্কে। 

বায়োফিলিক ডিজাইন কী 

biophilic design
বায়োফিলিক ডিজাইনকে তাই বলতে পারেন সবুজ স্থাপত্য

সহজ কথায়, এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে স্থপতি বা ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা বিল্ডিং স্পেসে অত্যন্ত নান্দনিকভাবে প্রকৃতির অনুষঙ্গগুলোকে ব্যবহার করে। এটি ভবনের বাসিন্দাদের মানসিক ও শারিরীক সুস্থতা বজায় রাখতে অপরিসীম ভূমিকা রাখে। বায়োফিলিক ডিজাইনকে তাই বলতে পারেন সবুজ স্থাপত্য। ১৯৮৪ সালে বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী এডওয়ার্ড ও উইলসন সবুজ স্থাপত্য বা বায়োফিলিক ডিজাইন এর এই ধারণাটি প্রথম চালু করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে ধারণাটি ছিল মানুষকে বাড়ির মাঝে আরও বেশি করে গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করা। তবে সময়ের সাথে সাথে বর্তমানে বায়োফিলিকের এই ধারণাটি আরো বেশি বিকশিত হয়েছে।

বায়োফিলিক ডিজাইনের ৬টি নীতি 

বায়োফিলিক ডিজাইন এর ৬টি নীতি রয়েছে

বায়োফিলিক ডিজাইন মানেই হল, যে স্থাপত্যে থাকবে প্রকৃতির উপস্থিতি, সাথে বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থা, গাছপালা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক অনুষঙ্গের ছোঁয়া, যা ভবনের ভেতরের পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলবে। তবে কেবলমাত্র এই উপাদানগুলো থাকলেই যে সেটি বায়োফিলিক ডিজাইনে নির্মিত ভবন হবে তা কিন্তু নয়। বায়োফিলিক ডিজাইন এর ৬টি নীতি রয়েছে যা প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর সাথে সাথে ডিজাইনের ধরণকেও প্রভাবিত করে। এগুলো হচ্ছে- 

  • পরিবেশগত ফিচার 
  • প্রাকৃতিক আকার ও আকৃতি 
  • নিরাময় প্রক্রিয়া 
  • আলো ও স্পেস 
  • স্পেস এর সুব্যবহার 
  • মানব-প্রকৃতির বিদ্যমান সম্পর্ক 

কেন জনপ্রিয়

সুস্বাস্থ্য এর অধিকারী হতে বাড়ি নির্মাণে মানুষ বায়োফিলিক ডিজাইনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে

বায়োফিলিক ডিজাইনের বিষয়টিকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে আরো বেশি উত্সাহিত করা হয়েছে।  গবেষণায় দেখানো হয় যে বাড়ির গাছপালা বা প্রাকৃতিক আলোর মাধ্যমে, মানুষ প্রকৃতির সাথে আরও বেশি সংযুক্ত থাকতে পারে এবং এটি স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। বর্তমানে সুস্বাস্থ্য নিয়ে মানুষ অনেক বেশি সচেতন । আর এ কারণেই দীর্ঘায়ু লাভ করতে এবং সুস্বাস্থ্য এর অধিকারী হতে বাড়ি নির্মাণে মানুষ বায়োফিলিক ডিজাইন কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। যার ফলে এটি এখন অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ডিজাইন ট্রেন্ড। 

এখন মানুষ পরিবেশ বান্ধব কাঠামোর প্রতি ক্রমশ আগ্রহী হয়ে উঠছে। ফলে বায়োফিলিক ডিজাইন এর ধারনাটি তাঁদের মধ্যেও একটি বাড়তি আবেদন সৃষ্টি করছে। যদিও এখন পর্যন্ত খুব কম মানুষই জানে যে,  বায়োফিলিক শব্দটি বলতে আসলে কী বুঝায়। সবুজ ছাদ, আউটডোর ইভেন্ট স্পেস এবং শক্তিশালী সেন্সর নিয়ন্ত্রিত আলোর মতো ফিচার গুলো আসলে বায়োফিলিক ডিজাইনে প্রতিফলিত হয়। এই বিষয়গুলো  একটি ভবনে তা নিশ্চিত করাও খুব একটা কঠিন নয়। আর এজন্যই ভবনের পরিবেশগত মান ধরে রাখতে বর্তমানে অনেক মানুষই ঝুঁকছে বায়োফিলিকের দিকে। 

বায়োফিলিক ডিজাইনের কিছু পরিবেশগত উপকারিতাও রয়েছে

তবে কেবল সামাজিক বা স্বাস্থ্যগত সুবিধাই নয়, এর কিছু পরিবেশগত উপকারিতাও রয়েছে। বায়োফিলিক ডিজাইনের অন্যতম সুন্দর দিকটি হল এখানে মাঝারি আকৃতির গাছপালা, ছোট ছোট পাত্রে ইনডোর প্ল্যান্টস, দেয়ালের চারপাশে ঝুলানো গাছের ঝোপ ইত্যাদি দিয়ে পুরো ইন্টেরিয়রটা ডিজাইন করা হয়। দারুণ এই প্রক্রিয়ায় প্রপার্টির ভেতরের পরিবেশ থাকে সবুজে আচ্ছাদিত। যা কার্বন ডাই অক্সাইডকে শোষণ করে নিয়ে ঘরের মাঝে বিশুদ্ধ বাতাস সরবরাহ করে। যা শক্তির অপচয় রোধ করে এবং বৈদ্যুতিক বিলের মত  দীর্ঘমেয়াদী খরচগুলো কমিয়ে আপনাকে সাশ্রয়ী করে তোলে।  

বিশ্ব উষ্ণায়নের এই সময়ে, পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে। আর এ কারণেই নিজের ও পৃথিবীর জন্য সবুজের উপস্থিতি সবচেয়ে জরুরি। এক্ষেত্রে বাড়ি নির্মাণের সময়েই যদি বায়োফিলিক ডিজাইন অনুসরণ করা যায় তা হবে নিজের ও পরিবেশের জন্য সেরা সিদ্ধান্ত। আজকের ব্লগটি আপনার বাড়ি নির্মাণের সিদ্ধান্তকে কতোটা প্রভাবিত করলো আমাদের জানান কমেন্টে।  

Write A Comment

Author