Reading Time: 4 minutes

গোটা পৃথিবীই অসংখ্য বিস্ময়ে ভরা। এর মধ্যে কিছু মানবসৃষ্ট, আবার কিছু প্রকৃতি দ্বারা সৃষ্ট। যেহেতু আমরা এখন প্রযুক্তিগত যুগে বসবাস করছি, পৃথিবীর বেশিরভাগ অদ্ভুত ঘটনাগুলোই বিজ্ঞানের দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে, এই পৃথিবীর বুকে আরও কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা এখনও আপনাকে অবাক করে দিবে যে কিভাবে এটা ঘটেছিল! এই কারণেই আজ, বিশ্বের ৫টি অদ্ভুত ও বিস্ময়কর জায়গা নিয়ে আলোচনা করবো এবং কিভাবে এগুলোর সন্ধান পাওয়া গেল সেটা নিয়েও আলোচনা করব। পড়তে থাকুন। 

“ডেড সি” বা মৃত সাগর

“ডেড সি” বা মৃত সাগর
“ডেড সি” বা মৃত সাগর

নাম শুনে অনেকেই ভাবতে পারেন, এই সাগরে নিশ্চয়ই মৃত দেহ ঘুরে বেড়ায় কিংবা যে এখানে ঘুরতে যাবে সেই হবে যাবে লাশ! আসলে ঘটনা মোটেও এমন নয়। বরং এই “ডেড সি” কোন সাগরও নয় লবণাক্ত পানির হ্রদ। এর কারনটা হল, এই হ্রদের জলে লবণাক্ততার পরিমাণ প্রায় ৩৪.২%, যা সাধারণ সমুদ্রের জলের চেয়ে ৮.৬ গুণ বেশি। এই পানিতে আপনি কখনই ডুবে যাবেন না মানে ভেসে থাকা যায়। এমন অদ্ভুত বৈশিষ্টের কারনেই জর্ডানের এই ডেড সি পর্যটকদে ভেতরে এত বিখ্যাত। পানিতে লবনের মাত্রা বেশি হওয়াতে এই ডেড সি’তে কয়েক প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া ছাড়া আর কোনও প্রানীর অস্তিত্ব নেই। আর এখানে মাছ না থাকার কারণে পাখিদের আসতেও দেখা যায় না। তাই এই সাগর মৃত হওয়াতে মানুষের জন্য যেন স্বর্গ। রোগীদের বায়ু পরিবর্তনের জন্য চমৎকার একটি জায়গা এটি। অদ্ভুত ও বিস্ময়কর জায়গা হিসেবে ডেড সি বিখ্যাত। 

“জায়ান্টস্ কজওয়ে”

জায়ান্টস্ কজওয়ে
জায়ান্টস্ কজওয়ে

ইউনেস্কোর বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান এই জায়ান্টস্ কজওয়ে।  যা উত্তর আয়ারল্যান্ডের উত্তর তীরে অবস্থিত। প্রায় ৪০ হাজার হেক্টাগোনাল পাথরের কলামে তৈরি এটি একটি প্রাকৃতিক গুহা। এই শিলা বা পাথরগুলো প্রাচীন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত থেকে তৈরি হয়েছিল এবং এগুলো বেশীরভাগই ষড়ভুজীয়। এটা ১৯শতক থেকে পর্যটকদের নজরে আসে, এরপর থেকে এখানে দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই আছে। তাই হয়তো এটা ইউনাইটেড কিংডমের অন্যতম জনপ্রিয় প্রাকৃতিক বিস্ময় হিসাবে সবার মধ্যে পরিচিত। এটি উত্তর আয়ারল্যান্ডের সর্বাধিক দর্শনীয় একটি পর্যটন কেন্দ্র। এবং সৌন্দর্যের দিক থেকে এটা বিশ্বের অন্যতম একটি বিস্ময়কর স্থান।

‘পামুক্কেল’

‘পামুক্কেল’
‘পামুক্কেল’

তুরস্কে অবস্থিত, পামুক্কেল একটি গরম পানির ঝর্ণাদক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কের মেন্দেরেজ নদীর উপত্যকায় অবস্থিত পামুক্কেল জলপ্রপাত তুরস্কের অন্যতম সেরা পর্যটন আকর্ষণ। তুর্কী ‘পামুক্কেল’ শব্দের অর্থ ‘তুলার প্রাসাদ’। এই এলাকা বিখ্যাত মূলত এর দারুণ সব গরম পানির ঝর্ণার কারণে। প্রাচীনকাল থেকেই এই  ঝর্ণা সকলের মনযোগ আকর্ষণ করেছে। কিভাবে গরম পানি  ঝর্ণার আকারে আসে এটাও একটা অবাক করা বিস্ময় সকলের কাছে। আরামদায়ক এই পানিতে চাইলে আপনিও গোসল করতে পারবেন! এই এলাকায় আরও রয়েছে গ্রীক আর রোমানদের গড়া সুপ্রাচীন শহর ‘হেরাপুলিস’। একইসাথে প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরী অদ্ভুত ও বিস্ময়কর জায়গা দেখতে এখানে ভিড় করেন পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ। 

সকোত্রা দীপ

সকোত্রা দীপ
সকোত্রা দীপ

সোকোত্রা দ্বীপের সাথে তুলনা করা যায় এমন কোন আশ্চর্য নেই পৃথিবীর বুকে। এটা নিজেই নিজের মধ্যে এক অন্যতম আশ্চর্য! মধ্য প্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৩৫৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সকোত্রা দ্বীপপুঞ্জ। মোট চারটি দ্বীপ মিলে এই দ্বীপপুঞ্জ যার মধ্যে সকোত্রাই আয়তনে সবচেয়ে বড়। সকোত্রার আয়তন প্রায় ৬৫৬০ বর্গকিলোমিটার। এটি প্রায় ৪৪,০০০ লোকের জনসংখ্যা নিয়ে গঠিত একটি ছোট দ্বীপ মনে হতে পারে। কিন্তু যা এই  দ্বীপটিকে অনন্য করে তুলেছে তা হল, এই দ্বীপে জন্মানো গাছের সংখ্যা। অর্থাৎ, এই  দ্বীপের গাছগুলো পৃথিবীর অন্যকোথাও খুঁজে পাবেন না এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত। ২০০৮ সালে ইউনেস্কো এই দ্বীপপুঞ্জকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’র তকমা দেয়। এই সকোত্রা দ্বীপের বিচিত্র দর্শন গাছপালাগুলির মধ্যে অন্যতম হল ড্রাগন গাছ। এই গাছটি দেখতে একেবারে ব্যাঙের ছাতার মতো। উচ্চতায় বড়জোড় ৭-৮ ফুট। এই দ্বীপে এলে চারপাশের পরিবেশ আর গাছপালা দেখে আপনার মনে হতেই পারে যে, আপনি হয়তো অন্য কোনও গ্রহে এসে পড়েছেন!

ডেনসিয়া ল্যান্ডস্কেপ

ডেনসিয়া ল্যান্ডস্কেপ
ডেনসিয়া ল্যান্ডস্কেপ

ঝাংয়ে ডেনসিয়া ল্যান্ডফর্ম পাহাড়টি চীনের গানসুতে ঝাংয়ে ন্যাশনাল জিওপার্কে অবস্থিত। দেখতে এই পাহাড়টি বেশ রঙিন এবং পাথরের স্তর বিশিষ্ট। এমন রঙ্গিন হওয়ার কারণ নাকি, এই পাথরগুলো ২৪ মিলিয়ন বছর ধরে জমা পরে আছে বলে এমন স্তর বিশিস্ট রঙিন আকৃতির হয়েছে। বায়ু জনিত কারণ, বৃষ্টি এবং সময়ের সাথে টেকটোনিক প্লেটগুলির স্থানান্তরের ফলে এই অত্যন্ত সুন্দর ল্যান্ডফর্ম এবং কাঠামো তৈরি হয়। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক বিস্ময় হিসাবে পরিচিত। এছাড়াও এটা একটি আলোচিত পর্যটক কেন্দ্র। সারা বছরই এখানে ভিড় প্রায় লেগেই থাকে বলা চলে।  

স্বল্প আকারে আমরা আজ জানতে পারলাম বিশ্বের কয়েকটি চমৎকার বিস্ময় সমন্ধে। তবে আমাদের মানতেই হবে এই প্রতিটা জায়গায় রহস্যে ভরপুর এবং আকর্ষণীয়। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর সমুদ্র তীরবর্তী শহরগুলোও কিন্তু বেশ চমৎকার। এই শহরগুলো সম্বন্ধে জানতে বিপ্রপার্টির ব্লগ পড়ুন। পাশাপাশি সবচেয়ে রোমাঞ্চকর পর্বতমালাগুলো সম্বন্ধে কার না জানতে ইচ্ছা করবে।

Write A Comment