Reading Time: 4 minutes

আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে কিছুটা পরিবর্তন আনতে বায়োফিলিক ডিজাইন হতে পারে নান্দনিকতার নতুন এক ধাপ। স্থাপত্যে প্রকৃতির ছোঁয়া এবং সবুজের উপস্থিতি  এই ডিজাইনের অন্যতম প্রধান একটি উপাদান। বায়োফিলিক স্থাপত্যে যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়, তা হল বাড়ির বিভিন্ন কর্নারে থাকা ছোট ছোট প্ল্যান্টের পট, ঘরের ভেতর প্রাকৃতিক আলোর প্রবেশ এবং পুরো ঘর জুড়ে থাকা প্রকৃতির রঙের থিম। আর তাই এক কথায় বলতে গেলে বায়োফিলিক ডিজাইন মানেই হল যে স্থাপত্যে থাকবে প্রকৃতির উপস্থিতি, সাথে বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থা, গাছপালা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক অনুষঙ্গের ছোঁয়া, যা ভবনের ভেতরের পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলবে।   

রিয়েল এস্টেট স্থাপত্যে সবুজের উপস্থিতি 

৯০ এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ২০০০ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত সময়ে স্থাপত্য শিল্পে এক ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যা মূলত রিয়েল এস্টেট স্থাপত্যে প্রকৃতির উপস্থিতিকে অনুপ্রাণিত করে। এই ডিজাইনের মূল লক্ষ্যই হল পরিবেশবান্ধব এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী উপায়ে  ভবনের অবকাঠামো তৈরি করা। বায়োফিলিক ডিজাইনে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। বায়োফিলিক ডিজাইন এর এই কনসেপ্ট যে শুধুমাত্র একটি ফিচার, তা কিন্তু নয়। কেননা সময় যত এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে সবুজের উপস্থিতি এবং এর চাহিদাও যেন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের এই সময়ে, পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় রিয়েল এস্টেট এর কাঠামো ডিজাইন করার সময় যদি পরিবেশবান্ধব আর্কিটেকচারাল ট্রেন্ড অনুসরণ করে ডিজাইন করা যায়, তবে তা প্রকৃতি এবং মানুষ সবার জন্যই উপযোগী হবে। তবে চলুন রিয়েল এস্টেটে বায়োফিলিক ডিজাইন এর ট্রেন্ড সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।        

স্কাইলাইট এবং প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহার 

বায়োফিলিক ডিজাইন এর জন্য সিলিং বা ছাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। উজ্জ্বল আবহ সাথে দারুণ সব রঙ উপস্থাপন করতেই মূলত আর্কিটেক্টরা এই স্পটটি বেছে নেন। একদিকে প্রাকৃতিক আলো অন্যদিকে প্রকৃতির আকর্ষণীয় সব রঙে আশেপাশের পরিবেশ যেন আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠে বায়োফিলিক ডিজাইনের মাধ্যমে। এছাড়া স্কাইলাইট বা আকাশের আলো প্রবেশের জন্য চমৎকার সব প্যাটার্ন এখানে ব্যবহৃত হয়। তবে সবচেয়ে দারুণ বিষয়টি হল এক্ষেত্রে আপনি সিলিং বা ছাদটি প্ল্যান্টস ঝোলানোর জন্য ব্যবহার করতে পারবেন। এতে করে ছাদের অংশের সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ হবে। শুধু তাই-ই নয়, সিলিং বরাবর ঝোলানো এই প্ল্যান্টসগুলোর মাধ্যমে প্রকৃতির আলো রুমের ভেতর প্রবেশের মাধ্যমে তা আলো-ছায়ার দারুণ এক আবহ সৃষ্টি করবে। 

বায়োডায়নামিক লাইটিং এর ব্যবহার 

বায়োডায়নামিক লাইটিং
বায়োডায়নামিক লাইটিং দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি সাশ্রয়ী

কমার্শিয়াল লাইটিং এর ক্ষেত্রে বায়োডায়নামিক লাইটিং এর ব্যবহার বেশ নতুন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বায়োফিলিক ডিজাইন এ প্রাকৃতিক আলোর প্রয়োগ করা। এ ধরনের আলোর ইন্টারেস্টিং দিক হল এটা ঘরের ইন্টেরিয়রকে আরও আলোকিত করে তোলে। ঘরের ভেতরে প্রতিফলিত হওয়া এই সূর্যালোক স্বাভাবিকের চেয়ে উজ্জ্বল আলো সৃষ্টি করে। যা কিনা সার্কাডিয়ান রিদম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং আমাদের ঘুমের প্যাটার্ন এবং মেজাজ ঠিক রাখতে সহায়তা করে থাকে। বায়োডায়নামিক লাইটিং এমন এক ধরনের লাইটিং সিস্টেম যা ঘরের ভেতরে আলোর প্রয়োজনীয়তা বুঝে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নিয়ন্ত্রিত হয়। ফলে বিদ্যুতের অতিরিক্ত খরচও কমে আসে। 

পট প্ল্যান্টে সবুজের সতেজতা  

বায়োফিলিক ডিজাইনের অন্যতম সুন্দর দিকটি হল এখানে মাঝারি আকৃতির গাছপালা, ছোট ছোট পাত্রে ইনডোর প্ল্যান্টস, দেয়ালের চারপাশে ঝুলানো গাছের ঝোপ ইত্যাদি দিয়ে পুরো ইন্টেরিয়রটা ডিজাইন করা হয়। দারুণ এই প্রক্রিয়ায় প্রপার্টির ভেতরের পরিবেশ থাকবে সবুজে আচ্ছাদিত। প্রপার্টির ভেতরে গাছ লাগানো ছাড়াও বায়োফিলিক ডিজাইন এর ক্ষেত্রে সবুজ রঙ এবং এই রঙের থিম ব্যবহারে ডিজাইনাররা বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আর সবচেয়ে চমৎকার দেখায় যখন ভবনের কোন দেয়ালের ডেকোরেশনের জন্য ব্যবহার করা হয় জীবন্ত গাছের দেয়াল।        

সবুজে আচ্ছাদিত ওয়াল ডিভাইডার 

সবুজে আচ্ছাদিত ওয়াল ডিভাইডার
বায়োফিলিক ডিজাইনে সিমেন্টের দেয়ালের বদলে ব্যবহৃত হয় সবুজে আচ্ছাদিত পার্টিশন

দুইটি রুমের মাঝে বিভাজন তৈরির জন্য আমরা সাধারণত দেয়াল, স্লাইডার বা গ্লাসের দরজা ব্যবহার করে থাকি। তবে বায়োফিলিক ডিজাইনের ক্ষেত্রে ভিন্নতা আসে যখন ডিভাইডার হিসেবে ব্যবহৃত হয় সবুজ গাছের পার্টিশন। গাছগাছালি বেশি থাকা মানে সেখানে থাকছে বিশুদ্ধ এক আবহ, যা রিয়েল এস্টেট এর ইন্টেরিয়রে যোগ করবে নতুন এক মাত্রা। উঁচু দালানকোঠার ভেতরের পরিবেশটা যেন গুমোট না থাকে, সে জন্য সবুজে আচ্ছাদিত এই ওয়াল ডিভাইডার বায়োফিলিক ডিজাইনের অন্যতম একটি ফিচার হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে ওপেন স্পেস ইন্টেরিয়রে এই গাছের পার্টিশন ঘরের ভেতরের পরিবেশটাকে আরও সতেজ করে তুলবে। আর এর সাথে ইন্টেরিয়র এর ডিজাইনিং এ থাকবে প্রকৃতির ছোঁয়া।   

টেকসই এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য কাঠের ব্যবহার

বায়োফিলিক ডিজাইন এর জন্য ব্যবহৃত কন্সট্রাকশন ম্যাটেরিয়াল এর মধ্যে কাঠ সবচেয়ে জনপ্রিয়। এ ধরনের ডিজাইনের জন্য আর্কিটেক্টরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করতে পছন্দ করেন সেগুন বা ওক ধরনের কাঠ। বিশেষ করে বড় ধরনের কোন কাঠের স্থাপত্য বানানোর ক্ষেত্রে এ ধরনের কাঠের ব্যবহার একদিকে যেমন এস্থেটিক ইমেজ তৈরি করে, অন্যদিকে দেখতেও তা বেশ এক্সক্লুসিভ হয়। এছাড়া টেবিল, শেলফ, চেয়ার এবং অন্যান্য আসবাব তৈরিতেও এ ধরনের কাঠ সচরাচরই ব্যবহার করা হয়।  আর তাই বলাই যায়, বায়োফিলিক ডিজাইন এর ক্ষেত্রে কাঠের গুরুত্ব অনেক বেশি। 

ফ্লোর ডিজাইন করার ক্ষেত্রে ন্যাচারাল টেক্সচার এর ব্যবহার 

ফ্লোর ডিজাইন
বায়োফিলিক ডিজাইনে ফ্লোর নির্মাণে কাঠের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়

বায়োফিলিক ডিজাইন এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হচ্ছে ফ্লোরিং ডিজাইন ম্যাটেরিয়াল এবং কার্পেট। ফ্লোর ডিজাইনিং এর জন্য ডিজাইনাররা সাধারণত ন্যাচারাল টেক্সচার এর ব্যবহারকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এর ফলে গতানুগতিক ধারা থেকে ফ্লোরিং এর ডিজাইন এ যেমন ভিন্নতা থাকবে, তেমনি ঘরের ভেতরে প্রাকৃতিক পরিবেশের ছোঁয়াও থাকবে।   

যদিও একটা সময় বায়োফিলিক ডিজাইনকে নির্দিষ্ট কোন জায়গার জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা হতো, তবে খুব শীঘ্রই হয়তো এই ডিজাইনটি অফিস কিংবা বাসার জন্যও উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে। আবাসিক কিংবা কমার্শিয়াল যেকোনো জায়গাতেই বায়োফিলিক ডিজাইনে বাড়ি নির্মাণের মাধ্যমে তা আমাদের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার উন্নতিতে সহায়ক হবে। যা কাজের গতিতেও প্রভাব ফেলবে। বায়োফিলিক ডিজাইনের উপাদানগুলো নিয়ে খুব সহজে এবং ঝামেলাহীন ভাবে কাজ করার সুবিধা রয়েছে। প্রকৃতি থেকে খুব সহজে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রপার্টির ইন্টেরিয়র ডিজাইনে শান্ত এবং ইতিবাচক পরিবেশ তৈরিতে বায়োফিলিক ডিজাইন তাই হতে পারে দারুণ এক সমাধান। 

Write A Comment

Author