Reading Time: 5 minutes

আমাদের জলবায়ু ক্রমেই যেন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। কোন ভাবেই যেন লাগাম কষা যাচ্ছে না। চারদিকে শুধু কালো ধোয়া, যাতে দূষিত হচ্ছে বাতাস। এভাবেই তো গরম হয়ে যাচ্ছে আমাদের পৃথিবীর পরিবেশ। প্রায়ই খবরে মেলে উত্তর মেরুতে গলতে শুরু করেছে বরফ। পত্রিকার হেডলাইনে প্রায়ই দেখি যে পৃথিবীর নিম্নাঞ্চল নাকী তলিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ুর এই তারতম্যে যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বা হতে পারে তার মধ্যে বাংলাদেশের নাম আছে প্রথমেই। কমবেশি এই কথাগুলো কিন্তু আমরা সবাই জানি তাই না? এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বেরও করে দেই! কিন্তু, গ্লোবাল প্রবলেমটা নিয়ে যে আসলেই একটু ভিন্নভাবে ভেবেছেন সে হচ্ছেন বাংলাদেশের অন্যতম অ্যানিমেশন নির্মাতা মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন । আজকের গল্পটা তার, একজন অ্যানিমেটেশন নির্মাতার।

জলবায়ুর মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তৈরি হওয়া থ্রিডি অ্যানিমেটেড শর্ট ফিল্ম “ টুমরো” । গত নভেম্বরে দীপ্ত টেলিভিশনে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় এই সিনেমাটির। রাতুল নামের মুখ্য চরিত্র নিয়ে ২৫ মিনিটের এই শর্ট ফিল্মে অ্যানিমেশনের মাধ্যমে সকল বয়সের মানুষের কাছে তিনি একটি সুন্দর বার্তা পাঠাতে চেয়েছেন। কী সেই বার্তা? বিপ্রপার্টি বাইটসের আজকের পর্বে অতিথি হয়ে এসেছেন মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন । চলুন তার থেকে শুনে আসি এমন একটি বিষয়ে অ্যানিমেটেড সিনেমা বানানোর পেছনের গল্পটা কেমন!

নতুন ভাবনায় কাজ করে যাওয়া 

মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন
নতুনের শুরু যেখানে

বিপ্রপার্টির বাইটসের সাথে কথা বলতে গিয়ে মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন আমাদের বলেন, “শুরু থেকেই আমি এবং “সাইকোর স্টুডিও” যখন কাজ করছিলাম আমরা এমন কিছু করতে চাচ্ছিলাম যা দেশে কখনো হয়নি। সেটা ভিজুয়ালের দিক থেকে হোক, ফিল্ম মেকিং এর দিক থেকে হোক, এমন কিছু আমরা তৈরি করব যা কিনা আগে কখনো কেউ দেখেও নাই, ভাবেও নাই! সেখান থেকে “টুমরো” এর আইডিয়াটা এসেছে। তিনি আরও বলেন “টুমরো” দেখে বেশির ভাগ মানুষের এমনই মন্তব্য ছিল যে এটা কি আদৌ এ দেশের সিনেমা ? কারণ, এখানকার মানুষেরা এমন বিষয়ে আগে কখনো কিছু দেখেনি! সব বিষয়ে কমবেশি সিনেমা বা শর্ট ফিল্ম হয়েছে কিন্তু, জলবায়ু নিয়ে এর আগে এমন অ্যানিমেশন হয়েছে বলে জানা নাই। 

ম্যাসেজ এবং মিডিয়াম 

টুমরো
টুমরো অ্যানিমেশন শর্ট ফিল্মের একটি অংশ

মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন বিপ্রপার্টি বাইটস কে জানান, আমাদের এই অ্যানিমেশন মাধ্যমটা বেছে নেওয়ার পেছনে রয়েছে একটিই কারণ! আপনি যখন কাউকে কিছু শেখাতে যাবেন সিনেমা বা ডকুমেন্টরির মাধ্যমে তারা খুব অল্প সময়ে ভুলে যাবে। কিন্তু, আপনি যখন কার্টুন অ্যানিমেশন আকারে সামনে আনবেন তখন সেটা যে বয়সের মানুষই হোক ভোলে না তারা। মনে রাখার চেষ্টা করে। এভাবে কিন্তু তারা শিখতে পারে। আজকের এই ইস্যুটার প্রভাব পরবে ভবিষ্যতে গিয়ে। তাই এই নির্মাতার উদ্দেশ্য ছিল আজকের এই সময়ে এমন কিছু তৈরি করে রেখে যাওয়া যা কিনা ভবিষ্যতের প্রজন্মকে এই সময় সম্বন্ধে জানাবে এবং জলবায়ু সম্বন্ধে সচেতন করবে। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টাকে এত সহজে পেশ করার জন্য কার্টুন অ্যানিমেশনের থেকে উত্তম কোন মিডিয়াম হতে পারে না। 

“টুমরো কখনই ব্যবসার জন্য তৈরি করা হয়নি এটা তৈরি করা হয়েছে শিক্ষাগত কারনে”

টুমরোর স্ক্রিপটা নির্মাতার কাছে বেশ গভীর মনে হয়েছিল। তিনি যখন সিনেমাটি তৈরি করছিলেন তখন ভাবছিলেন, এই সিনেমাটা বেশ ভালমত তৈরি করতে হবে, কেননা এই সিনেমার প্রভাব দেশের প্রেক্ষাপটে যেমন মূল্য সংযোজন করবে তেমনি আন্তর্জাতিকভাবেও যেন প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এবং যে কথা সেই কাজ! এই শর্ট ফিল্মটি দেশ বিদেশের সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে । আন্তর্জাতিক মানেই এই সিনেমা শুধু জলবায়ুর পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করেনি বরং ক্যারিয়ার হিসেবে অ্যানিমেশন সকলের কাছে বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। তা আমরা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি।  

“অ্যানিমেশন সিনেমা তৈরি করা কখনই একার কাজ নয়, এটা টিম ওয়ার্ক” 

সাইকো স্টুডিও
সাইকো স্টুডিও

বিপ্রপার্টি বাইটসের সাথে আড্ডার একসময় তিনি হেসে বলেছিলেন, আমার টিমটা ছিল বেশ চমৎকার! আমরা আসলে তেমন জানতাম না আমরা কোথায় গিয়ে পৌছাবো কিন্তু আমরা সবাই এটা জানতাম আমরা কাজটা সকলে মিলেই শেষ করব। এরপর তিনি একটি বেশ মজার উদাহরণও দিয়েছিলেন। ধরুন, যারা কখনো বান্দরবানও যায়নি তারা কিনা হাবে হিমালয় জয় করতে! এমন দুঃসাহসী কাজে আমরা নেমেছিলাম। 

আমরা যারা টুমরো দেখেছি তারা জানি তারা বান্দরবান না গেলেও হিমালয় ঠিকই বেশ সুন্দর করে জয় করেছেন! তিনি আরও বলেন, সকলের সাহায্য ছাড়া কখনই এই কাজ সম্ভব নয়। যেমন, নিজের একাত্মতা প্রয়োজন তেমনি, সকলের সাহায্য। সবাইকে আপনার প্রয়োজন হবে, প্রযোজকদের সাহস যেমন লাগবে তেমনি তাদের সাপোর্ট! কথায় আছে না সকলে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ! মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন মানুষটাই এমন তিনি সকলের সাথে মিলেমিশে কাজ করতে ভালোবাসেন। যেমন আমাদের আগের পর্বে এসেছিলেন কুলিনারি আর্টিস্ট আলপনা হাবিব। তার সাথেও এমনই কথাই হয়েছিল, তার জীবনেও তার প্রিজনদের সাপোর্টই ছিল এক মাত্র অনুপ্রেরণা। 

ওয়ার্ক শপ বা কাজের জায়গাটি সম্বন্ধে কিছু বলুন? 

পেইন্টিং
পছন্দের অফিস তার কাছে এমনই

এমন প্রশ্নের জবাবে খানিকটা হেসে বললেন, আমি নিরিবিলি এক কোণায় কাজ করতে ভালোবাসি। আমার জন্য কমফর্টেবল লাগে। নিজের মত করে কাজ করার মধ্যে একটা স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব হয়। আমি কখনই ডান পাশ খোলা রেখে কাজ করতে পারি না, এটা আমার ব্যক্তিগত পছন্দ। আমি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করি। বড় একটা স্পেস আমার প্রয়োজন হয়। বড় টেবিল আমাদের কাজের জন্য খুবই জরুরী। যেহেতু আমরা কম্পিউটারে কাজ করি, ড্রয়িং করি অনেক কিছুই রাখতে হয় টেবিলে। তাই টেবিল আমার জন্য যত বড় ততো সুবিধা। খোলামেলা পরিবেশে কাজ করতে পছন্দ করি। এই নির্মাতার কাছে অফিসের সংজ্ঞা একটু ভিন্ন। অফিসের পরিবেশটা আর্টিস্ট ফ্রেন্ডলি হতে হবে মানে, চারিদিক যেন শক্ত না হয়! খোলামেলা হাসিখুশি পরিবেশ রাখাটা বেশ জরুরী। যেন সবাই কাজ করতে আরাম অনুভব করে। পছন্দের রঙের কথা জানতে চাইলে, তিনি বলেন তার কাছে হালকা রঙ বেশ ভালো লাগে। হালকা রঙই তার বেশ কাছে প্রিয়! 

“টুমরো বানিয়েছিলাম প্রায় দু’বছর আগে, কিন্তু শেষের দিকে সন্দিহান হয়ে গিয়েছিলাম” 

বড় ফ্যান
অন্যরকম এক ঢাকা

শেষেরর দিকে আমরা আটকে গিয়েছিলাম এই নিয়ে যে ঢাকা শহরটা দেখাবো কিভাবে? কিছু একটা বানালেই সাইন্স ফিকশন মনে হচ্ছে। এটা সাইন্স ফিকশন হোক সেটাও আমরা চাচ্ছিলাম না। এমন কিছু করতে চাচ্ছিলাম যেটা করলে ঢাকা শহরের মতই মনে হবে। আবার একটু অন্যরকমও লাগবে। ব্যক্তি হিসেবে বেশ নস্টালজিক উনি কথার মাঝে চারুকলার দিনগুলোতে ফিরে যান। প্রায় বিশ বছর হয়ে গেছে, এতদিনে ঢাকা তেমন একটা চেঞ্জ হয়নি। সুতরাং, আগামী দিনগুলোতে হয়তো এমনই থাকবে।  

বিপ্রপার্টি বাইটস মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন যে কিনা একজন ভিন্ন ধাচের অ্যানিমেশন নির্মাতা। তার কাছে গল্পের কোন শেষ নেই কিন্তু আমাদের তো আজকে এখানেই বিদায় নিতে হয়। আবারো ফিরব নতুন কোন গল্পে। আর আপনাদের যদি এই পৃথিবী কিংবা জলবায়ু নিয়ে কোন প্রশ্ন থেকে থাকে সেগুলোর উত্তর কিন্তু, “টুমরোর রাতুলের” কাছে অবশ্যই আছে। জানতে টুমরো দেখে ফেলুন! এবং আগামি পর্বের বাইটসে কার গল্প জানতে চান কমেন্টে জানিয়ে দিন। আপনি চাইলে বাইটসের আরও পর্ব দেখতে পারবেন ইউটিউব প্লে লিস্ট থেকে। 

Write A Comment