Reading Time: 4 minutes

বাড়ি বা প্রপার্টি কেনার সময় কোন বিষয়টি আপনার মাথায় প্রথম আসে? বেশিরভাগ মানুষের জন্যই এই প্রশ্নের উত্তর হল বাজেট এবং অর্থের যোগান বা ফিন্যান্সিং কীভাবে করা হবে সেটি। কীভাবে টাকা ম্যানেজ হবে সেটি মোটামোটি প্রপার্টি কিনতে চাওয়া সকলের জন্যই প্রথম চিন্তার বিষয়। সেভিংস থাকলেও অনেকক্ষেত্রেই ব্যয়বহুল অঞ্চলে প্রপার্টি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংক অথবা এরকম কোন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে হোমলোন নেয়াটা স্বাভাবিক একটি বিষয়। যদিও দেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখান থেকে হোমলোন নেয়া সম্ভব কিন্তু নিজের প্রয়োজনের সাথে সমন্বয় করে গৃহঋণ নিতে চাইলে সবগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা দরকার। সেজন্যই এই লেখা যেখানে বিভিন্ন ব্যাংকের হোমলোন সম্পর্কে বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হয়েছে।

হোমলোনের প্রয়োজনীয়তা

Bank Loan

ব্যাংকের হোমলোন কেন দরকার? হোমলোন সম্পর্কে আরও জানার আগে আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরী। হোমলোন এমন একটি সুবিধা যা যে কোণ ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষই গ্রহণ করতে পারেন। হোমলোনের সুবিধা ছাড়া অনেকসময়ই প্রপার্টি ক্রয় করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কোন প্রপার্টির গর্বিত মালিক হবার পথে একধাপ এগিয়া যাওয়া যায় হোমলোনের ব্যবস্থা হলেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে অনেক বড় অ্যামাউন্টের অর্থ জোগাড় করার উপায় হল হোমলোন, আর এর ফলে কোন প্রপার্টি পছন্দ হয়ে গেলে শুধুমাত্র অর্থে অভাবে তা হাতছাড়া হয় না।

কিছু ব্যাংকের হোমলোন সম্পর্কে বিস্তারিত

নিচে দেশের শীর্ষস্থানীয় ৫টি ব্যাংকের তালিকা দেয়া আছে যেখান থেকে আকর্ষণীয় অফারে হোমলোন নেয়া সম্ভব। বিপ্রপার্টির মাধ্যমে প্রপার্টি কিনতে চাইলে এই ব্যাংকগুলো দিচ্ছে বিশেষ সুবিধা। চলুন দেখে নেয়া যাক!

ব্যাংক এশিয়া

ব্যাংক এশিয়া দেশের একটি অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি  ব্যাংক। সারা দেশে প্রায় ১৩০টি শাখা নিয়ে ব্যাংক এশিয়া বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেষ্টা করে চলেছে। এছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সুবিধা যেমন লকার, বিভিন্ন উদ্দেশ্যে টার্ম লোন এবং কনজুমার ফিন্যান্সেরও ব্যবস্থা করে থাকে তারা। ব্যাংক এশিয়া থেকে হোম লোন নিতে হলে আপনার মাসিক আয় হতে হবে কমপক্ষে ২৫০০০ টাকা। ঋণগ্রহীতাদের জন্য সর্বনিম্ন ৫লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১কোটি ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থছাড় করা হয়ে থাকে। ৯৫ সুদের হার এবং ০.৫% প্রসেসিং ফিতে কেউ একজন ১ থেকে ২৫ বছর মেয়াদে লোন নিতে পারে। ব্যাংকের হোমলোন আবেদন করতে যেসব ডকুমেন্ট লাগে তার মধ্যে আছে ১ বছরের ব্যক্তিগত ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট এবং বায়না দলিল।  

স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড  ব্যাংক

৭০টিরও বেশি দেশে ১২০০+ শাখা নিয়ে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ব্যাংক। বাংলাদেশে এর প্রথম ব্রাঞ্চ ওপেন করা হয়েছিল ১৯৪৮ সালে এবং তখন থেকেই মানুষকে সর্বোচ্চ ব্যাংকিং সার্ভিস দিতে তারা বদ্ধপরিকর। গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা যেমন হোম লোন, পারসোনাল লোন, অটো লোন ইত্যাদির পাশাপাশি ই-স্টেটমেন্টের মতো সুবিধাগুলো অতুলনীয়। এখান থেকে হোম লোন নিতে হলে গ্রাহককে প্রতিমাসে ৭৮হাজার টাকা মাসিক আয় প্রদর্শন করতে হয়। সর্বোচ্চ লোন পাওয়া যায় প্রপার্টি মূল্যের ৭০% অথবা ২ কোটি টাকা পর্যন্ত। মেয়াদ থাকে ২৫ বছর। হোম লোনের জন্য প্রপার ডকুমেন্টেশন থাক জরুরী। ট্যাক্স সার্টিফিকেট, প্রপার্টি লিজ এগ্রিমেন্ট, ইউটিলিঈট বিলের কপি, ব্যাক্তিগত সম্পদের বিবরণী ইত্যাদি ডকুমেন্ট প্রয়োজন হোম লোন নিতে হলে। 

ডিবিবিএল

ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল) দেশের প্রথম যৌথ  মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত প্রাইভেট কমার্শিয়াল ব্যাংক। ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করার পর থেকে দেশের অন্যতম সেরা এবং প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রসরগামী ব্যাংক হিসেবে তারা পরিচালিত হচ্ছে। দেশজুড়ে ৪৯৩০টিরও বেশি এটিএম আছে তাদের। ডাচ বাংলা ব্যাংকের হোমলোন আবেদন করতে হলে আবেদনকারীর নূনত্যম বয়স হতে হবে ১৮ বছর। এর বাইরে লোন আবেদনের জন্য মাসিক বেতন ৫০ হাজার টাকা হতে হবে। ১ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত মেয়াদে ডিবিবিএলে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত হোম লোন পাওয়া সম্ভব। বিপ্রাপার্টির মাধ্যমে লোন আবেদন করলে মাত্র ১% প্রসেসিং ফিতে পাওয়া সম্ভব। আবেদনকারীর সিভি, ১ বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ট্যাক্স সার্টিফিকেট ইত্যাদি কাগজপত্র প্রয়োজন লোনের আবেদন করতে। 

ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড

বিগত কয়েক বছরে বিপুল প্রসার পেয়েছে যে প্রাইভেট কমার্শিয়াল ব্যাংকটি তার নাম ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড। রিয়েল এস্টেট খাতে ২৫ থেকে ৬৫ বছর বয়স্ক নাগরিকদের হোম লোন সুবিধা প্রদান ক্রএ থাকে ইবিএল। সর্বনিম্ন বেতন দেখাতে হয় ৩০  হাজার টাকা। সর্বনিম্ন ৫লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন প্রদান করা হয়ে থাকে। এখানে ৯% সুদে রহার এবং ০.৫% প্রসেসিং ফি তে লোন মিলবে বিপ্রপার্টির মাধ্যমে আবেদন করা হলে। ছবি, পাসপোর্ট, ই-টিন সার্টিফিকেট, ১ বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি কাগজপত্র প্রয়োজন আবেদনের জন্য। 

আইএফআইসি ব্যাংক

দি ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্স (আইএফআইসি) ব্যাংক লিমিটেড দেশের একটি অন্যতম প্রাইভেট কমার্শিয়াল ব্যাংক। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটির বেশিরভাগ শেয়ারই রাষ্ট্রীয় মালিকানায় ছিল। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে ব্যাংকটি পুরোপুরি বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে চলা শুরু করে। এই ব্যাংকের হোমলোন আবেদনের জন্য আবেদনকারীর নূন্যতম বয়স হতে হবে ২২ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ বছর পর্যন্ত। মাসিক আয় সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা হলেই প্রপার্টি মূল্যের উপর সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত লোনের জন্য এপ্লাই করা যাবে। বিপ্রপার্টির মাধ্যমে এপ্লাই করলে আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ০.৫% হারে প্রসেসিং ফিতে লোন নেয়া যাবে। 

বিপ্রপার্টির সাথে সমন্বয়ে এই ব্যাংকগুলোই বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট খাতে পরিবর্তন আনতে কাজ করছে। এই লেখাটি আপনার কাজে লাগলে আমাদেরকে জানান মন্তব্যের ঘরে। এরকম আরও লেখা পড়তে চাইলে ভিজিট করুন বিপ্রপার্টি ব্লগ

Write A Comment