Reading Time: 4 minutes

প্রপার্টিতে বিনিয়োগের জন্য ঢাকায় সম্ভাব্য এলাকার কোন অভাব নেই। এসব এলাকায় বসবাসের মাধ্যমে আপনি অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধাই পাবেন। আর তাই অন্য যেকোনো সেক্টরের তুলনায় রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ করা যেমন লাভজনক, তেমনি সময়োপযোগী। আর এক্ষেত্রে প্রপার্টিতে বিনিয়োগের জন্য ঢাকার সম্ভাব্য এলাকাসমূহ কোনগুলো, সে বিষয়েও বিস্তারিত ধারণা থাকা প্রয়োজন।   

খুব সহজ করে যদি বলি, ব্যাংকিং সেক্টর, স্টক মার্কেট-সহ অন্যান্য যেকোনো সেক্টরের তুলনায় রিয়েল এস্টেট খাতের স্থায়িত্ব যেমন বেশি, তেমনি স্থিতিশীলও বটে। কেননা প্রপার্টির মতো স্থাবর সম্পত্তি গুলোর মূল্য খুব সহজে যেমন পরিবর্তিত হয় না, তেমনি হুট করে আবার ওঠানামাও করে না। তবে রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগের জন্য আপনাকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এলাকা নির্বাচন করা প্রয়োজন। অন্যথায় এই বিনিয়োগ সফল নাও হতে পারে। 

২০ বছর আগেও, বারিধারা এবং গুলশান এলাকায় বিনিয়োগ বেশ লাভজনক বলেই ধরে নেয়া হতো। কেননা সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত এই এলাকা গুলোর জমির দাম যথাক্রমে ৭০০% এবং ১০৩৬% বেড়ে গিয়েছে।  তবে বর্তমান সময়ে এসে বিচক্ষণ বিনিয়োগকারীরা কখনোই এই চুক্তিতে রাজি হবেন না। 

আর ঠিক এই পয়েন্ট থেকেই একটি প্রশ্ন না করলেই নয় যে, তবে প্রপার্টিতে বিনিয়োগের জন্য ঢাকার সম্ভাব্য এলাকা সমূহ কোনগুলো?  

দক্ষিণ খান 

দক্ষিন খান
ভবিষ্যতের বিনিয়োগের জন্য দক্ষিণ খানে রয়েছে সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা এবং বিনিয়োগকৃত অর্থের সঠিক মূল্যায়নের কথা বলতে গেলে আমাদের তালিকায় থাকা অন্যান্য এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় এলাকা হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ খান। তবে জানেন কি, বিনিয়োগের জন্য ঢাকার সম্ভাবনাময় এলাকা গুলোর মধ্যে দক্ষিণ খানকেই কেন তালিকায় সবচেয়ে উপরে রাখা হচ্ছে? এর পেছনের সবচেয়ে বড় কারণটি হচ্ছে সাশ্রয়ী মূল্যে প্রপার্টি কেনার সুযোগ, যা আপনি হয়তো অন্য কোন এলাকায় পাবেন না। উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণ খানে ২ বেডরুমের ফ্ল্যাট এর কথা বলা যাক। দক্ষিণ খানে প্রপার্টি কিনতে যেখানে আপনার প্রতি স্কয়ার ফিটে ব্যয় হবে  ৪,৫৫১ টাকা, যা কিনা  উত্তরার ২ বেডরুমের ফ্ল্যাট এর তুলনায় প্রায় ৩৫% কম মূল্যে পাওয়া সম্ভব। শুধু তাই-ই নয়, আপনি এর চেয়েও কমে অর্থাৎ প্রতি স্কয়ার ফিট বাবদ ৩,১৪৩ টাকায় একই এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন।     

এর পাশাপাশি ঢাকার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যেমন- উত্তরা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এবং পূর্বাচল এই এলাকার খুব কাছাকাছি হওয়ার কারণে এটা এক ধরনের আশীর্বাদস্বরূপ। অন্যদিকে পূর্বাচল এলাকার ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন দক্ষিণ খানের সাথে এর সংযোগ এবং সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আর এসব বিষয়কে বিবেচনায় নিলে বলাই যায়, ভবিষ্যতে বসবাসের জন্য দক্ষিণ খান বেশ উপযোগী একটি এলাকা।      

আফতাবনগর 

আফতাবনগর
প্রকৃতির মাঝে সুপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা এই এলাকায় রয়েছে প্রশান্তির ছোঁয়া

দক্ষিণ খানের পরেই যদি কোন এলাকার কথা বলতে হয়, তবে তালিকায় চলে আসবে আফতাবনগরের নাম। আফতাবনগরে উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২টি কারণের মধ্যে রয়েছে সামগ্রিক  উন্নয়ন এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা। উন্নয়নের পথ ধরে আফতাবনগর অনের দূর এগিয়ে গিয়েছে, তবে সব ধরনের সুযোগ- সুবিধা সম্পন্ন পুরোপুরি আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠতে হলে আরও বেশ কিছু সময় লেগে যাবে। তবে এই উন্নয়নের যাত্রার সর্বশেষ ধাপটি কেমন হবে সেটি  কল্পনা করতে চাইলে আপনাকে তাকাতে হবে বনশ্রীর দিকে, যা কিনা এই এলাকার পাশেই অবস্থিত।

সমাজের মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে এই এলাকাটি ইতোমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কেননা এই এলাকার প্রপার্টি সমূহ যেমন তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে, তেমনি দিন দিন এই এলাকায় বসবাসের চাহিদাও বাড়ছে লক্ষণীয় মাত্রায়। বিপ্রপার্টির ডাটাবেজ অনুযায়ী, ২০১৯ সালের দিকে কলাবাগান, রামপুরা মগবাজার এবং বাসাবোর মতো প্রতিষ্ঠিত এলাকার চেয়ে প্রপার্টির চাহিদা সবচেয়ে বেশি ছিল আফতাবনগরে। এমনকি গত ২ বছরে এই এলাকার প্রপার্টির দামও বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০২০ সালের দিকে আফতাবনগরের একটি অ্যাপার্টমেন্ট এর গড় মূল্য ছিল স্কয়ার ফিট প্রতি ৬,০১৩ টাকা, যা ২০২১ সালে দাম বেড়ে হয়েছে ৬,৪৮০ টাকা। এমনকি গত দুই বছরে প্রতি স্কয়ার ফিট বাবদ জমির দাম গড়ে বেড়েছে ২৫.৭%।       

বছিলা 

বছিলা
প্রপার্টিতে বিনিয়োগের জন্য ঢাকার সম্ভাবনাময় এলাকা সমূহের মধ্যে বছিলা অন্যতম

ঢাকায় প্রপার্টিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে সম্ভাব্য এলাকা গুলোর মধ্যে বছিলা অন্যতম। যারা বড় ধরনের বিনিয়োগের ব্যাপারে উৎসাহী তাদের জন্য বছিলা অন্যতম পছন্দের একটি জায়গা। বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত এই এলাকাটিতে একজন সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাই পাবেন। এই এলাকাটি মোহাম্মদপুরের সাথে সরাসরি সংযুক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকার অন্যান্য অংশের সাথেও এর বেশ ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া এই এলাকায় স্কুল-কলেজের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনারও কোন কমতি নেই।  

আর এ সকল কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে এই এলাকাটিতে আবাসন ব্যবস্থার চাহিদাও বেড়েছে লক্ষণীয় মাত্রায়। বিগত কয়েক বছরে এই এলাকায় উল্লেখযোগ্য হারে ভবন নির্মিত হয়েছে। তবে অনেক ভবন গড়ে উঠলেও দামের দিক থেকে খুব একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে এই অ্যাপার্টমেন্ট গুলো বহু মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই থাকছে। বিপ্রপার্টির ডাটাবেজ অনুযায়ী ২০২১ সালে প্রতি স্কয়ার ফিট বাবদ জমির গড় মূল্য ১,৭৩৬ টাকা। অন্যদিকে প্রতি স্কয়ার ফিট বাবদ অ্যাপার্টমেন্টের গড় মূল্য ৪,১৬৭ টাকা।  আর একারণেই অ্যাপার্টমেন্ট কেনার চেয়ে জমি কেনার অনুপাত সংখ্যায় অধিক।

দক্ষিণ বনশ্রী 

ভাড়া এবং সুযোগ- সুবিধার সামঞ্জস্যে ঢাকার সেরা এলাকা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি এলাকা দক্ষিণ বনশ্রী। নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে হাসপাতাল সহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা এই এলাকার মধ্যে রয়েছে। এছাড়া এই এলাকার ব্লগ জি, এইচ এবং আই-তে আবাসন  প্রক্রিয়ার বেশ অগ্রগতিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর এসকল কারণে প্রপার্টিতে বিনিয়োগের জন্য ঢাকার এই এলাকা রয়েছে পছন্দের তালিকার শীর্ষে। 

আফতাবনগরের সাথে তুলনা করলে দক্ষিণ বনশ্রীর ফ্ল্যাটের গড় মূল্য প্রতি স্কয়ার ফিট বাবদ ১৫% অধিক। 

সরকারের নেয়া নানা ধরনের পদক্ষেপ অনুসারে, ২০৪১ সালের মধ্যে শিল্পায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হবে। এর ফলে অন্যান্য খাতের মতো রিয়েল এস্টেট খাতও দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে । 

বিপ্রপার্টির ডাটাবেজ অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে ঢাকার অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য সার্বিকভাবে ২.১% বেড়ে গিয়েছে। আর তাই ঢাকার রিয়েল এস্টেট মার্কেট পরিচালনার মূল বিষয়গুলো এর মধ্যে হাউজিং সেক্টরের মূল্য বৃদ্ধি অন্যতম লক্ষণীয় একটি বিষয়। যা সময়ের সাথে সাথে কমে তো না-ই, বরং বেড়েই যাচ্ছে লক্ষণীয় মাত্রায়। আর তাই আপনি যদি ঢাকায় প্রপার্টিতে বিনিয়োগের জন্য সম্ভাবনাময় এলাকা খুঁজে থাকেন, তবে উপরে উল্লেখিত এলাকাগুলোর মধ্যে যেকোনোটি হতে পারে আপনার ভবিষ্যতের ঠিকানা।   

Write A Comment

Author